somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে মন্ত্রী সাহেবের ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করেনি!

১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাস্তায় হাঁটছিলাম রাত দু’টার সময়। একটা সিএনজি এসে সামনে দাড়ালো। একজন মোটা মতন পুলিশ হুঙ্কারের সাথে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কী ফেসবুকের হাঁটা বাবা?
-জ্বি মহাশয় আমি হাঁটা বাবা। প্রোফাইল পিকচারটা ডিএসএলআর দিয়ে তোলা। কার্টেসি বসা বাবা!
-আপনার চোখ লাল কেন? কি খেয়েছেন?
-পৃথিবীতে চোখ লাল হবার আরও কারণ আছে। একলা মানুষ, আপনাদের মতো তো আমার কেউ নেই। রাত গভীর হচ্ছে, ভরা যৌবন। বয়সটাও তো খারাপ। কাউকে না পেয়ে যৌবন চোখে এসে লাল হয়ে গেছে!
-যৌবন চোখে আসলে চোখ লাল হয়?
-হয়, এই সম্পর্কে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন “তোমার চোখটা এত লাল কেন?
-চুপ করেন. আপনার বিরুদ্ধে কড়া অভিযোগ আছে। আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে -অবশ্যই যাবো, বলেছেন যখন যাবো না কেন? নিমন্ত্রন রক্ষা না করার মত অমানুষ আমি নই।

ওরা আমার ওঠার অপেক্ষা করলো না। চ্যাংদোলা করে সিএনজিতে তুলে ফেলল। দুপাশে দুজন পুলিশ মাঝখানে আমি। নিজিকে ভিআইপি মনে হচ্ছে। দুই পুলিশের নাকে হাত। একটা বিদঘূটে গন্ধ। সিএনজি ড্রাইভারের নাকে হাত নেই। তাকে জিজ্ঞেস করলাম –
-মামা গন্ধ পাও না?
-পাইতো
-নাকে হাত নাই কেন? দেখ না মহাশয়রা নাকে হাত দিছেন।
-নাকে হাত দিলে আপ্নে চালাইবেন গাড়ী? আর গোসল করেন না কয়দিন?
ওহো গোসল করা হয়নি গত কিছুদিন। এতক্ষন গন্ধটা বিদঘুটে লাগছিলো। এইমাত্র মনে হলে- বাহ!

মাথার উপরে একটা বাল্ব। সামনে বসে আছেন ওসি পার্থ। উনি কি বলবেন গুছিয়ে নিচ্ছেন। আমার অত অপেক্ষা করার সময় নেই।
-পার্থ সাহেব কি বলবেন বলুন? বাসায় গিয়ে গোসল করতে হবে। ভয় পাবেন না, আপনি সেফ।
পার্থ সাহেব হতচকিত হয়ে গেলেন। চোখ যেন বেরিয়ে আসছে কপাল দিয়ে।
-আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে।
-আমার জানামতে আমি খুন হত্যা, গুম, রাহাজানি, ধর্ষন কোন কিছুই করিনি
-আপনি মন্ত্রী সাহেবের ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করেননি।
-শীট মন্ত্রী সাহেব? ঐ যে ফেসবুক মন্ত্রী? উচিত হয়নি, অনুচিত হয়েছে, আমার খুব খারাপ লাগছে ওসি সাহেব, নিজেকে নিজে ব্লক করে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।
-আপনি কি জানেন আপনি বেশী কথা বলেন?
-না জানিনা, একজন রাঁধুনী কখনই নিজের রান্নার টেষ্ট নির্ধারণ করতে পারে না, একজন লেখক কখনও নিজের লেখা কেমন সেটা যাচাই করতে পারেনা। তাই আমি যে বেশী কথা বলি এটাও আমি বুঝতে পারি না।

