এলবামের প্রচ্ছদ
সমগীত-এর প্রথম এলবাম ‘হাওয়া’ প্রকাশিত হয়েছে। হাওয়া এলবামের কয়েকটা গান নিয়ে ইতিমধ্যেই পোস্ট দিয়েছি। পুরো এলবামটা নিয়ে পোস্ট দিবো, দিয়ে ব্লগে আমার অল্প যে কয়েকজন বন্ধু আছেন তাদের সাথে গানগুলো শেয়ার করবো- এমন ভাবনাই ছিল আর সেই প্রেক্ষিতেই এই লেখা। কিন্তু ‘হাওয়া’ এলবামটা নিয়ে কিছু বলার আগে ‘হাওয়া’ এলবামটা যারা করেছে- ‘সমগীত’; তাদের সর্ম্পকে একটু বলে নেওয়ার প্রয়োজনিয়তা বোধ করছি।
‘সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ’ সর্ম্পকে নিচের লেখাটি তাদের ‘প্রথম সম্মেলন স্মরণিকা-২০০৯’ থেকে সংক্ষিপ্ত করে লিখেছি ব্লগার বন্ধুদেরকে সমগীত সর্ম্পকে মোটা দাগে একটি ধারণা দেওয়ার জন্যে।
বায়ে উপরে- অর্ক; বায়ে নিচ থেকে ডান দিকে- মুসা কলিম, রোখসানা আমিন, শুভ, সঞ্জয়, সোহাগ, অঞ্জণ, নীলা, বীথি ঘোষ; উপরে ডানে- অমল আকাশ
সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ প্রসঙ্গে
২০০২-এর ১ মে, ‘সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণে’র আত্মপ্রকাশ। বর্তমানে নারায়ণগন্জ, ঢাকা, চট্রোগ্রাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী শহরে সমগীত তার র্কায্ক্রম পরিচলনা করছে।
সমগীতের নানামূখী কাজের মধ্যে অন্যতম খুদে ও কিশোর বন্ধুদের প্রত্রিকা- ‘গঙ্গাফড়িং’, যা নিয়মিত প্রকাশের পাশাপাশি পাঠচক্র পরিচালনা, চলচ্চিত্র প্রর্দশন, স্কুলপড়ুয়া বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগীতা ও প্রোগ্রাম করে আসছে। সমগীতের সাহিত্য পত্রিকা- ‘ওঙ্কার’, যার শেষ সংখ্যাটি ছিল- ‘মানিক জন্মশতবর্ষ স্মরণ সংখ্যা’। বর্তমানে নতুন সংখ্যা- ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কবিতা সংখ্যা’র কাজ চলছে এবং খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। এছাড়াও ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস পাঠাগার’, চিত্রকলা বিষয়ক পত্রিকা- ‘মানুষ’সহ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ‘সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ’ কাজ করছে।
সমগীত-এর সঙ্গীত দল সকল জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবস, উত্সব ছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন ইস্যু ভিত্তিক কর্মসূচিতে যেমন- ‘বাংলার সংস্কৃতি আন্দোলন’, ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা সংস্কৃতি মঞ্চ’ ইত্যাদির কর্মকান্ডে ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে।
এলবামের উর্ত্সগ পাতা
সমগীতের গান এবং ‘হাওয়া’ এলবাম প্রসঙ্গে
‘হাওয়া’ সমগীতের এলবামের নাম। এলবাম আকারে সমগীতের গান এই প্রথম বাজারে আসলো। বাছাই করা ৯ টি গান নিয়ে সাজানো হয়েছে এই এলবামটি।
‘হাওয়া’ শিরোনামের একটি গানের নামকে এই এলবামের শিরোনাম করা হয়েছে। আমার এক বন্ধু আমাকে কথা প্রসঙ্গে বলছিলো, হাওয়া গানটা শুনে তার তেমন কিছু মনে হয়া নাই। বরং জানতে চাইছিলো এই গানটা সর্ম্পকে আমার কি মনে হয়। আমি উত্তরে গেয়ে উঠেছিলাম, ‘তুমি পোড়ো না পোড়ো শিমুল আগুনে/ তুমি নাচো না নাচো কানামেঘা এলে/ শিশুটাতো ভিজবেই নেচে কাদা গায়’- তারপর ওকে প্রশ্ন করেছিলাম, এখন কি মনে হচ্ছে? কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ও উত্তর দিয়েছিল, কি যেন একটা মনে হচ্ছে, কিন্তু তা ধরতে পারছিনা। আর