somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং প্রাসঙ্গিক আইনের বিশ্লেষণ ( শেষ পর্ব )

১৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রকাশসত্ব সংরক্ষিত)
প্রথম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব
(আগের পর্বের পর)
এই যে পর্যালোচনা শেষে বললাম The International Crimes (Tribunals) Act 1973 এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব, তারপরেও কেন এতবছর হয়ে গেলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে না? সেটা রীতিমতো বড় রকমের প্রশ্ন বটে। The International Crimes (Tribunals) Act 1973 এর অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করতে হলে tribunal গঠন করতে হবে। আর সেই tribunal গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে The International Crimes (Tribunals) Act 1973 এর ৬ নং ধারায়।৬(১) ধারায় বলা হয়েছে-
“For the purpose of section 3, the Government may, by notification in the official Gazette, set up one or more Tribunals, each consisting of a Chairman and not less than two and not more than four other members.”

এখানে লক্ষ্য করুন may শব্দটির ব্যবহার। অর্থাৎ সরকার ইচ্ছে করলে এক বা একের অধিক tribunal গঠন করতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সরকারেরই এই ইচ্ছাটা হয় নি। তাই এত বছর পরেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় নি।তিন অক্ষরের দুর্বল শব্দের ব্যবহার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ দীর্ঘায়িত করেছে। অথচ এখানে may শব্দের পরিবর্তে shall অথবা will ব্যবহার করলে সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অবশ্যই tribunal গঠন করতে হতো। আর tribunal গঠন হলে নিঃসন্দেহে যুদ্ধাপরাধদের বিচার সম্ভব।

বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি আলোচিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।বর্তমান সেনাপ্রধাণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার কথা বলেছেন। মিডিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। জনসাধারণও চাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক। সুতরাং আমরা প্রত্যাশা করতে পারি- সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য tribunal গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করবে।

আর এই কাজটি যদি বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব নাও হয় তাহলে অন্তত এই সরকার যেন The International Crimes (Tribunals) Act 1973 এর ৬(১) ধারায় may শব্দের পরিবর্তে shall অথবা will শব্দের প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে যায়। যাতে পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ এগিয়ে যায়।

আলোচনার সবশেষে পরিস্কার করে বলা যাক, স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন আমরা যুদ্ধাপরাধদের বিচার চাই। হিংসা, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই না। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই মানবতার ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। মানবতার বিরোদ্ধে ১৯৭১ সালে যে অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল তার বিচার অবশ্যই প্রত্যাশিত। পরবর্তীতে যাতে কখনোই এ ধরনের অপরাধ সংগঠিত না হয় তা নিশ্চিতের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।

তৎকালীন আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধরের কথাও মনে পড়ে। আমরা সমস্ত সভ্য জাতির চোখে পরিহাসের পাত্র হতে চাই না। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে Limitation Act প্রযোজ্য নয়। সুতরাং আজ হোক কাল হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতেই হবে। সেই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করে আছি। আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়ে, স্বাধীন দেশে বসবাস করে সমস্ত সভ্য জাতির চোখে আমরা পরিহাসের পাত্র হতে চাই না। চাই না ইতিহাসে অত্যন্ত কদর্য নজীর স্থাপন করতে। সুতরাং আমরা দৃঢ়ভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।

সূত্র :
১. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।
২. The Bangladesh Collaborators (secial Tribunals) (Amendment) Order 1972
৩. The International Crimes (Tribunals) Act 1973
৪. Constitutional Law of Bangladesh; Mahmudul Islam
৫. যুদ্ধাপরাধ এবং জেনেভা কনভেনশন : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত- আইজ্যাক রবিনসন/জাভেদ হাসান মাহমুদ
৬. যুদ্ধাপরাধদের বিচার এবং বাংলাদেশের সংবিধান – কে এম সোবহান
৭. একাত্তুরের ঘাতকদের কেন বিচার চাই- আমান-উদ-দৌলা


লেখাটির পিডিএফ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৩৯
১১৪টি মন্তব্য ৯৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×