somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প ;- অর্পূণ ভালোবাসা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীল আর ইরা বেস্ট-ফ্রেন্ড , স্কুল লাইফ থেকেই একে অপরকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারেনা । নীল সবসময়'ই কেয়ারলেস কিন্তু আবেগপ্রবণ , আর অন্যদিকে ইরা সর্ম্পূণ উল্টো । নিজের'তো বটেই সাথে কাছের মানুষগুলোর ও খুব কেয়ার করে তবে আবেগ জিনিস'টাকে পছন্দ করেনা । মেয়েটা মনে করে আবেগ দিয়ে জীবন সংসার চালানো যায় না । ইরা মেয়েটা এমনিতেও খুব ফ্রেন্ডলি । সবার সাথে সব-সময় হাসি-খুশি থাকে , যদিও ওর কিছু কষ্ট আছে যা ওর ফ্যামেলি ছাড়া অন্য কেউ'ই জানেনা ।

আবেগপ্রবণ মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম'ই হচ্ছে , অল্পতেই দুর্বল হয়ে
যাওয়া । নীলের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো'না । ইরার প্রতি ওর দুর্বলতা বাড়তেই থাকে । অনেক দিনের বন্ধুত্ব , তার থেকেও বড় কথা ইরা আবেগ জিনিসটাকে ২ চোখে দেখতে পারেনা নীল সেটা ভাল করেই জানে । যদি বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে যায় , সেই ভয়টা নীলকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়ায় । আর নীল ভালো করেই জানে ইরা সবসময় মা-বাবার বাধ্য সন্তান , অবাধ্য হবেও না কোনদিন । একদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডার ফাকেঁ ইরা নিজেই বলেছিল 'আমার নিজের কোন পছন্দ নাই সো বিয়ে হোক বা অন্যকিছু মা-বাবার পছন্দটাই আমার কাছে সব , ওনারা তো আমার জন্য বেস্ট জিনিসটাই দেয়ার চেষ্টা করবে'

খুব ভালোই চলছিল নীল আর ইরার বন্ধুত্ব , কয়েকবার প্রপোজ করতে গেলেও নীলের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি । সামনের মাসের ২৭ তারিখ ইরার জন্মদিন , নীল ভাবতে থাকে ঐদিন'ই ইরাকে প্রপোজ করার কথা । নীল জানে না ওর এই অপ্রকাশিত ভালোবাসাটা প্রকাশ করার পর এর ভবিষ্যত কি হবে , ওদের বন্ধুত্বটাই বা টিকবে কিনা । নীলের ওভার-কনফিডেন্স আছে কিছু ক্ষেত্রে , ইরার কারো সাথে রিলেশন থাকলে নীলকেই সবার আগে বলতো ।

"এই জগতের স্বাভাবিক নিয়মগুলোর একটি হচ্ছে মানুষের সুখের দিনগুলি তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া"

আর ১০-১৫ দিন পর'ই ইরার জন্মদিন । কিন্তু ইরার সাথে নীলের কিছুদিন যাবত্‍ কোন যোগাযোগ নেই , ইরা হঠাত্‍ করে যোগাযোগ অফ করে দেয়ার কোন কারন'ই খুঁজে পেলোনা নীল । ফোনটাও অফ রাখছে সাথে ফেইসবুক আইডিটাও ডিএক্টিভেট করা । দুঃচিন্তায় গত ২ দিন রাতে নীলের একটুও ঘুম হয়নি । পরদিন সকালে ইরার একটা মেসেজ দেখে নীলের বুকটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল ।

ইরার মেসেজঃ- আর যোগাযোগ করার চেষ্টাও করিস না , প্লিজ আমার থেকে সারাজীবনের জন্য চলে যা । এতে তোর'ই ভালো হবে ।

মেসেজটা ছোট্ট হলেও এর কথাগুলো যেন নীলের কানে কেউ গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে । ইরাকে ফোনে না পেয়ে নীল ইরার মাকে ফোন দিল , ওনার কথা শুনে নীল স্ত্বদ্ধ হয়ে গেল । ইরার ব্ল্যাড ক্যান্সার ধরা পড়ে অনেক আগেই , ওর ফ্যামেলি আর কাছের কয়েকজন ছাড়া আর কেউ'ই জানতো না এটা । এমনকি নীলকে ও আগে কখনো জানায়নি । ইরার আম্মুর কথাগুলোর সারর্মম "হঠাত্‍ ও অসুস্থ হয়ে পড়লো , এই খবরটা ইরা নীলকে জানাতে চায়নি । ওর হয়তো আর বাচাঁর সম্ভাবনাও খুব একটা নেই" শেষে এও বললেন যদি সম্ভব হয় নীল যেন ইরাকে একবার হলেও দেখে যায় রাতের মধ্যে । কারন ডক্টর বলেছে খুব বেশি সময় নেই , যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে ।

