আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে সবার আগে আমাদের বেশি করে গাছপালা লাগাতে হবে৷
আমরা বিশ্বাস করি যদি বেশি করে গাছপালা লাগাই তাহলে হয়ত এই তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসবে৷
তবে আমরা মুখে বল্লেও মনে প্রানে যে বিশ্বাস করিনা তা সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ সহ বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠান
সমানে গাছ কেটে চলছে । ‘যেভাবেই হোক আমরা গাছ কেটে ফেলছি’।
বেশ কয়েক দিন পূর্বে আমি বসুন্ধরায় ঢুকে আমি অবাক হয়ে গে লাম, নুতন পুরাতন প্রায় ৩০০শত গাছ এই গরমের
সময় কেটে ফেলা হয়েছে অথচ কোন প্রতিবাদ নেই এবং সাংবাদিকদের মুখও বন্ধ।
কোন পত্রি কায় এধরনের রিপোর্ট দেখি নাই ।
এই তাপদাহর সময় আমাদের মানবতা / বিবেক কি জাগ্রত হবেনা ?
দুই দিন পূর্বে আমি গুলশান থেকে আইসিসিবি যাচ্ছিলাম, পথে মনে হলো আমার হাত পুড়ে যাচ্ছে, বাতাসে গরমের
মাত্রা এতটাই বেশী , অথচ সিটি কর্পোরেশনের কোন উদ্দোগ দেখলামনা, প্রতিদিনই মানুষ তাপদাহে মারা যাচ্ছে
কিন্ত সিটি কর্পোরেশনের মানবতা জাগ্রত হয় নাই । দেখলাম কুরিল বাস স্টপেজে যাত্রী সাধারন এই তীব্র গরমে লাইনধরে
দাঁড়ায়ে আছে, অথচ মাথার উপর কোন ছাউনি নাই ।ওই লাইন থেকে হিট স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা ১০০% ।
সমীক্ষা বলছে গত তিন-চার বছরে ঢাকার গাছপালা যা ছিল তার আরো ১৫ ভাগ কমে গেছে৷
এতে ৩% গরম আগের থেকে বেড়ে গেছে । এমন কেন হচ্ছে? কারন হলো আর্থি ক লাভে র জন্য হোক আমরা গাছ কেটে ফেলছি৷ সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে বেশ কিছু গাছ লাগানো হয়েছিল৷ সেগুলোও আমরা ধরে রাখতে পারি নাই ৷
নানাহ বক্তৃতা বিবৃতি শুনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে- পরিবেশ রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে৷ পরিবেশ ধ্বংস করে উন্নয়ন নয়৷ পরিবেশ বাঁচাতে হবে, উন্নয়নও করতে হবে ৷ পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে সেভাবেই কাজ করতে হবে৷
অথচ কোথাও একটা ইটের ভাটা কমেনি যারা পরিবেশ দুষন করে চলছে আর কাটা গাছ তাদের মূল জ্বালানী ।
মাঝে মাঝে আমরা দেখি অভিযান চলছে এটা বন্ধ করার জন্য, আসলে এর আড়ালে বিনিময় বানিজ্যটাই মুখ্য ।
মাত্রারিক্ত তাপপ্রবাহ একটা দুর্যোগ হিসাবে ঘোষনা করা উচিৎ৷
এই পরিস্হিতি সাধারন মানুষের দৈনিক কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা কমায়ে আনে৷
মাত্রারিক্ত তাপপ্রবাহ নাকি জলবায়ুর প্রভাবের ফল ,গত কিছু বৎসর বড় ধরনের বজ্রপাত না হওয়ার কারনে
এবার বৃষ্টিপাত কমে গেছে, ফলে কৃষিখাতে চরম বিপর্যয় দেখা দিবে ।
আমার জানা মতে এবার মৎস্য চাষীরা পর্যাপ্ত পানির অভাবে মাছ চাষ সময় মতো শুরু করতে পারে নাই ।
ফলে এর প্রভাব আগামীতে দেখা দিবে, অথচ সরকারী কৃষি দপ্তর ব্যাপক উদ্দোগ নিয়ে বিষয়টির সমাধান দিতে পারত ।
গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিনও এই জেলাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। এখন পর্যন্ত এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এমন অবস্হায় মাঠের বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা৷ লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রামে বিদ্যুৎচালিত সেচ করতে পারছে না । ধানের জমিতে পানি দেয়া যাচ্ছে না আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, জামরুলসহ মৌসুমি ফল মুকুলেই ঝরে পড়ছে৷
রোদের তাপে পুড়ে মরে যাচ্ছে ভুট্টা, কলাসহ নানা ধরনের ফসল৷ ফল-ফসলের ক্ষতি কোথায় গিয়ে দাডাঁবে অনুমান করা যাচ্ছেনা৷
আজ রবিবারও তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে শুধু সিলেটে ভারি বৃষ্টি,২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে এটি ভারি বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২ মে তারিখের দিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি সেচ প্রকল্প হলো গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প বা জিকে প্রকল্প।সম্প্রতি সবকটি পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভরা মৌসুমেও পানি পাননি কৃষকেরা৷ প্রকল্পের তিনটি প্রধান পাম্পের মধ্যে দুটিই নষ্ট। অতিসম্প্রতি তৃতীয় পাম্পটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের সবকটি পাম্প নষ্ট থাকায় কৃষিখাতের কৃষকেরা চরম বিপদে আছে৷সরকারের এ বিষয়ে কোন ব্যবস্হাপনা আছে কি না জানা যায় নাই ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার হাঁরায়ে গেছে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজের সমারোহ রাস্তাঘাট ও অপরিকল্পিত দালান কোঠা খেঁয়ে ফেলেছে৷
জেলা-উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন উঠেই চলেছে৷
তীব্র তাপপ্রবাহে গত পাঁচ দিনে দেশজুড়ে হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন প্রায় ৪০ জন৷
এভাবে চলতে থাকলে মৃত্যুর হার আরও বাড়বে ।
এতদিন শুনে এসেছি সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কাজ করে আসছে আবার বন্যা, ঘুর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার ফান্ড আছে ।তাহলে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে কৃষিখাত ও কৃষকের জন্য সেই উদ্যোগ নেই কেন?
আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি জ্ঞান ও মানবিকতা হারাতে বসেছি কেউ হয়তো বলবেন এই গরমে সরকারের ও বোধশক্তি কমে গেছে ।
আমরা কি পারিনা মানুষের মাঝে বিবেকবোধ আর মানবতা জাগ্রত করতে ???
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১:৪৮