somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: দ্যা লাষ্ট পেগ

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“বয়েজ দুঃসংবাদ,শেষ! মাত্র এক পেগ হবে” রিহানের বাক্যে আরও কিছু কথা ছিলো। কিন্তু শেষ করতে না দিয়ে বাকি তিনজন একসাথে হায় হায় করে উঠলো। সিগারেটে দমকা টান দিয়ে সৌভিক কিছুটা রাগও ঝাড়লো “রাত মাত্র তিনটা বাজে! এক পেগ কে খাবে এখন? রিহান মোটামুটি বিব্রত। কারন পার্টিটা তার ছিলো। আশীষের অবশ্য কিছু যায় আসে না এসবে,ফ্লোরে প্রায় আধশোয়া,চোখ খুলে রাখতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। প্রথম চিৎকারটা শোনা গেল একেবারে টাল হয়ে যাওয়া সুমনের কাছ থেকে “দোস্ত এক পেগ যেটা আছে সেটা আমারে দে, আমার আরেকটু লাগবে। পিনিক আসে না”
বাকি তিনজনের চোখ বড় করে দেখলো, আশীষের রাগ আরেকটু বাড়লো বোধহয় “মারছে! আমরা কি ফালাবো?
-ইয়েস বন্ধু!
"-ধুর এইটা মাতাল হয়ে আছে, ওরে গুনায় বাদ দে। দোস্ত আমারে দিস "
যতটুকু চোখ খোলা রাখলে দেখা যায় ততটুকু চোখ খুলেই বলল আশীষ।
হাউকাউয়ে বিব্রত রিহান। সুন্দর ফ্ল্যাট কেনা উপলক্ষে আজকের আয়োজন ছিলো। স্কুল লাইফের চার বন্ধু মিলে হৈ হুল্লোড় করা যাবে। জীবন উপভোগ যাকে বলে আরকি। সৌভিক চালাক চতুর স্কুল থেকেই। রিহানকে প্রথম সেই গাঁজা খাইয়েছিলো। খাওয়ার পর সৌভিক হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো-কিরে কেমন লাগে?
-হুম ঘুরে!
-কি ঘুরে?
-দোস্ত আমি বমি করবো? তোর গায়ে করি?
বলেই হড়হড় করে বমি করে দিয়েছিলো। খুব বাজে ব্যাপার হলেও মনে করে শান্তি পাওয়া যায়। আজও সৌভিকের নেতৃত্বে গাঁজা আনা হয়েছিলো। হুইস্কির দাওয়াত ছিলো মূলত। তরল খাবার আগে শুকনা মন্দ হয় না! কিন্তু এখন কি হলো? সারারাতের কথা ছিলো, মাঝরাতে মাতালের বোতল ফুরিয়ে যাওয়ার অনুভূতি কামরত অর্ধবস্থায় দূর্বল পুরুষের স্থলনের পর সঙ্গী নারীর অনুভূতি প্রায় এক। পাগলের মত হয়ে তিনজন চিৎকার চেঁচামেচি করছে। হাতের পেগসহ গ্লাস নিরাপত্তার সাথে নিজের হাতে ধরে রেখেছে রিহান। নিজে খেয়ে ফেলবে কিনা এ ভাবনা যে আসেনি তা না। আরেকটা পেগ হলেই হয়ে যেত টাইপ অনুভূতি নিয়ে চারজনে শকুনে চোখ রিহানের হাতকে গিলে খাচ্ছে।

“ওকে বয়েজ! আমরা একটা খেলা খেলবো” রিহানের কথায় নড়েচড়ে বসে বাকি তিনজন। রিহান আবার শুরু করে “এই পার্টির আয়োজন আমার,অতএব তোমরা তিনজন আমি আছি এমন কোন সত্য বলবে যেটা কখনও বলনি আমাকে। এবং এটাই আমাদের খেলা”
বরাবরের মত এবারও প্রথম চেঁচিয়ে উঠলো সৌভিক “ক্যান এই খেলা খেলব কেন? তুই আসলেই ভোদাই। আগের ভোদাই”
রিহান একটু হাসলো,তারপর আবার “শোন তিনজন কনফেশন করবি,আমার কাছে সবচে বড় কনফেশন যেটা মনে হবে। সেই পাবে এই পেগ”

সদ্য পেটভরতি করা ভোজন রসিককে আবার খাবারের লোভ দেখালে সাড়া না দিতে পারে, তবে গাঢ় মাতালকে আরও মদের লোভ দেখিয়ে প্রভাবিত করা সহজ।সৌভিক গাঁইগুঁই করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হলো। আশীষকে ফ্লোর থেকে টেনে তোলা হলো প্রায় ঘাড় ধরে।

