৩য় অংশ
যখন গল্প লিখতাম, অনেক লিখতাম। রেস্তরার পোড়া তেলের গল্প, তৃতীয় বা চতুর্থবার প্রেমে পড়ার গল্প, ফোনে গল্প করতে করতে প্রেমিকার ঘুমিয়ে যাবার গল্প- আরো আরো। এখন লিখি না। একদিন টের পেলাম কোন কারণ ছাড়াই গল্পের সবগুলো চরিত্রের ভেতর ঢুকে যাই। এমনকি অতিথি চরিত্রগুলোকেও ছাড়ি না। নিজের কোন না কোন অভ্যাস, দর্শন প্রবেশ করিয়ে দিতাম গল্পচরিত্রে। একবার নায়িকার চরিত্রে ঢুকে গিয়ে বিয়ের আগে মামাতো ভাইয়ের সাথে সেক্স করার কথা স্বীকার করে দিই। অথচ কোন মেয়েই অকারণে এমন স্বীকারে যাবে না। পরে এ দম্পত্তির দু’জনকে দু’পথে পাঠিয়ে গল্প শেষ করি। অথচ মেয়েটির মা হবার খুব ইচ্ছে ছিলো। আমার বৌয়েরও মা হবার খুব ইচ্ছা। আবার একবার বললো- মা হবে, এমন বিদঘুটে ভাবনার ভাবার মতো সে নয়! দু’কথার এক কথাও বিশ্বাস করিনি। আবার অবিশ্বাসের প্রয়োজনবোধও করিনি। আসলে আমি নিজেই বাবা হবার কোন ইচ্ছা করি না। না, স্বজনপ্রীতি করে আর যা হোক, সাহিত্য কখনোই হবে না।
মাঝে মাঝে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হলে আমার গল্পের চরিত্রগুলোকে নিয়ে আড্ডায় বসে পড়ি। রাজনৈতিক আলাপ থেকে শুরু করে জানালার থাই গ্লাস নিয়েও আলোচনা চলে। তিলক নামের এক চরিত্র আমাকে খুব পছন্দ করে। একবার এক গল্পে তাকে দিয়ে প্রচুর নানরুটি খাওয়াই। পরে জানলাম নানরুটি নাকি তার খুব পছন্দ। আরেকবার আরেক চরিত্রকে দরজার ফাঁক দিয়ে তার বৌয়ের গোসল করা দেখিয়ে দিই। তারপর বিকেলে নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে নাকি সে খুব বিব্রত এবং অশান্তিবোধ করেছিলো। অথচ গল্পে ঠিকই সে নদীর ধারে প্রেমিকার বুকে ঝুকেঁ পড়ার কবিতা পাঠ করেছিলো। আমার সৃষ্ট চরিত্র দর্শনের ভেতর আরেক দর্শন। এখানে কোন না কোন ঘাপলা আছে। এসব আর ভালো লাগে না। কোথাও শান্তি নেই। প্যাঁচ আর প্যাঁচ। মিলন নামের এক বন্ধু সুতোর প্যাঁচ ভালো খুলতে পারতো। কিন্তু শেষে এক প্যাঁচে পড়ে আত্মহত্যায় শেষ হলো। তাই প্যাঁচ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়িতে যাই না। প্যাঁচ দেখলেই দৌড়াই। আজ রাতে আরেকটা প্যাঁচ খুলতে হবে। ছত্রাকের বিষয়টা সমাধান দিয়ে বাড়িওয়ালাকে চাবি বুঝিয়ে দেবো। ছত্রাককে একেবারেই শেষ করতে হবে।
==>>
: তুই বিষয়টা বুঝতে পারছিস? ...তুই কি বুঝতে পারছিস? ওই...!
: এখনই যাবো, নাকি আরো কিছুক্ষণ গল্পগুজব করবো? আরেকবার ভেবে দেখুন প্রভু। মনিকা আমাকে মিথ্যা বলতে বারণ করেছে। সে খুব ভালো মেয়ে। আপনার স্ত্রীও। আপনি জিজ্ঞাসা করে দেখুন, সে শীতের রাতের শীৎকার নিয়ে কোন ভন্ডামিতে যাবে না।
: কুত্তার বাচ্চা, বাইনচোৎ... ওই ন্যডির পোলা.. যেখান থেকে বের করে এনেছি, আবার সেখানেই ঢুকিয়ে দেবো ছোতমারানির পোলা। ওই তুই আমারে চিনস!! আমি...
: কে আপনি? চিনেন? কোনটা চিনবেন? আপনিতো কয়েক খন্ড! কোনটা আপনি?
: এই, এই ...খবরদার স্পর্শ করবি না।
: তা করলাম না, আমি কখন যাবো?
: এতোক্ষণ গেলি না কেন!! এখনো যাচ্ছিস না কেন!!
: প্রভু, আমার মা থাকলে কি তিনি যেতে দিতেন? মা, অসতী হলেও। প্রভু, আমার মায়ের চেহারা কি আমার মতো হতো?
