somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বাসভ্রমন ও একটি ভূমিকম্প

১০ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগ যাব তাই বাসের জন্য টিভি সেন্টারে অপেক্ষা করছি। এত রোদ অথচ আশেপাশে ছায়াদার কিছুই নেই এমনকি নিজের ছায়াটাও পায়ের নিচে পরে আছে। যাক, অবশেষে তরঙ্গ আসল। ঘামে অর্ধেক গোসল হয়ে গেছে। বাসে উঠে একটা সিট খালি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। পুরো বাসে এই একটা সিটই খালি আছে। মনে হচ্ছে সিটটা আমার জন্যই খালি ছিল। কেননা এই সময়ে সিটতো দূরে থাক দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার সবাই পায়না। তাই এই সময় বাসে সিট পাওয়াটা সোনার হরিণ না হলেও রুপার হরিণতো বটেই।

আমি দেরি না করে তাড়াতাড়ি হরিণটা লুফে নিলাম। বসেই বুঝতে পারলাম হরিণটা আসলে আমার জন্য কেন রাখা হয়েছে এর হেলান দেয়ার স্থান থেকে একটা লোহার কোনা বের হয়ে আছে যা আমি বসার সাথে সাথেই গুঁতো দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। তাও শুকরিয়া কারণ এটা এখান দিয়ে বের না হয়ে নিচে দিয়ে অর্থাৎ বায়ার জায়গাটা দিয়েও বের হতে পারত। তখন কী হত ভাবতেই শিউরে উঠলাম। এমন সময় হাসির একটা ক্ষীণ শব্দ শুনে পাশের জনের দিকে তাকালাম। লোকটা বয়সে আমার পিতার সমান হবে অথচ আমার এই করুণ পরিস্থিতিতে হাসছে রাগটা কষ্ট করে চেপে নিলাম।

অবশেষে জ্যাম ছাড়ল। গাড়িটা চলতে শুরু করলে আরো একটা গুঁতো খেলাম। নির্ঘাত রক্ত বেড়িয়ে গেছে। লোকটা আবারও হাসল। নেহাত ভদ্র ছেলে বলে লোকটার মুখে ঘুসি দেয়ার অদম্য ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলাম। তবে আরেকবার হাসলে সুদ সহ উসুল করে নিব। আমি লোকটার দিক থেকে চেহারা সরিয়ে পাশের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি, না তাকানোটাই ভালো ছিল। পাশের সিটের মেয়েগুলোও মুচকি মুচকি হাসছে তবে একটা মেয়েকে দেখলাম যে আমার বরাবর পাশের সিটে বসেছে ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, ও ওর মত করে একটা ইংরেজি বই পড়ে যাচ্ছে উপন্যাস হবে হয়ত। ও ছাড়া বাকিগুলোর ওপর এত জিদ উঠল যে, রীতিমতো হাত-পা কাঁপছে। হঠাৎই মনে হল বাসটা খুব বেশ নীরব বাসের সবার চোখ আমার দিকে। সাধারণত এইসব বাসে ডান পাশে তিনটি আর বামপাশে দুইটি করে সিট থাকে। আর ইঞ্জিনের দিক সহ ডানপাশের প্রথম তিন সারির মোট নয়টা সিট মেয়েদের জন্য বরাদ্দ। অথচ আমি ধীরেধীরে তাকিয়ে দেখি নয়টা, বারোটা, পনেরোটা, আঠারোটা নাহ শুধু আঠারোটা না পুরো বাস মেয়েতে ভর্তি শুধু বামপাশ অর্থাৎ আমার দিকের প্রথম দুই সারি আমার সারি আর আমার পিছনের সারিতে আমি সহ আটজন ছেলে নাহ ড্রাইভার আর কন্টাক্টটার সহ পুরো বাসে মোট দশজন ছেলে আছে। রাগ যতদ্রুত আসছিল তারচেয়েও দশগুণ দ্রুত চলে গেছে। আর যাবেই না বা কেন কারণ আমি যে কোনো একটা গার্লস কলেজের টুরিস্ট বাসে উঠে পড়েছি। নিজেকে শুধু অসহায়ই না পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকা এবং এক আজব চিড়িয়া মনে হচ্ছে। সবাই আমাকে এমনভাবে দেখছে যে ভুতকেও মানুষ এমনভাবে দেখে না। অবশ্য কেউ ভুত দেখেছে বলে আমার জানা নেই। কন্টাক্টটারের ওপর আমার রাগ উঠছে দরজা বন্ধ রাখলে কী হত। আচ্ছা না রাখলি এটা তোদের ব্যাপার কিন্তু আমি উঠার সময় বাধা দিলি না কেন। তাহলে কি আর এভাবে লজ্জা পেতে হত। যাক যা হারানোর হারিয়েছে অর্থাৎ ইজ্জতটা এখন যেটুকু আছে সেটুকু নিয়েই নেমে পড়ি।