উত্তরায় রিহানের কেনা এই ফ্ল্যাটের ড্রয়িংরুমে সোফা বসেনি। পুরো ফাঁকা ধবধবে সাদা ফ্লোরে গোল হয়ে বসে আছে চারজন। ঠিক মাঝখানে শেষ পেগের গ্লাস। রিহান টস করলো। চিরকুটে লেখা নাম থেকে বেছে নিলো সুমন। আশীষ।
“ওকে আশীষ শুরু কর! তোর নাম উঠেছে। মনে রাখবি মিথ্যা বলা যাবে না। কনফেশন নাই বলা যাবে না। তোদের সাথে আমি স্কুল লাইফ থেকে এক সাথে”
আশীষ কিছুটা বিব্রত! সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করলো। ঠিক ধরলো না। দ্বিতীয় চেষ্টায় ধরিয়ে গাল ভরতি ধোঁয়া নিয়েই শুরু করলো “রিহান! ক্লাস নাইনে তোর ব্যাগে আমিই সিগারেট রেখেছিলাম” কথা শেষ করে সিগারেটে আরেকটা টান দিলো আশীষ। কিছুক্ষন পিনপতন নীরবতা “স্যরি দোস্ত! আমার জন্য তোর অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।মাফ করে দে”
হাতের ইশারা দিয়ে আশীষকে থামিয়ে দিলো রিহান। বাকি দুটি চিরকুট সাফল করা হলো। চিরকুট টেনে নিলো সুমন।হুম সুমনের নামই উঠেছে। আবার রিহানের একই ধরনের কথা “দেখ সুমন অবশ্যই সত্য বলবি!কনফেশন নাই এটা বলা যাবে না”
সুমনের চোখ ঢুলুঢুলু!ফ্যানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রিহানের চোখে চোখ রাখলো “দোস্ত আসলে ব্যাপার হচ্ছে!দেখ সত্যতো বলবো। বাট সেরকম……….থামিয়ে দেয় রিহান “এসব হবে না,সত্য বলতে হবে। কেবল সত্য।নাই এমন হতে পারে না। তোদেরটা শেষ হলে তোদেরকে নিয়ে আমিও বলবো”

কিছু চিন্তা করেই বোধহয় সুমন শুরু করলো “দেখ দোস্ত ওই যে ক্লাস নাইনেরই কথা। স্নেহার ব্যাগে আমিই চিঠি এবং ফুল দিয়ে আসছিলাম তোর নামে। এটা অবশ্য তোর ভালোর জন্যই। ও যাতে তোকে ভালোবাসে তাই করেছিলাম” রিহানে মাথা নীচু করে বসে আছে। বাকি তিনজনও চুপ। ভাবার কিছুই পাচ্ছে না সে।কঠিন নিয়মানুবত্তিতার পরেশ নগর হাই স্কুলে ভালো ছাত্র হিসাবে সে বেশ পরিচিত ছিলো। এত বেশী নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যেও অন্যরা কত দুষ্টামি করতো এটা ভেবে রিহান বেশ অবাক হতো। বাবা সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন বলে বাবার মুখ রক্ষাও একটা ব্যাপার থাকতো। তাই দুদিকের ভয়ে রিহানের কিছু করা হতো না। তবুও কিভাবে যেন কি হয়ে গেল! স্বয়ং হেডমাষ্টার রিহানের ব্যাগ থেকে সিগারেট আবিস্কার করলেন,তাও প্যাকেটে। পুরো স্কুলে হৈচৈ বেঁধে গেল। এরকমটা এই স্কুলে গত সাত বছরেও হয়নি। সাতবছর আগে ক্লাস টেনের একটা ছেলের ব্যাগ থেকে সিগারেট পাওয়া গিয়েছিলো বলে তাকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। ছেলেটা শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাও দিতে পারেনি। ভয়াবহ অবস্থায় হেডমাষ্টারের রুমে ডাক পড়ে রিহানের।হেডমাষ্টার অনীল বসু রেগে গেলে চশমা খুলে হাতে নিয়ে কথা বলেন “সিগারেট খাও কবে থেকে?
রিহান মাথা নীচু করে রাখে, উত্তর দেয় না। হেডমাষ্টার আবার জিজ্ঞেস করেন। এবারও নিশ্চুপ থাকে রিহান। হেডমাষ্টার এইবার রেগে গিয়ে বললেন “কি মাথায় ঢুকে না কথা? কবে থেকে খাও?
-খাই না স্যার
প্যাকেট দেখিয়ে হেডমাষ্টার প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন “তাহলে এটা কার? আমার ? আমি তোমার ব্যাগে রেখেছি?
-স্যার আমি সিগারেট খাই না।
-ওকে! তোমার বাবাকে খবর দেয়া হয়েছে। অভিযোগ কেবল একটা না। আসুক তিনি।

