somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ্‌পাকের খাস রহমতে খুলনার আকাশে কুয়েটের অটোনোমাস ড্রোন

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ্‌পাকের বেশুমার শুকরিয়া যে,উনার রহমতে মেধা শক্তির প্রখরতা জানান দিতে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা লাইন ফলয়ার, মেজ সলভার, অবস্ট্যাকল অ্যাভয়ডার, গারবেজ ক্লিনার, ভয়েস কন্ট্রোল রোবট তাদের অনেক আগেই তৈরি করা।
২০১৩ সালে এখানকার শিক্ষার্থী তৈরি করেন একটি ড্রোন (উড়ন্ত যান)। যেটি দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানোসহ আরও অনেক কাজ করা যাবে। এটি তৈরি করেছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক (ত ও ই) কৌশল বিভাগে ০৮ ব্যাচের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন খান দীপ।
ড্রোনটি ছিলো দীপের ৪র্থ বর্ষের থিসিস প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টের সুপারভাইজার ছিলেন ত ও ই বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাজাহান। এর ফ্রেমটি তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে বন্ধু রিজভি আহমেদ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা। ড্রোনটি বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ অটোনোমাস ড্রোন হিসাবে তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল জুমুয়াবার সকালে সঙ্গে কথা হয় দীপের। এ সময় তিনি জানান, তার আবিষ্কৃত ড্রোনটি বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ অটোনোমাস ড্রোন। অর্থাৎ এটি চালাতে কোনো রিমোট বা মানুষ প্রয়োজন হবে না। কোথায় যেতে হবে তা শুধু বলে দিতে হবে। বাকি কাজ ড্রোনটি একাই করবে। একেবারে আমেরিকার ড্রোনের মতো।
প্রথমে ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে চালানো হত। এটি উড়েছিল ২০১৩’র ১০ জুলাই । গত চার মাসের চেষ্টায় তিনি বর্তমানে এটিকে রিমোট ছাড়া পুরোপুরি অটোম্যাটিক ভাবে চালাতে সক্ষম হন। একে গুগল ম্যাপে সুনির্দিষ্ট লোকেশন বলে দিলেই হবে। এটি সেই সুনির্দিষ্ট পথ পরিভ্রমণ করে আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
তিনি আরও জানান, ড্রোন দিয়ে অ্যামাজনের পণ্য পরিবহনের মতোই এই ড্রোনটি দিয়েও জরুরি পণ্য পরিবহন সম্ভব। তবে সুরক্ষিত ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ড্রোনের সুরক্ষা ব্যবস্থারও আরও উন্নতি সাধন করতে হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনী একে প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করতে পারবে। কোনো জায়গায় যদি গোলযোগ সৃষ্টি হয়। তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই জায়গার ভিডিও পেতে হলে এই ড্রোনকে সেই জায়গার কোঅরডিনেট বলে দিলেই হবে। এটি সয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট উচ্চতায় উড়ে গিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছে যাবে। এবং সে জায়গায় গিয়ে উচ্চতা পরিবর্তন করে গোলযোগের সরাসরি ভিডিও পাঠাতে পারবে।
বর্তমানে তিনি এবং কুয়েটের তার জুনিয়র ছোট ভাই রেজওয়ানুল ইসলাম ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমটি ডেভেলপ করছেন। এই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো দূরত্বে পাঠনো সম্ভব। এছাড়াও ভিডিও ডাটা এনক্রিপটেড থাকায় এই ভিডিও কেউ চুরি করে দেখতে পারবে না। যেটা বাজারের নরমাল ভিডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেম দিয়ে সম্ভব।
