somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন জীবন ও একটি চাকরি পাওয়ার বাস্তব গল্প - পর্ব ১

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে বহু দেশ ডিঙ্গিয়ে লন্ডনে এলাম । লক্কড় ঝক্কর এয়ার পোর্ট । এর চাইতে আমাদের দেশের এয়ারপোর্ট অনেক ভাল । প্রথমে হিথরো বিমান বন্দরে নেমে তিন নাম্বার টার্মিনাল থেকে ট্যাক্সি ক্যাবে চেপে ইস্ট লন্ডনে আসি । ভাড়া নিয়েছিল ৫০ পাউন্ড,সময় ২০০৯ সাল । বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সারে ৫ হাজার টাকা । কলজে ফেটে গিয়েছিল । যা হোক, আমার খালু লোক পাঠিয়েছলেন, একজন আমাকে হোয়াইট চ্যাপেল জুবলি স্ট্রিট এ একটা বাসায় নিয়ে আসে। বাংলাদেশ থেকে সকাল ৯টায় প্লেন ধরছিলাম, লন্ডন যখন আসি তখন রাত ৯ টা । ১২ ঘন্টা জার্নি করে ক্লান্ত । দেশের বাহিরে প্রথম আসি। অভিজ্ঞতা শুন্য। খাবার সাথে ছিল না।

লজ্জায় খাবার চাইতেও পারলাম না। দেশে কোনদিন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। সারা রাত ক্ষুধা নিয়ে এপাশ ওপাশ করে কাটল । ভোর সকালেও কি করব বুঝতেছি না । ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, তা বুঝতে পারছিলাম । অতঃপর প্রায় সকাল ৯ টায় বাসার বাংলাদেশি আপা বললেন খেয়ে নাও।ভাবলাম এবার তাহলে আমার সকল জল্পনা কল্পনার অবসান হল।তার ২ বছরের বাচ্চা যা খায় আমাকেও তাই দিলেন । কর্ণ ফ্লাক্স উইথ মিল্ক। অতি চমৎকার উপাদেয় খাবার । কিন্তু ওই খেয়ে আমার কি পেট ভরবে? মনে মনে প্রচন্ড রাগ হল । যতক্ষন প্লেন এ ছিলাম, প্লেনে ক্ষিধেটা তেমন লাগেনি । তার ওপর প্রথম প্লেন জার্নি । পানি আর দুধ খেয়ে আমার শরীরই দুর্বল হয়ে গেল । দরকার ছিল ড্রাই ফুড। যা হোক খাবার বলতে ভাতের চেহারা দেখলাম প্রায় বিকেলের দিকে । প্রান রক্ষা হল । ভাতের কি দাম , সেদিন বুঝলাম ।


লন্ডনে এসে আর সবার মত আমি চিন্তিত ছিলাম না । যখন সবাই একটা যে কোন জব পাওয়ার আশায় ঘর থেকে প্রতদিন অচেনা পরিবেশে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াত সে সময় শুয়ে আমি ঘরেই ঘুমিয়ে কাটাতাম। তাদের হতাশা কেন তখন ও টের পাইনি। একটা চাকরি ৬ মাস ধরে খুজে বের করতে পারছে না , এই গল্প অনেক শুনেছি। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় আব্বু আমাকে ২ লাখ টাকা , মানে ১৫০০ পাউন্ড হাতে দিয়ে দিয়েছিল ।বাংলাদেশের অই টাকার উপরই আমার চলতে হচ্ছিল । সত্যি বলতে দেশে আমার নিজের হাতে খুব বেশি টাকা হিসাব কিতাব করে খরচ করিনি। যা লাগত বাবা মাকে বলতাম সাথে সাথে পেয়েও যেতাম । আসলে ২লাখ টাকা দিয়ে লন্ডনে কয়দিন যায় এটা আমার মাথাই আসে নি । স্নাতক হওয়া পর্যন্ত যে মুডে ছিলাম তাতে জীবনে দায়িত্ব কি জিনিস জানতাম না ।

অবশেষে বের হলাম ১ দিন পর। আমার লন্ডন লাইফ শুরুতেই দরকার হল হাড়ি পাতিল। ছুটলাম ডুভেট (লেপ) বিছানার চাদর বালিশ এই সব কিনতে । দেশ থেকে লাগেজ ভরা এনেছিলাম, কাজের জিনিস কিছু আনা হয়নি। কোথায় এসব পাওয়া যায় জানতাম না । মার্কেট খুজছিলাম । পরে জানলাম বাংলাদেশের মত এখানে এসব মার্কেটে পাওয়া যায়না । সেইন্সবেরী বলে একটা সুপার সপ আছে সেখানে সব পাব নিত্য প্রয়জনীয় । গেলাম সেইন্সবেরিতে । বিরাট দোকান । আগা মাথা নাই । ফ্যাক্টরি দেখতে বাহিরে থেকে যেমন হয় অনেকটা ওরকম। যা হোক , বেড শিট , কভার , ডুভেট , হাড়ি পাতিল পুরা সংসার, শুধু একটা বউ বাকি রইল । সব মিলে বিল ভালই আসল , দিলাম ৪৫ পাউন্ড । মোবাইলের জন্য সিম কিনলাম ৫ পাউন্ড টপ আপ করা । বাসায় এসে দেখি আছে আর ১৪০০ পাউণ্ড । দেশে যেমন ডাক দিলেই রিক্সা পাওয়া যায়। এখানে তেমন নেই। যে কারনে সব জিনিস আমাকেই টান্তে হল । একদিনে ১০ হাজার টাকা শেষ ।



