গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
এসব আন্দোলন বিক্ষোভ খুব একটা সফল হবে না।
বিক্ষোভে সাধারন আমেরিকানরা খুব একটা সংস্লিষ্ট হয় নি। ৫,৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে মাত্র ৪১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হলেও
মুলত বিক্ষোভ জমেছে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ও সিটি ইউনিভার্সিটি আর ক্যালিফোর্নিয়ায় ইউসিএলএ আর সাউদার্ন। মৌলবাদ সমর্থক মুসলিম কংরেস সদস্য ইলহাম ওমরের মেয়ের নেতৃত্বে ইমিগ্রেন্ট ও স্টুডেন্ট ভিসায় আগতরা বিক্ষোভে ফ্রন্টলাইনে দেখা যাচ্ছে। যে কারনে মেইন্সট্রিম মিডিয়ার দায়সারা কিছু সমর্থন। অনেক সময় নেগেটিভ খবরও প্রাধান্য পাচ্ছে।
ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ জমে না উঠার আরো একটা বড় কারণ ভিয়েতনাম যুদ্ধের মত আমেরিকা সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িত নয়। তাই আমেরিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন কেন?
এছাড়া আমেরিকায় বিদ্বেষ প্রতিরোধ অ্যান্টি সিমিটিজম আইন আছে। বিদ্যমান ফেডারেল আইন অনুযায়ী, ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য ইহুদিবিরোধী বৈষম্য ও হয়রানি এমনিতেই নিষিদ্ধ। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অল্পতেই পুলিশ ডাকতে পেরেছে এবং নির্দ্বিধায় গ্রেফতার করতে পারছে। ইতিমধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের নেতা একটি অতি বিতর্কিত ইহুদী বিরোধী মন্তব্যে সবাই বিব্রত হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত বক্তব্য ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় চলে সরকারি নয়, দাতাদের অনুদানে। দাতাদের অনেকেই সতর্ক করেছেন যে, দ্রুত বিক্ষোভ থামানো না হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেবেন।
যারা এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এজন প্রাক্তন ছাত্র রবার্ট ক্রাফট তিনি নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়ট এনএফএল দলের মালিক।
মি. ক্রাফট বলেছেন যে, “সংশোধনমূলক পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত” তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিবেন।
আমেরিকার রাজনিতিকরাও বসে নেই
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে একটি বিল দ্রুততার সাথে উত্থাপন ও পাস হয়েছে। নাগরিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার থাকা মানবধিকার সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও গতকাল বুধবার বিলটি পাস হয়। এটি এখন অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাঠানো হবে। দ্রুততার সাথে পাসও হয়ে যাবে। গতকাল প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩২০ জন সদস্য। আর বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৯১ জন। গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিক্ষোভ চলছে, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিলটি পাস করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সোমবার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। তিনি “ইহুদি-বিদ্বেষমূলক প্রতিবাদের” নিন্দা জানিয়েছেন।
কিছুদিন আগে গুগল অফিসেও ২৮ জন কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তকৃত কর্মীরা লাঞ্চ টাইমে ইসরাইল বিরোধী মামুলি প্রতিবাদ করে বসে থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কের গুগল অফিসে অবস্থান করেছিল।
গুগল ক্লাউডের সিইও থমাস কুরিয়ানের অফিসেও কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, গুগল শুধু প্রতিবাদকারী কর্মীদেই বরখাস্ত করেনি, নিছক বিক্ষোভ যারা দেখছিল এমন দর্শক কর্মীও চাকরি হারিয়েছে। গুগলের একজন প্রাক্তণ কর্মচারী বলেছেন, তাঁকে শুধু বিক্ষোভ দেখা ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে মাত্র ‘চার মিনিট’ কথা বলার জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০৭