*বাবাই
*হুম মামনি বলো
*আচ্ছা মা কি আর কোনোদিন ফিরে আসবেনা,আমার কথা কি তার একবারো মনে পড়েনা??
*আসবে তো, তোমার মার রাগ ভাঙ্গলেই চলে আসবে। তোমার বাবাই খুব পঁচা তাই তোমার মা রাগ করে চলে গেছে।
*আচ্ছা বাবাই, তুমি কি খুব বেশি ভুল করেছিলে। নাহলে মা আসেনা কেনো??আমার খুব ইচ্ছে করে মার কোলে শুয়ে আদর খেতে।
(৭বছরের মেয়ের মুখে এই কথা শুনে কি বলবো ভেবে না পেয়ে বললাম)
*হুম তোমার বাবাইটা খুব বেশি পঁচা, এবার খেয়ে নেবে চলো
**আচ্ছা চলো
----------খাবার টেবিলে----------
*বাবাই একটা কথা বলি??
*হুম মামনি বলো
*তুমি সবসময় আমাকে খাইয়ে তারপর খাও কেনো?
*এমনি সোনা,তুমিতো আমার পৃথিবী তাই পৃথিবীটাকেই বাঁচাই আগে। আচ্ছা কালতো তোমার ক্লাস আছে, খেয়ে ঘুমাবে চলো
---------বিছানায় শুয়ে আছে বাবা ও মেয়ে---------
*বাবাই তুমি রাত জাগো কেনো??মাকে কি আমার মতো তুমিও মিস করো খুব।
*না মা। আসলে অফিসের কাজগুলো শেষ করতে দেরি হয়ে যায়। তুমি চুপটি করে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেই।
*আচ্ছা
*মামনি আমার বা হাতটা একটু শক্ত করে ধরে রাখবে??( মেয়ের শক্ত করে ধরাটা খুব উপভোগ করি আমি, একটা সময় ওর মা’ই করতো কাজটা )
*আচ্ছা বাবাই ধরে রাখছি, তুমিও ঘুমাও কেমন। (মেয়েটা জানে আমার এই কথার অর্থ কি, তাই কিছু না বলেই হাতটা ধরে রাখলো)
*আচ্ছা সোনা মেয়ে আমিও ঘুমাচ্ছি
-----নিধী ঘুমিয়ে পড়লো, হঠাৎ করেই আমি আমার কল্পনার রাজ্যে চলে গেলাম-----
খুব বাজে ভাবেই অবন্তীর সাথে আমার পরিচয়। তখন ফেইসবুক নিয়ে মানুষজনের মধ্যে মাতামাটি ছিলো খুব। কি একটা কারনে অবন্তীকে একটু খারাপ ভাবেই মেসেজ করি আমি। যদিও আমরা পূর্ব পরিচিত ছিলাম না। অবন্তী মেনে নিতে পারলো না, আমাকে ব্লক দিলো। দেয়াটাই স্বাভাবিক। কি মনে করে পরদিনই আনব্লক করে আমাকে “সরি” লিখে একটা রিপ্লে দিলো। আমি একটু অবাকই হলাম। এভাবেই আমাদের পরিচয় পর্বটা শেষ হয়। আমাদের ২বছরের ফ্রেন্ডশীপ কখন যে ভালোবাসায় পরিনত হলো বুঝতেও পারলাম না আমরা। আমি যদিও অনেক আগে একবার অবন্তীকে বলেছিলাম ভালোবাসার কথা। ও হেসে উড়িয়ে দিযেছিলো, আমিও বন্ধুত্বটা নষ্ট হবার ভয়ে আর আগায়নি। ঠিক ২বছর পরে আবার যখন অবন্তীকে মনের কথাটা জানালাম ও তখন না করতে পারেনি। কিন্তু অবন্তী তার ফ্যামিলির ডিসিশন ছাড়া কিছুই করবে না সাফসাফ জানিয়ে দেয় আমাকে। আমি তখন আম্মুকে সব বলি, কারন আম্মু আমার সব থেকে ভালো ফ্রেন্ড ছিলো। আম্মু রাজী হয়, এর কিছুদিন পর ২পরিবারই মেনে নেয় আমাদের ভালোবাসা।
------------------------------------------------------------
