somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ

১৪ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ দ্বিতীয় অংশ তৃতীয় অংশ
পথ ধরে চলি, পথ থেকে নেমে যাই জলে, কামড়ে ধরি বাতাসের আস্তিন। বুড়ো হয়ে আসা কাশবন, বট কটের কোটর, বৃদ্ধের লাঠির দাগ সব দেখি। পা থেকে বয়স খুলে রাখি হাইওয়ের কার্ণিশে তরুন ঘাসের চিকিমিকিতে। নিজেকে নিয়ে সবকিছু ভুলে থাকলেও দ্বিতীয় সত্ত্বার তৃতীয় চোখের পরিচর্যা ভুলি না। এ চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখা নিরাপদ। অসুন্দর দেখা যায় না। বৌকে এ চোখে দেখি না। আমার কপালও দেখি না।

এখন আমাকে বহন করে কমদামের টাটা এঞ্জিনের বাস চলছে। বাস চলছে রাস্তায়, আমি চলছি সবুজ মাছির পীঠে। আমার নিচে মাছি, মাছির নিচে পৃথিবীতে ছোপ ছোপ মানুষের দাগ। তার নিচেই স্বর্গ এবং প্রহসন পাশাপাশি। পেছনে ফেলে যাচ্ছি অভাব আর মানুষের ভন্ডামি। সব ব্লাউজ ছাড়া মহিলারা পথের ধারে রঙিন সুতো শুকাতে দিচ্ছে। তার আড়ালে তাদের শুষ্ক হাসি, শুষ্ক জীবন। কয়েক কিলোমিটার ধরে সারি সারি ফেরীওয়ালার বিলাপ। দু’একটা পাখির ডাক টিকতে পাচ্ছে না মানুষের ডাকের কাছে। তার চাইতেও ভয়ংকর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে এ মাছি। আমাকে বহন করার কোন শক্তিই তার নেই। সাথে থাকা গানের কথা বা আমার মগজ, কোন কিছুই তার জন্য নিরাপদ না। অথচ সে পরমানন্দে আমাকে বহন করে চলছে। উড়ছে আর ভাসাচ্ছে।

কোনভাবেই মাছির পীঠে বসে সিগারেট ধরাতে পারছি না। একটা সিগারেটের খুব প্রয়োজন ছিলো। বিশেষ বিশেষ মূহুর্তে সিগারেট আর প্রস্রাব আমার আমদানি বাড়িয়ে দেয়। পস্রাবের দৌড়ানি নেই বটে, কিন্তু সিগারেটের সুড়সুড়ি ঠিকই আছে। যার পীঠে চড়ে আছি, এ নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। একটা সিগারেট ধরাতে পারলেই স্বর্গের ভেতরের প্রাণী আর উদ্ভিদগুলো দেখা যেতো। আমি নিশ্চিত তারা সেখানে সুখে নেই। সেখানে এখন খুব শীতবৃষ্টি হচ্ছে আর গরম বাতাস বইছে। এখনো কোন কবি বা বাউল সেখানে যেতে রাজি হয়নি। আমিও যাবো না। তার চাইতে এখন আমার শহরে যাওয়া খুবই দরকার।

বাউল পাড়ায় এসেছি পুরো দশদিন। আর যাবো না। বাউলের মেয়ে... না না, ঠিক মেয়ে বলা যাবে না। বাউলকন্যা আমার চোখের সামনে থাকে। অবিরাম থাকে। তাকে সরাতে গেলে মাটি এবং বায়ু সহ পুরো ক্যানভাস সরে যায়। সে ভালো, সুন্দর। আমার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মনের খবরও নেয়। এবঙ ফাগুন কেমন লাগছে, তাও জিজ্ঞেস করে। এ কাজটি আমার বৌ কখনো করতো কি না, সে হিসেবে গেলাম না। কিন্তু আমার খুব মনে ধরে এমন করলে। অবশ্য প্রথম ক’দিন গাঁজা খেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এখানকার গাঁজাগুলো আমার বৌয়ের গালির চাইতেও কড়া। চৈত্রারোদ পোড়া গাছের পাতার মতো। শুধু পাতা, কোন বিচি নেই। ওহ্! বাউলকন্যার নাম বলিনি। নিরুয়া। নিরুয়া নামেই অন্যরা তাকে ডাকে। আমি বলি সখি। আমাকে সখা বলে ডেকে তার সমর্থন জানানোর পরইতো হাত স্পর্শ করেছি এবং চোখে নেশা এসেছিলো, তারপর নিরুয়ার কন্ঠে তুফান লেগেছিলো; অনেক গান হয়েছিলো। নিরুয়া তখন পরী হয়েছিলো আর আমি পাগল। ভাগ্য ভালো চাঁদ ছিলো, সাথে রাত ছিলো আর নিরুয়ার সুয়া সুয়া সুখ ছিলো। এখন আমি আছি নিরুয়া আছে আর অনেক প্রেম আছে আর গান আছে।

প্রথম যেদিন এখানে এসেছি- হেতু গানের কথা। চার লাইন শুনিয়েছি। নিরুয়ার বাবা খোশ হওয়ার পর পুরো পাড়াজুড়ে হাঁক পড়েছে ‘কথা এসেছেগো কথা এসেছে, ঢাকা থেকে কথা এসেছে, সাথে এক সাহেব এসেছেন’। এভাবেই শুরু। গেরুয়া রং আর গেরুয়া গন্ধের প্রতিটি ভোর আমাকে শুদ্ধ করে চলছে বিরামহীন। হতে পারে এও ঘোর বা নিছক প্রতারনা। তবুও এমনটিই চেয়ছিলাম। টেনে নিলাম নিরুয়ার থুতনি, ঘাড় উঁচা হাসির সুর আর পুরো নিরুয়া। যা বাদ দিই, পুরোপুরিই বাদ দিই। ছেড়ে আসা শহর নিয়ে কোন কথা বলতে ভালো লাগছে না। ভাবতেও না। প্রথমদিন আমাকে জল ঢেলে দেয়ার সময় নিরুয়ার থুতনির ডগায় জমাট উচ্ছ্বাস একেবারে শাঁস সহ উঠিয়ে নিয়েছে যতোসব নাগরিক বিরক্তি। আমিতো মাটি কামড়ে ধরেই নিরুয়াসহ জলে ঝাপিয়ে পড়ি। এখনো ঝলে। সব সময়। নিরুয়াও।

এদিকের যে শহর আছে, সে শহরে যাই এখন। আজ পূর্ণিমা। নিরুয়া সারা রাত ধরে গান গাইবে। তাকে সুন্দর এবঙ আপন দেখাবে। একটা শাড়ি আর অন্যান্য বস্ত্র আনি। দুল আর ফুলসহ বাকিসব খুশি কিনে আনি। হয়তো আমি পরাবো, নয়তো সে। নিরুয়া আজ আর কোন বিচ্ছেদী গাইবে না। আজ সে প্রেম গাইবে। লেনদেন হবে সামান্য। আমি অস্থির খুব। আমদানি নেই। মুখ আর বুক এক নেই। যা আছে তা কেবলই নিরুয়া।


চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×