
গত বছরের সেপ্টেম্বর কি অক্টোবর মাসে হুট করে বাসায় ছোট খালামনি এবং খালু এসে হাজির। ঘটনা হল আমার ছোট খালু ট্রান্সফার হয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। ছোট খালামনির আগমনে আমি একই সাথে খুশি এবং মর্মাহত হয়েছিলাম।আমার খালামনি অনেক ফানি টাইপের।এজন্য উনাকে আমার অনেক পছন্দ। যেকোনো সিরিয়াস কথাকে নিয়ে এত ফান করেন যে হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে আসার জোগাড় হয়!! আর উনার কিউট কিউট ,আলু আলু ,জাপানি জাপানি চেহারার খুব দুষ্ট তিন বছরের একটা পিচ্চি আছে এবং আরও একটা পিচ্চি তখন হবে হবে করছিল। আর তাই নতুন বাসা ঠিক না করা পর্যন্ত সবাই ছোট খালামনিকে আমাদের বাসায় থাকার পরামর্শ দেন ।সব মিলিয়ে আমার অনেক খুশি খুশি লাগছিল
যাই হোক, যেটা বলছিলাম খালামনি সাথে করে দুই জন কাজের মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন।এক জনের বয়স হবে বার-তের।আর আরেকজনের বয়স হবে প্রায় আট কি নয়। দুজনকে দেখে তো আমার আক্কেলগুডুম অবস্থা হয়েছিল
আমি বললাম,” মানে??”
খালামনি,”কারন দুইজনের একই নাম। তোর খালু কোত্থেকে জানি একই নামের দুই জনকে জোগাড় করে এনেছে আল্লায় জানে! দুই জনের নামই অনুফা!!”
আমি হাসতে হাসতে শেষ। বললাম,” মানে এখন থেকে অনুফা ডাক দিলে দুই জনই আসবে
খালামনি বলল,” হাসিস না। বড়ই বিপদে আছি। ভাবতেসি বড়টার নাম দেব বড় অনুফা আর ছোটটার নাম দেব ছোট অনুফা।“
আমি বললাম,” গুড আইডিয়া। দাঁড়াও এখুনি ডাক দিচ্ছি।“ বলেই বড় অনুফা বলে ডাক দিয়ে দশ মিনিট বসে রইলাম! কিন্তু কেউ আসল না!!
খালামনি বলল,” এক কাজ কর। অনুফা বলেই ডাক দে।“
ডাক দিলাম। সাথে সাথে দুই অনুফা এসে হাজির। বললাম,” এখন থেকে তোদের নাম একটু চেঞ্জ করা হবে।তুই বড়, তাই তোর নাম বড় অনুফা। আর তুই ছোট, তাই তোর নাম এখন থেকে ছোট অনুফা। কোন সমস্যা আছে? থাকলে বল।“
বড় অনুফা,” কুনু সমস্যা নাই। আফা, নামটা অনেক সুন্দর হইসে!! এখন থেইক্কা যারে ডাকবেন খালি হে আইব
নামকরন সমস্যার সমাধান হওয়াতে আমি এবং খালামনি দুজনই অনেক খুশি হলাম। আমি খুশি খুশি গলায় বড় অনুফাকে বললাম,” তোর চুলে কি কাট দিয়েছিস? ভাল হয়েছে।“
“ আল্লা , কি কন আফা!! আপনে জানেন না বুঝি!! এইটা লেয়ার কাট।“
“ও!!
দুই অনুফা আসার কিছুদিন পর ছোট অনুফাকে আমার মেজো খালার বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। যাওয়ার সময় ছোট অনুফা অনেক কেঁদেছিল। সে কোন মতেই বড় অনুফাকে ফেলে যাবে না। একসময় অনেক বুঝানোর পর ছোট অনুফা শান্ত হয় এবং আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যায়। আর আমাদের বাসায় বড় অনুফা থেকে যায়। দুই মাসে বড় অনুফার কার্যকলাপে আমি অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম। একদিন বিকেলে খুব চা খেতে ইচ্ছা করছিল। তাই চায়ের কথা বলার জন্য কিচেনে গিয়ে দেখি বড় অনুফা চেয়ারে বসে রস- আলো পড়ছে আর হাসছে। আমাকে দেখে বড় অনুফা হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াল। আমি অনেক অবাক হয়ে বললাম,” তুই পড়তে জানিস??!
