somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুফা না, হনুফা হবে!!!

১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত বছরের সেপ্টেম্বর কি অক্টোবর মাসে হুট করে বাসায় ছোট খালামনি এবং খালু এসে হাজির। ঘটনা হল আমার ছোট খালু ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। ছোট খালামনির আগমনে আমি একই সাথে খুশি এবং মর্মাহত হয়েছিলাম।আমার খালামনি অনেক ফানি টাইপের।এজন্য উনাকে আমার অনেক পছন্দ। যেকোনো সিরিয়াস কথাকে নিয়ে এত ফান করেন যে হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসার জোগাড় হয়!! আর উনার কিউট কিউট ,আলু আলু ,জাপানি জাপানি চেহারার খুব দুষ্ট তিন বছরের একটা পিচ্চি আছে এবং আরও একটা পিচ্চি তখন হবে হবে করছিল। আর তাই নতুন বাসা ঠিক না করা পর্যন্ত সবাই ছোট খালামনিকে আমাদের বাসায় থাকার পরামর্শ দেন ।সব মিলিয়ে আমার অনেক খুশি খুশি লাগছিল:):)। কিন্তু মর্মাহত হয়েছিলাম এই কারণে যে আমাদের বাসায় কেউ আসলেই আমার রুম মেহমানদের দখলে চলে যায়। বরাবরের মত সেবারও দখলে চলে গিয়েছিল।কিন্তু সেটার ব্যাপ্তি ছিল পাক্কা দুই মাসের মতো!!! বড়ই কষ্টকর অধ্যায় ছিল সেটা!!/:)/:)

যাই হোক, যেটা বলছিলাম খালামনি সাথে করে দুই জন কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন।এক জনের বয়স হবে বার-তের।আর আরেকজনের বয়স হবে প্রায় আট কি নয়। দুজনকে দেখে তো আমার আক্কেলগুডুম অবস্থা হয়েছিল:-*:-*। যেটা বড় সে আবার চোখে কাজল দিয়ে চোখ স্মোকি স্মোকি করে ফেলেছে। যেটা অনেক চেষ্টা করে আমিও পারি না। চুলে আবার ভিন্ন ধরনের কাট দেয়া।তখন কিঞ্চিৎ টাকাপয়সার অভাবে আমার চুলে ও কোন কাট ছিল না। আর যেটা ছোট তার আবার সামনের চুল ছোট ছোট করে কাটা, সেগুলো আবার কপালে এসে পড়েছে। দুজনই সেরকম স্মার্ট। এসব দেখে- টেখে আমি সাথে সাথে খালামনিকে বললাম,” তুমি তো আমাদের ফকির বানিয়ে দিবা!! এমনিতেই তোমরা তিন জন। আর সাথে করে নিয়ে এসেছ আরও স্মার্ট দুইজন!!;);)” খালামনি বলল,” শুধু ফকির না, সেই সাথে সব সময় দিশেহারা বানিয়ে রাখবো!!B-)!”
আমি বললাম,” মানে??”
খালামনি,”কারন দুইজনের একই নাম। তোর খালু কোত্থেকে জানি একই নামের দুই জনকে জোগাড় করে এনেছে আল্লায় জানে! দুই জনের নামই অনুফা!!”
আমি হাসতে হাসতে শেষ। বললাম,” মানে এখন থেকে অনুফা ডাক দিলে দুই জনই আসবে:D!”
খালামনি বলল,” হাসিস না। বড়ই বিপদে আছি। ভাবতেসি বড়টার নাম দেব বড় অনুফা আর ছোটটার নাম দেব ছোট অনুফা।“
আমি বললাম,” গুড আইডিয়া। দাঁড়াও এখুনি ডাক দিচ্ছি।“ বলেই বড় অনুফা বলে ডাক দিয়ে দশ মিনিট বসে রইলাম! কিন্তু কেউ আসল না!!/:)
খালামনি বলল,” এক কাজ কর। অনুফা বলেই ডাক দে।“
ডাক দিলাম। সাথে সাথে দুই অনুফা এসে হাজির। বললাম,” এখন থেকে তোদের নাম একটু চেঞ্জ করা হবে।তুই বড়, তাই তোর নাম বড় অনুফা। আর তুই ছোট, তাই তোর নাম এখন থেকে ছোট অনুফা। কোন সমস্যা আছে? থাকলে বল।“
বড় অনুফা,” কুনু সমস্যা নাই। আফা, নামটা অনেক সুন্দর হইসে!! এখন থেইক্কা যারে ডাকবেন খালি হে আইব:P।“
নামকরন সমস্যার সমাধান হওয়াতে আমি এবং খালামনি দুজনই অনেক খুশি হলাম। আমি খুশি খুশি গলায় বড় অনুফাকে বললাম,” তোর চুলে কি কাট দিয়েছিস? ভাল হয়েছে।“
“ আল্লা , কি কন আফা!! আপনে জানেন না বুঝি!! এইটা লেয়ার কাট।“
“ও!!:-*