আমাকে একটা ল্যাপটপ এনে দেয়া হল। ভন্ডামির কিছু নতুন টেকনিক পেয়েছি। আপাতত আমি হিমু স্টাইল ফলো করে নিজেকে আধুনিক হিমু বলে প্রতিষ্ঠাও করে ফেলেছি। এক্ষেত্রে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। হুমায়ূন আহমেদের প্রতি আবেগে মানুষ আমাকে ইশ্বরের পাঠানো বিশেষ হিমু হিসাবে ভেবে ফেলেছে। আপাতত সেটা মন্ত্রী পর্যায়ে চলে গেছে দেখে অবাক হলাম।
-আপনি হাডেন কেন?
-কারণ আমি হাঁটা বাবা, হাঁটা বাবারা দৌড়াতে পারে না। দৌড়ালে পিছনে হাঁটতে থাকা মানুষগুলোও দৌড়াবে। দৃশ্যটা দেখতে বিশ্রী। দেখলে মনে হয় আমি কারো গলা থেকে গয়না চুরি করে দৌড়াচ্ছি আর আমাকে ধাওয়া করছে এলাকাবাসী।
-আপনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। আপনি ফেসবুকে আঠারো বয়সি এক বালিকাকে “মা” বলে সম্বোধন করেছেন।
অনেক্ষন ভেবে মনে করলাম মাস খানেক আগে এক মধ্যরাতে এক নারী ফেসবুকে নক দিলো “hi hata baba”
বললাম “জ্বি মা”
ওমা এতেই রেগে গেলো। তার নাকি মা হবার বয়স হয়নি। আজব মেয়ে। মা হবার বয়স না হলে ফেসবুক আইডি খুলেছে কিভাবে কে জানে! পুলিশকে এ তথ্য জানানো দরকার “দেখেন পার্থ সাহেব, মেয়েটাকে আমি বলেছি জ্বি মা, এতে সে রেগে গিয়ে জানালো তার মা হবার বয়স হয়নি। অথচ আমি জানি ফেসবুকে আঠারো বছরের আগে কেউ একাউন্ট খুলতে পারে না। যদি তার মা হবার বয়স না হয় তবে সে জালিয়াতি করে ফেসবুক একাউন্ট খুলেছে। এটা তদন্ত হওয়া দরকার। আপনি তদন্ত শুরু করেন আমি স্ট্যাটাস দিই এ বিষয়ে”
এবার ওসি পার্থ রেগে গেলেন। আমি বোধহয় সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি “শোনেন হাঁটা বাবা না চাটা বাবা. ওই মেয়ে সে মন্ত্রীর মেয়ে। মন্ত্রী সাহেবের ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করেন নাই কিন্তু তার মেয়েকে নিজেই ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছেন।
-দেখুন ওসি সাহেব, আমি গে না!! স্বাভাবিক।
এবার পার্থ চূড়ান্ত রেগে “তুই মন্ত্রীর ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করিস নাই ক্যান?
পার্থর কন্ঠ শুনে আবেগী হয়ে গেলাম। মনে হলো আমার বন্ধু আমার সাথে কথা বলছে। আমিও উত্তর দিলাম “দ্যাখ পার্থ তুই ভুল বুঝতেছিস। আমার আসলে ৫ হাজার ফ্রেন্ড হয়ে গেছে”
-এসব কি বলছেন?
বেচারা রেগে গেছে কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছেনা। মন্ত্রী সাহেব তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করবার জন্য, মেরে ফেলবার জন্য না। অতএব পার্থ বেচারা মুখু বুজে সহ্য করছে। মুশকিল বিদায় দিতে পারলাম না। আমাকে লগইন করতে হলো। এখন একজন ফ্রেন্ড ডিলিট করতে হবে, নইলে মন্ত্রী সাহেবকে এড করা পসিবল না। ভাবলাম নিজেকে নিজেই আনফ্রেন্ড করে দিই। কিন্তু নিজের বন্ধু তালিকায় নিজেকে দেখতে না পেয়ে রাগে দুঃখে ক্ষোভে একজনকে ডিলিট করেই দিলাম। এখন সেই মহেন্দ্রক্ষন। ওসি পার্থ হাসিহাসি মুখে মন্ত্রী সাহেবের সাথে কথা বলছেন। মন্ত্রী সাহেব এক্ষুনি ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাচ্ছেন।

মিনিট খানেক পর পার্থর ফোন বেজে উঠলো। সে জ্বি স্যার ইয়েস স্যার বলতে বলতে অস্থির। ফোন রেখেই “হাডা বাবা, হাডা বাবা স্যার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন। একসেপ্ট করেন দ্রুত”। লোকটা হাঁটা বাবা উচ্চারণ করতে পারে না। উচ্চারণ করে হাডা বাবা। ভাগ্যিস শব্দটা হাঁটা, হেঁটা না! মান ইজ্জত একদম হেঁটায় ঢুকে যেতো। যাকগে দুইটি ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট এসেছে। প্রথমজন মন্ত্রী মহোদয়। দ্বিতীয়জন শামীম ওসমান!

ওসি পার্থ খুব চিন্তিত। প্রথম কথা হচ্ছে আমার ফ্রেন্ডলিষ্ট থেকে আর কোন ফ্রেন্ডকে ডিলিট করা যাচ্ছে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট আমি একসেপ্ট করবো। দুই বধু এক স্বামীর অবস্থা হয়েছে। দুই বন্ধু একটা জায়গা।মন্ত্রী সাহেব ফোনের পর ফোন দিচ্ছেন। এ সমস্যার কথা সংসদীয় উপ-কমিটিতে চলে গিয়েছে। তথ্য মন্ত্রনালয় বিকালে মিটিং ডেকেছে। আশা করা যাচ্ছে রাতের মধ্যে জানা যাবে কার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করবো। ইতোমধ্যে টিভি চ্যানেলগুলো এসএম এর মাধ্যমে জনমত নিচ্ছেন কাকে ফ্রেন্ডলিষ্টে এড করলে ভালো হয়।
“পার্থ ভাই পার্থ ভাই” ওসি সাহেবকে ডাকলাম।
-বলুন
-শামীম ওসমানকে রেখে আমি কিছুতেই মন্ত্রী সাহেবের ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করতে পারবো না।
-কেন? কেন?
-কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তিনি শামীম ওসমান পরিবারের সাথে আছেন। প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশনেত্রী। তিনি সাথে আছেন মানে ষোলকোটি জনতা সাথে আছে। আমি রাজাকার নাকি যে ষোলকোটি মানুষের বাইরে যাবো!
জয় বাংলা বলে শামীম ওসমানের ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট একসেপ্ট করে একজন নিপীড়িত, শোষিত অসহায় মানুষকে বন্ধু বানিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর মত মহান বানিয়ে ফেললাম। কেবল মহান নয় শামীম ওসমানের পরিবারের সাথে থেকে আমি এখন সবচে নিরাপদ। নিজের নিরাপত্তার খাতিরে সবার উচিত শামীম ওসমানের পরিবারের সাথে থাকা। আপনারা সবাই নিজ নিজ পরিবার ছেড়ে শামীম ওসমানের পরিবারের সাথে থাকুন। কোন শালায় কিছু বললেই, শামীম ওসমান দেইখা নিবে বইলা দিলাম!
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×