somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস : জয় হলো মানবতার, জয় হলো প্রযুক্তির ।

২১ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এইবারের ঈদুল ফিতর আমার কাছে একটা বিশেষ ঈদ । আমার গ্রামের বাড়ি হবিগন্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় ।আপনারা সবাই হয়ত জানেন, বানিয়াচং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্রাম । আমাদের উপজেলা ভিত্তিক একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে । পেশাগত বা অন্যান্য কারনে যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকি বা যারা প্রবাসে থাকেন, সবার একটা সাধারন মিলন মেলা হলো এই গ্রুপ । এই গ্রুপের (বানিয়াচং পিপলস ফোরাম, বিপিএফ ) মাধ্যমে আমরা নির্ধন গোপ নামে একজন দুস্তঃ মুক্তিযোদ্ধাকে সাহায্যের জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছিলাম । গত তিনমাসে এটা নিয়ে দেশে এবং প্রবাসে আমরা বানিয়াচং পিপলস ফোরাম সদস্যরা ব্যাপক প্রচারনা চালিয়েছি । শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত প্রচেস্টায় সকল অবান্চিত বাঁধা পেরিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকা যোগার হয়েছে, আজ সকাল ১১টায় বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিপিএফ জমজমাট ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্টানের মাধ্যমে বীরমুক্তিযোদ্ধা নির্ধন গোপের হাতে এই অনুদানের অর্থ তুলে দেয়া হলো । এই ঈদটা তাই আমার কাছে শুধু বুকে বুক মেলানো নয়, প্রানেতে প্রাণ মেলানো । এসো মিলাই প্রাণ, প্রানেতে... বাঁচো, বাঁচাও এবং ভালবাসো ।




গোড়ার কথা : জাতির শ্রেষ্ট সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা "নির্ধন গোপ" । ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন । আজ স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অমানবিক কষ্ট করে যাচ্ছেন । নির্ধন গোপের বাড়ি হবিগন্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় । তিনি মুক্তিযোদ্ধে ৩নং সেক্টরে আখাউড়া-মাধবপুর-বিবাড়িয়া এলাকায় মেজর শফিউল্লাহ'র অধীনে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছিলেন । বর্তমানে এক চোখ অন্ধ এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ভুমিহীন নির্ধন গোপ এখন বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি ঘুরে 'চটা' (ঘুটে, গোবর আর ন্যাড়া দিয়ে বানানো জ্বালানী) বিক্রি করেন ।



নির্ধন গোপের চটা বিক্রি করার খবর এবং ছবি দিয়ে ফেসবুকের বিপিএফ গ্রুপে একটা স্ট্যাটাস দেন আমাদের বন্ধু নজরুল ইসলাম খান (এ্যাডভোকেট এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান)। তারপর নির্ধন গোপকে কিছুটা আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে একটা সম্মানজনক পেশায় প্রতিস্টিত করার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহন করেন আমাদের আরেকজন বন্ধু বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম লিটন । তার এই মহান উদ্যোগে বানিয়াচং পিপলস ফোরাম গ্রুপের এডমিন নুরুল ইসলাম খান, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা ফুয়াদ খান, রায়হান উদ্দিন সুমন, ইমতিয়াজ খান, আশরাফ তিতাস, সাংবাদিক টি.আর সোহেল, এমদাদ করিম, তাহেরা স্বপ্না সহ একদল তরুন তুর্কি এই উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়ান । সবার উদাত্ত আহবানে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং নজরুল ইসলাম খান এর ঐ স্ট্যাটাসে প্রচুর পজিটিভ কমেন্ট পড়ে । ইতিমধ্যে এই গ্রুপের একটিভ সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় সাহায্য জমা হবে তাজুল ইসলাম লিটন সাহেবের ডাচ-বাংলা ব্যাংক একাউন্টে । তাজুল ইসলাম লিটন সাহেব যেদিন কমেন্ট করলেন যে তার একাউন্টে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন হৃদয়বান ব্যক্তি সাত হাজার টাকা জমা দিয়েছেন, সেদিন গ্রুপ সদস্যদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হয় ।



যেকোন ভাল কাজ করতে গেলে বাঁধা আসে X(( X(( , আমাদের এই কাজেও যথেস্ট বাধা এসেছে । কিন্তু বিপিএফ সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেস্টা আর দৃঢ় মনোবলের কাছে সকল বাধা দুর হয়ে যায় :) :) । এইসব অপতৎপরতা আমাদের জন্য সাপে বর হয়ে উঠে, গ্রুপের সবার মাঝে একটা পজিটিভ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, এবং মুক্তিযুদ্ধা নির্ধন গোপের জন্য সহায়তার কার্যক্রম সফল করাকে সবাই চ্যালেন্জ হিসাবে গ্রহন করে =p~ =p~





তো, দেশ এবং বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের ভাল ভাল খবর আসতে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধা নির্ধন গোপকে সহায়তার কার্যক্রম ক্রমশ একটা সুন্দর পরিনতির দিকে এগুতে থাকে ।

