somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারা ও দোলনচাঁপার গল্প ( প্রথম পর্ব)

৩১ শে মে, ২০১১ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় কলিং বেল বাজলো। উঠতে একদম ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আম্মু ঘুমিয়ে আছে। আমাকেই খুলতে হবে দরজা। অগত্যা বিছানা থেকে নামলাম। আই হোল দিয়ে দেখি তারা দাঁড়িয়ে আছে।অনেক অবাক হলাম। তারা দোতালায় থাকে আর আমরা চার তালায়। তারারা এখানে বাসা নিয়েছে খুব বেশী দিন হয় নি। সাত কি আট মাস হবে। এমনিতে সিঁড়িতে উঠতে – নামতে, ছাদে অনেক বার দেখা হয়েছে। অনেক কথাও হয়েছে। কিন্তু কখনও বাসায় আসে নি। আজ হঠাৎ? যাই হোক। দরজা খুললাম। তারা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বলল, “ আপু, আপনি বাসায়? !!আমিতো ভয়ে ভয়ে ছিলাম। ভেবেছি আপনাকে পাব না।“

তারা মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী।এই বছর এইচ. এস . সি পরীক্ষা দেবে। ওকে এক নজর দেখার জন্যই বিকেল হলেই আমাদের পাড়ায় ছেলেদের আনাগুনা বেড়ে যায়। সাধারণত সুন্দরী মেয়েরা বেশ অহংকারী হয়। কিন্তু তারার মধ্যে এই রকম কোন ব্যাপার সেপার নেই। তাই বেশ ভালো লাগে। আমি মুখে বড় একটা হাসি দিয়ে বললাম,
“ হুম। আজ মাত্র একটা ক্লাস ছিল। তারপর এক ঘণ্টার মতো ঘুরাঘুরি করে বাসায় চলে এসেছি ।কি ব্যাপার, তারা!! আজকে হঠাৎ কি মনে করে? তুমি তো কখনও বাসায় আসো নি। তাই এত কিছু জিজ্ঞেস করছি। আসো আসো, ভেতরে আসো।“ তারা কে আমার রুমে নিয়ে আসলাম। তারা বসতে বসতে বলল, “ আপু, আপনার সাথে বেশ কয়েকদিন কথা হয় না। ছাদে ও রেগুলার আসেন না। আজকে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছিল। তাই সোজা বাসায় চলে আসলাম। আমি বললাম, “ ভালো করেছো। তুমি না আসলে কিছুক্ষণ পর আমি নিজেই ছাদে যেতাম।“ “ আপু ,আপনি আজ অনেক খুশি খুশি। ঘটনা কি?” বলে তারা চোখ নাচাল।

“দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি “বলে খাট থেকে নেমে টেবিলের উপর রাখা দোলনচাঁপা ফুল গুলো নিয়ে আসলাম। “ দেখো তো, ফুল গুলো অনেক সুন্দর না!!! আজকে একজন দিয়েছে! এখন প্রশ্ন করো না যে কে দিয়েছে! আমি সেই কবে বলেছিলাম যে দোলন চাপা আমার ভালো লাগে। এটা এখনও তার মনে আছে।যখন আমার হাতে ফুল গুলো দিল তখন আমি এত অবাক হয়েছিলাম যে খুশির চোটে কিছুই বলতে পারি নি। অথচ বাসায় আসার পর থেকে মনে হচ্ছে কিছু একটা বলা দরকার। যাই বল, আমি আজ অনেক খুশি”। এই কথা গুলো হড়বড় করে তারা কে বলার পর তারার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। সেই হাসি মুখের উপর যেন ঝড় বয়ে গেছে। মুখটা কেমন জানি রাগী রাগী হয়ে গেছে। ও এক দৃষ্টিতে দোলনচাঁপা গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এতক্ষণ যা বলেছি তার কিছুই যেন তারার কানে যায় নি। আমি তারাকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বললাম, “ কি হয়েছে?” তারা কেমন জানি একটা ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ দোলনচাঁপা গুলো মোটেও সুন্দর না। আমি এই ফুল ঘৃণা করি” । আমি অনেক অবাক হয়ে বললাম,” কি আবোল তাবোল বলছ, তারা!! দোলনচাঁপার মতো সুন্দর ফুল খুব কমই আছে। কিন্তু তুমি এই ফুল ঘৃণা করো কেন? “ হঠা ৎ দেখি তারার চোখে পানি। ছল ছল করছে। নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। তারা মেয়েটাকে আমি অনেক শক্ত টাইপের মেয়ে হিসেবে জানি। চোখে পানি দেখে আমার অনেক মন খারাপ হল। আমি কিছু বললাম না। যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব নিয়ে তারা কে বললাম, “ আচ্ছা, বাদ দাও। আমি দুই কাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসি। তারপর চা খেতে খেতে গল্প করবো। অনেক গল্প জমে আছে।“ কথাটা বলেই কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিছুটা সময় নিয়ে চা বানালাম। তারপর রুমে এসে দেখি তারা দোলনচাঁপা গুলির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা এখনও স্বাভাবিক হয় নি দেখে মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এক কাপ চা তারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, “ নাও, চা খাও। খেয়ে বল যে কেমন হয়েছে? তোমার ফাইনাল পরীক্ষা কবে থেকে শুরু? রুটিন কি এখনও পেপারে আসে নি?“

কিন্তু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে তারা বলল, “ আপু, আমি মনে হয় আপনার মন খারাপ করে দিয়েছি। কিন্তু সেটা ইচ্ছা করে করি নি। আসলে দোলনচাঁপা দেখলেই আমার আগের কথা মনে পড়ে। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। সিলেটে থাকতাম তখন। তখনকার ঘটনা। ক্লাস সেভেনে পড়তাম । সেই ছোট্ট বয়সে দোলনচাঁপা আমার জীবনে বিভীষিকা হয়ে এসেছিল! আম্মু সিলেটে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে আমরা সরকারি কলোনিতে থাকতাম। আমার জন্ম ও হয় সেই কলোনিতে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত আমি সেখানে কাটিয়েছি। আমরা মানে আম্মু, আমি আর ভাইয়া। আর আব্বুকে ঢাকায় থাকতে হতো কারণ উনার পোস্টিং ছিল সেখানে। কিন্তু আব্বু প্রতি বৃহস্পতি বার আসতেন। কখনও সেটা মিস হয় নি। শুক্রবার ভোর রাতে আবার ঢাকায় চলে যেতেন। এইভাবে চলছিল। ওখানে থাকাকালীন সময়ে আমার প্রধান কাজ ছিল পুরা কলোনিতে সারাদিন চক্কর দেয়া, দৌড়ঝাঁপ করা, গাছে উঠা, রান্না বাটি খেলা, ক্রিকেট খেলা ইত্যাদি। মাঝে মাঝে সারাদিন বাঁদরামি করতে না পারলেও বিকেল হলে আমাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারতো না। এইসব কাজে আমার সঙ্গীর অভাব ছিল না!!এই গুলো করতে করতে আস্তে আস্তে আমি ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সেভেনে উঠলাম। আর ভাইয়াও এস .এস. সি পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করতে লাগলো।ঘটনার শুরু তখন থেকেই।………………………………………………………………
বাকি অংশ পরের পর্বে.....................

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×