দীপ বলেন, এছাড়াও সুন্দরবনে জলদস্যুরা বিভিন্ন সময় আমাদের জেলেদের ধরে নিয়ে যায়। এই ড্রোন দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী সুন্দরবনে নজরদারি আরও বাড়াতে পারবেন। ডাটা ট্রান্সিভার সিস্টেম থাকায় ড্রোনটি যে জায়গায় যাবে সে জায়গার আবহাওয়া সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য যেমন তাপমাত্রা, চাপ এটি দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব।
কোয়াডকাপ্টার মূলত এটি এমন একটি উড়ন্ত যান যেটি কন্ট্রোল করা হয় চারদিকে চারটি ব্রাশলেস ডিসি মটর এবং প্রোপেলার দিয়ে। এটি নরমাল উড়জাহাজ এর মাতো রোল, পিচ এবং ইও এই তিন অক্ষ বরাবর চলতে পারে। চারটি মোটরের স্পিড পরিবর্তন করে এটিকে এই তিন অক্ষ বরাবর ঘুরানো যায়। আর এটি স্বাভাবিক অবস্থায় যেকোনো একটি পয়েন্টে ভেসে থাকতে পারে। একে হোভারিং অবস্থা বলা হয়। এ অবস্থায় চারটি মোটরের স্পিড পুরোপুরি সমান থাকে এবং পুরো ক্রাফটটি ভূমির সঙ্গে সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
এটিকে অটোম্যাটিক ন্যাভিগেশনের জন্য এতে আরও রয়েছে জিপিএস। জিপিএসের ডাটা দিয়ে এবং ম্যাগ্নেটোমিটার থেকে পাঠানো তথ্য দিয়ে এটি দিক ঠিক করে সয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে।
এ বিষয়ে প্রজেক্টের সুপারভাইজার ত ও ই বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাজাহান বলেন, দীপের আবিষ্কৃত ড্রোনটি বর্তমানে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ অটোনোমাস ড্রোন। যা চালাতে প্রয়োজন হবে না কোনো রিমোট বা মানুষ। কোথায় যেতে হবে তা শুধু বলে দিতে হবে। বাকি কাজ ড্রোনটি একাই করবে।
তিনি আরও জানান, গত বছরেই বাংলাদেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোয়াড কপ্টার পরিচলনা করে দীপ। এরপর দেশের বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এনে সে এটিকে সফল ড্রোনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। ইতোমধ্যেই ৯০ শতাংশের বেশি সফলতা পেয়েছে সে। পরিপূর্ণ ড্রোন হতে হলে ওকে এখন এটিতে ইমেজ প্রসেসিং কার্ড ব্যবহার করতে হবে। যা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ এবং এটা সিভিল ইউজের জন্য সচরাচর বিক্রি করা হয় না। তাই বাণিজ্যিকভাবে না হলেও দীপের চারটি ফ্যান দিয়ে কপ্টারটিকে আমরা নির্দ্বিধায় মিনিয়েচার ড্রোন বলতে পারি।
উল্লেখ্য, আব্দুল্লাহ আল মামুন খান দীপ ১৯৮৯ সালে রংপুর জেলা সদর গোমস্তপাড়ায় নানুবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার দাদার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার উত্তর হাজাতিয়া গ্রামে। তার পিতা দৌলত খান এবং মাতার নাম নূরজাহান খান। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় রবোটিক কম্পিটিশন ‘ইন্টারন্যাশনাল অটোনোমাস রবোটিক কম্পিটিশন’এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
এতে তার টিমে আরও ছিল সহপাঠী গোলাম সুলতান মাহমুদ রানা। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল আই ই ই ই কনফারেন্সে তার এম্বেডেড সিস্টেমের উপরে চারটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো বর্তমানে ‘আই ই ই ই এক্সপ্লোর’ নামক ডিজিটাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে তার ড্রোন প্রদর্শন করেন এবং ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
দীপ জার্মানির সাইনপালস কোম্পানিতে ড্রোন সিস্টেম ডেভেলপার হিসেবেও কাজ করছেন কিছুদিন। বর্তমানে তিনি একটি প্লেনকে অটোনোমাস বানানোর জন্য গবেষণা করছেন।
(সংগৃহিত)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×