somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন জীবন ও একটি চাকরি পাওয়ার বাস্তব গল্প - পর্ব২

১০ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমিও ভেবে দেখলাম ,ওর কথার গুরুত্ব বুঝতে আমার ওনেক দেরি হয়ে গেছে । সালাউদ্দিন প্রতদিন সকালেই কাজ খুজতে এদিক সেদিক যেয়ে আড্ডা দিত । লন্ডনের শাহবাগ খ্যাত আলতাব আলি পার্ক এ ঘোরা ঘুরি আর সিভি নিয়ে এদিক সেদিক চাকরির চেস্টা করত। ক্লাসের চিন্তা ওর তেমন ছিল না । ক্লাস তেমন করতও না । এক্টাই চিন্তা কিভাবে সে লন্ডনে টিকতে পারবে ।

যা হোক আমি কলেজে জয়েন করলাম । ক্লাস এ যাই সপ্তাহে তিন দিন । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয় । একেক্টা ক্লাস ৩-৪ ঘন্টা করে । দিনে ২ টা ক্লাস । মাঝে এক ঘন্টা ব্রেক । নতুন অনেক কিছু দেখলাম । আমার শিক্ষক শিক্ষিকা বিভিন্ন দেশ থেকে ছিলেন ।তাদের সাথে পরিচিত হলাম । বেসিক ইংলিশ কোর্স ধরিয়ে দিল কলেজ থেকে , যদিও আমার ইংলিশ ভাল ছিল । সেই সাথে বিল করে দিল ৮০০ পাউন্ড ।বাংলাদেশি টাকায় ১লাখ টাকা । এই টা পাশ করলে তবে মেইন কোর্সে যেতে দেবে।


বিরাট পেইন । সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসি মুখে বাচ্চা দের মত ক্লাসে খাতা খুলে বস । ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট হেড ডক্টর মেবেল , আর বাকি ২জন টিচার, জুলি মালায়শিয়ান এবং এঞ্জেলা ছিলেন জার্মানি থেকে । মেবেল অপেক্ষাকৃত বয়স্ক এবং এশিয়ান দের ভাল চোখে দেখত না
। তার উপর ছিল মাথা মোটা । খালি অপেক্ষা করতাম এর ক্লাস কখন শেষ হবে। ক্লাস এ আসতে দেরি হলে আর রক্ষা থাকত না । সকাল ৯ টার পর ক্লাস এ আর ঢোকা এলাউড না সেই জন্য সময় মত ঢুকতে না পারলে আর চান্স নাই । কলেজের অটমেটিক দরজা নিজেই লকড থাকবে ।

এইভাবে ২ -৪ দিন ক্লাস করার পর ২ এক জনের সাথে পরিচয় হল। আমার ক্লাসে বাঙালি , পাকিস্তানি আর ইন্ডিয়ান বেশি । দু একজন নেপালি পাওয়া গেল । সবাই বেশ ভাল । আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মিশতে এসে শেখা হল অনেক কিছু । একে আন্তর্জাতিক বলা যায় কিনা সন্দেহ আছে । কারন আমার কলেজে সাদা চামড়ার ছাত্র ছাত্রি ছিলনা বললেই চলে। কলেজের অ্যাডমিন কাম রিসিশনিস্ট ২-৩ জন সাদা ছিল ।
যা হোক বাংলাদেশী স্কুল কলেজে থেকে এসে যখন দেখে এশিয়ান কলেজ তখন অনেকের ব্রিটিশ দের সাথে পড়তে না পাড়ার আক্ষেপ মর্মান্তিক ।

মেবেল এর ক্লাস শেষ হলে আসত ডক্টর জুলি । নিউক্যাসেল ইউনিভারসিটি থেকে পাশ করে সদ্য আমাদের টিচার । মুস্লিম এবং অনেক ফ্রেইন্ডলি। ছাত্রদের অনেক খেয়াল রাখতেন ও মেজাজ মর্জি আবদার রক্ষা করতেন । আমি বিশেষ ভাবে তার প্রিয় ছাত্র হতে পেরেছিলাম । বেসিক গ্রাম্মার আর স্পিকিং আমার এম্নিতেই ভাল । নতুন করে আমাকে আর শিখতে হত না। বরং আমি কেন ঐ ক্লাস এ সেই প্রশ্নই প্রতিদিন করতেন আর বলতেন মেইন কোর্সে গেলাম না কেন । উত্তর আমার কলেজ ভাল জানত ।

ডক্টর এঞ্জেলা একজন অমায়িক টিচার । জাতিতে সাদা এবং জার্মান । এতটাই ভাল ছিলেন বুঝতে পারতাম না যে সে কি টিচার না বন্ধু । এঞ্জেলার সব চাইতে ভাল দিক ছিল সে দক্ষিন এশিয়ার ছাত্রদের সমীহ করতেন,পাশা পাশি তাদের হেল্প করতেন । এঞ্জেলা ছাত্রদের পড়ানোর সাথে সাথে জব পাওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতেন । যখন আমরা কেও জব পেতাম তিনি ক্লাস এ সেলিব্রেট করে তার জব পাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করাতেন অন্য সবার মধ্যে। তাতে বাকিরা বুঝতে পারত আর অভিজ্ঞতা কাজে দিত ।