না, তারপর আর সহ্য করিনি। যে কমোডের ভেতর থেকে তাকে উঠিয়ে এনেছিলাম, আবার সেখানেই ঢুকিয়ে দিলাম। ছত্রাককে বানিয়েছি নাকি স্বপ্নে পেয়েছি- ঠিক ধরতে পারছি না। ভাগ্য ভালো যে কোন রক্তারক্তি হয়নি। রক্তের রংটা ভালো না। কালো হলে সুন্দর লাগতো। স্বাদও ভালো না। একটু টক হলে সুস্বাধু হতো। তাইলে অবশ্য বিপদও হতো। মহিলারা প্রতিযোগিতা করে রক্ত খাওয়া শুরু করতো। স্রষ্টা বলে কেউ আছে? থাকলে তিনি ভালো একটা কাজ করেছেন। রক্তের স্বাদ ঝাল অথবা টক দেননি। আমার বৌ খুব টক খেতে পছন্দ করে। প্রেমের শুরুতে যেদিন আমাদের ফলগাছ সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছিলাম, সেদিন অনেকক্ষণ বাড়তি কথা বলেছিলো। লজ্জায় আমাকে আপনি আপনি করা মেয়েটা সেদিন মুখ ফুটে ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করেছে। আমার খুব লজ্জা হয়েছিলো। কিন্তু, আমার বৌ কেমন আছে? সেই পুরোনো সীমকার্ডটা লাগালে কি তার কল পাওয়া যাবে? কি একটা কারণে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করলাম, মনে পড়ছে না।
== >>
: কুত্তার বাচ্চা, খরচ চালাতে না পারলে বিয়ে করছস ক্যান। তোরে বিয়ার আগে আমার মা বলে নাই- আমি পাঁচ হাজার টাকার নিচে জামা গায়ে দিই না। ওই মাগীর পোলা, তোরে বিয়ার আগে আমার সাজগোজের ঝুড়ি দেখাইনি? ওই হারামী, তখন বুঝিস নাই- আমাকে বহন করার শক্তি তোর ঘাড়ে নাই। তুই একটা অরজিনাল কুত্তার বাচ্চা। ওই খানকীর পোলা, তোরে কইনাই কলেজ হোস্টেলের সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে দেখলে সেক্সী সেক্সী কইয়া ডাকতো; কই নাইরে? ওই মাগীর পোলা- মোবাইল বদলাইছিলি ক্যান? চাকুরী ছাড়লি ক্যান? মাগীর পোলা... তোর আমলনামা পাঠাইছিলাম রে শুয়োরের বাচ্চা, তালাক দিছি তোরে ম্যালা আগে। গেরামে আইলে তোর গলার উপর পা দিয়ে কাবিনের টাকা উদ্ধার করবো আমার আব্বায়। শুয়োরের বাচ্চা... পকেটে টাকা নাই, শরীরে জোর নাই... মরতে পারস না। আবার বিয়া মারাইছে!!
: দেখো আমাকে একটু বলতে দাও...
... না, আর বলতে পারিনি। বোধহয় শুকনো গলার ব্যথাতেই ঘুম ভাঙছে। নইলে আরো কিছুক্ষণ পাশবিক নির্যাতন চলতো। মেয়েটা ধর্ষন করতে গেলে একেবারে হাত পা বেঁধে ধর্ষন করে। সত্য বলছি সে আমাকে অন্যকিছু বলেছিলো। সে আমার সাথে নায়ক নায়িকা খেলা খেলেছিলো। না, আর বলবো না। কখনো যদি জানতে পারে অন্যের কাছে পারিবারিক বিষয়ে কথা বলেছি, তাহলে টেলিভিশনের রিমোর্ট দিয়ে গালে গুতা দিবে। কোন দিকে তাকায় না। ধুর! সীমকার্ডটা লাগাবো না। জাহান্নামে যাক। ওইসব পুজিঁবাদী বৌ দরকার নাই।
==>>
না জানিয়ে চাকুরী ছেড়ে দিলে কি হবে? কিছুই হবে না। কয়েকদিন যখন দেখবে আমি আর আসি না, তখন নিশ্চিত নতুন লোক নিয়োগ দেবে। তেমন সমালোচনাও হবে না। অফিসে সবার সাথে ভালো পরিচয় না থাকলেও তাদেরকে বিরক্ততো করতাম না। কাজও ঠিকমতো করতাম। আবার যেহেতু তাদের টাকা পয়সা কিছু নিয়ে যাবো না, সেহেতু “ধরিয়ে দিন” টাইপের কিছু হবে না। শান্তিতেই হাঁটাচলা করা যাবে। বড়জোন স্যারকে একটা এসএমএস পাঠাতে পারি। এসএমএস পাঠানোর বিষয়টা আনস্মার্ট হলেও এইতো শেষ। উনিতো আর আমাকে পাচ্ছেন না। সেখানে আর স্মার্টনেসের চর্চা করে লাভ কি। আগামীকাল রাতে ভালো ঘুম দিতে হবে। সকালে উঠে হাঁটা দিবো। যতদূর হাটা যায়। হাটতে হাটতে সিদ্ধান্ত নেবো, কোথায় যাওয়া যায়।
চলবে...
২য় অংশ
১ম অংশ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




