নীল আর ইরা বেস্ট-ফ্রেন্ড , স্কুল লাইফ থেকেই একে অপরকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেনা । নীল সবসময়'ই কেয়ারলেস কিন্তু আবেগপ্রবণ , আর অন্যদিকে ইরা সর্ম্পূণ উল্টো । নিজের'তো বটেই সাথে কাছের মানুষগুলোর ও খুব কেয়ার করে তবে আবেগ জিনিস'টাকে পছন্দ করেনা । মেয়েটা মনে করে আবেগ দিয়ে জীবন সংসার চালানো যায় না । ইরা মেয়েটা এমনিতেও খুব ফ্রেন্ডলি । সবার সাথে সব-সময় হাসি-খুশি থাকে , যদিও ওর কিছু কষ্ট আছে যা ওর ফ্যামেলি ছাড়া অন্য কেউ'ই জানেনা ।
আবেগপ্রবণ মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম'ই হচ্ছে , অল্পতেই দুর্বল হয়ে
যাওয়া । নীলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো'না । ইরার প্রতি ওর দুর্বলতা বাড়তেই থাকে । অনেক দিনের বন্ধুত্ব , তার থেকেও বড় কথা ইরা আবেগ জিনিসটাকে ২ চোখে দেখতে পারেনা নীল সেটা ভাল করেই জানে । যদি বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায় , সেই ভয়টা নীলকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায় । আর নীল ভালো করেই জানে ইরা সবসময় মা-বাবার বাধ্য সন্তান , অবাধ্য হবেও না কোনদিন । একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাকেঁ ইরা নিজেই বলেছিল 'আমার নিজের কোন পছন্দ নাই সো বিয়ে হোক বা অন্যকিছু মা-বাবার পছন্দটাই আমার কাছে সব , ওনারা তো আমার জন্য বেস্ট জিনিসটাই দেয়ার চেষ্টা করবে'
খুব ভালোই চলছিল নীল আর ইরার বন্ধুত্ব , কয়েকবার প্রপোজ করতে গেলেও নীলের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি । সামনের মাসের ২৭ তারিখ ইরার জন্মদিন , নীল ভাবতে থাকে ঐদিন'ই ইরাকে প্রপোজ করার কথা । নীল জানে না ওর এই অপ্রকাশিত ভালোবাসাটা প্রকাশ করার পর এর ভবিষ্যত কি হবে , ওদের বন্ধুত্বটাই বা টিকবে কিনা । নীলের ওভার-কনফিডেন্স আছে কিছু ক্ষেত্রে , ইরার কারো সাথে রিলেশন থাকলে নীলকেই সবার আগে বলতো ।
"এই জগতের স্বাভাবিক নিয়মগুলোর একটি হচ্ছে মানুষের সুখের দিনগুলি তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া"
আর ১০-১৫ দিন পর'ই ইরার জন্মদিন । কিন্তু ইরার সাথে নীলের কিছুদিন যাবত্ কোন যোগাযোগ নেই , ইরা হঠাত্ করে যোগাযোগ অফ করে দেয়ার কোন কারন'ই খুঁজে পেলোনা নীল । ফোনটাও অফ রাখছে সাথে ফেইসবুক আইডিটাও ডিএক্টিভেট করা । দুঃচিন্তায় গত ২ দিন রাতে নীলের একটুও ঘুম হয়নি । পরদিন সকালে ইরার একটা মেসেজ দেখে নীলের বুকটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল ।
ইরার মেসেজঃ- আর যোগাযোগ করার চেষ্টাও করিস না , প্লিজ আমার থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যা । এতে তোর'ই ভালো হবে ।
মেসেজটা ছোট্ট হলেও এর কথাগুলো যেন নীলের কানে কেউ গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে । ইরাকে ফোনে না পেয়ে নীল ইরার মাকে ফোন দিল , ওনার কথা শুনে নীল স্ত্বদ্ধ হয়ে গেল । ইরার ব্ল্যাড ক্যান্সার ধরা পড়ে অনেক আগেই , ওর ফ্যামেলি আর কাছের কয়েকজন ছাড়া আর কেউ'ই জানতো না এটা । এমনকি নীলকে ও আগে কখনো জানায়নি । ইরার আম্মুর কথাগুলোর সারর্মম "হঠাত্ ও অসুস্থ হয়ে পড়লো , এই খবরটা ইরা নীলকে জানাতে চায়নি । ওর হয়তো আর বাচাঁর সম্ভাবনাও খুব একটা নেই" শেষে এও বললেন যদি সম্ভব হয় নীল যেন ইরাকে একবার হলেও দেখে যায় রাতের মধ্যে । কারন ডক্টর বলেছে খুব বেশি সময় নেই , যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে ।