এদিকে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এই রোজার ঈদের পরের দিন আমরা একটা বিপিএফ গ্রুপের পূনর্মিলনী অনুস্টান করে, সেই অনুস্টানে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধন গোপের হাতে অনুদানের টাকা তুলে দিব । কারন ঈদের সময় মোটামোটি সবাই বাড়িতে আসে । এদিকে ইউকে তে আখন্জি নিজাম এবং শাহ ফয়জুর ফয়েজ এর উদ্যোগে ১৯৫ পাউন্ড চাঁদা উঠেছে এবং আখন্জি নিজাম নিজে দিয়েছেন পন্চাশ হাজার টাকা । (আখন্জি সাহেবের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ, উনার বাড়ি বানিয়াচং না হলেও শুধু মানবতার ডাকে সাড়া দিতে উনি আমাদের এই শুভ প্রচেস্টায় সংগী হয়েছেন) । আরেক লন্ডন প্রবাসী শাহীন হক শাইনো দিলেন বিশ হাজার টাকা, জার্মান প্রবাসী দেওয়ান সালমা রাজা জলি ১০০ ইউরো, ইতালী প্রবাসী নয়ন আলী ৫ হাজার টাকা, গ্রীস প্রবাসী শেখ সাইফুল তিন হাজার টাকা দিলেন । আমরা যারা এই গ্রুপের সদস্য, সবাই যে যার ক্ষমতা ও সাধ্য অনুযায়ী অনুদান দিলাম, আর বাকী অন্যান্য সাহায্য মিলিয়ে আমরা প্রায় দুই লক্ষ টাকা তুলতে সমর্থ হলাম ।



আজ সকাল দশটা থেকেই বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বানিয়াচং পিপলস ফোরাম বন্ধুরা দল বেঁধে আসতে থাকেন । সকাল ১১টায় মূল অনুস্টান শুরু হয় । সংক্ষিপ্ত অনুস্টান শেষে মাননীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যন আর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতে বানিয়াচং পিপলস ফোরামের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধা নির্ধন গোপের হাতে অনুদানের অর্থ তুলে দেন গ্রুপ এডমিন নুরুল ইসলাম খান এবং তাজুল ইসলাম লিটন । নির্ধন গোপের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠে এক পরম আনন্দের ছোঁয়া, যার রেশ বয়ে যায় উপস্হিত সব বন্ধুদের হৃদয়েও । এবারের ঈদের আনন্দটা তাই বহুগুনে বেড়ে যায় । পরিশেষে সকল বন্ধুরা মেতে উঠে শাহ আব্দুল করিম আর রাধারমনের বাউল গান আর সুরের মুর্ছনায় ।



আপনারা যারা এত সময় নিয়ে এত কস্ট করে এই পোস্ট টা পড়েছেন, আর একটু কস্ট করে নজরুল খানের সেই বিখ্যাত স্ট্যাটাস টা দেখবেন না, তা কি করে হয় !! যে স্ট্যাটাসের কারনে একটা অসহায় মুক্তিযোদ্ধার জীবন পাল্টে গেলো । যদিও এটা আমাদের রাস্ট্রের দায়িত্ব ছিল, কিন্তু রাস্ট্র তার দায়িত্ব পালন করতে পারে নাই বলেতো মানবতা থেমে থাকতে পারেনা ।
জাতির শ্রেস্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধা নির্ধন গোপ চটা মার্কেটিং করেন ।


সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, এই পুরো মানবিক কার্যক্রমটা ছিল প্রযুক্তি নির্ভর । ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এই কার্যক্রমের যাত্রা শুরু, প্রচারনা এবং ক্লাইমেক্স-অ্যাকশন এর অংশটুকুও ছিল ফেসবুক কমেন্ট (এবং বেড কমেন্ট !) আর অন-লাইন ব্যাংকিং নির্ভর । এখন ফিনিশিং টাচেও দেয়া হলো প্রযুক্তির ছোঁয়া । প্রজেক্টরের মাধ্যমে অনুস্টানটি লাইভ পরিচালনা করা হয় । ল্যাপটপে বানিয়াচং পিপলস ফোরাম এর পেইজ ওপেন করা ছিল । অনুস্টানে উপস্থিত থেকে বা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে যে যা পোস্ট বা কমেন্ট দিচ্ছিলেন, প্রজেক্টরের মাধ্যমে তা স্টেজের পিছনে বড় পর্দায় সবাই দেখতে পাচ্ছিলেন, এবং যারা দুরে আছেন তারা তাদের আনন্দ অনুভুতি সবার সাথে ভাগ করতে পারছিলেন ।



এটা অবশ্যই গর্ব এবং আশাবাদের বিষয়, আমাদের তরুন প্রজন্ম আধুনিক প্রযুক্তি এবং মানবিকতা দুটো বিষয়কেই সমান গুরুত্ব সহকারে অর্জন করে চলেছেন । একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধন গোপের জন্য এই বিশাল সহায়তা কার্যক্রম সারা দেশে একটি অনন্য দৃস্টান্ত স্থাপন করেছে । আর এই পুরো মানবিক কার্যক্রমটি যার উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে সুসম্পন্ন হয়েছে, সেই তাজুল ইসলাম লিটন ভাইয়ের জন্য সবার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা । জয় হলো মানবতার, জয় হলো প্রযুক্তির । তাইতো আমাদের স্লোগান- বাঁচো, বাঁচাও এবং ভালবাসো...

নিচের লিংকে মুক্তিযোদ্ধা নির্ধন গোপের হাতে দুই লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেয়ার মুহুর্তের ভিডিও চিত্র, গানে কন্ঠ দিয়েছেন 'সূচি' ।
এখানে ক্লিক করুন । ভিডিও ছবি ।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৪ রাত ৯:২০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×