somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকাই মসলিন ।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকাই মসলিন আর নেই। কিন্তু মসলিন এখনো ঢাকার গর্বের প্রতীক। কেবল ভারতীয় শাসকের অন্ত:পুর নয়, মসলিন মাতিয়ে রেখেছিল রোমান সাম্রাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, চীন এবং ইউরোপের বাজার। ১৮৫১ সালে লন্ডনের প্রদর্শনীতে মসলিন বিপুল প্রশংসা লাভ করে, সেখানকার পত্র পত্রিকায়ও বেশ আলোচনা হয় ঢাকাই মসলিন নিয়ে। মসলিন আজ নেই, তবে মসলিনের ঐতিহ্য নিয়ে টিকে আছে জামদানী।

কথিত আছে যে চল্লিশ হাত লম্বা এবং দুই হাত চওড়া মসলিন সাধারণ আংটির ভেতর অনায়াসে প্রবেশ করানো যেত। মসলিন তৈরিতে যে বিশেষ সূতা ব্যবহৃত হত তার এক পাউন্ডের দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ মাইল হত।

নামকরণ
মসলিন বাংলা, ফারসী বা সংস্কৃত শব্দ নয়; উৎপত্তির বিষয়টি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। ইরাকের মসূলে এক ধরনের সূক্ষ্ণ বস্ত্র তৈরি হত; এর সাথে তুলনা করে ঢাকাই মসলিনের নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

তৈরি
ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলোয় তাঁত শিল্পের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এই তাঁত শিল্পের চরম উৎকর্ষের একটি প্রমাণ হিসেবে হাজির করা যায় মসলিনকে। ফুটি নামে বিশেষ ধরনের তুলা থেকে মসলিন তৈরি হত। অবশ্য অন্য তুলাও ব্যবহৃত হত। আর্দ্রতা মসলিন বুননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই অনেক তাঁতী নৌকায় বসে বুননের কাজটি করতেন। আবার সূতার সূক্ষ্ণতাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত বাড়ির কাজে হাত দিতে শুরু করেনি এমন শিশুরা সূতা তৈরির কাজ করত। তাদের নরম হাতে সূতার সূক্ষ্ণতা বজায় রাখা সহজ হত।

অবশ্য সব মসলিন একই রকম হত না। কাপড়ের সূক্ষ্ণতা, পুরুত্ব, উপাদান, ইত্যাদির ওপর মসলিনের দাম নির্ভর করত। বলাবাহুল্য অভিজাতরা সেরা মসলিনটি বেশি দামে কিনে নিতেন।

বিভিন্ন নাম ছিল বিভিন্ন ধরনের মসলিনের:
-মলমল-সূক্ষ্ণতম বস্ত্র
-ঝুনা- স্থানীয় নর্তকীদের ব্যবহৃত বস্ত্র
-রঙ্গ- স্বচ্ছ ও জালিজাতীয় বস্ত্র
-আবি-রাওয়ান- প্রবাহমান পানিতুল্য বস্ত্র
-খাস- বিশেষ ধরনের মিহি বা জমকালো
-শবনম- ভোরের শিশির
-আলাবালি- অতি মিহি
-তনজিব- দেহের অলঙ্কার সদৃশ
-নয়ন সুখ- দর্শন প্রীতিকর
-বদন খাস- বিশেষ ধরনের বস্ত্র
-শিরবন্দ-পাগড়ির জন্য
-কামিজ- জামার কাপড়
-ডোরিয়া- ডোরা কাটা
-চারকোণা- ছককাটা বস্ত্র
-জামদানি- নকশা আঁকা

হারিয়ে যাওয়া
সে সময় মোঘল সম্রাট ও স্থানীয় নওয়াবদের পৃষ্ঠপোষকতায় মসলিন শিল্পের বেশ প্রসার ঘটে। তারা মসলিনের বড় ক্রেতাও ছিলেন। মসলিন বাণিজ্যের জন্য ঢাকায় বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকের আগমন ঘটে। সে সময় ঢাকায় ইউরোপীয় পণ্যের বিশেষ চাহিদা না থাকায় ইউরোপীয়রা নগদ টাকা এবং সোনা-রুপা নিয়ে আসতে থাকে। তবে ধীরে ধীরে স্থানীয় শাসকগণ রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়ার কারণে মসলিনের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ হয়, অভিজাত ক্রেতাও হারায় ঢাকাই মসলিন। পলাশীর যুদ্ধের পর কোম্পানী এবং কোম্পানী নিযুক্ত দেশীয় কর্মচারীদের নিগ্রহ তাঁতীদের অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তোলে।

এ সময় ইউরোপীয় বস্ত্রকে সুবিধা দিতে বৈষম্যমূলক শুল্ক ব্যবস্থা চালু করা হয়। এছাড়া শিল্পের উন্নতিও মসলিনের পতন ডেকে আনে। কথিত আছে যে ঢাকাই মসলিন উৎপাদন বন্ধ করতে তাঁতীদের আঙ্গুল কেটে নেয়া হয়েছিল।

বিশেষ তথ্য
সে সময় ভারতে প্রস্তুতকৃত অন্য সূক্ষ্ণ বস্ত্রও ইউরোপে মসলিন নামে পরিচিত ছিল। তবে ঢাকাই মসলিন তার গুণের কারণে বিশেষ জায়গা করে নেয়।


==========








সংগৃহীত।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×