২য় অংশ
==>>
: প্রভুর দেশে বিধাতার জন্মাংক আশাতীত উর্দ্ধগামী। ঘনত্ব প্রতি এক আবাসে পাঁচ জনেরও অধিক। তাঁদের সৃষ্টিও অবিরাম। আপনি অতিশয় নিকৃষ্টমানের বিধাতা। এবং অবাধ্য বটে। সৃষ্টির সঠিক যত্নাতি এবং বিনোদনাদির আয়োজনে অক্ষম। উপরন্তু মানের অপকাম করতে ভালোবাসেন। সঠিক সম্বোধন সহায় না হয়ে অপমানকর সম্বোধনে লাঞ্ছিত করেন। প্রভু হয়ে বন্ধু বলে ডাকেন। আপনি ভিন্ন কোন বিধাতাকে এমন দেখিনি। কি মোহনীয় শিকলে হস্তোপদ বেঁধে তেলমাখানো দড়িতে ছান্দসিক স্পর্শ। আর তারা জীবনঘনিষ্ঠ সুরে গীত গায়, উচ্চারণ করে। আপনি শিল্পহীন কদাকার। আমাকে সংগীত শেখাননি। এখানে থাকবো না। যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাবো! দিগন্তে হারিয়ে যাবো। আপনাকে আমি ঘৃনা করি। কখনো ভালোবাসিনি। আমাকে ঠকিয়েছেন। প্রতারণা করেছেন। আমি বুক ফাটিয়ে কান্না করবো, মাটিতে গড়াগড়ি খাবো। আহার নিদ্রা ছেড়ে নিশ্চিত বনবাসী হবো।
: না, তুই বাড়ির মালিকের বৌয়ের সাথে যাবি না।
: আপনি আমার সাথে আর রাজনীতি করবেন না।
: না, এসব মিথ্যা কথা। আমি খুব অসহায়।
: প্রভু প্রভুর মতো আচরণ করবেন। আমার বন্ধু মিসেস মনিকা। আই লাভ হার।
: তবে কি আমার বৌয়ের সাথেও তোর দেখা হয়েছে!
: না, উনি ঘুমে ছিলেন। পায়ের একজিমা ভালো হয়েছে। তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। আগের প্রেমিক ছাড়া উনার আর নতুন প্রেমিকের আগমন ঘটেনি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
... তখন চোখ বুঁজে বিয়ের রাতের কথাবার্তা জাবর কাটতেছিলাম। সন্ধ্যায় ধোয়া বৌয়ের শরীর থেকে মিটমিটে আলো নেমেছিলো অকথ্য। শস্যখেত আর পুকুর পাড়ে সে লজ্জা পেয়েছিলো। ভেঙেছিলো আমগাছের ঢালে। একেবারে ডালসহ। এরকম আরো আরো...। তার আগে তিনটা কবিতা লিখেছি। কাস্টমারের অর্ডার ছিলো। তারও আগে সপ্তাপুরোনো গাঁজা শেষ করেছি। দরজা খট খট শুনে আশা করেছিলাম সে ব্যবসায়ীকে। আজ হয়তো ঠিকানা ভুল করে আমার ঘরেই আসলো। দরজার কাছে গিয়ে ‘প্রভু’ ‘প্রভু’ শুনে হতাশ হলাম ভীষন। এখন তার কোন প্রয়োজন ছিলো না। প্রেমের দরকার ছিলো খুব। বিয়ের রাতের বৌয়ের লাজমাখানো কপটমুখ আমার চামড়া জাগিয়ে দিয়েছিলো।
কিচ্ছু হবে না মেরে ফেললে। রোজি বুবুর কাকাতুয়া মেরে ফেলার পর সামান্য ভয় পেয়েছিলাম, এই যা। স্কুলে যাইনি দু’দিন। ভাতের গরম মাড়ে বিড়াল ছানার মৃত্যুর পর কেঁদেছিলাম। তাই বলে এখন!! এর মাঝেইতো অনন্ত বিয়েটা সারলাম। বিয়ের পর কান্না করলে সন্তান আসলে তারা লজ্জা দেবে। মাই গড! নো, নো... নেভার!!
