somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়ি ফেরা হলো না কর্নেল আফতাবের

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ি ফেরা হলো না কর্নেল আফতাবের

কর্নেল আফতাব শুক্রবার বাড়ি আসতে চেয়েছিল। কিন্তু হায়! কে জানতো জীবত তো নইই এমনকি তার মৃত দেহও বাড়িতে পৌছলো না। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ বাড়ের মতো বাড়িতে এসে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে ভাইকে বলেছে, `আব্বা-আম্মার কবর ভালো করে পরিস্কার করিস, ইট দিয়ে ওয়াল দিস। আমি ফিরে আসছি।' কবরের প্রসঙ্গ আসলে বড় ভাই বয়েস হওয়ায় নিজের মৃত্যুর কথা বললে তিনি বলেছিলেন, `কার কোথায় কবর হবে কে জানে।' সেই কথাটিই সত্য হলো ঘাতকের বুলেটে বড় ভাইয়ের আগেই নিবে গেলো তার জীবন প্রদীপ। রংপুর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আফতাবের এই নির্মম পরিনতি কিছুতেই মানতে পারছেন না স্বজনসহ পরিচিত সকলেই। ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এই সেনা কর্মকর্তার লাশ শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হয়েছে ঢাকার বনানী কবরস্থানে।
হাসিখুশি, সদালাপি ও বিনয়ী কর্নেল আফতাবের মৃত্যুর সংবাদে শোকের মাতম এখন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায়। রংপুর বিডিআর-এর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আফতাবুল ইসলাম বুলবুল কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ির কৃতি সন্তান জসিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মরহুম ফয়জার উদ্দিন ব্যাপারি ও মা আতরজন-এর ছোট সন্তান।
শুক্রবার দুপুরে কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর ওপারে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ফুলবাড়ী উপজেলা সদরে পৌছলে সকলের একই কথা, আহা বুলবুল ভাই খুব ভালো মানুষ। এই তো, ২০ ফেব্রুয়ারী গরিব দু:খী শীতার্ত মানুষের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করেছেন জসিমিয়া হাইস্কুল মাঠে।
বেলা ৩টার দিকে ফুলবাড়িস্থ কর্নেল আফতাবের পৈতৃক বাড়িতে গেলে এক হৃদয় বিদরক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাড়ির সকলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম আদম চোখের পানি ভাসিয়ে বলেন, ও আমাদের খুবই আদরের। ৭ ভাই বোনের সবার ছোট-বুলবুল। সে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা বেলা এসে আমাকে ৫হাজার টাকা দিয়ে সে বলল, ভাইজান, `আব্বা-আম্মার কবর ভালো করে পরিস্কার করিস, ইট দিয়ে ওয়াল দিস।' আমি তখন বললাম, তুই, বেলাল ও হিলু বাইরে থাকিস। হায়াত-মউতের কথা বলা যায় না। আমি মারা গেলে বাবা-মায়ের কবরের পাশে আমার কবর দিস। তখন বুলবুল আমাকে ধমক দিয়ে বলল, `কার কবর কোথায় হবে তুই কিভাবে জানিস?'
তিনি আরও জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মোবাইল ফোনে তার সাথে কথা হলে বুলবুল জানায়, আমি ২৬ অথবা ২৭ তারিখ ঢাকা থেকে বাড়ি আসবো। তারপর আর তার সাথে ঢাকায় বিডিআর-এর বিদ্রোহের কথা শুনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। হুহু করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার আর বাড়ি আসা হলো না।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৮১ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি এবং ১৯৮৩ সালে এইচএসসি পাশ করে সেকেন্ড লেফটেনন্ট হিসাবে সেনাবাহিনীতে ঢাকায় যোগদান কেরন। চাকুরী জীবনে তিনি সাইপ্রাস, চীন, জাপান, ইরাক, সুদান, কুয়েত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিন গ্রহণসহ জাতিসংঘ বাহিনীতে সুনামের সাথে চাকুরী করেন।
১৯৯৪ সালের ২ এপ্রিল ঢাকার মিরপুরের বই ব্যবসায়ী মরহুম মোশাররফ হোসেনের একমাত্র কন্য বন্যা ইসলামকে বিয়ে করেন। অরহা নামের আট বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের ২য় শ্রেনীতে পড়ে। বড় ভাই আমিনুল ইসলাম আদম কলেজ শিক্ষক, আনোয়ারুল ইসলাম দুলাল ব্যবসায়ী, ডা: আজিজুল ইসলাম বেলাল রংপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, ড. আইনুল ইসলাম হিলু কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং দুই বোন স্কুল শিক্ষিকা।
গত ১১ ফেব্রুয়ারী তার সাথে সর্বশেষ সাক্ষাত হয় এই লেখকের। তিনি এসেছিলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্তের রামখানা সীমান্তের ওপারে ভারতের কুচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় একটি বৈঠকে অংশ নিতে। বৈঠকটি ছিল ভারতের বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিডিআর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক। পেশাগত কাজে এই লেখকের সাথে অনেকবারই যোগাযোগ হয়েছে। সেদিন ভারতে প্রবেশের পূর্বে এক সাথে রামখানা বিওপি ক্যাম্পে ২৭ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে, কর্নেল সুমন কুমার বড়ুয়া, দেশ টিভি'র কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি অলক সরকার, ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সভাপতি ইত্তেফাক সংবাদদাতা আনোয়ারুল হক, ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মন্টুসহ কয়েকজন। কয়েকদিন আগে এই প্রতিবেদকের করা এটিএন বাংলায় প্রচারিত সীমান্তে বিএসএফদের সাধারণ মানুষহত্যা বিষয়ক একটি সংবাদ নিয়ে কথা হয় তার সাথে। সংবাদটিতে তার বক্তব্য ছিল। সংবাদ মাধ্যমে ঐটি ছিল তার শেষ সাক্ষাতকার।
দেখুন:- http://www.youtube.com/user/alamgir250205
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৬
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×