somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শয়তানের দলা

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“তোমাকে আলেয়া বলি কারন হচ্ছে, আলেয়া শুধু দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না”
*** গ্রাম এলাকায় বড় হয়ছি বলে সবসময় ভুত, পেত্নীর কেচ্ছা কাহিনী শুনতাম আর প্রচণ্ড ভয়ে থাকতাম ।মাছচদি (দুষ্ট ভূত) যারা মানুষের পথ আটকায় দিয়ে মাছ খুঁজে দিতে না পারলে মেরে ফেলে, সাদা শাড়ি পরা বুড়ি ভুত নাকি রাতে কান্না করে ,খারাপ জীন নাকি এসে মেয়ে তুলে নিয়ে যাইত আবার পরীরা এসে নাকি সুন্দর ছেলেদের সাথে প্রেম ও করত। এরকম আর ও কত কি.. নিজে সুন্দর ছিলাম না বিদায় কখনও কোন সুন্দরী পরি আসবে ঐ চিন্তা হতনা , উল্টা ভয় লাগত যে কোন সময় কুৎসিত পরীরা এসে অঘটন ঘটায় দিবে।
ক্লাস এইট বা নাইনে থাকা অবস্থায় একদিন রাতে এশার নামাজ পরে একা একা বাড়িতে ফিরছিলাম। মসজিদ ও বাড়ির মাঝখানে কিছু আবাদি জমি(বিল) ছিল এর মধ্যে ছোট মেঠো রাস্তা। ওই জমিগুলোতে ধান আর কচু চাষ হত। ঘুটঘুটে অন্ধকারে হটাত বিলের মাঝখান থেকে জ্বলন্ত আলো উটে আমার ঠিক মাথার উপর দিয়ে কিছুদূর গিয়ে নিভে যায় ,ত্বরিতগতিতে আমার ভাবনায় চলে আসছিল আমি শেষ, দুষ্ট পরীর পাল্লায় পরেছি। নিজেকে বাঁচাতে শেষ অস্ত্র হিসেবে দিলাম দৌড়,এক দৌড়ে সোজা বাড়িতে।বাড়িতে গিয়ে সবাইরে বললাম যে আমি ভূত দেখেছি, কিন্তু আমাকে সবাই ভুতের আরেক ভার্সন এর নাম শুনায়, যাকে বলে “শয়তানের দলা”( চট্রগ্রামে মাটির ডিল কে দলা বলে)
**বাংলা ভাষায় এটাকে “আলেয়া” নামে ডাকা হয়।
যাইহোক “ আলেয়া” নিয়ে সুন্দরবনের দিকে নাকি একটা গল্পের প্রচলন ছিল। দেখি গল্পটা কিরকমঃ
** সেই কাহিনি বলে, এক সময়ে সুন্দরবন এবং তৎকালীন অঞ্চলে রাজত্ব করতেন রাজা শ্রুতঞ্জয়। তাঁর ছেলের নাম ছিল অলঞ্জয়। সৎ গুণের জন্য রাজকুমার ছিলেন সবার প্রিয়। তাই প্রজারা এবং রাজবংশের বাকিরা তাঁকে আলেয়া নামে আদর করে ডাকতেন!
দিনে দিনে বড় হলেন আলেয়া। পারদর্শী হলেন সব বিদ্যায়। এল রাজ্যাভিষেকের সময়। রাজবংশের নিয়ম মেনে তিনি চললেন শিকারে। কেন না শর্ত ছিল এটাই, নরখাদক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিকার করে প্রমাণ দিতে হবে যোগ্যতার!
যথাসময়ে শিকারে গেলেন আলেয়া বাবার সঙ্গে। সুন্দরবনের খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে ভেসে চলল তাঁদের বজরা। আলেয়া দেখতে পেলেন চাঁদের আলোয়, এক শাবককে সঙ্গে করে খাঁড়ির মুখে জল খাচ্ছে এক বাঘিনী। দেখতে দেখতে সন্তর্পণে তাকে ঘিরে ফেললেন আলেয়া এবং তাঁর দলবল। তার পর আর তাকে বধ করতে কতক্ষণ! জঙ্গলের গভীরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও রেহাই পেল না শাবকটিও! হত্যা করা হল তাকেও! মনের আনন্দে রাজ্যের দিকে ফিরতে থাকলেন আলেয়া। কিন্তু, বিপদ ঘনিয়ে এল পরের রাতেই!
বাঘ শিকারের পরের রাতে দেখলেন আলেয়া, আরও এক বাঘিনী তার শাবককে নিয়ে জল খাচ্ছে। ধীরে ধীরে ঠিক আগের মতো তার দিকে এগিয়ে গেলেন রাজকুমার।এবার কিন্তু আর আগের মতো ঘটনা ঘটল না! সবাই দেখল চোখের সামনে, রাজকুমারকে মুখে নিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল বাঘিনী আর তার শাবক!
বুড়ো রাজাও হাহাকার করতে করতে ফিরে এলেন ঘরে!
আলেয়ার অতৃপ্ত আত্মা কিন্তু থেকে গেল সুন্দরবনের জলে-জঙ্গলেই! নিজের অকালমৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আজও তিনি আলো হয়ে ঘুরে বেড়ান সেখানে। যাঁরা সেই আলো দেখতে পান, অনুসরণ করতে করতে তলিয়ে যান মৃত্যুমুখে।
অনেকে আবার বলেন, আলেয়া এতটাও খারাপ নন! তিনি না কি আলোর বেশে দেখা দিয়ে সাবধান করে দেন সবাইকে! সামনে বিপদ রয়েছে, তাই এগোতে বারণ করেন! যাঁরা সেই বারণ শোনেননি, তাঁরা জীবনের বিনিময়ে ভুল শুধরেছেন!
**** এখন দেখি “আলেয়া” আসলে কি এবং কেন হয়
“আলেয়া” অর্থ – জলাভুমিতে দৃষ্ট জলন্ত গ্যাস বিশেষ; ইংরেজিতে will-o-the wisp; ignis fatuus নামে ডাকা হয়। বদ্ধ জলাভূমিতে বা শ্মশানে বা এ ধরনের পরিবেশে অনেক সময় বিচরণশীল আলোক দেখা যায়, এক কথায় একে আলেয়া বলা হয়।
আমেরিকানরা এটাকে “ghost lights” ও বলে।
বিভিন্ন জায়গার লোককাহিনীতে “Will-o-the wisp” :
বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট বেঙ্গলঃ
এই এলাকার জেলেরাই জলাভুমিতে সৃষ্ট অদ্ভুত প্রকার আলোকে “ আলেয়া” নামকরন করে।অনেক সময় মাছ শিকার করতে গিয়ে জেলেরা এই ধরণের আলো দেখে ওটার দিকে অগ্রসর হলে জলাভুমিতে ডুবে মারা যায়। এই এলাকার মানুষজন বিশ্বাস করত/ করে যে, এই আলো আসলে ভুত, যেসব জেলে মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছে তাদের ভুত।
জাপানঃ
জাপানের লোককাহিনীতে এই ধরনের ঘটনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।“কিতসুনে” হল জাপানের লোককাহিনীর “ইউকায় ডেমন”। দুটি “কিতসুনের” বিবাহের ফলে জন্ম হয় “কিতসুনে-বি”। “কিতসুনে-বি” –ই হল এই আলো।

