somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারকাঁটা

০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা সিনেমা,যা শুরু হবার ৫ মিনিটের মাঝে গান শুরু। যার শেষও গান দিয়ে। মাঝখানে অগনিত গান। কখনও কখনও একটা গান শেষ হবার ২ মিনিটের মধ্যে আরেকটা গান শুরু। যার কাহিনীর কোনো আগামাথা নেই। যে মুভি দেখলে মনে হবে তারকাঁটার উপ্রে বসে আছি- এক কথায় সেই মুভির নামই হইল তারকাঁটা।
সিনেমার ট্রেইলার,পোষ্টার, বিশেষ করে কাষ্টিং- সব দেখে নিঃসন্দেহ ছিলাম যে অসাধারন একটা মুভি-ই হতে যাচ্ছে। কিন্ত আশায় পুরা গুড়ে-বালি। এটা একটা যন্ত্রনাদায়ক মুভি ছাড়া কিছু না,এরচেয়ে জলিলস কমেডি কোটি গুনে ভালো। জলিলের মুভি দেখে হাসা যায়। জলিলের মুভির গান গুলা যথেষ্টই শ্রুতিমধুর হয়। আর এই তারকাঁটা জুড়ে পাতলা পায়খানার মতন গান, অথচ এর একটাও মনে রাখার মত না।
মুভির অসহনীয় ব্যাপার গুলার একটা হচ্ছে এর আবহ সংগীত। তবে মাঝে মাঝে ‘ইব্রাহীম’ ব্যাকগ্রাউন্ডের আওয়াজটা মোটামোটি মানিয়েছে।
নায়ক আরেফিন শুভ এখানে ইব্রাহীম নামক গুন্ডা। যথারীতি সে একসময় খুব ভালো মানুষ ছিল, কিন্ত সমাজ.... হ্যা সমাজ তাকে ভালো থাকতে দিল না। ক্যামনে??
শুভ আর মৌসুমী ভাই-বোন। মৌসুমীর জামাই ওমর সানী মারা গেছে। যতদূর বোঝাগেলো, মৌসুমী আর শুভ দুইজনই গান-টান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। শুভ অবশ্য পার্ট টাইম বড়লোকের এক মাইয়ার সাথে প্রেমও করে।


