somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন জীবন ও একটি চাকরি পাওয়ার বাস্তব গল্প - পর্ব ৪

১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
যাক নভেম্বরের শুরুতে সেবার প্রচন্ড শীত । বাহিরে স্নো পড়া দেখলাম সন্ধ্যার দিকে । জীবনে প্রথম তুষার পড়তে দেখার অনুভূতি চমৎকার । বাসার দিকে আসতে পথে হোয়াইট চ্যাপেল হয়ে জুব্লি স্ট্রিট এর দিকে যত আসছি ফাকা পথে তত শুভ্রতা বাড়ছে খুব করে কয়টা ছাবি নিলাম । মোবাইলে তোলা ছবি। তবু ভালই আসল ।


রাতে কোন রকম খেয়ে ডুভেটের নিচে ঢুকে গেলাম । সেনট্রাল হিটিং এর ব্যাবস্থা থাক্লেও আমার তা সহ্য হত না। সালাউদ্দিন বল্ল, ভাই শীত পইরতেছে , ইগা ছাইত্তাম নি ? আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম , না। তার আর কিছু বলার ছিলনা ।সালাউদ্দিন ১০ টা বাজেই কাইত । শুয়ে গেলাম আমিও। লাইট অফ করে আমি তখনও ঘুমাই নি। রাত ১২ টার কিছু বেশি বাজে।

কিছুটা তন্দ্রা আসবে, এমন সময় দেখি সালাউদ্দিন ঘুমের মধ্যে কথা বলে। প্রথমে ভাবছিলাম ফোন আসছে । পরে আমার মোবাইলের টর্চ মেরে দেখি ওর ১০ হাতের কাছে কোন মোবাইল নাই । এমন জিনিস আমি আগে দেখিনি। পিস একখান । '' উম চাচা, শুইন্তেছি, আপ্নে আইবেন নি? জি , হ্যা হ্যা , শুইন্তেছি আফনে কন , হ্যা হ্যা '' B-)B-)B-)B-)B-)B-) । ঘুম উড়ে গেল । হাসি পেল । কিন্তু বেশি রাত হওয়ায় অনেক কস্টে তা আটকালাম ।

সকালে ক্লাস এ যাব ঘুম থেকে উঠেছি । একটু দেরি করে ফেললাম । যা হোক বরফের উপর না খেয়ে দিলাম দৌর । ৭-৮ ইঞ্চি বরফ জমেছে। চারিদিকে শুধু সাদা শুভ্রতা। যেয়ে দেখি মেইন গেট বন্ধ হয়ে গেছে। অসবর্ণ স্ট্রিট এ পৌছাতে পারলাম , কিন্তু কলেজে ঢুকতে পারলাম না। দেখলাম আমার মত আরেকজন আটকা পড়েছে । দেখে ইন্ডিয়ান মনে হয়েছিল। আর আমাকে সে ভেবেছিল পাকিস্তানী ।


দুজনেই একি সমস্যায় পরেছি , তাই টুক টাক আলাপ পরিচয় হল। নাম চেরী, বাসা ঢাকা। আমিও বললাম আমি ঢাকার । শুনে সেও অবাক । তারপর বল্ল এখানে দারিয়ে না থেকে কোথাও বসি । গেলাম আলতাব আলি পার্ক এ । সবুজ পার্ক সাদা ধব ধবে হয়ে গেছে। তার মধ্যে আমি আর চেরী গল্প করছি । অপেক্ষা কখন ওই দরজা খোলে । চেরীর সাথে গল্প করে খুব ভাল লাগল , এক্স ভিকারুন্নিসা- ঢাকা ইউনিভারসিটি অনার্স মাস্টার্স । চেরী পরে আমার ব্যাচে অন্য সেকশনে।বয়সে আমার বড় ,কিন্তু আলাপে সেটা ছাপিয়ে গেল

প্রথম দিনই ফোন নাম্বার পেলাম । কয়দিন কথা বলেই খুব জমে গেল বন্ধুত্ব। যখন তখন রাত দিন কথা হয় । অনেক গল্প। কথা শেষ হয়না , মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যায়, সালাউদ্দিন আমাকে দেখে আর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে , ''হিতে আইন্নেরে এত কিয়া কয় ? বাউরে ফোন কানের মইদ্যে ফিট করি লইছেন হারাদিন''B-)B-)B-)B-)B-)B-)B-)। কলেজে একদিন যাওয়ার পথে সকাল ৮ টায় চেরী পেছনে থেকে এসে আমাকে একটা এস্করট দিল। দুর্ভাগ্য ক্রমে আমার খালা একি মুহূর্তে বিপরীত দিক থেকে আসছিলেন , আমি তাকে দেখে ভেবেছিলাম একটা সালাম দিয়ে পার হয়ে যাব। যেই আমি খালার মুখো মুখি সেই মুহূর্তে চেরী পেছন থেকে আমার গায়ে একটা ক্যাঙ্গারু লাফ দিল । আমার খালা হতভম্ব ! =p~ =p~ =p~ =p~ =p~
পরে আমি বললাম এটা কি হল? বল্ল, তোমাকে চমকে দিতে চাইলাম। আমি আর কি বলব , বললাম ভাল টাইমিং হয়েছে। প্রশ্ন করল কেন, আমি বললাম যে আমাদের সামনে দিয়ে গেলেন, উনি আমার খালা ।
যা হোক ক্লাস এ আসি। চেরি গেল তার ক্লাস এ। আমার ক্লাসে ম্যাবেল বক বক করছে। বিকেলে রেসাল্ট দেয়ার কথা । ইংলিশ কোর্সে ভাল ভাবেই উতরে গেলাম ।

