somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন জীবন ও একটি চাকরি পাওয়ার বাস্তব গল্প - পর্ব৩

১১ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমি ধিরে ধিরে ওর কাছাকাছি এসে গেলাম । দেখি সেখানে গেটের সামনে আরও ১০-১২ জন দাড়িয়ে । বিরাট লাইন । সালাউদ্দিন আমার সামনে। আমি তার ঠিক পিছেনে। দাঁড়িয়ে চুপ চাপ কাণ্ড দেখতে লাগলাম । দাড়িয়ে থাকার সময় আমার আলিবাবা চল্লিশ চোরের গল্প মনে পরে গেল । সেই চোরেরা যেমন গোপনে আস্তানায় যেত । মনে মনে ভাবলাম আমাদের সালাউদিন নয়া আলি বাবা B-) B-) B-) । যে গুপ্ত ধনের খোঁজে সালাউদ্দিন আসে তা হল ইংলিশ জব । যা হোক বাহিরে একটা ছোট সাইনবোর্ড । তাতে লেখা জব সেন্টার । ভেতরে যাবার ডাক এল । ভাবছিলাম ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা । যাব কিনা না , যেতে হল । একজন সুন্দরী ধরনের ইয়রপীয় যুবতী এসে বল্ল, তোমার সিভি দাও। বললাম আমার সিভি রেডি নাই। জানতে চাইল, কার থ্রুতে এসেছ ?
আমি একটু বললাম সালাউদ্দিন। সুন্দরী কাথা না বাড়িয়ে বল্ল অল রাইট , হেভ আ সিট প্লিজ ।

সালাউদ্দিন তখনও জানেনা যে তার আস্তানা আমি আবিষ্কার করে ফেলেছি। সে ভেতরে বিনা মুল্যে চা পান করছে । আমাকে দেখে তার ভ্রু প্রকম্পিত হল । আগমনং যথশ্য তড়িতং - বাক্য প্রমানিত । সালাউদ্দিন আমার কাছে এসে চোখ কপালে তুলে বলল ,''আহারে আম্নে ইয়ানে আই গেছেন , ঠিকানা কোনাই পাইলেন ? '' আমি উত্তর দেবার আগেই , ভেতর থেকে ডাক এল । সবাইকে সেমিনার হলে নিয়ে যার যার সিভি রাইটিং করতে হবে । কিছু ক্ষনের মধ্যেই শুরু হল ক্লাস ও পরিচয় পর্ব । এখানে বলতে হল আমি কার থ্রুতে এসেছি । সালাউদ্দিনের দিকে সবার একটু ঝাঝাল দৃষ্টি গেল । আমি আসায় এক জন ক্যান্ডিডেট বেরে গেল ।


টিচার এল দুজন । নাম ডানকিন টাবরদা, ইন্ডিয়ান বংশদ্ভুত সাদা । অপর জন আলপা প্যাটেল তাদের আলচনা থেকে জানলাম তাদের এই প্রোগ্রাম গত দের মাস যাবত চলছে। তারা যাদের চাকরি নেই,তাদের ট্রেইনিং , সিভি মেইকিং থেকে ইংলিশ ইন্সট্রকশন সব দিয়ে থাকে, এবং কোন টাকাও লাগেনা । যা হোক পুরান কাসুন্দি আর কত ভাল লাগে । সেদিন আমাকে নিয়ে তারা ক্লাস শুরু করল। প্রথমেই নিজের সম্বন্ধে বলতে হবে। বললাম , প্রথম বারই পাশ । আমাকে আর ২য় বার বলতে হল না । আলপা আমাকে যা বোঝার বুঝে নিল , ডান কিনও তাই । ব্রেক হল, ব্রেকে আবার চা পান , এবং বিনামুল্যে । দেখলাম কেও কেও সালাউদ্দিন কে ঝামা ডলা দিতেছে আমার জন্য ।

এর মধ্যে একজন এসে বলল ,''এই যে ভাই আপনার বাড়ী কুঠি ? ঢাকা নাকি হে । আমি একবার দেখলাম তারে। আবার শুরু করল, কি আমাদের দানবীর সালাদিন নিয়ে আইসেছে নাকি ? আমি চায়ে ফু দিচ্ছিলাম , আর কাপের ফাকে তার দিকে তাকিয়ে । শ্যার আপনাকে কি বুইল্ল গো ? চাকরির কথা কিছু বুল্ল ? আমাদের ত ১ মাস ধরে ম্যারাথন ইশপিকিং চলছে গো । বুজতে পাইরেছেন ??? '' B-)B-)B-)B-)B-) আমি বললাম, পরে কথা হবে চলেন ক্লাসে যাই । আমাকে আলপার যা বোঝার ছিল তা বুঝে নিয়েছিল আগেই । ডান কিনেরও একি কথা । যা বলেছিল আমার টিচার জুলি, এরাও সেই একি কথা বল্ল আমার ইংলিশ সেন্স ভাল , ইংলিশ কোর্সে না আস্লেও চলবে। শুধু জব ইনফরমেশন নিলেই চলবে।

