somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেসাস রিবর্ন....

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামনের টেবিলে ইতস্ততঃ ছড়ানো গত ক’দিনের খবরের কাগজের দঙ্গল থেকে চোখ সরিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। প্রতিদিনকার মতো অস্থির ভাবে পায়চারী করলেন ঘরের ভেতর এদিক থেকে ওদিক । মুষ্ঠিবদ্ধ করলেন হাত দুটি বার কয়েক । তার এতোদিনকার কোমল-সরল চোখে আস্তে আস্তে আগুনের লালচে আভা জাগতে শুরু করলো । সে আভায় ভৌতিক আলো আঁধারীর মতো রহস্যময় হয়ে উঠলো তার ছোট্ট গৃহখানি । ঠোটদুটো শক্ত হয়ে বসে গেল পরষ্পর ।
তার স্ত্রী কি যেন বলতে এসেও তার দিকে চেয়ে থমকে গেলেন । তিনি ঈশারায় স্ত্রীকে কি যেন বললেন , মুখ খুললেন না ।
চোখদুটো বড় বড় করে একটা অজানা আতঙ্ক নিয়ে স্ত্রী তাকিয়ে থাকলেন তার দিকে, তার এতোকালকার শান্ত মানুষটির দিকে । এমোনটি তো দেখেননি কখোনও তিনি । এই পাপের সংসারে, যেখানে ক্ষুধা আছে , সন্তান আছে , আছে প্রতিদিনকার সহস্র জটিলতা, সেখানেও তিনি ছিলেন স্থিতধী । নির্বিকার এক সংসারী, জাগতিক ব্যাপারে একেবারেই অক্ষম। অব্যবহিত পারিপার্শ্বিকতাকেও তিলতম পরিবর্তনও যিনি ঘটাতে পারেন না। অথচ নিজের মধ্যে কি এমন নিখিল ক্রোধযুক্ত বেদনাকে ধারন করেন আছেন তিনি যে আমূল বদলে গেলেন অবয়বে !
কি হয়েছে বুঝতে পারলেন না । কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন ।

পায়চারী থামিয়ে তিনি স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন ত্রিশ বছর আগে যে মেয়েটিকে জীবনের সঙ্গী করে এনেছিলেন তার দিকে । ঠোট জোড়া নড়ে উঠলো তার –
‘তুমি কি জানো, কি হচ্ছে আমার ?’
নাহ্‌ , স্ত্রীর ভয়ার্ত জবাব ।
চোখে আগুনের ফুলকি ঝিলিক দিয়ে উঠলো তার । তিনি বুঝতে পারলেন কি যেন একটা ঘটে যাচ্ছে তার নিজের ভেতর । একটা জিঘাংসা ছোরার মতো অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে তার মানবিক শরীরের কোথাও। ঠিক কোনখানে ধরতে পারলেন না । কঠিনতম কষ্টে নিজেকে সংযত রাখলেন তিনি । আবারো নড়ে উঠলো ঠোট – ‘ অঞ্জলী, যে আমাকে তুমি চেন গেল ত্রিশটি বছর ধরে , সেই আমি আর আমাতে নেই । আমার ভেতরে অদ্ভুত একটা কিছু ঘটে যাচ্ছে – আমার রক্তের প্রতিটি বিন্দুতে বিন্দুতে একটা আশ্চর্য্য প্রতিশোধের প্রচন্ড জোয়ারের শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি । এতোদিন পড়ে পড়ে শুধু মারই খেয়েছি আমরা – তুমি , আমি সবাই । এই কথিত সমাজ আর অন্ধ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক খান কয়েক লোক আর তাদের তল্পিবাহকদের কারনে আমাদের সবার পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে । আমাদের কাউকে ভদ্রভাবে, শান্তিতে বাঁচতে দেবেনা ওরা । আমাদের সন্তানদের আতঙ্কিত প্রহর, দিন , মাস, বছর কাটবে মাটিতে মুখ গুঁজে কারন প্রতিবাদের প্রতিটি পথ বন্ধ করে রেখেছে ওরা । আমরা মরছি প্রতিদিন – মরতেই থাকব । এভাবে বেঁচে থাকা চলেনা । এটাকে রুখতে হবে এবং এখনই । একটি মাত্র আগাছাই তোমার একটুকরো ধানী জমিকে বন্ধ্যা করে দিতে পারে । আর তাই এই বিপুল বিষবৃক্ষ আগাছাকে উপরে ফেলতে হবে যাতে এই মাটিতে সবুজ দূর্বাঘাস নিশ্চিন্তে মাথা তুলতে পারে আবারো’ ।
তিনি থামলেন ।