আমি নামার জন্য উঠে দাঁড়ালাম এমন সময় বাস ভয়ানক ঝাঁকি খেল আর সাথে সাথে সিটের উপর পড়ে গেলাম। লোহাটা তার কোনাটাকে আরো একবার ঢুকিতে দিল। আরেক তরফা হাসির অপেক্ষা করছি এবার হাসলেই ঝালটা মিটিয়ে নিব হোক না সার তাতে কী। ঘুসিটা প্রস্তুত করে তার মুখ বরাবর চাইলাম আর বাসটা ভয়ংকরভাবে দুলে উঠল, দুলছেতো দুলছেই এই দোলা কি আর যেই সেই দোলা। মনে হচ্ছে কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে একবার ডানে উল্টে পড়বে তো একবার বামে। এরমধ্যে কেউ "ভূমিকম্প" বলে চিৎকার দিল। লোকটা সহ সকল মেয়ের চেহারাতেই দেখলাম আতঙ্ক। আমি এই অবস্থায় আমার পিঠের ব্যথা ভুলে গিয়ে সবার আতঙ্কিত চেহারা উপভোগ করছি, একটু আগেই ওরা আমাকে নিয়ে হাসছিল আর এখন ভয়ে সবার চেহারা এতটুকু হয়ে গেছে। বাসের ঝাঁকি লেগে পাশের যে মেয়েটা বই পড়ছিল ওর বইটা ছুটে আমার সামনে এসে পড়ল মেয়েটাও খুব ভয় পেয়েছে। ওর জন্য কেন যেন মায়া লাগল সম্ভবত ও তখন হাসেনি তাই। আমি বইটা তুলে নিয়ে মুচকি হেসে মেয়েটার সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম এটা ভূমিকম্প নয় বাসকম্প অর্থাৎ রাস্তাটা ভালোনা ভাঙা তাই বাস এভাবে দুলছে। মেয়েটা আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, ওর ভয় কেটে গেছে। ও শান্ত হয়ে বসল। আশ্চর্য মেয়েটা শান্ত হতেই বাসটাও শান্ত হয়ে গেল যেন ওর শান্ত হওয়ার অপেক্ষাই করছিল। আমি বইটা ওর হাতে দিলাম ও কিছু একটা বলল বুঝিনি সম্ভবত ধন্যবাদ টন্যবাদ হবে।

আমার পিঠের অবস্থা ভালো না অনেকগুলো গুঁতো খেয়েছি রক্ত বের হয়েছে মনে হয়, তাহলে ব্যান্ডেজ করতে হবে। এমন সময় সামনে থেকে কেউ বলল, তোমার নাম কি? আমি লোকটির দিকে চাইলাম দেখে মনে হচ্ছে প্রিন্সিপ্যাল। বললাম, আবীর। লোকটি বলল তুমি কি খুব ব্যস্ত? কোথায় নামতে চেয়েছিলে? আমি আমার চিরচারিত অভ্যাস অনুযায়ী বললাম, "আমি কখনোই ব্যস্ত নই।" আমি মৎস ভবনের সামনে নামতে চেয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে পিজির সামনে নামতে হবে। লোকটি আমার দ্বিতীয় কথাটা শুনেছে বলে মনে হলো না বলল, তুমি এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ এটা টুরিস্ট বাস। আসলে আমরা ঢাকার বাহিরে একটা ট্যুরে যাচ্ছি। বাসের দরজা খোলা রাখা ও সিট খালি রাখার উদ্দেশ্য হলো, আমরা চেয়েছিলাম কেউ একজন ভুল করে উঠে পড়লে আমরা তাকে নিয়েই ট্যুরে যাব চাই ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। তবে ধারণা করছিলাম ছেলেই হবে তাই এই সিটটাই খালি রেখেছি। বলতে পার এটা আমাদের একটা বাড়তি এবং অন্যরকম আনন্দ। আমি বললাম শুনে ভালো লাগল তবে এই সিটটার যে দোষ আছে এটাতো অবশ্যই জানতেন তাই এটাই খালি রেখেছেন তাইনা? ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললাম। তারপর সিট থেকে বের হয়ে থাকা কোনাটা তাকে দেখালাম। লোকটা কোনাটা দেখতে গিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল রক্তও বের হয়েছে। দুখিত আসলে এটা আমরা জানতাম না এটা তোমার ভাগ্য বলতে পার। লোকটার অবাক হওয়া চাউনি দেখে বুঝলাম লোকটা সত্যিই বলছে। আমি পিঠের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রক্ত খুব সামান্যই বের হয়েছে রঙিন পাঞ্জাবি হওয়ায় তাও বুঝা যাচ্ছেনা। আসলে হঠাৎ আর ঘনঘন খোঁচা লাগায় একটু বেশিই জ্বলছিল আর আমি ভেবেছিলাম কী না কী আসলে কিছুই না।

লোকটি আবারও বলল তুমি কি যাবে আমাদের সাথে? আমি না বলব ভাবছি, এমব সময় ওই মেয়েটা বলে উঠল চলেন না আমাদের সাথে আপনি গেলে আমি খুব খুশি হব। আমি মেয়েটার দিকে চাইলাম তারপর কী মনে করে যেন রাজি হয়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×