উৎসর্গ:
ব্লগার অপু তানভীর।
১.
সেজুতির আসার কথা ঠিক চারটায়। এখন বাজে প্রায় পাচটা, কিন্তু সেজুতির কোন খোজ নেই আবার ফোন অফ। সেজুতি কখনও এমন করেনা। নরমালি সময়ের আগেই চলে আসে। কেমন জানি একটা টেনশান হচ্ছে। কোন ঝামেলা হয়নি তো আবার। বারবার ফোনে ট্রাই করছি কিনতু ফোন অফ। টেনশান থেকে একটু একটু মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ঠিক এমন সময় সেজুতি এল। মেয়েটা আজকে সবুজ সালোয়ার পরে এসেছে। কানে সবুজ দুল। এত রুপবতী মেয়েটার পাশে আমার মত কাউকে ঠিক মানায় না। সেজুতির পাশে থাকা দরকার রাজপুত্র টাইপ কোন যুবক।
সেজুতি এসেই তার ভূবনভুলানো হাসি দিয়ে বলল, চল আজকে সারা বিকেল রিকশায় ঘুরি। আমি চুপচাপ সেজুতির দিকে তাকিয়ে থাকি। মেয়েটা হাসলে ঠিক টোল পরেনা, তবে গালের বামদিকে কেমন জানি একটু উচু হয়। মনে হয় আদর পাবার জন্যই গালটা উচু হয়ে আছে। তখন আমার খুউব ইচ্ছে হয় তার গালটা ছুয়ে দিতে। কিনতু কখনও ছুয়ে দেখা হয়নি।
আমি আর সেজুতি রিকশায় ঘুরছি। নীল আকাশে তুলার মত সাদা মেঘ উড়ে বেরাচ্ছে। আমরা রিকশার হুড তুলে দিয়েছি। প্রচন্ড বাতাসে সেজুতির এলোচুল উড়ে এসে আমার চোখে মুখে পরছে। কেমন জানি একটা ঘোর কাজ করছে। বসন্তের চেয়েও অনেক বেশি বাসন্তি কেমন জানি এক নেশা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। সেজুতি কথা বলছে আর হাসছে। আমার কানে কিছুই আসছে না। কন্যাসুন্দর বিকালের আলোতে উনিশ বছরের এই তরুনীকে কেমন জানি অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে স্বর্গ নরক যা আছে সব মিথ্যা। যা কিছু সত্য সব ঐ চোখে, ঐ ঠোটে ।
২.
১৩ বছর পরের কথা।
আমাদের বিয়ে হয়েছে, আমরা এখন সংসার করি। তাই এখন আর তোমার হাত ধরতে চাই না। এইতো সেদিন মেহেদি রাঙা হাতে তুমি এসেছিলে আমার ঘরে, আমাদের ঘরে। সেই মেহেদির রঙ এখন আর নেই। হলুদ বাটার দাগে হলুদ হওয়া হাত আমি দুর থেকে দাড়িয়ে দেখি। তুমি আমার ঘরে তাই আমরা এখন আর আকাশ দেখিনা, ঘরে বসে আমরা অন্ধকার দেখি। পূর্নিমা রাতে ছাদে বসে তোমার কিন্নর গলায় আর গান শোনা হয়না। দুর থেকে বুয়ার সাথে তোমার আলাপ শুনি। বাজারের জিনিসপাতির দাম নিয়ে তুমি চিন্তিত। বাবুর স্কুলে কি টিফিন নিবে সেটা নিয়ে তুমি ব্যাস্ত। আমাদের এখন আর পাশাপাশি বসারও সময় হয়না। প্রতিদিন সকালে তোমার কাছ থেকে একটি করে কাগজ টুকরো পাই। না, সেটা কোন নীলখামে চিঠি না বরং মসলা মাখা গন্ধে ভরা বাজারের লিষ্ট। সেখানে আমাকে কাছে পাবার কোন আকুলতার কথা লেখা থাকে না। এখনকার সব হাহাকার আমাদের সংসার নিয়ে। বাজারের মাংসের সের চারশ টাকা সেটা নিয়ে তুমি চিন্তিত। বাচ্চার খাবার গুড়ো দুধ শেষ, এটা ফোন করে মনে করিয়ে দাও। আমি দুপুরে খেয়েছি কিনা সেটা জানার জন্য আর ফোন করনা। মেঘলা দিনে জানালায় বসে আমরা আর ঝুম বৃষ্টি দেখিনা। বৃষ্টি শুরু হতেই তুমি দৌড়ে ছাদে যাও শুকাতে দেয়া কাপড় আনার জন্য।
আমি আসতে দেরি করলে তুমি আর জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকনা। তুমি ব্যাস্ত থাক হিন্দি সিরিয়াল অথবা বাবুর হোমওয়ার্ক নিয়ে। আজকাল আর সবুজ শাড়ি পরে আমাকে চমকে দাওনা। বিকেল বেলা হঠাৎ করে নীল শাড়ি পরে নীল আকাশকে লজ্জা দাওনা। আমাদের সবকিছুই বদলে গেছে। আমরা আর আমাদের মতন নেই।
আমাদের যে বিয়ে হয়েছে। আমরা আর চড়ুইভাতি খেলি না, এখন আমরা সংসার করি।
আশিক আহমেদ বাপ্পী
২০ আগষ্ট, ২০১৩ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