মৌসুমীর গানের তালে 'তাল' দিচ্ছেন শুভ।।

বড়লোকের মাইয়া(জয়া)র দাবির মুখে বড়লোক ড্যাডির সাথে দেখা করতে তাদের বাড়ি যায় আরেফিন শুভ তথা ইব্রাহীম। শুভর কোনো চাল চুলো নাই বুঝতে পেরে বড়লোক ড্যাডি তাকে খুনের দায়ে ফাঁসায় দেয়। তাও কি অদ্ভূত! ইন্টারভিউ দিতে শুভ এক অফিসে গেলে সেখানে দেখে কয়েকজন লোক মরে পড়ে আছে।আসলে বড়লোক ড্যাডির নির্দেশে লোকগুলান মাথায় টমেটো ক্যাচাপ লাগায় পড়ে ছিলো। বুঝলাম না দেশে কি টাইপ অবস্থা আসল যে ঐ নকল খুনের দায়ে শুভরে গেরেফতার করে জেলে পুড়া হলো। শীতলক্ষ্যায় কত লাশ ভেসে গেলো কারো কিছু হয় না আর মাথায় টমেটো ক্যাচাপ লাগায় কয়েকজন পড়ে থাকল, তাতেই গেরেফতার হইল শুভ।
শুভ জেলে যাওয়ায় তার গার্লফ্রেন্ড জয়া কইল, আমার খুনী বয়ফ্রেন্ড লাগব না। মৌসুমী আসল, সে-ও কইল, আমার খুনী ভাই লাগব না।
দেশের এমনই অবস্থা, লাশ নাই কিছু নাই, কোনো বিচার হয় নাই তার আগেই আত্নীয়-স্বজনরাই খুনী বলে রায় দিয়া দেয়। আমাদের প্রাইম মিনিষ্টারের কাছ থেকে এদের কিছু শেখা উচিত।
যাইহোক, এমন অবস্থায় মুসা ভাই সহায় হইলেন। খুনের মামলায় ৯ মাস নাগাদ বাইর হয়া আসলেন শুভ মুসা ভাইয়ের সহায়তায় (কিছু বুঝলাম না)। এরপর শুভ হইয়া উঠেন খতনাক কিলার ইব্রাহীম।।
খতরনাক কিলার ইব্রাহীম কাউকে ক্ষমা করে না, বরং মারে। এরই ধারাবাহিকতায় স্লেজ হ্যামার দিয়া ট্রিপল এইচ স্টাইলে বারি মাইরা খুন করে আসলাম শেখ নামক ভিলেনের ভাইকে। বাংলার ইতিহাসে যত ভিলেন জন্মাইসে, সব ভিলেন নামের কলংক এই আসলাম শেখ। এমন ভিলেন থাকলে দুনিয়া চলত না। অথর্বের মতন এই ভিলেন ধরে সবাইকে, কিন্ত কাউরে রাখতে পারে না। ভাতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে সে ইব্রাহীমের ভাগ্নী থেকে শুরু করে তার বোন মৌসুমী, ডার্লিং মীম- সবাইরেই একে একে তুলে নিয়া যায়, বাট কিছু করতে পারে না। উল্টা নায়ক আইসা মাইর-ধোর কইরা যায়।
সিনেমার নায়িকা মীম। মীমের অভিনয় প্রতিভা আর সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রশ্ন তুলার মতন কাউকে পাওয়া যাবে না। বাট এই কাহিনী নিয়ে সে আসলে অভিনয় করবে টা কি?? বেচারীর জন্য খারাপ লাগল।
মীমের ক্যারেক্ট্যার অনেকটা আশিকি-২ এর আরোহি টাইপ। সে-ও গায়িকা এবং বারে গান করে (উল্লেখ্য, মৌসুমী –শুভও গায়ক গায়িকা। মনে হয় দেশটা গায়ক গায়িকা দিয়া ভইরা গেছে)। মীমকে দেখে ইব্রাহীমের ভালো লাগে। পর্দার পেছনে থেকে সে মীমকে বড় গায়িকা বানায় ফালায়।
মীম বড় গায়িকা হয়ে গেলো। এবার ফুল নিয়া তার বাড়িতে হাজির হয় শুভ। কিন্ত তারে দেইখা মীমের মহিলা এসিস্ট্যান্ট ভাবে শুভ ‘পুরুষ এসিস্ট্যান্ট’ পদে ভাইভা দিতে আসছে। আসলে মুভিটা বানাইসে গাজা বা এই টাইপ কিছু খাইয়া, সো কোনো কিছুতেই অবাক হওয়া যাবে না।
যাইহোক, শুভ উচ্চবাচ্য না করে ইন্টারভিউ দেয়া শুরু করে। নিজের সংগীত জ্ঞানের স্বাক্ষর রেখে পিয়ানো-গীটার বাজায়া, গান গাইয়া আরোহী... থুক্কু মীমকে মুগ্ধ কইরা ফালায়। অবশ্য শুভর গীটার দিয়া জলিলের মতন আগুন বাইর হয় না, তারপরেও শুভর চাকরি হয়া যায়।
গানের ফাঁকে ফাঁকে এর মাঝে নানা কাহিনী ঘটতে থাকে। এর মধ্যে হঠাত দেখা গেলো মীমকে আসলাম শেখ তুলে নিয়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করতে শুভ হানা দিলে ওরেও পাকড়াও কইরা বাইন্ধা রাখা হইলো। এরপর দুইজন এক ঘরে রেখে ভিলেনরা কই যেন চলে গেলো। এই সুযোগে শুভ দাঁত দিয়ে মীমের দড়ির বাঁধন খুলে দিয়ে পালায় গেলো। আগেই বলেছি মুভিটা বানাইসে গাজা বা এই টাইপ কিছু খাইয়া, সো কোনো কিছুতেই অবাক হওয়া যাবে না।
এই পর্যায়ে হল ত্যাগের উদ্যোগ নিতেই দেখা গেলো, আসলাম শেখ এবার মৌসুমীকে পাকড়াও করেছে। শুভ যথারীতি হানা দিল। মৌসুমী সুন্দরমতন বের হয়ে আসলেও গুলি খেয়ে মারা গেলো শুভ। আলহামদুলিল্লাহ। আশিকি-২ এর নায়ক আত্নহত্যা করলেও আত্নহত্যা মহাপাপ, তাই হয়ত শুভ গুলি খেয়ে শহীদ হইলেন।
এরপরেও আরেকটা গান শুরু হইলো মীমের। আমার আর সহ্য হইল না। গান চলারত অবস্থায় মাথায় যন্ত্রনা নিয়ে বের হয়ে গেলাম।



মাস খানেক আগে ‘অগ্নি’ দেখেছিলাম। এককথায় চমৎকার মেকিং, সাথে নায়িকা মাহীর গ্ল্যামার আর আরেফিন শুভর অনবদ্য অভিনয়। তারকাঁটা অন্তত তার কাছাকাছি যেত পারত। কিন্ত হায়, আরেফিন শুভর মতন অভিনেতার ট্যালেন্ট, মীমের গ্ল্যামার-সব জলে গেল জঘন্য কাহিনী, মেকারের হাস্যকর কান্ডজ্ঞান আর বিরক্তিকর রিপিটেশনের জন্য।বিশেষ করে আরেফিন শুভর জন্য মনে হয় এটা একটা নেগেটিভ পয়েন্ট হয়ে থাকবে। এক নাম্বার নায়ক হবার সব গুন এই ছেলেটার মাঝে আছে। এমন সিনেমা করা নিশ্চয়ই তাঁর উচিত হবে না যেখানে হল থেকে বের হয়ে দর্শকের প্রথম কমেন্ট হয় **।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:০১
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×