প্রথম মাসের এডভান্স সহ বাসা ভাড়া দিলাম ৪০০ পাউন্ড । এক বেড শেয়ার , সাথে আরেকজন মানে এক রুমে ২জন । এক বেড দেশি টাকায় ৫০ হাজার টাকা ভাড়া । পাউণ্ড বাতাসের মত উড়ে যাচ্ছে। না দিয়ে উপায়ও নাই । ৫ পাউন্ডের টপ আপ ১০ মিনিট ও কথা বলা যায়না , তার আগেই শেষ । দেশ থেকে এসে গায়ে আগুন জলতেছিল অক্টবরের শীতে । ৬০০ টাকায় দেশে কত ক্ষন কথা বলা যেত ! বাকি থাকল আর ১ হাজার পাউন্ড । আমি তখনও ঘোরের মধ্যে। কিভাবে এত খরচ সামলাব এমন কিছু মাথায় ভাবনাতেই আসেনি ।
পরের মাসে গাড়ি ভাড়া ,বাসা ভাড়া , খাবার ,ফোনবিল আর কিছু কেনা কাটা করে হাত খালি হয়ে এল । ছিল ৪০০ পাউন্ড । এইবার আমার টনক নড়ল ।

এম্নিতেই অনেক টাকা পয়সা খরচ করে ফেলেছি। বাসা থেকে এতগুল কাচা টাকা দিয়েছে । এখন আবার টাকা কিভাবে চাই ?? শেষ পর্যন্ত অন্য ছেলেরা কেন এত দিন জব জব করছে তা বুঝতে পারলাম সেদিন ই বুঝলাম আমি অনেক বোকা । আর বাস্তব জ্ঞান আমার একেবারে ছিল না । থাকবে কিভাবে, বাসায় থাকতে কোন দিন কোন কাজ করতে হয়নি। এক গ্লাস পানিও নিজের হাতে নিয়ে এসে খেতাম না। তাই কাজের কথা মাথায় আসেও নি। বাসায় বাবা মা চিন্তা করবে , তাই আর টাকার প্রয়জনের কথা বললাম না । বেমালুম চুপ করে থেকে ভাবছিলাম কি করব । ৫-৬ লাখ টাকা দিয়ে এসেছি । ফিরে গেলে সম্মান শেষ অকর্মা হিসেবে নাম রটে যাবে । যত যাই হোক একটা কিছু করে থাকার চিন্তা করলাম ।

রান্না করতে পারিনা । প্রতিদিন সকালে নুডুলস , বিকেলেও তাই , রাতেও তাই চলে । দেশে থাকতে কেন রান্না শিখিনি সে জন্য আফসোস লাগছিল । না খেয়ে ৭-৮ ঘন্টা ক্লাস করা যায়না । যা হোক আমার রুম্মেট হিসেবে যাকে পেলাম , সে বাংলাদেশী , বাড়ি ফেনি , নাম সালাউদ্দিন , বাচ্চা ছেলে ।ইন্টার পাশ করে ভিসা নিয়ে লন্ডন এসেছে । এত অল্প বয়সেই বাবা মা বিদেশে ছেড়ে দিল কিভাবে , ভেবে অবাক হয়েছিলাম । সে আরেক ভাইয়ের পরিচিত । আমার সাথে থাকবে । আমাকে প্রথম দিন জিজ্ঞেস করেছিল ''আইন্নের দেশ কোনাই'' ? একটু আঞ্চলিক ধাচে কথা বলত। আমিও খুব মজা পেতাম । বললাম আমার বাড়ি ঢাকা । সে বল্ল , অ ঢাকা নি ? কি নতুন বাড়ি কইচ্চেন , না আগে আছিল ? আমি বললাম না আমাদের বিভাগ ঢাকা।

পরের মাসেও ভাড়া দিলাম । হাত প্রায় খালি । ২ মাসেই ১৫০০ থেকে মাত্র ৫০ পউন্ড হাতে । বাসা থেকে আম্মা প্রতি দিন ফোন দিত । জিজ্ঞেস করলে বলতাম ভাল আছি । মিথ্যা বলতাম । ইচ্ছা করে । আসলে সত্য বললে আমার মা চিন্তা করবে । ফোন কেটে দিয়ে আমি কল করতাম আর বলতাম যেন চিন্তা না করে আমি ভাল আছি । বাংলাদেশে বাহিরে কথা বলা সাংঘাতিক খরচ । সালাউদ্দিন খুব এক্টিভ ছেলে । সে আমার সাথে থেকে কিছুটা অনুমান করতে পারত আমার ভেতরের ঘটনা কি ? একদিন বললাম টাকা প্রায় শেষ । সে আমাকে বল্ল '' ঘরে শুই শুই ফুটাঙ্গি করেন, হুতি থাইকলে আম্নেরে কে কাম দিব ? '' । আম্নে কাম টোকান না কিল্লাই ??

চলবে...।

পর্ব ২- এখানে ,
Click This Link

আগের পোস্ট
মনালিসা
১)
Click This Link

২)নবাব সিরাজ উদ-দৌল্লা-মীর জাফর ও বাংলার সকল পুতুল নবাব(ছবি ব্লগ)
Click This Link
৩)মুঘল সম্রাট-সম্রাজ্ঞী , রাজকন্যা-রাজপুত্র আর তাদের সম্রাজ্য --এক্সক্লুসিভলি অন আমার ব্লগ বায়স্কোপে
Click This Link
৩) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু অনন্য সুন্দর মসজিদ--সাজিদ এহসান
Click This Link
৪)বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহর নামকরনের গল্প -
Click This Link
৫)ইভ টিজিং , বাংলাদেশের মেয়েদের পোশাক পরিচ্ছদ কেমন হওয়া উচিৎ ?
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৫
৩৮টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×