somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ ৩০ শে সেপ্টেম্বর আধ্যাত্মিক সুফিবাদের সম্রাট মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (র) এর ৮১১ তম জন্মদিন...

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মানব কায়া অচিন্ত্য আত্মার যন্ত্রস্বরু...


জালাল উদ্দীন রুমি (রহ.) এর জন্ম ৬০৪ হিজরী সনের, ৬ই রবিউল আউয়াল ৩০ শে সেপ্টেম্বর ১২০৭ সালে আফগানিস্থানের বলখ নগরীতে। তাঁর পিতার নাম সুলতান বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ। তিনি সুলতানুল ওলামা বা আলেম সম্রাট নামে পরিচিত ছিলেন।মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি (রহ.) এর প্রাথমিক শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়, তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত বুযুর্গ্য, সৈয়দ বুরহান উদ্দিন (রহ.) এর নিকট। এছাড়া তিনি সেই সময়ের বিখ্যাত কামেল দরবেশ খাজা ফরিদ উদ্দিন আক্তারের নিকট গমন করেন। খাজা ফরিদ উদ্দিনআক্তার, বালক রুমীর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছিলেন, আপনার সন্তানের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। অদূর ভবিষ্যতে সে প্রেমদগ্ধ হৃদয়ে, প্রেমের বহ্নি শিখা প্রজ্বলিত করবে।খাজা সাহেব বালক রূমীকে স্বরচিত একখানা কিতাব ‘গাওহার নামা’ উপহার দিয়েছিলেন। উক্ত কিতাব খানা পাঠ করে, রুমি কাব্য জগতে প্রবেশে অনুপ্রেরনা লাভ করেন।পরবর্তী সময়ে রূমী জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের জন্য সিরিয়ার অন্তগর্ত দামেশ্ক শহরে আগমন করেন এবং জাহেরী ও বাতেনী বিদ্যা চর্চা ও আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন।৬৩৫ হিজরী সনে, রুমি পুনরায় কাউনিয়া শহরে ফিরে আসেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ে কাউনিয়া আগমন করেন খ্যাতিমান দরবেশ শামসে তাবরীযি। ঘটনা চক্রে শামসে তাবরীযির সাথে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি র সাক্ষাত হয়। সুখ্যত প্রাচ্যবিদ ই.জি.ব্রাউন তাঁর সুপ্রসিদ্ধ “লিটারারী হিস্ট্রী অফ পারশিয়া” গ্রন্থে শামসে তাবরীযি ও জালাল উদ্দিন রুমি র সাক্ষাৎকার নিয়ে মনোজ্ঞ কাহিনী লিপিবদ্ধ করে গেছেন। কথিত আছে সাক্ষাৎকালে মাওলানাজালাল উদ্দিন রুমি র হাতে ছিল এক সুবিখ্যাত দর্শন পুস্তক। শামসে তাবরীযি হস্তস্পর্শে পুস্তক পরিনত হয় পবিত্র কোরআনে। এভাবে শামসের তাবরীযির আধ্যাত্মিক প্রভাবে জালাল উদ্দিন রুমি র মধ্যে দেখা দেয় বিরাট এক পরিবর্তন। পুথিগত বিদ্যাচর্চা ও জাগতিক জ্ঞান অনুশীলন পরিত্যাগ করে জালাল উদ্দিন রুমি পরিনত হন শামসে তাবরিযির একনিষ্ঠ ভক্ত অনুরক্ত মুরিদ। আজ আন্তজার্তিক বুদ্ধি বৃত্তির জগৎ যে জালালা উদ্দিন রুমি কে পেয়েছে, সে জালাল উদ্দিন রুমি মূলত শামসেতাবরীযির অবদান।মাওলানা রুমি “দিওয়ান-ই- শামসের তাবরীযি রচনা করে স্বীয় আধ্যাত্মিক পীর ও মুর্শিদের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার পরিচয় রেখে গেছেন।কথিত আছে, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির উপরে মুর্শিদ শামসে তাবরীযির এহন প্রভাব প্রতিপত্তি লক্ষ্য করে মাওলানা রুমির অনুসারী ও অনুরাগীরা ভীষন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। মাওলানা রুমিকে সামনে রেখে জাগতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের যে স্বপ্ন তারা এতোদিন দেখে আসছিলেন, শামসে তাবরীযির আগমনে তা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। শোনা যায় মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির নিজ পুত্র ও এই দলে ছিলেন। একদা এরাই জালাল উদ্দিন রুমির অনুপস্থিতির সুযোগে শামসের তাবরীযিকে হত্যা করেন। রুহানী রাহবরের এই মর্মান্তুদ মৃত্যুতে জালাল উদ্দিন রুমি এতোদূর শোকাভিভূত হয়ে পড়েন যে, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেন। এই সময়ে মুর্শিদের আধ্যাত্মিক প্রভাব তাঁকে ভাবোন্মত্ততার এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করে।