
শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় কলিং বেল বাজলো। উঠতে একদম ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আম্মু ঘুমিয়ে আছে। আমাকেই খুলতে হবে দরজা। অগত্যা বিছানা থেকে নামলাম। আই হোল দিয়ে দেখি তারা দাঁড়িয়ে আছে।অনেক অবাক হলাম। তারা দোতালায় থাকে আর আমরা চার তালায়। তারারা এখানে বাসা নিয়েছে খুব বেশী দিন হয় নি। সাত কি আট মাস হবে। এমনিতে সিঁড়িতে উঠতে – নামতে, ছাদে অনেক বার দেখা হয়েছে। অনেক কথাও হয়েছে। কিন্তু কখনও বাসায় আসে নি। আজ হঠাৎ? যাই হোক। দরজা খুললাম। তারা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বলল, “ আপু, আপনি বাসায়? !!আমিতো ভয়ে ভয়ে ছিলাম। ভেবেছি আপনাকে পাব না।“
তারা মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী।এই বছর এইচ. এস . সি পরীক্ষা দেবে। ওকে এক নজর দেখার জন্যই বিকেল হলেই আমাদের পাড়ায় ছেলেদের আনাগুনা বেড়ে যায়। সাধারণত সুন্দরী মেয়েরা বেশ অহংকারী হয়। কিন্তু তারার মধ্যে এই রকম কোন ব্যাপার সেপার নেই। তাই বেশ ভালো লাগে। আমি মুখে বড় একটা হাসি দিয়ে বললাম,
“ হুম। আজ মাত্র একটা ক্লাস ছিল। তারপর এক ঘণ্টার মতো ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে এসেছি ।কি ব্যাপার, তারা!! আজকে হঠাৎ কি মনে করে? তুমি তো কখনও বাসায় আসো নি। তাই এত কিছু জিজ্ঞেস করছি। আসো আসো, ভেতরে আসো।“ তারা কে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। তারা বসতে বসতে বলল, “ আপু, আপনার সাথে বেশ কয়েকদিন কথা হয় না। ছাদে ও রেগুলার আসেন না। আজকে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল। তাই সোজা বাসায় চলে আসলাম। আমি বললাম, “ ভালো করেছো। তুমি না আসলে কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই ছাদে যেতাম।“ “ আপু ,আপনি আজ অনেক খুশি খুশি। ঘটনা কি?” বলে তারা চোখ নাচাল।
“দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি “বলে খাট থেকে নেমে টেবিলের উপর রাখা দোলনচাঁপা ফুল গুলো নিয়ে আসলাম। “ দেখো তো, ফুল গুলো অনেক সুন্দর না!!! আজকে একজন দিয়েছে! এখন প্রশ্ন করো না যে কে দিয়েছে! আমি সেই কবে বলেছিলাম যে দোলন চাপা আমার ভালো লাগে। এটা এখনও তার মনে আছে।যখন আমার হাতে ফুল গুলো দিল তখন আমি এত অবাক হয়েছিলাম যে খুশির চোটে কিছুই বলতে পারি নি। অথচ বাসায় আসার পর থেকে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলা দরকার। যাই বল, আমি আজ অনেক খুশি”। এই কথা গুলো হড়বড় করে তারা কে বলার পর তারার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সেই হাসি মুখের উপর যেন ঝড় বয়ে গেছে। মুখটা কেমন জানি রাগী রাগী হয়ে গেছে। ও এক দৃষ্টিতে দোলনচাঁপা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এতক্ষণ যা বলেছি তার কিছুই যেন তারার কানে যায় নি। আমি তারাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বললাম, “ কি হয়েছে?” তারা কেমন জানি একটা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ দোলনচাঁপা গুলো মোটেও সুন্দর না। আমি এই ফুল ঘৃণা করি” । আমি অনেক অবাক হয়ে বললাম,” কি আবোল তাবোল বলছ, তারা!! দোলনচাঁপার মতো সুন্দর ফুল খুব কমই আছে। কিন্তু তুমি এই ফুল ঘৃণা করো কেন? “ হঠা ৎ দেখি তারার চোখে পানি। ছল ছল করছে। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। তারা মেয়েটাকে আমি অনেক শক্ত টাইপের মেয়ে হিসেবে জানি। চোখে পানি দেখে আমার অনেক মন খারাপ হল। আমি কিছু বললাম না। যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব নিয়ে তারা কে বললাম, “ আচ্ছা, বাদ দাও। আমি দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসি। তারপর চা খেতে খেতে গল্প করবো। অনেক গল্প জমে আছে।“ কথাটা বলেই কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিছুটা সময় নিয়ে চা বানালাম। তারপর রুমে এসে দেখি তারা দোলনচাঁপা গুলির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এখনও স্বাভাবিক হয় নি দেখে মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এক কাপ চা তারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, “ নাও, চা খাও। খেয়ে বল যে কেমন হয়েছে? তোমার ফাইনাল পরীক্ষা কবে থেকে শুরু? রুটিন কি এখনও পেপারে আসে নি?“
কিন্তু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে তারা বলল, “ আপু, আমি মনে হয় আপনার মন খারাপ করে দিয়েছি। কিন্তু সেটা ইচ্ছা করে করি নি। আসলে দোলনচাঁপা দেখলেই আমার আগের কথা মনে পড়ে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। সিলেটে থাকতাম তখন। তখনকার ঘটনা। ক্লাস সেভেনে পড়তাম । সেই ছোট্ট বয়সে দোলনচাঁপা আমার জীবনে বিভীষিকা হয়ে এসেছিল! আম্মু সিলেটে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে আমরা সরকারি কলোনিতে থাকতাম। আমার জন্ম ও হয় সেই কলোনিতে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত আমি সেখানে কাটিয়েছি। আমরা মানে আম্মু, আমি আর ভাইয়া। আর আব্বুকে ঢাকায় থাকতে হতো কারণ উনার পোস্টিং ছিল সেখানে। কিন্তু আব্বু প্রতি বৃহস্পতি বার আসতেন। কখনও সেটা মিস হয় নি। শুক্রবার ভোর রাতে আবার ঢাকায় চলে যেতেন। এইভাবে চলছিল। ওখানে থাকাকালীন সময়ে আমার প্রধান কাজ ছিল পুরা কলোনিতে সারাদিন চক্কর দেয়া, দৌড়ঝাঁপ করা, গাছে উঠা, রান্না বাটি খেলা, ক্রিকেট খেলা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে সারাদিন বাঁদরামি করতে না পারলেও বিকেল হলে আমাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারতো না। এইসব কাজে আমার সঙ্গীর অভাব ছিল না!!এই গুলো করতে করতে আস্তে আস্তে আমি ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সেভেনে উঠলাম। আর ভাইয়াও এস .এস. সি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করতে লাগলো।ঘটনার শুরু তখন থেকেই।………………………………………………………………
বাকি অংশ পরের পর্বে.....................
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




