তিশা সাজতে বসেছে।
সে সহজে সাজে না। আজ সাজবে।
রুমে কেউ নেই। বিকেলে রুমে সাধারনত
কেউ থাকে না। নীলা,রুবি এরা সবাই
তাদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ব্যস্ত। বয়ফ্রেন্ড
কনসেপ্টটা তিশার মোটেও ভাল
লাগে না। বয়ফ্রেন্ড
শব্দকে বাংলা করলে হয় ছেলে বন্ধু। বন্ধু
কিভাবে প্রেমিক হয়
তা সে বুঝতে পারে না। এই শব্দটির মধ্য
কোন আবেগ নেই। পৃথিবী ক্রমেই
আবেগশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এই
শব্দকে অনেকে সংক্ষেপে বলে বি.এফ.।
তিশার তখন আরো বিরক্ত লাগে।
সংক্ষিপ্ত রুপ থাকবে কোন
প্রতিষ্ঠানের।যেমন:জাবি,ঢাবি,বুয়েট
ইত্যাদি। প্রেমের আবার কিসের
সংক্ষিপ্ত রুপ। প্রেম হচ্ছে সীমাহীন।
তিশার মতে সে হচ্ছে ৩য় শ্রেনীর
সুন্দরী। সাজলে তাকে ৪র্থ শ্রেনীর
সুন্দরীদের মত লাগে। তাই
সে সহজে সাজতে চায় না। কিন্তু আজ
সাজবে।ইচ্ছামত সাজবে। ৫ম শ্রেনীর
সুন্দরীদের মত লাগলেও সাজবে।
তিশা সাজবেই বা কিসের জন্য। তার
কোন বি.এফ. নেই। তবে ছেলে বন্ধু
আছে। রিয়াদ তার ছেলে বন্ধু। শুধুই
বন্ধু,আবার খুব ঘেষাঘেষি টাইপ বন্ধুও না।
শুধু ক্লাসের অন্যন্য ছেলেদের
চাইতে একটু বেশি ভাল সম্পর্ক। রিয়াদ
ছেলেটা একটু গম্ভীর প্রকৃতির। তিশাও
গম্ভীর,তাই হয়তো তাদের মাঝে সম্পর্ক
ভালো। রিয়াদ তিশার
সাথে কখনো প্রেম
ভালবাসা নিয়ে আলোচনা করে না।
তবে তিশা জানে যে রিয়াদের এরকম
কোন রিলেশন নেই। কিছুদিন
আগে বিকেলে রিয়াদ তিশার হলের
সামনে গিয়েছিল নোট আনতে।
তিশা নোট নিয়ে বাইরে আসে।
রিয়াদ তাকে দেখেই বলে,"কিরে আজ
তোকে দেখলে তো যে কেউ
প্রেমে পরে যাবে। তিশা কেন
জিঙ্গেস করতেই রিয়াদ বলে,"তোর
চোখ দুটি ঢেকে রাখ,আমার সানগ্লাস
আছে। আমি নিশ্চিত তোর চোঁখ
দেখলে এখন যেকোন
ছেলে তোকে প্রপোজ করবে"।
তিশা একবার
বলতে চেয়েছে,"তাইলে তুই করিস
না কেন?"। কিন্তু বলেনি। বললে কোন
সমস্যা ছিল না। বন্ধু
হিসেবে সে দুষ্টমি করতেই পারে।
কিন্তু তারপরও বলেনি।
তিশা রুমে গিয়ে আয়না দেখে নিজেই
মুগ্ধ হয়ে যায়। সত্যি তার চোখ
দুটো অনেক সুন্দর লাগছে। কাজল
দেয়াতে হয়ত বেশি সুন্দর লাগছে।
তবে কাজল ছাড়াও তার চোখ সুন্দর।
অনেকেই বলে,রিয়াদও প্রথম পরিচয়ের
দিকে একবার বলেছিল। রিয়াদের
সাথে তার পরিচয় প্রায় একবছরের।