ইউরোপঃ
ইউরোপিয়ান ফোকলোরে আছে যে, মানুষ বিশ্বাস করত এটা মৃত মানুষের আত্মা বা অন্য সুপারন্যাচারাল জিনিস যা পথিকদের মরার দিকে নিয়ে যায়। আবার কেউ কেউ এটা ও বিলিভ করত যে, এই আলো হচ্ছে আনব্যাপ্টাইজড বা জম্নের সময় মরে যায় এমন বাচ্চার আত্মা।
কিছু কিছু এলাকার মানুষ বিশ্বাস করত যে, “আলেয়া” যে জায়গায় দেখা যায় ওখানে গুপ্তধন আছে, এবং এই গুপ্তধন যতক্ষণ আলেয়ার আলো থাকবে ততক্ষণের মধ্যে তুলতে হবে। তবে শুধু খনন করে এই গুপ্তধন তোলা যাবেনা, এটা তুলতে হলে জাদুবিদ্যা কাজে লাগাতে হবে এবং “ডেড ম্যান’স হ্যান্ড” লাগবে। “ডেড ম্যান’স হ্যান্ড” হল খুনের অপরাধে ফাঁসিতে মরা এমন মানুষের হাত।
ব্রিটেন, আমেরিকা ইত্যাদি এলাকাতে “আলেয়া” নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত ছিল/আছে।
আলেয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখার চেষ্টাঃ
১৭৭৬ সালে ইতালির পদার্থবিদ আলসান্দ্রো ভোল্টা মিথেন গ্যাস আবিষ্কারের পর “আলেয়া”-এর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে প্রাকৃতিক ইলেকট্রিক্যাল ফেনোমেনা যেমন ব্রজ্রপাত মার্স গ্যাসের সাথে বিক্রিয়া করে আলেয়া সৃষ্টি করে। পরে এই প্রস্তাবকে সমর্থন দেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী প্রিস্টলী।
বর্তমানে আরও বিশদভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়া যায়।
বদ্ধ জলাভূমিতে উদ্ভিদ পদার্থের জৈব যৌগের ব্যাকটেরিয়াঘটিত বিয়োজনের ফলে মিথেন উত্পন্ন হয়, আবার অনেক সময় প্রাণীদেহের বিয়োজনের ফলে ফসফিন [PH3], ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] জলাভূমিতে উত্পন্ন হয় । তাই জলাভূমিত যে মিথেন উত্পন্ন হয় তার সঙ্গে অনেক সময় ফসফিন ও ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] মিশে থাকে । [P2H4] বায়ুতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্বলে ওঠে । ডাই-ফসফরাস টেট্রাহাইড্রাইড [P2H4] -এর বায়ুতে দহনের ফলে যে তাপ উত্পন্ন হয় তা মিথেনকে নীলাভ শিখায় জ্বলতে সাহায্য করে ।
** Emily Dickinson এর কবিতায় “আলেয়া” ...
Those—dying then,
Knew where they went—
They went to God’s Right Hand—
That Hand is amputated now
And God cannot be found—

The abdication of Belief
Makes the Behavior small—
Better an ignis fatuus
Than no illume at all

লিঙ্কঃ
https://en.wikipedia.org/wiki/Hand_of_Glory
https://en.wikipedia.org/wiki/Will-o'-the-wisp
https://ans.bissoy.com/74634/
http://www.english-bangla.com/bntobn/index/আলেয়া
http://www.sangbadpratidin.in/the-mystery-behind-the-light-of-bengal-swamps/#.V79LJfkrKUk
https://en.wikipedia.org/wiki/Yōkai
http://www.todayifoundout.com/index.php/2013/04/what-causes-will-o-the-wisps/
http://hubpages.com/education/Ignis-Fatuus
https://bn.wikipedia.org/wiki/আলেয়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Kitsune



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×