অদ্ভুত এক স্বর্গীয় আলোকে তার শরীর জ্বলে উঠলো । দেহে ভর করলো এক অজানা সর্বগ্রাসী শক্তি । দক্ষিন বাহু আস্তে আস্তে আশ্চর্য্য এক ভঙ্গীমায় উর্দ্ধে উঠে গেল তার ।
বিড়বিড় করে বললেন – ‘বি হোল্ড’।

থমকে গেল বিশ্ব চরাচর । হতবিহ্বল স্ত্রীর চোখের পর্দা থেকে হারিয়ে গিয়ে তিনি দেখলেন উন্মুক্ত রাজপথের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি । একজন যিশুর মতো । দৃশ্যমান যাবতীয় পার্থিব বিষয়বস্তু অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে দেখলো তাকে । এমোন একটি মানুষ তারা দেখেনি কোনওদিন । এক মসীহা ।
জানালায় থমকে যাওয়া চড়ুই, উড়তে উড়তে থেমে যাওয়া কাকটিও বুঝলো, এবার হাযার বছর পরে ক্রুশবিদ্ধ হবে অন্য কেউ । এই যিশু নয়।

থমকে যাওয়া জনপদের ভেতর দিয়ে তিনি এগিয়ে চললেন দৃপ্ত পদে । কাঁপতে থাকলো পায়ের নীচে পড়ে থাকা ধরণী । মূহুর্তে পৌঁছে গেলেন গন্তব্যে । হাতের পাঁচ আঙ্গুলে অবলীলায় তুলে আনলেন সেই সব শিশু ধর্ষকদের আর ঝুলিয়ে দিলেন ষ্টেডিয়ামের সুউচ্চ ফ্লাড লাইটের পোষ্টে । ধর্ষকদের নিম্নাঙ্গ থেকে দড়িতে বাঁধা আধলা ইটগুলো দুলতে থাকলো পেন্ডুলামের মতো । সতর্ক মৃত্যুর ঘন্টা বেজে উঠলো চারদিকে । শতনারী ভোগী ধর্ষককেও দেখা গেলো সেই অদ্ভুৎ দৃশ্যপটে ।

বৈশাখী উৎসবে যারা বোমা মেরে নিভিয়ে দিয়েছিলো যাবতীয় মঙ্গল প্রদীপ তাদেরকেও তুলে আনলেন একে একে । তাদের পাপিষ্ঠ হাতে বোমা বেধে দিয়ে চাপ দিলেন দ্রুত । ছিটকে গেলো হাতগুলো । কান গেল ছিঁড়ে । তারপর ক্ষতবিক্ষত দেহগুলোকে ঝোলালেন আগের দেহগুলোর পাশে ।

যে লোকটি এসিড ছুড়ে বীভৎস করে দিয়েছিলো মেয়েটির জীবনময় শরীর, তাকেও তুলে আনলেন অবলীলায় । স্টেডিয়ামের ব্যাটারীর দোকানে রাখা এসিড ভরা পাত্রে ছেড়ে দিলেন আস্তে আস্তে । গগনবিদারী চীৎকারের সাথে সাথে শরীর থেকে খসে গেলো চামড়া । গলতে শুরু করলো মাংশ । মরলো না লোকটি । লাইট পোষ্টে ঝোলালেন তাকেও ।