আজকে তিশার সাজার পেছনে কারন
আছে। খুব ছোট কারন। রিয়াদ
বলেছে আজ বিকেলে তিশার
সাথে দেখা করবে,সারপ্রাইজ আছে।
কী সারপ্রাইজ তিশা বুঝতে পারে না।
রিয়াদ প্রয়ই তিশাকে চমকে দেয়। যেমন
কিছুদিন আগেও দিয়েছে। সেদিন
তিশার জন্মদিন ছিল। দুপুরের একটু
পরে রিয়াদ যেন কী কাজে তার
কাছে এসেছিল। তখনই
তিশা তাকে জন্মদিনের কথা জানায়।
শুধু রিয়াদকেইবা কেন বলল
সে জানে না। রিয়াদ চট করেই বলল তুই
একটু থাক এখানে, আমি আসতেছি।এ
কথা বলেই সে চলে যায়। কিছুক্ষন পর
ফিরে আসে। তিশাকে একটি উপহার
দেয়। তিশা মধ্যবিত্ত পরিবারের
সন্তান। জন্মদিন তার
কছে বিলাসিতা,উপহার
আরো বিলাসিতা। রিয়াদের
দেয়া উপহার ছিল তার জীবনের প্রথম
উপহার। উপহারটি খুব সুন্দর
করে মোড়কে বাধা। মোরকটি খুলতেই
দেখা যায় বক্সটি একটি অর্নামেন্টের
বক্স। খুব সুন্দর বক্স। তিশা বক্স খুলেই
দেখে সেখানে একটি এক
টাকা দামের মি.ম্যাংগো চকলেট।
রিয়াদ হো হো করে হেসে উঠে।
তিশার চোখে জল এসে যায়। এ জল
আনন্দের। একটু পরেই রিয়াদ
তাকে আরেকটি উপহার দেয়।
একটি শো-পিস। তালগাছে বাবুই
পাখির বাসায়
দুটি পাখি বসে আছে,খুবই সুন্দর দেখতে।
তবে তিশার প্রথম উপহারটিই বেশি পছন্দ
হয়। জীবনের প্রথম উপহার চকলেট,
ভাবতেই ভাল লাগে।
তিশার সাজা শেষ। সে আয়নার
সামনে দাড়ায়, আজ তাকে প্রথম
শ্রেনীর সুন্দরীদের মত লাগছে। রিয়াদ
তিশাকে ফোন দেয়। তিশা বের হয়।
রিয়াদের সাথে দেখা হয়।
তারা একটি রেস্টুরেন্টে বসে।
রিয়াদের
সাথে আরেকটি মেয়ে আছে।
তিশা তাকে চিনে না। রিয়াদ
তিশার সাথে মেয়েটির পরিচয়
করিয়ে দেয়। রিয়াদের
সাথে মেয়েটির পরিচয় একমাসের।
রিয়াদ তিশাকে মেয়েটির
সাথে পরিচয় হওয়ার গল্প সহ
নানা কথা শোনায়। এটাই ছিল
রিয়াদের সারপ্রাইজ।
তিশা সারপ্রাইজড
হয়েছে কিনা বুঝতে পারে না।
সে মনযোগ দিয়ে রিয়াদের
কথা শুনতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার মন
কেমন যেন উলট-পালট হয়ে যায়। তার
বুকে আলপিনের মত একটি সুই বিধে।
সুইটি ছোট ,কিন্তু ব্যথা অনেক বেশি।
আজও তিশার চোখে জল আসে। এ জল
কষ্টের। জল সংবরন
করে সে হাসতে চেষ্টা করে।
তিশা সিদ্ধান্ত নেয় সে আর
কখনো কাদবে না। অতি কষ্টেও
না,অতি আনন্দেও না। এটাই তার শেষ
কান্না....,