সম্ভবত এমনি করেই, মানুষ এক অজ্ঞাত সত্তা এবং প্রকৃতপক্ষে অন্য যে কোন ধরণের জানা-বোঝার আগে তাকে নিজের সর্ম্পকেই জানতে-বুঝেতে হয়, ভাবতে হয়। তাই আমার বন্ধুকে ভাবনার সময় দিয়ে আমি নিজেই ভাবতে শুরু করলাম, ‘হাওয়া এসে দুলে দুলে যায়’- আমাদের ‘কালো চুল পেকে আরো সাদা সাদা হলে/ চোখের চোখেতে ছানি পেখম ছড়ালে’ও হাওয়ার কিছু আসে যায় না। সে ‘নেচে নেচে সুইচোরা পাখির লেজে’ দুলে দুলে যায়। এই যে হাওয়া, সমগীতের গানে এটা কিসের প্রতিক? সময় না কি ইতিহাসের? না কি দুটোই? না কি হাওয়া আসলে এক রহস্য- জীবনের; জীবনের গতিময়তার?
আমার এক বন্ধু বলে, গান শুনে চিন্তা করবো, আমার এত সময় নাই। আমিও বলি তাই। কিন্তু চিন্তা তো আমায় ছাড়ে না। শুধু সমগীতের গান নায় যে কোন গানই, এমন কি লিরিকহীন যন্ত্রসঙ্গীতও আমাকে চিন্তা জোগায়। ফলে ‘রোদের এক হাট বসেছে পারণপুর/ আগুনে জমছে মেলা পরাণপুর/ জলেরা প্রেমতলাতে নেশায় চুর/ হবি কে অমন হাটের সওদাগর’- এমন লিরিক যখন মাথার ভেতর প্রবেশ করে, তখন নিজেকে সওদাগর ভাবতে ইচ্ছে করে। যদিও উচাটন মনের এত সাহস কই? বরং, ‘এক মনেতে বিরাজ করে চেনা অচেনা মন/ কারে আমি দূরে ঠেলি কারে বা করি আপন’- এমন উপলব্ধিতে হাবুডুবু খেতে খেতে দেখি কর্পোরেটের বারান্দায় তোমার-আমার ভালোবাসা মোড়কে মোড়কে মুখ লুকায়। যদিও ভালোবাসি লাল রোদ, ভালোবাসি কৃষ্ণচূড়া; তবুও ‘ভালোবাসা কারে কয় জানা হলো না’- হাহাকারে বাতাস ভারি হয়। তাই বুঝি ভালোবাসার একটা রফা হওয়া উচিত।
সমগীত কি ধরণের গান গায়? সমগীত বাংলা গান গায়। এলবামের এই গানগুলোতে, আমরা যারা শহরে থাকি, নাগরিক জীবনের নানান চাপে- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ইত্যাদির প্রভাবে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতাবোধজনিত যে-নি:সঙ্গতার অনুভূতি- তা এক রকম ভাবে ধরা পরে। তবে সমগীতের গানে নাগরিক এই বিচ্ছিন্নতা ভাঙ্গার প্রচেষ্টা আছে। এবং এই গান আমাদের চেনা মিহি স্বরের ভাজে কল্পনার এমন কোন উদ্ভট জগত তৈরি করে না, যেটা আমরা শহুরে মধ্যবিত্তরা আমাদের চেনা-পরিচিত জগতের জঞ্জাল, ক্লান্তি, নিজেদের বিচ্ছিন্নতা, নি:সঙ্গতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উর্ধ্বগতির ফলে জীবন-যাপনের সংকট ইত্যাদি অবস্থার কথা ভুলে থাকতে আফিমের মত গ্রহণ করতে পারি না। বরং সমগীতের গান উস্কে দেয়, এই বাচা-মরা-হাসফাস আবস্থার ভেতরেই প্ররোচনা দেয়, আহ্বান করে- ‘তুমি আমি মিলে আমরা’ হতে।
সঙ্গীতের তাত্পর্য কি শুধুই বিনোদনে? না কি বিনোদন মানে- আমাদের চারপাশের দু:খ-কষ্ট-যন্ত্রনা, আমাদের অধিকারহীনতা, প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়া, খুন হয়ে বেচে থাকা, মিথ্যে আশ্বাস শুনতে শুনতে আশ্বাসের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে সব কিছু থেকে লুকানোর মাদক? বর্তমানে আমারা যে ধরণের বিনোদনে বিনোদিত হই তার অবস্থা কি আজ এই রকমই না? এটা ঠিক, সঙ্গীত যদি বিনোদন না জোগাতে পারে, তবে শিল্প হিসেবে তার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। তাই তার তার্ত্পয উপব্ধি করতে গিয়ে বিনোদনকে নস্যাৎ নয় বরং তাকে আত্মসাৎ করা দরকার। সমগীতের গান কি তা করে? না করলে, এই পাওয়া না পাওয়ার জ্বরে পুড়তে থাকা নগরীতে, কেন জারুল হাসে, এই প্রশ্ন করে কি করে? কি করেই বা নদীর নাচন খুজে পায় কোন কোন উতলা অথৈ চোখে?