একবার বাবা অযথা ধানের জমির বীজ পরিবর্তন করেছিলেন। বি আর ১৬ নামের ধান সে জমিতে ভালো হতো। বাবা সেটারে ২৯ শে নিলেন। গাছগুলো লম্বা, ধানের ফলও লম্বা কিন্তু ফলন ভালো হয়নি। সে ধানের জমির মাঝখান বরাবর কিছু ছোটছোট হাড়গোড় পাওয়া গেছে। পঁচা মাংসও ছিলো। চুল ছিলো না বলেই “এই জ্যারবা হোলা” “জ্যারবা হোলা” বলে চিৎকার করেছিলো ধানখেতের শ্রমিকেরা। আর কোন শ্রমিক সেই অংশের ধান কাটতে রাজি হয়নি। আমি যে কাস্তে হাতে কাটা দেবো- অতোটা মহানুভব তখনো হইনি। কি জানি, হয়তো ভন্ড ছিলাম না বলেই নাম কামানোর কাজে এগুইনি। আচ্ছা, আমি যদি জেনে যাই- যাকে এখন বাবা ডাকি সে আসলে আমাকে জন্ম দেয়নি; অন্যকোন পুরুষের বীর্যে আমার জন্ম- তাহলে কি ছত্রাককে দিয়ে আমার প্রাণনাশ করবো? না, ছত্রাক ন্যডির পোলারে এর সাথে জড়ানো যাবে না। না, না, তাকে ন্যডির পোলাও বলা যাবে না। ন্যডির পরিচয় চাইলে কি দেবো? তারতো মা বাবা কেউ নেই। তারপর আবার বাড়িওয়ালা এবং আমার বৌ দেখা তার শেষ। এ দুই অমানুষকে দেখার পরও যে বাসায় ফিরে এসেছে, সেইতো ঢের।
==>>
: আমার জন্মদিন কবে?
: ৩১ জুলাই দিবাগত রাত
: মৃত্যুদিন?
: ৩০ জুলাই যেকোন প্রহর
: একটাও ঠিক হয়নি
: আমি নিরূপায়, এরকমই নির্ধারিত ছিলো। আপনার পিতাকে জিজ্ঞেস করুন। আমাকে দোষ দিবেন না। আমার কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন কেন? আপনার পিতা কোথায়?
ওহ্! তবে কি আমার সন্দেহ ঠিক? বাবা বা মা কারো চেহারার সাথে আমার মিল নেই কি এজন্য? কিন্তু আশেপাশের কারোর সাথেও মিল নেই। আমার কি এখন খুব দু:খ পাওয়া উচিত? বাবাকে ঘৃনা করা উচিত? অবশ্য বাবাকেতো কখনোই শ্রদ্ধা করিনি। ভালোবাসিনি। কিন্তু ছত্রাক এসব কিভাবে জানে!
: কখনো ইলিশ মাছ খেয়েছিস?
: মনে নেই। তবে, আর কোনদিন যে খেতে পারবো না, তা জানি।
: পর্নো মুভি দেখেছিস।
: এ বস্তু চিনি না। শনাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে, আর কোনদিন যে দেখবো না, তা জানি।
: চল আমরা বনে চলে যাই।
: না। এবং কোন দিন যে যেতে পারবো না, তা জানি।
: মনিকা...
: না, সেটা আমার ব্যক্তিগত।
: আমার বৌ...
: না, সেটা আপনার বৌ আর তার পুরাতন প্রেমিকের বিষয়।
ছত্রাক এটা অন্তত মিথ্যা বলে। বৌ আমি ছাড়া অন্য কাউকে স্পর্শ দিতে পারবে না। এটা না জেনেই বলছে। অযথা আমাকে বিভ্রান্ত করছে। আমি জানি বৌ আমাকে ছাড়া আর কাউকে চায় না।
: প্রভু, চাওয়া চাই’র বিষয়টা বিসুন্দর। আপনি যা যা চাইলেন, বৌয়ের গর্ভনিরোধে কোন কাজে আসেনি। উল্টো হাসপাতালে গিয়ে অপ-অস্ত্রাচার হয়েছে। সম্ভবত অস্ত্রবিষে প্রভুনী অশ্রুজল ফেলেছিলেন। অনুশোচনা নয়। বরং সে শীতের রাতে এ ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। সত্যি ছিলো না। পাশের বাড়ির মইনুল আর গ্রামে ফিরে আসেনি। আপনার স্ত্রী আপনার কাছে আসতে ব্যকুল। বসন্তের আগমন উনি টের পেয়েছেন। এবং কোকিকের ডাক যে খুব পরিচিত সেও বুঝে ফেলছেন।
: চুপ কর ন্যডির পোলা। একদম চুপ।
: ন্যডি মানে মাগি। আপনিই আমার মা বাপ। ব্যকরনে ভুল করা শাস্ত্রীয়পাপ। এ রণে যাবেন না। কঠিনতর অভিশাপ।
চলবে....
১ম অংশ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




