আতিক , এই নামে পরিচিত ।
হোষ্টেলে থাকি ।
সময় টা তখন , রাত ৯টা বেজ়ে ৩০ মিনিট ।
শীত কাল শুরু হওয়ার প্রথম দিকের , যে কোন সন্ধায় ।
তাঃ- বোলতে ইচ্ছে করছে না ।
তবে এতটুকু বলি , , , , আমার তখন ৭তম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা শুরু ।
আমার পরণে ছিল কালো টী শার্ট , লোঙ্গী এবং গলায় গামছা ।
আমি আমার পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলাম । প্রকৃতীর নিয়ম মত ,আমার মূত্র চেপেছে । আমাদর হোষ্টেলের পূর্ব পার্শে কাচাঁ মাটির রাস্তা । রাস্তার ১০ ফিট নিচ থেকে ধানি জমি , হাফ কিঃ মিঃ ধানি জমি পার হয়ে ছোট্ট একটা নদী । নাম তার ইছামতি । সেই নদীতে খেয়া পাড়া-পড় আছে , রাত
১১-১২ পর্যন্ত প্রায় । , , , , , ,
আমার রুম থেকে বের হয়ে বাম দিকে গেলেই কাচঁ মাটীর রাস্তা । আমাদের হোষ্টেলের বরাবর কাচাঁ মাটীর রাস্তার অপর পাসে , প্রায় ৩০বছর পুরনো একটা বিশাল কৃষ্নচূড়া বৃক্ষ । সেই বৃক্ষের নিচে বাঁশে বেড়া দেওয়া ছোট্ট একটা মূত্র বির্সজনের জায়গা ।
আমি রুম থেকে বের হই মূত্র বির্সজনের জন্য , এবং তা সম্পাদন করতে শুরু করি , এই পর্যন্ত আমার মনে আছে । তার পর আমি আর কিছু বলতে পারবনা , মানে আমার কিছু মনে নেই ।
তার পর আমি বুঝতে পারি , আমি আছি কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে । ষ্টেশনে ঢুকেই প্রথম যে লবিটা , সে যায়গায় আমি দারানো। আমি তাকিয়ে দেখি ষ্টেশনের ডিজিটাল ঘড়ি টা , তখন বাজে রাত তিনটা বেজে পাচঁ সেকেন্ড । আমার অনুভুতির সুময় টুকু ছিল খুব বেসি করে হলে ৫ - ৭ সেকেন্ড । আমি সুময় টুকু দেখেই নিজের সাথে যুদ্ধ করতে শুরু করি , আমি এখানে কেন , কি করে এলাম । তারপর আর আমার কিছু মনে নেই ।
এর পর আমি যখন বুঝতে পারি যে , আমি আছি , তখন আমি একটা দোকানে খাবার চাচ্ছি আমার তখন প্রচন্ড খিদে । আমি দোকানির কাছে কয়েকবার খাবার চাইলাম , দোকানি কিছুই বল্লনা
আমার দিকে তাকিয়ে রইল । আমি তখন বললাম , ভাই আমার অনেক খিদা লাগসে , আমারে কিছু খাইতে দেন , তখন দোকানি বলল টাকা দে । যখনই আমাকে টাকা দে বলল , তখনি আমি আমার দিকে তাকালাম , এবং বুঝলাম আমাকে তুই করে কেন বলল । আমি দোকানি কে বলতে যাব যে , ভাই আমি কই , তারপর আমি আর কিছু বলতে পারবনা ।
প্রচন্ড বাতাস , আমার চুল গুলো বাতাসে উরছে । যদিও আমার চুল ছিল ছোট ছোট , তারপরও উরছে । প্রচন্ড শব্দে আমি চখ খুলে দেখি আকাস , তারপর দেখি আমি ট্রেনের ছাদে । আমি চিতকার করে কাউকে কিছু বলতে যাব , বলতে পেরেছিলাম কি না জানিনা , আমি তারপর
আর কিছু বলতে পারবনা ।
আমি ফেলে এসেছিলাম আমার ৭ম শ্রেনির সমাপনী পরিক্ষা , আমার হোষ্টেল ,আমার বন্ধুদের , আমার বাবা - মা কে , ভাই - বোন কে ।
আমি চলে এসেছিলাম , নাকি আমাকে কেউই নিয়ে এসেছিল । আমি আজও তা বের করতে পারলাম না।জানি না কনো দিন পারবকিনা ।
জানি না এইরকম জাইগা পৃথীবিতে আছে কি না । আমি জানি চির সবুজের দেশ লাটা , সপ্নের শহর সিঙ্গাপুর , সপ্নের দেশ আমেরিকা । আমার তথ্য ভুল ও হতে পারে , কিন্তু আমি তাই জানি । আমি কখনো ঐ জাইগা গুলো দেখিনি , আজ অব্দি ।
