সন্ধ্যায় কর্দমাক্ত ঢাকা শহর মাড়িয়ে বাড়ি ফিরছি অফিস শেষে। দেখলাম খালি গায়ে, বিশাল মোটা শরীর জুড়ে কাদাপানি মেখে রাস্তার ওপর আসন গেড়ে বসা এক পাগলকে। একটু থেমে থেমে দুলছে। চোখ বন্ধ। ঠোঁটের কোনে তার এমন একটা হাসি ঝুলন্ত, যা দেখে মনে হয় আমার - আপনার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নানা লুকিয়ে রাখা পাপ তার জানা আছে। আমরা একটু ট্যাঁ ফো করলেই সে এডওয়ার্ড স্নোডেনের মত সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়ে আমাদের জন্য জাতীয় লেভেলের একটা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
.
এই যে পাগল, মুগদার সরু রাস্তায়, ভেজা শহরে, খালি গায়ে, গায়ে কাদা, ঠোঁটের কোনে হাসি - ও যদি এই শহরে না থেকে লক্ষ্ণৌ শহরের পাগল হত, বা টোকিওর, বা প্রাগের, বা নিউইয়র্কের, বা জেনেভার - তা কি ওর জন্যে আর একটু ভালো হত?
বাবুল মোরা নাইহার ছুটে হি যায় .....
.
কোন শহরে পাগল হওয়া ভালো?
অথবা কোন দেশে?
ভেজা শহরের রাস্তা ধরে হাঁটি আর চিন্তা করি, কি প্রচণ্ড তীব্র অনুভূতিসম্পন্ন একটা জীবন মুফতে পেয়ে গেছি আমি! অথচ, মহাকালের পাতায় - যে অসীম রহস্যের গ্রন্থি উন্মোচন করে আমার ব্যক্তিসত্তার সৃষ্টি , এই আচানক ঘটনার কোন মুল্যই নাই। তার কাছে আমি পৃথিবীতে জন্মানো লক্ষ্যকোটি কোটি কোটি মানুষেরই আর একজন। জন্মাবার পর থেকেই যা কিছু যেভাবে দেখছি, এই থোড় বড়ি খাড়া, আর খাড়া বড়ি থোড় দেখতে দেখতেই আবার একদিন নাই হয়ে যাবো। মহাকালের তাতে কিছুই যাবে আসবে না। অবর্ণনীয় কষ্টের নয় কি - এই উপলব্ধি? কোন দিন কারো কাছে গিয়ে আমাকে পৃথিবীতে মানবজনম দিয়ে পাঠাবার জন্যে অনুরোধ করেছি বলে মনে পড়ে না, তবুও জন্মালাম, জন্মের পর পুরোটা জীবন ধরে সংগ্রাম করলাম আমার অস্তিত্বের একটা স্বাধীন অর্থ দাঁড় করাবার, এবং সে সংগ্রামের মাঝপথে এসে এও বুঝতে পারছি যে - আমি আমার অস্তিত্বের একটা অর্থ দাঁড় করাতে পারা না পারার মধ্যে বুড়ো পৃথিবীর একদমই কিছু যায় আসে না। আমার এ সংগ্রাম, এক একান্ত ব্যক্তিগত অস্তিত্ববাদী সংগ্রাম। পৃথিবীর দৃষ্টিকোন থেকে বালের সংগ্রাম।
জীবন , এসেন্সের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বাই ডিফল্ট ডিপ্রেসিভ।
অন্তত আজকের জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১০:৫৩