যেসব লোভী লোকেদের কারনে অসহায় নারীরা মরছে বিদেশ-বিভূঁইয়ে, পুরুষেরা মরছে দূর-অজানা দেশের জেলে- জলে-জঙ্গলে তাদের পা ধরে টেনে হিঁচড়ে বাইরে আনলেন অলঙ্কৃত অন্তঃপুর থেকে। এবড়ো -থেবড়ো রাস্তার ঘর্ষনে ঘর্ষনে তাদের মাংশ-চামড়া গেল ছিঁড়ে। ঝুলিয়ে দিলেন পোষ্টে। রক্ত ঝরতে থাকলো অসহায় নারী-পুরুষদের, স্বজনদের মনে রক্ত ঝরার মতো অবিরল।

আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার মতো বিভৎস খেলায় মেতে উঠেছিলো যারা, এক এক করে তাদেরকেও টেনে আনলেন সুরক্ষিত গৃহকোন থেকে।

এরপর একে একে তুলে আনলেন বিষবৃক্ষের বীজ বপনকারী পাপীদের ,বুক উচু করে চলা সব অপরাধী । তুলে আনলেন সেইসব ধোঁকাবাজদের যারা কথা দিয়ে কথা রাখেনি কোনওদিন । তুলে আনলেন তাদেরও যারা কোনও কিছু না করেই সবকিছুর মৌরসীপাট্টা নিয়ে নিয়েছে নিজেরাই, ভাগে ভাগে ভাগ করে দেশটার অস্থিমজ্জ্বা চুষে চুষে খেয়েছে এতোদিন। ঝোলালেন এক এক করে । ঠুকে দিলেন পেরেক তাদের শরীরে । সুউচ্চ ফ্লাড লাইটের পোষ্টগুলো ভরে গেলো সেইসব উৎপীড়ক, অত্যাচারী, লোভী অমানুষের ক্রুশবিদ্ধ শরীরে ।

থমকে গিয়ে স্থির হয়ে যাওয়া জনপদ এবার নড়ে উঠলো যেন । করতালিতে মুখরিত হলো আকাশ । লক্ষ লক্ষ স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো লক্ষ লক্ষ দেহের পিঞ্জর থেকে । ঘূর্নিঝড় হয়ে তা ধেঁয়ে গেল স্টেডিয়ামের দিকে । ঝুলে থাকা দেহগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে দুলতে থাকলো উত্তর থেকে দক্ষিনে, পশ্চিম থেকে পুবে । ধূসর কালো হাড়গিলে শরীর নিয়ে শকুনীর দল উড়ে এলো। কুতকুতে চোখ নিয়ে একটা ভুরিভোজের মহোৎসবের অপেক্ষায় তাকিয়ে রইলো দুলতে থাকা দেহগুলোর দিকে।

ফুল বিক্রেতা দুটো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছুটে এলো কোথা থেকে ! অতি সযতনে ওরা তুলে দিল তার হাতে রক্তে মাখা একটি তুলি আর কুড়িয়ে আনা একটুকরো কাগজ । তিনি স্মিত হাসলেন । অভয়ের হাসি । তারপর উপুড় হয়ে তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুললেন লেখাগুলো –
“ এই নিষ্পাপ শিশুদের হাসি যেন মুছে না যায় আর কোনওদিন । এই শাস্তিই এদের একমাত্র প্রাপ্য । এখোনই সময় । এদের কে এভাবেই রুখে দিন ।”

উঠে দাড়ালেন তিনি । কাগজটি লটকে দিলেন স্টেডিয়ামের গেটে ।



ছবির কৃতজ্ঞতা - নেট।
নেট থেকে নিয়ে কম্পোজিশান করা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৭
৫৩টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×