আমি আমার হারিয়ে যাওয়া সপ্নের ভ্রমনে , এমন এক জাইগাই গিয়েছি যা এই পৃথীবিতে আছে বলে আমার মনে হয় না । যা দেখি সব মনে হয় সোনা দিয়ে বানানু , আর চারদিক এত সবুজ যে তাকালে চোখ যাপ্সা হয়ে যাই । আর এমন সব ফল, গাছে ধরে আছে যা আমি আগে কখনু দেখিনি। আমার মনে হয় কেও কখনু দেখেনি ।
আমরা কল্পনা করলে যেরকম কিছু রঙ আসে এবং আমরা বুঝি যে , বাস্তবে তা সম্ভব নয় , , , ঠিক সে রকম কিছু রঙ এর মত ছিল ,আমার হারিয়ে যাওয়া সপ্নের জাইগাটা ।
আমি অনুভব করছি যে আমার চারপাসে অনেক মানুষ আছে , কিন্তু আমি আমার চোখ দিয়ে কাওকে দেখছি না । মানুষ ছারা অন্য কিছু হতে পারে , কিন্তু মানুষ ছারা অন্য কিছু আছে কি না আমি জানি না । তাই আমি মানুষের কথাই বললাম, যদিও আমি কাওকে চোখে দেখিনি ।
তারা সবাই আমাকে কিছু বলছে , মানে অনুরুধ করছে , , , আমি তা বুঝতে পারছি কিন্তু তাদের ভাসা টা আমি বুঝতে পারছিলাম না ।
একটা সময় আমি তাদের ভাসা ও বুঝতে শুরু করলাম , দেখি তারা আমাদের বাংলা ভাসাই কথা বলছে । হয়ত আমি প্রথমে ভয় পাছিলাম তাই , বাংলা ভাসা টাই বুঝি নাই । ওরা সবাই আমাকে কিছু খাওয়ার জন্য অনুরুধ করছিল । এমন সব খাবার আমাকে খেতে দিল যা আমি কেন, পৃথিবীর কেও হয়ত দেখেনি । ওরা যে ফল গুলো খেতে দিল তা দেখে আমার মনে হল , এই ফল গুলো গাছে নয় ওরা নিজের হাতে সোণা দিয়ে বানিয়েছে ।
আমি সব কিছু দেখতে পারছি কিন্তু যারা আমাকে ধরে এনেছে সুধু তাদের কে আমি দেখতে পারছি না । তাদের ছায়া ওনুভব করছি , তাদের কথা শুনতে পারছি । আমার মনে হল , রাজনৈতিক সমাবেস হলে যে রকম মানুষ হয় এবং একজন প্রধান অতিথি থাকে , আমি ও আমার হারিয়ে যাওয়া সপ্নের যাইগাটাই , হাজার জনের মাঝে প্রধান দৃষ্টি আকরশিত একমাত্র মানুষ ছিলাম ।
একটা সুময় সবাই আমাকে আনুরুধ করতে শুরু করল । অনুরুধ গুলো প্রথমে আমি একদম বুঝিনি , পরবরতিতে আমি বুঝতে পারলাম যে তারা আমাকে তাদের সাথে থেকে যেতে বলছে ।
তারা আমাকে অনেক কিছু দেবে ,অনেক খমতা হবে আমার , আমি অনেক কিছু করতে পারব , অনেক আদর করবে সবাই আমাকে লাভ, লাভ , লাভ , লাভ আর অনেক কিছু বলতে লাগলো ।
আর তখনি আমি কান্না করতে শুরু করলাম , আর বলতে লাগলাম আমি যাব , আমি যাব
আর তারা সবাই আমাকে বুঝাতে শুরু করল যে , আমি নাকি আর এখান থেকে যেতে পারবনা এই কথা গুলো শুনে আমি তো হাও মাও করে কাঁধতে লাগলাম । তারা সবাই আমার কান্না দেখে চোপ মেরে গেল । ওরা সবাই নিজেদের মধে কিছু কথা বলল , যার একটা কথা ও আমি বুঝতে পারলাম না । আর তখনিই হল ভয়ংকর এক কান্ড , যা আমার চোখের সামনে আজ ভাশে । আমার আজও সেই দৃশ্য মনে হলে ভয় হয় ,
তারা সবাই আমার উপর ঝুকে আসে , এবং সবাই একসাথে আমাকে থুতু মারতে শুরু করে ।
আচ্ছা কেও কি কখনো সুই এর গুতো খেয়েছ হঠাৎ করে , কেমন লাগে ? তারা সবাই যখন আমাকে থুতু মারছিল , আমার মনে হচ্ছিল আমাকে হাজার হাজার সুই দিয়ে পুরু শরীর ফুটূ করে দিচ্ছে । তার পর আমি আর কিছু বলতে পারবনা । আমার মনে হয় এই সুময় টা ছিল ( আমি আমাকে ভুলে থাকার ) অতিতের ভুলে থাকার সুময়েরচে বেসি সুময় । এখন প্রায় মনে হয় তাদের সাথে থেকে গেলে ভাল হত ।
