somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলিশা এবং আমার গল্প

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে আলিশার ফোন পেয়ে আমি অনেক অবাক হলাম। আলিশা আগে কখনো আমাকে ফোন দেয়নি, এই প্রথম দিলো তাও আবার পরশু রাত্রে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর।আমার স্পষ্ট মনে আছে পরশু যখন আলিশা বলল,
আমাকে ও ভালবাসতে পারবেনা তাই আমি যেন ওকে আর ডিস্ট্রাব না করি।
সেগুলা শুনে অবশ্য মন খারাপ হয়েছিল বাট তারপর থেকে আমি ওকে আর ডিস্ট্রাব করিনি।
এমন কি ফোন বা কোন ম্যাসেজ ও দেইনি।
তাহলে এখন আবার আমাকে ফোন করার মানে কি? কে জানে?নাকি আরো কিছু অপমান করার বাকী আছে।
.
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন ধরলাম,
-হ্যালো,
-এখনো ঘুম ভাঙেনি?
-মাত্র ভাঙলো,
-তুমি নাকি আমাকে ভালবাস?
-হুম,
-তাহলে ফোন দাও নাই কেন কাল সারাদিন?
-না মানে তুমি তো মানা করছ ফোন দিতে ?
-মানা করেছি বলে ফোন দিবানা,
.
আমি একটু অবাক হলাম ওর কথা শুনে,এই মেয়ে কি বলতে চায়?
নিজে সেদিন অপমান করল,আজ আবার বলতেছে ফোন করিনা কেন?
.
-দেব আজ থেকে আবার?
-আর দিতে হবেনা, দেখা করতে পারবা?
-হুম,অবশ্যই,কোথায়?
-কলেজের সামনে আসো,
-আচ্ছা,
-কয় মিনিট লাগবে?
-দুই মিনিট,
-ফ্রেশ হবে না?
-লাগবেনা !
.
ফোনের ওপাশে হাসির শব্দ শুনলাম।আলিশা ওর হাসি থামিয়ে বলল,
-এত জলদি আসতে হবেনা,ফ্রেশ হও।সেজে গুজে আসো।
-আচ্ছা,,
.
ফোন রেখে দ্রুত সব কাজ শেষ করতে লাগলাম,
যতটা এক্সাইটেড হচ্ছি ততটা ভয়ও কাজ করছে। সেদিনের মত যদি আবার অপমান করে।
আমি আলিশার পিছনে ঘুরছি প্রায় ছ মাস। "ছ মাস" সময় হিসেবে অনেক কম,কিন্তু ওর প্রতি আমার ভালবাসাটা মোটেও কম নয়,বরংচ বেশি,অনেক বেশি।আর সে ভালবাসা কমছে না বরংচ বেড়েই চলছে,এত অপমান করা সত্তেও, ওকে আমার মন কেন ভালবাসে এটা চিন্তার বিষয়?যার উত্তর আম এখনো পাই নি।
.
আমি ভেবেছি,যেহেতু আলিশা ওর কলেজে ডেকেছে তার মানে ওর ক্লাস মিস করে আমার সাথে কথা বলবে।কিন্তু রিকশা থেকে নেমে যখন ওকে দেখলাম তখন প্রচন্ড অবাক হলাম।
ওকে দেখে মনে হল ও ডেটে এসেছে।
সাজগোজ করেছে প্রচুর,পিংক কালারের শাড়ি পড়েছে, ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে,হাত ভরতি চুড়ি আর আমার প্রিয় চোখ ভরতি কাজল।
আমার মতে কাজলে আলিশার চোখ এতটাই মানায় যা বলার মত না।
.
আমি আলিশার কাছে গিয়ে কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।এত সুন্দর কেন মেয়েটা কে জানে।
-কি দেখছ?
-না কিছুনা,
-সত্যি,
-আসলে,তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
.
আলিশা আমার কথা শুনে হাসল।হাসতে হাসতেই বলল,
-ধন্যবাদ,
.
আমি আবার বললাম,
-ডেকেছ কেন?
-অনেক দিন রিকশা করে ঘুরিনা,তাই ভাবলাম আজ একটু ঘুরি।একা একা ঘুরতেও ভাল লাগেনা তাই তোমাকে ডেকে নিলাম,
-ও আচ্ছা,
-ভাল করিনি?
-হুম, খুব ভাল করেছ।
-যাও রিকশা ডাকো,
.