ঘন্টাখানেক রিহান দাঁড়িয়েই থাকে। বাবা এসে হেডমাষ্টারের সামনের চেয়ারে বসেন। পিছনেই রিহান মাথা নীচু করা।হেডমাষ্টার এবং বাবার কথোপকথন উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বাবা মূলত চুপ,হেডমাষ্টার বলেই যাচ্ছেন।
-এই যে দেখুন,এইটা গতকাল পাওয়া গেছে। ক্লাসের এক মেয়ের ব্যাগে আপনার ছেলে চিঠি এবং ফুল দিছে। দেখুন দেখুন চিঠিতে কি ভাষা ব্যাবহার করেছে?
রিহান বেশ অবাক হয়ে যায়! চোখ তুলে তাকায় তবে কিছুই বুঝতে পারে না। বাবা চুপচাপ চিঠিটা পড়ার চেষ্টা করেন। হেডমাষ্টার আবার শুরু করলেন “শুনুন ভেবেছিলাম আপনার ছেলে ভালো ছাত্র,এটা এড়িয়ে যাই। কিন্তু দেখুন আজ তার ব্যাগ থেকে সিগারেট পাওয়া গেছে। শুনুন আমরা চাই না তার জন্য অন্যরা নষ্ট হোক। তাকে টিসি দেয়া হবে”
রিহানের বাবা কিছু বলার চেষ্টা করলেন।পারলেন না। রিহানও চেষ্টা করলো ঠিকই, তবে পারলো না। সত্য বলার মতও সাহস ছিলো না। সব ভয় এক সাথে এসে হাজির।পরের ঘটনা বেশ কাঠখড় পোড়ানোর। ক্লাস নাইনের রেজিষ্ট্রেশন হয়ে গিয়েছিলো বলে রিহান অন্য কোন স্কুলে নাইনে ভর্তি হতে পারেনি। হেডমাষ্টারকে অনেক রিকোয়েষ্ট করার পরও তিনি রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ক্লাস এইটে ভর্তি হতে হয়েছে।

‘এবার তোর পালা,শুরু কর সৌভিক”। সিগারেট খাওয়া থামিয়ে দিলো সৌভিক। মাতাল ভাব ক্লান্তিতে পরিনত হয়েছে। সময় কিভাবে যায় কে জানে!মদ খেতে ইচ্ছা করছে না। সত্য বলতেও না।রিহান তাড়া দেয়,সৌভিক উদাস হয়ে থাকে। কথা কানে নিয়ে ধীরে ধীরে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে। শেষ করে এস্ট্রেতে গুঁজে ফেলে ফিল্টার।
“রিহান!আশীষ এবং সুমন যা বলেছে সত্য। বুঝিনি এত সমস্যা হবে তোর। আমরা মজা করতে চেয়েছিলাম।এসব তোকে অনেকবার বলবো ভেবেছিলাম কিন্তু বলা হয়নি। বিশ্বাস কর ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় মনে হতো তোর সাথে দেখা হলে একদিন এসব বলবো। কিন্তু কেন যেন ভুলে যেতাম”
খুব অবাক হয়ে রিহান “তুইও ওদের সাথে ছিলি এই অপকর্মে”
লম্বা একটা দম নিয়ে সৌভিক স্বীকার করে “হুমম সকল আইডিয়া আমার ছিলো,প্ল্যানও করেছি আমি….
কথা শেষ করতে দেয় না রিহান। খালি মদের বোতল হাত দিয়ে তুলে সৌভিকে ঘাড় বরাবর ছুড়ে দেয় "শুয়রের বাচ্চা,কি করেছিস আমার সাথে জানিস?
সৌভিক ছিটকে পড়ে পাশের দেয়ালে। ঢমঢম করে সাদা ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে থাকা মুখবন্ধ করা আরেকটি হুইস্কির বোতল। ছোট্ট থলিতে রাখা বোতল যেটা শেষ মজা করে খাবে বলে এনেছিলো, মাতলামোর ভুলে খোলা হয়নি!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ রাত ২:৩৮
৫৪টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×