somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ দু'জনার দুটি পথ দু'টি দিকে গেছে বেঁকে....(১০)

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব (৯)

"মা" কে আর ধরে রাখা গেলনা, চলে গেলেন পরপারে, বড় ভাইয়া মাষ্টার্স দিয়েই জয়েন্ট করলেন একটা স্কুলে, ওনার এমনিতেই অনার্সে ভাল রেজাল্ট ছিল, সেকেন্ড ক্লাস ফাস্ট, পরে মাষ্টার্সে সেকেন্ড ক্লাস সেকেন্ড হলেন, আসলে 'মা' এর চিকিৎসার ব্যাপারে এতো খাটুনি আর ব্যস্ত ছিলেন যে, ইয়ার ড্রপ করবে কিনা ভাবছিলেন, প্রস্তুতি ভাল ছিলনা, তবুও বাবা বললেন যা হবার হবে পরীক্ষায় এটেন্ড কর, আমি চেষ্টা করছিলাম ছোটখাট কোন জব করা যায় কিনা, তন্দ্রা টিউশানি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নিচ্ছিল।

বাবা একা হয়ে গেলেন, এমনিতেই বাবার চিন্তা চেতনাগুলো মিলতনা সবার সাথে, কোথাও বসে আড্ডা বা গল্প করা ওগুলো বাবার ধাচে ছিলনা, নামাজ, পত্রপত্রিকা বই পড়া এসব নিয়ে থাকতেন, এখন আরো বাড়িয়ে দিলেন, অনেকেই বাবাকে ইংগিত করতে লাগলেন, এখন কি করবেন, আপনার সেবা শশ্রুষার ব্যাপার আছে ইত্যাদি। বাবা বলতেন আমার কোন প্রবলেম হবেনা, আমার এতো কাজ যে এমনিতেই সময় পাইনা, প্রতিদিনের পত্রিকা পড়ে শেষ করতে পারিনা, এই বয়েসে অন্য কিছু করে আমি আর ঝামেলা বাড়াতে চাইনা, তারচে বরং বড় ছেলের জন্য বউ নিয়ে আসি, ওটাই ভাল।

ঘরে ভাবি আসল, সবার চোখ ভাবির দিকে, কেমন হয় না'হয়, শ্বাশুড়ী নেই, পারবেতো ঘর সামলাতে? নাকি দুইদিন পর জামাইকে বুদ্ধি দিয়ে আলাদা হয়ে যাবে, সবার চোখে তাক লাগিয়ে দিয়ে ভাবি নিয়ে নিলেন আমার 'মা' এর দায়িত্ব, গুছিয়ে নিলেন সব কিছু, আশে পাশের মা খালাদের কাছে ভাবী হয়ে উঠলেন সত্যিকার বউ এর আদর্শ প্রতিক, মা খালারা এসে গল্প করে যায় ভাবীর সাথে, ভাবী পান বানিয়ে দেয়, পানটা মুখে দিয়ে ওরা বলে, বুঝলে বউ, তোমার শ্বাশুড়ি ছিল এমন, এটা ওটা ইত্যাদি, আশে পাশে নতুন বউ আসলে সব শ্বাশুড়ী পুত্র বধূকে আমার ভাবিকে দেখিয়ে দেয়, বলে বউ কেমন একবার দেখে আসো, লাখে এক, বউরাও ননদ নিয়ে বেড়াতে আসে ভাবীকে দেখতে, "শ্বাশুড়ী আপনার এতো প্রশংসা করে যে, দেখতে এলাম, আর আমাদের একটু হিন্টস দিবেন কি করে সবার মন যোগাতে হয় হা হা হা।"

আমার প্রথম বর্শ অনার্স ফাইনাল এর রেজিষ্ট্রেশান চলছে, আমার খবর ছিলনা, তেমন একটা ক্লাশ করতামনা, সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খেত কিছু একটা করতে হবে, বাবার একাউন্টে তখনো কিছু টাকা ছিল, ভাইয়া সেলারী পেয়ে যতবেশী সম্ভব বাবার হাতে তুলে দিতেন, হিসেব করে দেখা গেল, যা খরচ হচ্ছে ভাইয়া তার অর্ধেক যোগান দিচ্ছে আর বাকী অর্ধ্যেক বাবার একাউন্ট থেকে, ব্যাপরটা নিয়ে আমার খুব চিন্তা হতো, একাউন্ট শেষ হয়ে গেলে কি হবে? ভাইয়া ভাবীর জন্য কষ্ট হতো খুব, নতুন বিয়ে করে কোথাও যে ঘুরতে যাবে তাও না, আমাদের জন্য তাদের সেক্রিফাইস কখনো শোধ করা যাবেনা, আসলে পারা যায়না এসবের প্রতিদান হয়না

বন্ধু জয়নাল, আমরা হাই স্কুল থেকেই একসাথে এবং অনার্সেও সেইম সাবজেক্ট নিয়েছি, আমার পাশের বাড়ির ল্যান্ড ফোনে কল করে বলল কিরে, তোর তো কোন খবরই নেই, আজ রেজিষ্ট্রেশান এর শেষ দিন, তাড়াতাড়ি কলেজ আয় ' রেজিষ্ট্রেশান ফি আর ছবি লাগবে, বাসে আসিসনা, টেক্সি নিয়ে আয়, আমি পড়লাম বিপদে, হাতে তো টাকা নেই, ভাবি এদিক ওদিক যার কাছে যা পেলেন যোগাড় করে নিয়ে আসলেন, কলেজে গিয়ে শুনি ক্লাস টিচার আমাকে দেখা করতে বলেছেন, গেলাম ওনার অফিসে, ওনি আমাকে ভাল করে দেখলেন, তারপর বললেন আমাকে চেন? জি সার চিনি, কিন্তু আমি তো তোমাকে চিনিনা, মোট কয়দিন ক্লাশ করেছ? দাড়াও আমি রেজিষ্টার খাতা নিই, খাতা উল্টিয়ে দেখলেন অনেকগুলো এবসেন্ট চিন্হ স্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে যেন, আমাকেও দেখিয়ে বললেন, আমি কি করে তোমাকে পরীক্ষা দিতে দিই বল, তুমিতো ক্লাশই করনি, নেক্সট এ এমন হবেনা কথা দিয়ে সেবার ছাড় পেলাম।

অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে চেষ্টা করছিলাম নিয়মিত ক্লাশ করতে কিন্তু এক নতুন বিপত্তি, প্রায়ই শুনি স্যার ক্লাশ নিবেনা কিন্তু উপস্থিত সবার রোল নাম্বার লিখে স্যারকে দিয়ে আসলে ওনি রেজিষ্টারে প্রেজেন্ট দেখিয়ে দেবেন।

ক্লাশে কারো সাথে খুব একটা পরিচিতি ছিলামনা একমাত্র জয়নাল ছাড়া, আমার ব্যাগে বই থাকতো, লিটল ম্যাগাজিন, সাহিত্য পত্রিকা ইত্যাদি, স্যার ক্লাশ নেবেনা সবাই বসে গল্পগুজব করছিল, আর আমি যেহেতু কারো সাথে সহজে মিশতে পারতামনা সেই সময়টা আমার বইগুলো আমাকে সংগ দিত।

চলবে.......

পরের পর্ব (১১)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:৫৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×