জালাল উদ্দিন রুমি শোক সন্তপ্ত হৃদয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এক ঐশী শক্তি সম্পন্ন কাব্যিক নির্ঝর। ভাবোন্মত্ততার এই ধারায় রচিত হয় তার জগৎ বিখ্যত মসনবী শরীফ।মসনবী শরীফকে বলা হয় ফার্সী ভাষার কোরআন।মসনবীয়ে হস্ত কোরআঁদরজবানে পাহলবীমসনবীয়ে মওলুবীয়ে মানবী।মাওলানা রুমি নিজেও বলে গেছেন, পবিত্র কোরআনে মজ্জা বা মূল সারবস্তু এখানে তুলে ধরা হয়েছে।কামড়া-কামরি করা যাদের স্বভাব তাদের জন্য রইল হাড় হাড্ডি।রুমির ভাষায়বসন্ত বিহারে বিশ্বের সকল গোপনীয়তা প্রকাশ পায়।আমার বসন্ত যখন আসবেতখন আমার যাবতীয় আধ্যাত্মিক রহস্য প্রস্ফুটিত হবে।অনত্র লিখেছেনতুমি যদি সন্ধান করো তবে আমাদেরকে আনন্দ দিয়ে সন্ধান করো কারন আমরা আনন্দের ভূবনে বাস করি।শুধু যাঁদের ভালোবাসা নির্মল আনন্দময় তাঁদের ছাড়াহতশার ময়দানে পরিভ্রমন করো না।কারণ আশা আছে,্ এই আশা সত্য,এই আশা বিদ্যমান অনুসন্ধানের দিকে পা বাড়িয়ো না।শুনে রাখ সূর্যেরা বিদ্যমান।শামসে তাবরীযির সহিত রুমীর হৃদয় অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। শামসে তাবরীযি রুমির অন্তরে ইশকে এলাহির আগুন এমনভাবে প্রজ্জ্বলিত দিয়েছিলেন যে, রুমী এশকে এলাহির প্রেম গাথা সামা কাওযালী গান শ্রবণ না করলে আদৌ স্বস্তি পেতেন না। তাই তিনি গজল ও কাওয়ালীর মজলিসে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন।শাসমে তাবরীযির প্রতি প্রেমের শরাব পান করে এক সময়ে মাওলানা রুমী উপলদ্ধি করলেন যে, তিনিই খোদ শাসমে তাবরীযিতে পরিনত হয়েছেন। শামসেতাবরীযিকে অন্বেষণ করতে গিয়ে প্রকৃত পক্ষে তিনি নিজেকেই অন্বেষণ করেছেন। শাসমে তাবরীযি পূর্ণ আধ্যাত্মিক জ্যোতি তাঁর নিজের অন্তরেই পূর্ণ বিকশিত হয়েছে।রুমি স্থায়ী পীর শামসে তাবরীযির অন্তধার্নে যে নিদারুন ব্যথা তার অন্তরে অনুভব করেছিলেন তা কাব্য আকারে রচনা করেন “কুল্লিয়াতে শামসে তবরীয” কিতাবে ।উক্ত কাব্য গ্রন্থে ৫০ হাজার শ্লোক দ্বিপদী কবিতা রয়েছে।উক্ত কথা মালায় বিশেষভাবে শামসে তবরীযির প্রশংসা ও নিজ শোকাহত হৃদয়ের ব্যথা বেদনাই প্রকাশ পায়।রুমির সুযোগ্য শিষ্য ও বন্ধু শেখ হুসামুদ্দীন চালপী অনুপ্রেরনায় “মসনবী শরীফ” রচনা করেন।মনবসী শরীফের প্রথম পঙতিটি ছিলবিশনু আয়নায় চুঁ হেকায়েত মীকুনাদঅয্ জুদায়ীহা শেকায়েত মীকুনাদঅর্থাৎ- বাশির কাছে শোন সে কি কাহিনী বর্ননা করিতেছে। সে বিরহ যন্ত্রনার অভিযোগ করিতেছে। মাওলানা রুমি রচিত সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ “মসনবী”। ফার্সি সাহিত্য সম্পদ ছয় খন্ডে বিভক্ত মসনবীতে প্রায় ২৬ হাজার ছন্দবদ্ধ দ্বিপদী কবিতা আছে।রুমীর কবিতায় ভাব-ভাষা ও আবেদন সরাসরি পাঠককে এমনভাবে আকর্ষণ করে যা তার নিকট মনে হয় অপ্রতিরোধ্যঃ-মোহাম্মদ (সা:) বোরাকে আরোহন করলেন।এগিয়ে চললেন রাত্রিরআসমানে পথ কেটে কেটেদিন সেতো র্কম ব্যস্ততার, আর রাত্রি হল প্রেমের।না, কখনো সন্মোহিত হতে দিওনা নিজেকে;অনেকে রয়েছে, যারা রাত্রিতে ঘুমায় বিভোর।কিন্তু প্রেমিকেরা নয়তারা অন্ধকারে, সিঁড়িতে বসে আল্লাহর সাথে আলাপনে মগ্ন।আর তিনি (আল্লাহ) বলেছিলেন দাউদকেঃযারা বিভোর ঘুমে কাটায়, সারারাত,সকল রাত আর দাবী জানায় সম্পর্ক রয়েছে, আমার সাথেতারা মিথ্যুক।মাওলানা রুনী ১২৭৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মোতাবেক ৬৭২ হিজরির ৫ জমাদিউস সানি ৬৮ বছর বয়সে ইস্তেকাল করেন। পাঁচ ধর্মের অনুসারী এক বিরাট জনতা কবর পর্যন্ত তার শবযাত্রায় অংশ গ্রহন করে। তার ইন্তেকালের রাতটিকে শাবে আরুস বা মিলনের রাত বলে আখ্যায়িত করা হয়।মাওলানা রুমী ভক্ত দরবেশরা, ওই দিনটিকে ওরস উৎসব পালন করে থাকে। তুরস্কে অবস্থিত মাওলানা রুমীর মাজার টিকে বলা হয় মাওলানার মাকবারা।- রুমির রাজত্ব#মসনবী#শরীফ
শুভ জন্মদিন হে সুফি সম্রাট ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×