ক্লাস মেট হিসেবে প্রথম থেকেই এক পাকিস্তানি মেয়েকে পেলাম । নিরেট ভাল মেয়ে। মেধাবি আর চমতকার ব্যাক্তিত্ব ছিল তার । দেখতে ভাল হওয়ায় অনেক ছেলেই তার প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছিল । এই নিয়ে আমাকে কটু কথাও কম শুনতে হয়নি । বাংগালি ছেলেরা বা মেয়েরা ইন্ডিয়ান/পাকিস্তানি মেয়ে ছোকরা দেখেলে মাথা গুলিয়ে ফেলে। মনে করে ক্যাটরিনা কেইফ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যখন অন্য বাঙালি ছেলেরা তার রুপ নিয়ে গবেষণা করত , আমি তখন ওর সাথে কোর্স ওয়ার্ক করতাম ।

পাশা পাশি আমার জব নেই, ওরও জব নেই, একা একা বাসায় খাবার দাবার রান্না করতে না জানা আর সমস্ত কাজের চাপ নিয়ে কথা হত । মাঝে মাঝে ক্যাফেতে এক সাথে চা খেতে যেতাম । প্রায়শই আমি বিল দিতে পারতাম না। পরে অবশ্য একটা চুক্তি করে ছিলাম এক তরফা কেও বিল দিতে পারবে না। যত যাই হোক আমি মেয়েটাকে স্রেফ ভাল বন্ধু হিসেবেই নিয়েছিলাম। আর কিছু নয় । সে অনেক মেধাবি আমাদের ক্লাসেও সবার উপরে ছিল । আমার পড়ার ব্যাপারে অনেক সাহায্য পেয়েছি তার কাছ থেকে। আর এখনও সেই বন্ধুত্ব আটুট আছে । সে এসেছিল সিঙ্গেল, এর ১বছর পর হয় ডাবল আর সম্প্রতি ত্রিপল ।

হালাল হারাম মেনে চলি। তাই ম্যা্কডনাল্ড ঘরের পাশে থাক্লেও যেতাম না। চিকেন চিপস খেয়েও পোষায় না ।বাসায় ফিরে সালাউদ্দিন এর সাথে কথা হয় । কিচেনে যাই রান্না করি, ক্লিনিং করি । নুডুলস কত প্রকারে রান্না করা যায় তাই করি । নুডুলস উইথ মিক্স ভেজেটেবল, নুডুলস উইথ ফিস, নুডুলস উইথ টেসিটং সল্ট অ্যান্ড এগ , নুডুলস লাইক স্যুপ । এই খেয়ে তিন বেলা চলে । আমাকে একদিন সে আমার এই পাকিস্তানি মেয়েটার সাথে দেখেছে । কথায় কথা একদিন জিজ্ঞেস করল , সে কে ? আমি বললাম কার কথা বলে? ''বলল , মাথায় কাফড় দি চলে, সন্দর করি চেহারা''

আমি নাকি লাঞ্চের সময় একসাথে খাচ্ছিলাম । বললাম কেও না , আমার সাথে পড়ে । ক্লাস মেট । ''সে উত্তরে আমাকে যা বল্ল ,আহারে আম্নের কি কপালে না, কি সুন্দর সুন্দর মাইয়া আম্নের লগে আইয়ে, বিয়া করি ফালান না , হ্যাতে সিটিজেন নি ? বিয়া করলে ফাস পোর্ট পাই যাইবেন '' ... আমি আর কি বলব , কাল কে কি খাব এই চিন্তায় অস্থির । এমি মাসের ভাড়া কোথায় পাব । কারও কাছে যে টাকা ধার নেব সে মানুষও এখানে নেই । সবাই ছাত্র । একি দশা । জব নেই । কেও কেও নাকি মসজিদে থাকে । কেও বন্ধুর কাছে শেয়ার করছে। আর আত্বিয় এখানে থাক্লেও চেনে না ।

এই যখন অবস্থা হাস ফাস লেগে যাচ্ছে , আশা নেই আর এখানে থাকতে পারব । এমন একদিন ভোঁরে খেয়াল করলাম সালাউদ্দিন প্রতিদিন স্যুট টাই পড়ে যেন কোথায় যায় । আর আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই লাপাত্তা । তার সাথে আমার গুড মর্নিং বলার চান্স হয়না । রোজ কার মত একদিন সকালে সে বের হল । আমিও সেদিন ভাব্লাম আজ দেখে নেব কই যায় ।



দেখলাম জুব্লি স্ট্রিট এর উল্টা দিকে খিচ্চা হাটা দিছে ............।


চলবে :)

আগের পর্ব ১
Click This Link
পরের পর্ব ৩
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১:৩৫
৩৯টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×