somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন বিদগ্ধ কবি ও আমার প্রেমের ঢিলা কবিতা !!!

২৪ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে আমাকে দেখেই বন্ধু উড়াল পঙ্খী (যার পূর্বের নাম মো: সায়েদুর রহমান) বিরক্ত গলায় বলল --'তুই এই ভোর বেলা আমাকে কবিতা শুনাতে আসছিস ?' আমি বললাম --'হ্যা দোস্ত । কারণ আছে । কাল সারারাত ধরে এই কবিতা লিখেছি । সারা শরীরে উত্তেজনা । আমার ধারণা এই রকম ভাল কবিতা 'খেলারাম খেলে যা' খ্যাত সৈয়দ শামসুল হকও কখনও লেখে নাই । শামসুর রহমান দু একটা লিখলেও লিখতে পারে, তাও সিওর না। পড়ে দেখ ।'
উড়াল পঙ্খী হাই তুলতে তুলতে উদাস গলায় বলল --'এ্ইসব পড়ার ধৈর্য আমার নাই । তাছাড়া কবিতা জিনিসটা আমাকে কখনও আকর্ষণ করে না । কেন করে না তাও ঠিক জানি না ।'
আমি বললাম --'কিন্তু দোস্ত --আমার কবিতা একদম অন্যরকম ।'
'যেই রকম্ই হোক । শোন তোকে একটা ঘটনা বলি ।আমার দাদা যখন মারা গেল তখন আমি এইটে পড়ি -- বাসার সবাই চিৎকার করে কান্নাকাটি করছে । কিন্তু আমার চোখ খটখটা শুকনা । দেখলাম আমার যে চাচা দাদা মারা যাবার পর গ্রামের বাড়ির জমিজামা বিক্রি করার জন্য বেশি উৎসাহী তিনি সবচেয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন । আমাকে দেখে তিনি বিরক্ত গলায় বললেন দাদা মারা গেছে তোমার চোখে পানি নাই কেন? আমি বললাম--পানি আসতেছে না চাচা । তিনি বললেন--এইটা কেমন কথা । দাদা তো তোমাকে কম আদর করেন নাই । আচ্ছা যাই হোক, শুন তুমি এখন থেকে কবিতার বই পড়বা । পল্লীকবি জসীসউদ্দিনের 'এইখানে তোর দাদির করব ডালিম গাছের তলে' দিয়ে শুরু কর -- কবিতা পড়লে তোমরা দিলটা নরম হবে, তখন চোখের কোনায় আপনা আপনি পানি আসবে।'
আমি বললাম --'এখন আপনা আপনি পানি আসে ?'
'নাহ -- কবিতা টবিতা আমারে দিয়ে হবে না । ঘরে গ্লিসারিন এনে রাখছি । কেউ মারা গেলে কাজে দেয়। আমার ধারণা আমার পূর্ব পুরুষেরা এক সময় প্রচুর কান্নাকাটি করেছে । এই কারণে এখন আর আমার চোখে পানি আসতেছে না ।'
আমি চিন্তিত কন্ঠে বললাম 'কিন্তু এখন আমার কি উপায় ? কবিতা কাকে দেখাবো ?'
'উপায় মানে ? বাংলাদেশে কবির অভাব আছে নাকি ! শাহবাগের আজিজ মার্কেটে সন্ধ্যার পর কবিদের মেলা বসে । এর ভেতর একজন আছে বিদগ্ধ কবি ।তার কাছে যা । তোর কবিতা পড়ে সে যা বলে ধরে নে সেটাই ফাইনাল ।'
'বিদগ্ধ কবি মানে ?'
'বিদগ্ধ মানে বিশেষ ভাবে দগ্ধ । কয়লা পুড়ে যেখন হীরা হয় তেমন যেসব কবির অন্তরটা পুড়ে পুড়ে এখন হীরা হয়েছে তাদেরকে বিদগ্ধ টাইটেল দেয়া হয় । যতদূর শুনেছি তাকে বিদগ্ধ টাইটেল দেয়া হয়েছে ।'
'বলিস কি !'