শুরু হয় আমাদের ঘর বাঁধার স্বপ্ন। আমাদের কারোরই তখন পড়াশোনা শেষ হয়নি। তাই নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখতাম আমরা। আমাদের স্বপ্নের ভূবনে হঠাৎ করেই নিধীর আগমন। আমাদের বিয়ের আগেই আমরা মেয়ের নাম ঠিক করি তখন। কারন ও ছিলো যথেষ্ট, আমি সবসময় মেয়ে বেবি চাইতাম। অবন্তীও কিছুই বলেনি। আমার একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো, অবন্তীর খাওয়া শেষ না হলে আমি খেতাম না কখনো, না খেয়েই থাকতাম। ২জনের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও ওকে কখনোই বুঝতে দিতাম না,সবসময় ঘুম পাড়িয়ে দিতাম আমি। আজো সেই পুরোনো অভ্যাসগুলো রয়ে গেছে ভেবে আনমনেই হেসে উঠলাম আমি। যদিও মানুষটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। কিন্তু দিয়ে গেছে তার মধ্যে বেড়ে উঠা আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। আমার হাসিতে মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠলো। আমি তাই নিধীকে আরো একটু শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরলাম।
------------------------------------------------------------
মেয়েটা ঘুমুচ্ছে, পরীর মতো লাগছে তাকে। পরীকে তো পরীর মতোই লাগবে, ওর ডাক নামটা পরী’ই রাখার কথা ছিলো। অবন্তী হঠাৎ করেই নিধী রাখার সিদ্ধান্ত নেই। আমি তখন কিছুই বলিনি তাকে । আমি যতোই ভাবছি, ততোই মাইগ্রেন প্রবলেমটা বেড়েই চলছে। অবন্তী থাকলে এতোক্ষণে সারাবাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো। নিজের স্বামীর প্রতি যথেষ্ট কেয়ারিং ছিলো সে। একেবারে পুরোদস্তর গিন্নী যাকে বলে। আমি নিধীকে সরিয়ে ঔষধ খেতেও যেতে পারছিনা। মেয়েটার ঘুম ওর মার ঘুমের মতোই হাল্কা। আমার আবার ইচ্ছেও করছে না যেতে।
------------------------------------------------------------
কিছুদিন ধরে একটা কথাই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আমার কিছু হয়ে গেলে মেয়েটাকে কে দেখবে। আমার মাইগ্রেন প্রবলেমটা বেড়েই চলছে............আর নিতে পারছিলাম না। কিছুদিন ধরে আমার সহ্য ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে গেছে অনেকটা । চোখ বেয়ে পানি পড়লো কয়েক ফোঁটা, মেয়েটা জেগে উঠলো। ওর বাবাই এর চোখে এই প্রথম অশ্রু দেখে সে হতভম্ব হয়ে গেলো, কারণ ও জানে ওর বাবাই ওর মাকে কথা দিয়েছিলো যে আর কখনো কাদঁবে না। ও দেখেনিও কোনোদিন তাই হয়তোবা ওর নরম হাত দুটি দিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিলো। আজ অবন্তীকে খুব বেশিই মিস করছি আমি, বুঝতে পারছি সেটা । নিধীর হাতের স্পর্শটা অবন্তীর মতোই লাগছে। মাথা ব্যাথাটা কমে গেছে অনেক । মেয়েকে জরিয়ে ধরে রাখলাম।
নিধী ওর মার মতো করেই আমাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে। এই মূহুর্তে অবন্তী থাকলে মন্দ হতো না। অন্তত একটা পিক তুলে রাখতে পারতো বাবা-মেয়ের। যা সব পিকের থেকে আলাদা হতো, বেস্ট পিক হতো।
*****ভালোবাসাগুলো বেঁচে থাকুক, মানুষগুলো ভালো থাকুক*****
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