রিকশায় উঠে চুপ করে বসে রইলাম দুজন।
আলিশা যে আমার পাশে বসে আছে এখনো বিলিভ হচ্ছেনা।যে মেয়েটা পরশু পর্যন্ত আমাকে পাত্তা দিতনা সে আজ আমার সাথে একি রিকশায় বসে আছে,,কত বড় ব্যাপার।আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে আলিশার দিকে তাকাচ্ছি,বাতাসে ওর চুল গুলো উড়ছে।কি সুন্দর লাগছে, লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
.
রিকশাটা একটু ছোটই মনে হল।গায়ের সাথে গা লাগছে, আমি যথেষ্ট সেফ হয়ে বসার চেষ্টা করছি।কিন্তু হচ্ছিল না,লেগেই যাচ্ছিল।
আলিশা দেখছিল আর হাসছিল।
.
আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। নিরবতা ভেঙে বললাম,
-তাহলে কি তুমি রাজি,
-কিসে রাজী,
-মানে তুমিও আমাকে ভালবাস,
-না,কখন বলছি তোমাকে ভালবাসি?
-ভাবলাম আর কি?
-এত বেশি ভাববা না কম ভাববা, এমনি শুধু ঘুরতে আসছি,ওকে।
-আচ্ছা
.
রিকশা থামল পার্কের সামনে।রিকশা থেকে নেমে গিয়ে আমরা বসলাম একটা ব্রেঞ্চে।খুব দুরত্ত নিয়ে বসলাম না,সামান্য দুরত্ত আমাদের মাঝে।যে কেউ দেখলে ভাববে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু আসলে তা নয়।
.
কথা বলার কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না,প্রেমিকা হলে অনেক কথা বলা যেত,যেহেতু প্রেমিকা না তাই সেটা হচ্ছেনা।
-কিছু খাবে আলিশা?
-উম, আইস্ক্রীম,
-চকলেট অর ভ্যানিলা?
-চকলেট।
-আচ্ছা।
.
আইস্ক্রিম এর সাথে একটা গোলাপ ও কিনে নিয়ে এলাম।আলিশা আমার হাতে গোলাপ দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
-গোলাপ কার জন্য?
-তোমার জন্য?
-এত অপমান করি তাও ঠিক হওনা,
.
আমি চুপ করে রইলাম।আলিশার বকা খাওয়ার ভাল রকমের অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।ইদানিং ওর বকা শুনতে ভালই লাগে।
.
-কিছু বলছ না কেন?
-কি বলব,
-এতক্ষন ধরে কত কথা বললাম,কিছু তো বল
.
আমি তবুও চুপ করে আলিশার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ও এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল,ধুপ করে বসে পড়ল ব্রেঞ্চে।আমি টুপ করে ফুল টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম.
-ভালবাসি তোমাকে,
.
এটুকু বলে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করলাম।হয়ত থাপ্পড় টাপ্পর মারতে পারে কিন্তু এমন কিছু হল না। কয়েক সেকেন্ড যেতেই আমি হাসির শব্দ শুনলাম, আলিশার হাসির শব্দ।
.
আমি চোখ খুললাম।আলিশা বলল,
-তুমি সোধরাবানা কখনো?
-না,
-এভাবেই ভালবাসবা?
-হুঁ,
-যাও, আমিও ভালবাসি,
.
আমার মুখে হাসি ফুটল,আমি আইস্ক্রীম ওর হাতে দিয়ে ওর পাশে ব্রেঞ্চে বসলাম।নিজেকে বড়ই সুখি মনে হচ্ছিল।আলিশা আইস্ক্রীম খাচ্ছিল, আমি তাই দেখতে লাগলাম।
কিছুক্ষন পর আমি চারপাশে তাকালাম,সব কপলেরা হাত ধরে বসে আছে শুধু আমরা বাদে।আমি মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে আলিশার দিকে তাকালাম।ও হয়ত আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বলল,
-একটা ঘুষি মারব, প্রথম দিনেই হাত ধরার শখ,
.
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
-তুমি কিভাবে বুঝলে ?
-বুঝি,
-আচ্ছা হাত ধরব না।
.
মিনিট খানেক যেতেই মনে হল আলিশার হাত আমার হাতের উপর।আমি প্রথমে হাতের দিকে তারপর আলিশার মুখের দিকে তাকালাম,ওর মুখ হাসি হাসি।ও হাসতেই হাসতেই বলল,
-ধরতে মানা করছি বলে ধরবেনা,কিছু জিনিষে একটু জোর করতে হয়,
আমিও হাসতে হাসতে বললাম,
-হুম,এবার থেকে করব।
.
আমি আলিশার হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,আমার হাত দিয়ে ওর হাত ধরলাম।ভাল করে ধরলাম।যেটার ছাড়াছাড়ি নেই আর।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×