সেদিন ক্লাস শেষে আমি আর সালাউদ্দিন বাসায় এলাম । আসার আগে বেবি চিকেন , রোস্টার , হার্ড চিকেন আর গরু কিনে ফ্রিজে মজুদ করলাম । হাল্কা বাজার সদাই। একবার বাজার করেলে মাস যায় । কিছু কিছু রান্না শিখেছি। হোয়াইট চ্যাপেল প্রিমিয়ার বাজারে গেলে এক্সট্রা খাতির পেতাম । একটা ইলিশ ৫ পাউন্ড । এক ব্যাগ ঝর ঝরা বাসমতী ৬ পাউন্ড। দেশি সব ঈ আছে। লাল মরিচ , গোল মরিচ, আদা ,লবন, চিনি , সব ধরনের বাঙালি রসনা । ব্রিক্লেইন থেকে ইস্ট লন্ডন মসজিদ হয়ে বারক্লেস ব্যাংক এর গলি পর্যন্ত এক তরফা বাঙ্গালিদের ।


যা হোক দেশে থাকতে অনেক সময় পেতাম । এখন ঘরে বাহিরে ব্যাস্ততা জড়িয়ে ধরে । দেশ থেকে আসার পর সবার সাথে এক আধটু যোগা যোগ করতাম । বন্ধু বান্ধব , ভাই বোন ফোন করলেই সবার কেবল আবদার । হয় মোবাইল না হয় ল্যাপটপ চাই । কাউকে না বলাতাম না । যা হোক যে তিন দিন ক্লাস থাকত সেই তিন দিন বাদে অন্য দিন গুলো ২ দিন আল্পার সাথে জব সার্চ করতাম । আল্পা আমাকে অন্য ছাত্রদের চাইতে আলাদা চোখে দেখত । সে প্রতিদিন আমাকে একটা করে ক্যান্ডি বার দিত । মাঝে মাঝে চিপ্স । সেটা নিয়েও সালাদিন বল্ল '' মারে মা , আম্নের কি কপাল, আরতে লাগে আল্পা আম্নেরে পছন্দ কইচ্চে, বিয়া করি ফালান '' B-)) B-)) B-)) B-))

আমাকে আর কয়েক জন কে জব সেন্টার থেকে স্ক্রিনিং টেস্ট এ ডেকে পাঠাল । সালাদিন ও তার অধিকাংশ এই তালিকার বাহিরে ছিল তাই নিয়ে তাদেরৃ আফসস এর শেষ নাই । আমি পিছনে এসে আগে স্ক্রিনিং এ চলে গেলাম । আর ওরা এখনও উচ্চারন ভোকাবুলারি করতেছে। যা হোক আমার পারফরমেন্স এ সালাদিন আগেই ভবিষ্যৎ বানি দিল । আমার সবার আগে জব হয়ে যাবে । আর জব হলে ওকেও যেন আমার সাথে নেই । আমি বললাম আচ্ছা নেব । প্রথম ইন্টারভিউতে গেলাম , স্ট্র্যাটফোরড সেন্টারে।

সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতেছি আর আবার ফ্রি চা । সাথে আরও দু এক জন । আমার সাথে পরিচয় হল আবির ভাইএর সাথে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র । তার অভিজ্ঞতা আর পারদর্শিতা শুনে টাস্কী খেয়ে গেলাম । দশ বছর রেস্টুরেন্ট এ কাজ করার অভিজ্ঞতা । =p~ =p~ =p~ =p~ =p~ ডাহা মিথ্যা কথা । এদিকে আমার মাথায় ঘুর ঘুর করতেছিল আমার ত কোন অভিজ্ঞতা নাই । আমাকেওত একটা কিছু বলতে হবে , কি বলব আমাকে আল্পা বলে দিয়েছিল কিছু বানিয়ে না বলতে , বা মিথ্যা না বলতে। যা হোক আমাদের সাথে কিছু ইয়রপিয়ান ছিল সেদিন । তারাও ফুটবলের মত ইংলিশ বলে। আগা মাথা নাই ।

শেষে আমাদের বাঙ্গালিদের পালা আবার এল । ৫-৬ জনের ভাংগা চুড়া ইংলিশ আর নারভাসনেস তাদের ইংলিশ বক্তৃতার মধ্য বাংলা বলে ফেলা আর আই কাম , ইউ গো জাতীয় কথা শুনে ইন্টার ভিউয়ার আমার পরযন্ত আর শোনার ধরয্য ধরতে পারলেন না । শেষ পর্যন্ত আমার ইন্টার্ভিউ আর হল না । আমাদের সাথে এক বাঙ্গালী আপাও ছিলেন। তিনি খেপে গিয়ে বল্লেন,'' হালারা করছে কি? বাইঞ্চোত **** ইংলিশ কইতে পারেনা , লন্ডন আইছে। '':D:D:D:D:D মেয়েদের মুখ এমন খারাপ হয় আমার ধারনাও ছিল না । নাম বিজলী আপা। সে মুখ খুললে কানে তালা দিয়া রাখাই ভাল ।

চলবে ...।
পর্ব ৪
Click This Link
আগের পর্ব ২
Click This Link
পর্ব ১
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:৪২
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×