নীল সাথে সাথেই এড্রেস নিয়ে চলে গেল হসপিটালে । আজ ইরাকে দেখে সত্যিই খুব বিস্মিত হলো । যে মেয়েটা সব সময় হাসি খুশি থাকতো সে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল ও যেন সেটা বিশ্বাস'ই করতে পারছে না । ইরা ওকে দেখে এক বুক কষ্ট নিয়ে হাসি দেয়ার চেষ্টা করলো , কিন্তু সেটা যে শুধুমাএ নীলের জন্য এতে কোন সন্দেহ নেই । ইরা হসপিটালের বেডে শুয়ে , ও নীলকে বললোঃ-
ইরা - নীল আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবি
নীল - আচ্ছা ঠিক আছে ( এই বলে নীল ওর মাথায় হাত দিল , কেউ কিছু বলছে না । সবাই জানে এটাই হয়তো ইরার শেষ ইচ্ছে , তাই সবাই এই পাগল দুটোর পাগলামি দেখছে )
ইরা - নীল তুই কি আমায় ভালবাসতি ???
নীল - থাক না এইসব , তুই চুপ করে থাক আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি
ইরা - নীল আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসিরে , খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে আর আব্বু-আম্মুকে ছেড়ে যেতে । কিন্তু কি করবো বল , অনেক আগেই এই অসুখটা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো । তাই তোকে সাহস করে বলতে পারিনি , কারন আমার কিছু হয়ে গেলে তুই ও যে বাচঁতে পারতি না । সেটা আমি জানতাম ( কথাগুলো এক নাগারে বলে গেল ইরা )
নীল - ইরা আমিও যে তোকে অনেক ভালোবাসিরে , আমি যে তোকে হারাতে পারবো না । তোর কিচ্ছু হবেনা , তুই সুস্থ হয়ে যাবি
ইরা - নীল আমার একটা আবদার রাখবি
নীল - বল
ইরা - আমার মৃত্যুর পর তুই ভালো থাকিস , নিজের লক্ষে স্থির থাকবি কথা দে
নীল - তুই চুপ করবি
ইরা - #NILL i Luv u mOre tHeN meH
নীল - আমিও রে
এরপর কেউ আর কোন কথা বললো না , ইরার আব্বু-আম্মু পাশে দাড়িয়ে সবই শুনেছে । ওনারা ইরার সাথে একটু কথা বলল ।
রাত ১২:০৭ টা , ইরার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল । ডক্টর এসে বললো আমাদের আর কিছু করার নেই । সবটা আল্লাহ তা'য়ালার হাতে , রাত ১২:৩৪ মিনিটে ইরা চলে গেল না ফেরার দেশে । নীল যেন তখন পাথর হয়ে গেল , ইরার আম্মু তখন নীলকে ছোট্ট একটা কাগজ দিলো ।
লেখা ছিলঃ-
"ভালো থাকিস , নিজের যত্ন নিস"
----- ইরা
সকালে ইরার জানাযা এবং এরপর কবর দিয়ে সবাই চলে আসলো । নীল বসে রইল কবরস্থানের পাশে , ওদের ফ্রেন্ডরা এসে নীলকে অনেক বুঝানোর পর ওকে বাসায় নেওয়া গেল ।
আজ প্রায় ৮বছর হয়ে গেল , নীল এখন ও ইরাকেই ভালোবাসে । এখনো তার মনের রাজ্যে ইরা'ই সর্ম্পূণটা দখল করে আছে । ইরার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো আজো নীলকে পিছুটানে । আর নীলকে একা করে দিয়ে ইরা চলে গেছে না ফেরার দেশে ।
অফটপিকঃ- কাউকে ভালোবাসলে মন থেকে বাসবেন , আর ভালো বাসলে সেই কথাটা মনে চেপে রাখবেন না ।
"রক্তের মতো ভয়ংকর ,
ইতিহাসের মতো নির্মম...
এবং মৃত্যুর মতো ত্যাগ দিয়ে ,
কাউকে ভালোবাসতে হয়"