দুই অনুফা আসার কিছুদিন পর ছোট অনুফাকে আমার মেজো খালার বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। যাওয়ার সময় ছোট অনুফা অনেক কেঁদেছিল। সে কোন মতেই বড় অনুফাকে ফেলে যাবে না। একসময় অনেক বুঝানোর পর ছোট অনুফা শান্ত হয় এবং আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যায়। আর আমাদের বাসায় বড় অনুফা থেকে যায়। দুই মাসে বড় অনুফার কার্যকলাপে আমি অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম। একদিন বিকেলে খুব চা খেতে ইচ্ছা করছিল। তাই চায়ের কথা বলার জন্য কিচেনে গিয়ে দেখি বড় অনুফা চেয়ারে বসে রস- আলো পড়ছে আর হাসছে। আমাকে দেখে বড় অনুফা হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াল। আমি অনেক অবাক হয়ে বললাম,” তুই পড়তে জানিস??!:-*!”
বড় অনুফা বলল,” হ আফা। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছি।“
“ ভাল তো!! কিন্তু কি পড়ে এত হাসছিলি?”
তারপর বড় অনুফা আমাকে একটা জোকস দেখাল। ওটা পড়ে আমি অনেক হাসলাম। সাথে বড় অনুফা ও হাসল। আরেকদিন ভার্সিটি থেকে এসে দেখি বড় অনুফা শুয়ে শুয়ে উপন্যাস পড়ছে। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম হুমায়ুন আহমেদের “রুপা’ পড়ছে।আমি এত অবাক হয়েছিলাম যে কি বলব!! তারপর প্রতি শনিবারে দেখতাম মেয়েটা “ছুটির দিনে” পড়ছে।

আর মেয়েটা টিভি দেখতে অনেক পছন্দ করে। হিন্দি সিরিয়াল তার অনেক পছন্দ!!!আমাদের বাসায় যেদিন প্রথম এসেছিল সেদিন আমাকে বলেছিল বাসায় ডিশের লাইন আছে কিনা!! আমি কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল রাতে “প্রতিজ্ঞা” দিবে ।আমি বলেছিলাম,” প্রতিজ্ঞা কি?’’
বড় অনুফা,” আফা, আপনে সিরিয়াল দেখেন না?? আজকে দেইখেন প্রতিজ্ঞা। প্রতিজ্ঞার নায়ক টা যা সুন্দর না!! আপ্নেরে কি বলুম আফা!!:):)
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম এই কথা শুনে। মেয়ে বলে কি!!!যাইহোক, প্রতিদিন রাত এগোরাটার দিকে প্রতিজ্ঞা দেখা সবার রেগুলার রুটিন হয়ে গেল।আমার মা, খালামনি আর বড় অনুফা এর বিমুগ্ধ দর্শক/:)/:)/:)!!!

কিছুদিন আগের ঘটনা। বড় অনুফার সাথে দেখা হল খালামনির বাসায়। শুয়ে আছি। একসময় দেখি বড় অনুফা কি জানি একটা খুব মন দিয়ে পড়ছে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম ,”কি পড়িস? দেখি তো।“
বড় অনুফা আমাকে বইটা দিল। বইয়ের নাম “ রাশি এবং খোয়াবনামা”। আমি বললাম,” কোত্থেকে পেয়েছিস এই জিনিস?”
বড় অনুফা,” বাড়িত গেসিলাম। বাড়িত থেইক্কা নিয়ে আসছি। আপনার নামের প্রথম অক্ষর বলেন। রাশি বাইর কইরা দেই।“
আমি হতভম্ব গলায় প্রথম অক্ষর বললাম। বড় অনুফা আমার রাশি বের করে পুরাটা পড়ে শুনালো।
আমি বললাম,” কিন্তু রাশি তো এইভাবে বের করে না। রাশি বের করার অন্য সিস্টেম আছে। ভাল মতো জানি না।“
বড় অনুফা আমাকে পাত্তাই দিল না। বলল,” না আফা, এইভাবেই বাইর করে। এই বইয়ে তো এইভাবেই বাইর করছে। আপনে কালকে কি স্বপ্ন দেখসেন বলেন। অর্থ বাইর কইরা দেই।“
আমার মেজাজ পুরা খারাপ হয়ে গেল। বললাম,” অর্থ বের করতে হবে না। তার চেয়ে তোর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তোর রাশিতে কি লেখা আছে সেটা পড়ি।“ এই কথা বলেই “ অ” খুঁজে বের করলাম।
কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে বড় অনুফা বলল,” আফা, আমার নাম তো অনুফা না। হনুফা। আপনে ‘হ’ বাইর করেন।"
“ তোর নাম হনুফা!!!!!”
“হ”।

পুনশ্চ : পরে যেটা বুঝে ছিলাম সেটা হল ,খালামনি ভুল করে হনুফাকে অনুফা শুনেছিল। আর সেটা হল শোনার ভুল। হনুফা বড়ই ভালো মেয়ে , সে ও খালামনির ভুল ভাঙ্গায় নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৫০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×