মেইন কোর্সের ক্লাস করতে এসে খুব ভাল লাগল। এখানে আমার টিচার ছিলেন চাইনিজ দেখতে ডক্টর পল হাউয়েই ইনি লন্ডনের জগত বিখ্যাত অক্সফোর্ড এবং আমারিকার হারভাড থেকে পড়েছেন , আমাদের নিতেন রিসার্চ প্রপোসাল । আর মার্কেটিং এ পেলাম ডক্টর মৌ উইলিয়াম, দেশ ঘানা , কাল মানুষ কিন্তু তার যায়গায় সে সেরা।
কোনদিন বই খুলে পড়ায় না , প্রজেক্টটরেও না। নিজে বাসা থেকে স্টাডি করে এসে লেকচার দিত আর আমাদের না বোঝা পর্যন্ত আপ্রাণ চেস্টা করত । খুব ভাল টিচার । আর পেলাম ডক্টর সিদ্দিক ইউসুফ, শ্রিলঙ্কান , পড়াতেন ফিন্যন্স । কড়া মানুষ , রোবট টাইপ , হেড অফ একাউন্টিং , লিডস ইউনিভার্সিটি, । কোন দিন হাসতে দেখতাম না, এটা পাশ করতে আমার জান বেরিয়ে গেছে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট নিতেন , ডক্টর এলেক্স , রোমান লেডী, যেমন সুন্দরী তেমন কড়া , লন্ডণ মেট্টপলিটন ইউনিভার্সিটির হেড অফ বিজনেসআর ম্যানেজমেন্ট নিত ডক্টর নবী , আমাদের দেশি । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ডক্টর ইউনুসের সহকর্মী বন্ধু বর।

প্রথম ক্লাস , ডক্টর নবী নিলেন । সে অভিজ্ঞতা কোনদিন ভুলে যাওায়ার নয়। রোল কলের মধ্যে এক ছেলের মোবাইলে রিং হয়েছিল। সাথে সাথে তাকে বলা হল মোবাইল সুইচ অফ করতে।
আর সেটা তার কাছে জমা দিতে। ঘটনা এই টুকু হলে চলত । দেশ থেকে আসার পর সবারি ফোন আসত । আসলে আমরা কেমন আছি এটা নিয়ে দেশের সবাই চিন্তা করত। এটা প্রথম দিকে হয়। পরে ঠিক হয়ে যায় কিন্তু না ডক্টর নবী ছেলেটার মোবাইল ক্লাসের এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছুড়ে মারলেন , ব্যাস সেটা খণ্ড হয়ে ব্যাটারি লন্ড ভন্ড হয়ে গেল ।
:D:D:D:D:D:D:D:D


ক্লাস ব্রেকে আমরা চা খাই, ক্যাফেতে সবার সাথে দেখা হয়। চেরির সাথে মকাচিন্ন আর চকলেট ভাগা ভাগি করে ডক্টর নবীর ঘটনা বললাম। জবাবে চেরি বল্ল তার ক্লাসেও একই ঘটনা ঘটেছে । অন্য কলেজে যখন ছেলে মেয়েরা হলিডে নেয়, আমরা তখন ধুমিয়ে ক্লাস করছি। দেখি পাশের কলেজের ছেলেরা ফুল টাইম জব লেটার নিয়ে কাজ করছে। আর আমার জব নাই এদিকে ক্লাস করেই কুল পাচ্ছিনা। আমাদের ৯০ % এর নিচে উপস্থিতি থাকলে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হত। পর পর তিন টা ক্লাস মিস গেলে জবাব দিহি , ১০ ক্লাস মিস মানে ভিসা ডিসমিস ।



এইভাবে ক্লাস করি, বাসাই যাই। চেরির সাথে ওভার ফোন অনেক কথা হয়। সে ভাল রান্না জানত । ভাল নাচত । দিন রাত সময় পেলেই স্কাইপে দেখা দেখি চলে। রান্নার টিপস দেয়, রান্না করি, তার অনেক শর্ট কাট রেসিপি ছিল , দারুন সেগুলো । হেল্পফুল ফ্রেইন্ডলি হিসেবে চেরি আমার কাছে অতুলনীয়া হয়ে উঠল । চেরিও মনের মাধুরী দিয়ে বলত...এইভাবে, বাদরকে লাই দিলে যা হয়,মাথায় ওঠে । আর আমি চেরির আদরে হলাম হনুমান, এরপর কথা ছলে সীতা হরন ... ;););););););););)

একদিন ক্লাস শেষে দেখি একজন ''বাংলাদেশি বিউটি'' কাদতেছে...

চলবে...।

আগের পর্ব ৩
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৩০
৪১টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×