বড় অনুফা বলল,” হ আফা। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ছি।“
“ ভাল তো!! কিন্তু কি পড়ে এত হাসছিলি?”
তারপর বড় অনুফা আমাকে একটা জোকস দেখাল। ওটা পড়ে আমি অনেক হাসলাম। সাথে বড় অনুফা ও হাসল। আরেকদিন ভার্সিটি থেকে এসে দেখি বড় অনুফা শুয়ে শুয়ে উপন্যাস পড়ছে। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম হুমায়ুন আহমেদের “রুপা’ পড়ছে।আমি এত অবাক হয়েছিলাম যে কি বলব!! তারপর প্রতি শনিবারে দেখতাম মেয়েটা “ছুটির দিনে” পড়ছে।
আর মেয়েটা টিভি দেখতে অনেক পছন্দ করে। হিন্দি সিরিয়াল তার অনেক পছন্দ!!!আমাদের বাসায় যেদিন প্রথম এসেছিল সেদিন আমাকে বলেছিল বাসায় ডিশের লাইন আছে কিনা!! আমি কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল রাতে “প্রতিজ্ঞা” দিবে ।আমি বলেছিলাম,” প্রতিজ্ঞা কি?’’
বড় অনুফা,” আফা, আপনে সিরিয়াল দেখেন না?? আজকে দেইখেন প্রতিজ্ঞা। প্রতিজ্ঞার নায়ক টা যা সুন্দর না!! আপ্নেরে কি বলুম আফা!!
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম এই কথা শুনে। মেয়ে বলে কি!!!যাইহোক, প্রতিদিন রাত এগোরাটার দিকে প্রতিজ্ঞা দেখা সবার রেগুলার রুটিন হয়ে গেল।আমার মা, খালামনি আর বড় অনুফা এর বিমুগ্ধ দর্শক
কিছুদিন আগের ঘটনা। বড় অনুফার সাথে দেখা হল খালামনির বাসায়। শুয়ে আছি। একসময় দেখি বড় অনুফা কি জানি একটা খুব মন দিয়ে পড়ছে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম ,”কি পড়িস? দেখি তো।“
বড় অনুফা আমাকে বইটা দিল। বইয়ের নাম “ রাশি এবং খোয়াবনামা”। আমি বললাম,” কোত্থেকে পেয়েছিস এই জিনিস?”
বড় অনুফা,” বাড়িত গেসিলাম। বাড়িত থেইক্কা নিয়ে আসছি। আপনার নামের প্রথম অক্ষর বলেন। রাশি বাইর কইরা দেই।“
আমি হতভম্ব গলায় প্রথম অক্ষর বললাম। বড় অনুফা আমার রাশি বের করে পুরাটা পড়ে শুনালো।
আমি বললাম,” কিন্তু রাশি তো এইভাবে বের করে না। রাশি বের করার অন্য সিস্টেম আছে। ভাল মতো জানি না।“
বড় অনুফা আমাকে পাত্তাই দিল না। বলল,” না আফা, এইভাবেই বাইর করে। এই বইয়ে তো এইভাবেই বাইর করছে। আপনে কালকে কি স্বপ্ন দেখসেন বলেন। অর্থ বাইর কইরা দেই।“
আমার মেজাজ পুরা খারাপ হয়ে গেল। বললাম,” অর্থ বের করতে হবে না। তার চেয়ে তোর নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তোর রাশিতে কি লেখা আছে সেটা পড়ি।“ এই কথা বলেই “ অ” খুঁজে বের করলাম।
কিন্তু আমাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে বড় অনুফা বলল,” আফা, আমার নাম তো অনুফা না। হনুফা। আপনে ‘হ’ বাইর করেন।"
“ তোর নাম হনুফা!!!!!”
“হ”।
পুনশ্চ : পরে যেটা বুঝে ছিলাম সেটা হল ,খালামনি ভুল করে হনুফাকে অনুফা শুনেছিল। আর সেটা হল শোনার ভুল। হনুফা বড়ই ভালো মেয়ে , সে ও খালামনির ভুল ভাঙ্গায় নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