'তোর কবিতার বিষয়বস্তু কি? প্রেম?'
'হ্যা --প্রেমই বলা যায় ।'
'বলা যায় মানে?'
'মানে হলো ছেলেটা মেয়েটাকে সামনা সামনি প্রেম নিবেদন করতে পারছে না । তাই প্রেমের কবিতা লিখে গোপনে তার কাছে ভালোবাসার বার্তা জানায় । আমার কবিতার শিরোনাম হলো একগুচ্ছ প্রেমের ঢিলা কবিতা ।'
'ঢিলা কবিতার বিষয়টা ক্লিয়ার বুঝলাম না । প্রেমের আবার টাইট - ঢিলা আছে নাকি? '
'আরে বেকুব --এই ঢিলা সেই ঢিলা না । ছেলেটার তো সাহস ছিল না যে মেয়েটার কাছে গিয়ে কবিতা নিয়ে দাড়ায় । তাই সে কবিতাগুলা একটা ইটার সাথে বেধে ঢিলা মেরে জানালা দিয়ে মেয়েটার বেডরুমে পাঠাত । তাই কবিতার নাম ঢিলা কবিতা ।'
'ও আচ্ছা । যাই হোক । এইসব কবিতা টবিতা আমি বুঝি না । ও ভাল কথা --ওনার কাছে যাবার সময় কিন্তু বাংলা নিয়া যাইস ।'
'বাংলা মানে?'
'বাংলা কি বুঝ না চান্দু ?'
'বাংলা -- ও আচ্ছা বাংলা । বুচ্ছি ।'
'জিনিস ছাড়া ওনারা কোন কথা বলেন না ।'
'কিন্তু --এই জিনিস আমি পাব কোথায়?'
'আমাদের বাসার নিচে যে দারোয়ান আছে সে ব্যবস্থা করে দিবে । গিয়া বলবি আমার একটা এরশাদ লাগবে ।'
'এরশাদ লাগবে !'
'হ্যা । এ্ইটা হইল কোড নেইম । অবশ্য মওদুদও বলতে পারিস । তবে এরশাদটাই ভাল হবে । কবিতার বিষয় তো ।'

উড়াল পঙ্খীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সন্ধ্যার পর পরই আজিজ মার্কেটে উপস্থিত হলাম । ভীড় সামলে আস্তে আস্তে হাঁটতে হচ্ছে । জোরে হাঁটলে ঝুলির ভেতর এরশাদ টু টাং শব্দ করে । বেশি শব্দ হলে আবার আরেক সমস্যা । পুলিশ ব্যাগ সার্চ টার্চ করতে চাইতে পারে । ঝুলিতে এরশাদ সহকারে ধরা পড়লে বিরাট কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ।
আনন্দের বিষয় বিদগ্ধ কবিকে জায়গা মতোই পাওয়া গেল । সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে গোল হয়ে মেঝেতে বসেছেন । মুখে কাঁচা-পাকা দাড়ি, মাথার চুল পনিটেল করা, দেখলেই একটা শ্রদ্ধার ভাব এসে যায় । বিদগ্ধ কবি বললেন --'ঢাকা শহরে কাক আর কবির সংখ্যা প্রায় সমান । দুই একটা কাক কবি এদিক সেদিক হইতে পারে ।'
চ্যাঙরা মতো এক সাগরেগ লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলল 'ঢাকা শহরে কাক পাইলেন কই -- আমি তো শুধু কবি দেখি ।'
বিদগ্ধ কবি বিরক্ত কন্ঠে বললেন 'আমি রেজিস্ট্রি কবির কথা বলতেছি ফরিদ। তুমি কি অলরেডি খাইয়া আসছ নাকি ? বস ।'
চ্যাঙড়া্ লোকটা ধমক খেয়ে চুপসে গেল । বিগদ্ধ কবি বলল--'কবি হিসেবে রেজিস্ট্রি আছে?'