নীল সাথে সাথেই এড্রেস নিয়ে চলে গেল হসপিটালে । আজ ইরাকে দেখে সত্যিই খুব বিস্মিত হলো । যে মেয়েটা সব সময় হাসি খুশি থাকতো সে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল ও যেন সেটা বিশ্বাস'ই করতে পারছে না । ইরা ওকে দেখে এক বুক কষ্ট নিয়ে হাসি দেয়ার চেষ্টা করলো , কিন্তু সেটা যে শুধুমাএ নীলের জন্য এতে কোন সন্দেহ নেই । ইরা হসপিটালের বেডে শুয়ে , ও নীলকে বললোঃ-

ইরা - নীল আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবি
নীল - আচ্ছা ঠিক আছে ( এই বলে নীল ওর মাথায় হাত দিল , কেউ কিছু বলছে না । সবাই জানে এটাই হয়তো ইরার শেষ ইচ্ছে , তাই সবাই এই পাগল দুটোর পাগলামি দেখছে )
ইরা - নীল তুই কি আমায় ভালবাসতি ???
নীল - থাক না এইসব , তুই চুপ করে থাক আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি
ইরা - নীল আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসিরে , খুব কষ্ট হচ্ছে তোকে আর আব্বু-আম্মুকে ছেড়ে যেতে । কিন্তু কি করবো বল , অনেক আগেই এই অসুখটা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো । তাই তোকে সাহস করে বলতে পারিনি , কারন আমার কিছু হয়ে গেলে তুই ও যে বাচঁতে পারতি না । সেটা আমি জানতাম ( কথাগুলো এক নাগারে বলে গেল ইরা )
নীল - ইরা আমিও যে তোকে অনেক ভালোবাসিরে , আমি যে তোকে হারাতে পারবো না । তোর কিচ্ছু হবেনা , তুই সুস্থ হয়ে যাবি
ইরা - নীল আমার একটা আবদার রাখবি
নীল - বল
ইরা - আমার মৃত্যুর পর তুই ভালো থাকিস , নিজের লক্ষে স্থির থাকবি কথা দে
নীল - তুই চুপ করবি
ইরা - ‪#‎NILL‬ i Luv u mOre tHeN meH
নীল - আমিও রে
এরপর কেউ আর কোন কথা বললো না , ইরার আব্বু-আম্মু পাশে দাড়িয়ে সবই শুনেছে । ওনারা ইরার সাথে একটু কথা বলল ।
রাত ১২:০৭ টা , ইরার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল । ডক্টর এসে বললো আমাদের আর কিছু করার নেই । সবটা আল্লাহ তা'য়ালার হাতে , রাত ১২:৩৪ মিনিটে ইরা চলে গেল না ফেরার দেশে । নীল যেন তখন পাথর হয়ে গেল , ইরার আম্মু তখন নীলকে ছোট্ট একটা কাগজ দিলো ।

লেখা ছিলঃ-
"ভালো থাকিস , নিজের যত্ন নিস"
----- ইরা

সকালে ইরার জানাযা এবং এরপর কবর দিয়ে সবাই চলে আসলো । নীল বসে রইল কবরস্থানের পাশে , ওদের ফ্রেন্ডরা এসে নীলকে অনেক বুঝানোর পর ওকে বাসায় নেওয়া গেল ।
আজ প্রায় ৮বছর হয়ে গেল , নীল এখন ও ইরাকেই ভালোবাসে । এখনো তার মনের রাজ্যে ইরা'ই সর্ম্পূণটা দখল করে আছে । ইরার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো আজো নীলকে পিছুটানে । আর নীলকে একা করে দিয়ে ইরা চলে গেছে না ফেরার দেশে ।

অফটপিকঃ- কাউকে ভালোবাসলে মন থেকে বাসবেন , আর ভালো বাসলে সেই কথাটা মনে চেপে রাখবেন না ।

"রক্তের মতো ভয়ংকর ,
ইতিহাসের মতো নির্মম...
এবং মৃত্যুর মতো ত্যাগ দিয়ে ,
কাউকে ভালোবাসতে হয়"
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×