এখন যুগটাই দানবীয় সব বিলবোর্ডের। তাই ‘মাছরাঙা পাখিটার যতো রঙ/ আকাশে মেখেছিল মমতার নদী/ তার গল্পগুলো সব আমাদের চোখ থেকে উধাও’ হয়ে যাচ্ছে। আর ঠিকই ‘ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন ক্লান্ত ভোরে/ বোকা বোকা সূর্য উঠে’ আথচ তুমি-আমি লাশ; কবরে-খবরে জায়গা নেই। এই যে পানি নাই, বিদ্যুত নাই, গ্যাস নাই, এই যে হাসপাতালে চিকিত্সা নাই, রাস্তায় নিরাপত্তা নাই, সামস্টিক মানুষের স্বপ্নের কোন মূল্য নাই। কোটি কোটি মানুষের বাসস্থান নাই, কর্মসংস্থান নাই- এই যে এমনি ‘প্রতিদিন অসহ্য মরে বেচে থাকা’- এর থেকে কি মুক্তি মিলবে না? বুকের দাবানল কেন জ্বলে উঠছে না? অথচ হাওয়া ঠিক দুলে দুলে যায়। হাওযা আমাদের ডাকে ইশারায়!
সেই ইশারা আমরা কি ঠিক-ঠাক মত ধরতে পারবো?
এলবামের পেছনের প্রচ্ছদ
শেষ কথা
সমগীতের এলবাম নিয়ে যেটুকই বলার চেষ্টা করেছি ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে তা এই গানের বিচারে কতটুকু সঠিক, তার বিচার এই এলবামের শ্রোতারা করবেন। আর বাকিটা করবে ইতিহাস।
সংযোজন
১/ সমগীতের একটি গান 'বিলবোর্ড'। আমি এই গনটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। আমার মেইল এড্রেস [email protected]। যারা সমগীতের এই গানটা চেক করে দেখতে চান, তার প্লিজ আমাকে মেইল করুন। আমি এই গানটা আপনাদের মেইল করে পাঠিয়ে দিবো। ভালো লাগলে আনুরোধ থাকবে এলবামটা কেনার।
০২/ পহেলা বৈশাখে সমগীত এবিসি রেডিওতে লাইভ পারর্ফম করবে, রাত ১১ টা থেকে। যারা যারা সমগীতের গান লাইভ শুনতে চান, ওই সময় এবিসি রেডিওতে কন রখবেন।
৩/ সমগীতের গান নিয়ে আর যে সব পোস্ট দিয়েছিলাম তার লিংক -
'পথের পরাণ'; সমগীতের একটি গান
'বিলবোর্ড'; সমগীতের একটি গান
'হাওয়া'; সমগীতের একটি গান
৪/ এছাড়াও অন্য পোস্টগুলোর লিংক -
হাওয়া: সমগীতের, মানুষের। গান সবসময়ই বক্তৃতার চাইতে শ্রেয়তর - অন্যমনস্ক শরৎ
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