আমি বললাম--'জ্বি না । তবে আজই রেজিস্ট্রি করব।জিনিস নিয়ে আসছি ।' আমি ঝুলি থেকে জিনিসটা বের করে দিলাম । জিনিস দেখে কবির ভেতর কোন ভাবান্তর দেখা গেল না ।
চ্যাঙড়া্ সাগরেদ ফরিদ বলল --'রেজিস্ট্রি করতে তো দুইটা লাগে । আচ্ছা যাক আপনি ছাত্র মানুষ, হাফ টিকিট ।'
কবি বলল--'দেখি কি কবিতা ।' আমি কবিতার খাতা এগিয়ে দিলাম । একগুচ্ছ প্রেমের ঢিলা কবিতা শিরোনাম দেখেই তার ভ্রু কুঁচকে গেল । আমি তাড়াতাড়ি ঢিলা কবিতার বিষয়টা ব্যাখ্যা করলাম । বিদগ্ধ কবি বললেন --' প্রেমের বার্তা জানাতে জানালায় ঢিল--এইসব প্রিমিটিভ চিন্তা ভাবনা থেকে বাংলার কবি সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে । বর্তমানে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে । এইসব ঢিলা-ঢিলির কারবার অনেক আগেই মিউজিয়ামে চলে গেছে । প্রেমের বার্তা দেয়ার এখন অনেক সিস্টেম আছে । মোবাইল আছে, এসএমএস আছে, ইন্টারনেরট আছে । '
আমি মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে রইলাম । মোবাইল-ইন্টারনেটের বিষয়টা মাথায় আসে নাই । আসা উচিৎ ছিল । তাহলে এই ভরা মজলিশে এভাবে অপমানিত হতে হতো না ।
বিদগ্ধ কবি বললেন --'কোন ইংরেজ বন্ধু আছে?'
'ইংরেজ বন্ধু ? জ্বি না ।'
কবি সবার দিকে তাকিয়ে বলল --'এইখানে কারও ইংরেজ বন্ধু আছে?'
একজন হাত তুলল । বিদগ্ধ কবি আমার দিকে তাকিয়ে বলল--'খাতাটা তাকে দাও । সে তার ইংজের বন্ধুকে দিবে ।'
আমি কিছু বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে আছি । বিদগ্ধ কবি বলল --'আমাদের তো লাগে না, আমরা পাছা ধৌত করি । ইংরেজরা পুছে । কাগজের কোয়ালিটি ভাল ।এইটা তার পুছার কাজে লাগবে ।'
এ কথায় কেউ হাসল না । সবাই চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ফরিদ নামের সেই চ্যাঙড়া লোকটা শুধু বলল --'ভাইজানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গেছে । আবার নতুন করে রেজিস্ট্রি করতে হবে ।'
বড় ধরনের অপমানজনক কথাবার্তা । চোখে পানি চলে এসেছে । সবাই একটা অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে আমার হাতে গোপন কোন নথি পত্র । এখন আমি সেই নথি ইংরেজ বন্ধুওয়ালা সেই ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করব । আমি কবিতার খাতাটা রেখে নীরবে বাসায় চলে আসলাম ।

এরপর অনেক দিন হয়ে গেল । কবিতা লেখার চেষ্টা আর করা হয়নি । কাউকে ব্লগ কিংবা পত্র পত্রিকায় কবিতা লিখতে দেখলে খুব ঈর্ষা হয় । মনে হয় আহ ! আমিও যদি ওরকম লিখতে পারতাম ।একমিনিট--ফোন বাজছে । উড়াল পঙ্খী । এখনই তার ওখানে যেতে হবে । কি নাকি সব জটিল আলোচনা আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×