একদিন সন্ধ্যা বেলা আমার ঘুম ভাংগে । ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছিলাম ।মানুষের কোলাহল শুনে এদিক ওদিক তাকাই, হায়, , , , , দেখি আমি ঘুমাচ্ছিলাম স্টেশনে , ট্রেন বা বাস স্টেশনে । তারপর আমি বুঝতে পারলাম আমি একটা উচু যায়গায় ঘুমোচ্ছিলাম । আমি লাফ দিয়ে সেখান থেকে নামি , হায় হায় আমি তো ঘুমাচ্ছালাম ( ট্রেন যে সমান্তরাল লাইন এর উপর দিয়ে চলে , আর সেই লাইন যে কাঠ বা সিমেন্ট এর তৈরি পিলারের উপর বসান থাকে , তাকে স্লিপার বলে ) স্লিপার এর উপর । তার মানে আমি বুঝতে পারলাম আমি কোন রেলওয়ে স্টেশনে আছি । ডানে বামে তাকিয়ে , আমি বামদিকে এগিয়ে যাই । এবং দেখি সিমেন্ট দিয়ে পাকা করা মোটামুটি বড় একটা সাইন বোর্ড এ লিখা ভৈরব বাজার জংশন । আমি তো THANDARD । আমি এখানে এলাম কি করে ??? আমি আবার সেই স্লিপারের স্তুপের কাছে ফিরে আসি ।
এবং বুঝার চেস্টা করি যে আমার কি হয়েছে । আমাকে এখানে কে নিয়ে এল ? বা কি করে আমি এখানে এলাম ।আচ্ছা আমি কি হারিয়ে গেলাম , নাকি আমাকে কেও কিডনেপ করেছে ? কথাটা মনে হতেই আমি তারাতারি ওই জাইগাটা ছেরে একদম ডান দিকের শেস প্রান্তে চলে যাই। হঠাৎ আমি দেখি কিছু ছেলে কাধে বেগ ঝুলিয়ে হেটে যাচ্ছে আমার সামনে দিয়ে । তখনি আমার মনে হল আমার না সমাপনী পরিক্ষা , হায় হায় আমার কি হল, আমি এখন কি করব । আমি অস্থির হয়ে পরি এবং পাগলের মত এদিক ওদিক তাকাতে থাকি তারপর জোরে জোরে বলতে থাকি, আমার কি হবে , আমার কি হবে ।
এমন সুময় দুই জন লোক আমার কাছে এসে বলল , তুমি কি বিপদে পরেছ ভাই । আমি বললাম আমার পরিক্ষা আমি বাড়িতে যাব , আমার বাড়ি রাইপুরা । তখন দুই জন লোকের মদ্ধে একজন আমাকে বলল খিদা লাগসে , আমি বললাম হঅ লাগসে । তখন তাদের মদ্ধে একজন চলে গেল খাবার আনতে আরেকজন আমার কাছে থাকল । সে বলল তোমার বাড়ি রাইপুরা কোই , আমি বললাম থানাহাডি ( তখন মনে হয় সন্ধে ৭টা বেজে ৩০মিনিট ) ।তখন লোক টা আমাকে বোল্লো ভয় পাবার কিসু নাই , একটু পরেই কর্নফুলি আসবে ( একটা ট্রেন এর নাম কর্নফুলি ) , আমারা তো্মারে কর্নফুলি তে তোইলা দিমুনে ।কাইন্দনা । অনেক্ষন কান্না করার পর মা এর কোলে উঠে যখন শিশু একদম চুপ হয়ে যাই , আমিঅ সেই রকম চুপ হয়ে যাই ।
অন্য লোক টি আমার জন্য কলা, কেক, আর একটা জোস নিয়ে আসে । আমি খাবার দেখেই পাগলের মত খেতে শুরু করি আর লোক গুলো আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে রইল , মনে হয় আমি একটা হিংস্রু বাঘ, হরিণি কে ছিরে বিরে খাচ্ছি। সেই দৃশ্য গুলো এখনো আমার চোখে ভাসে ।
আমার খাওয়া প্রায় শেষ , ঠিক এমন সুময় ট্রেন এর বাঁশির আওয়াজ শুন্তে পেলাম , তখন লোক দুটি আমাকে বোল্ল, তোমার ট্রেন আইছে চল । আমি বল্লাম পানি খামু , লোক দুটি বল্ল পানি খাইতে গেলে ট্রেন চইলা যাইব বাড়িতে গিয়া খাইও এখন জুস খাও । একজন আমাকে বল্ল তুমি যেন কই নাম্বা , আমি বল্লাম "মেথিকান্দা" ( আমার বাড়ি যেতে হলে মেথিকান্দা ষ্টেসনে নামতে হয় ) নাম্মু । তাদের একজন বল্ল যদি না চিন , তাহলে কোন মানুষরে জিগায়ো কয়াদিব ।
ট্রেন টা যখন ছেরে দিল আমার হঠাৎ করে মনে হল আচ্ছা এই লোক দুইটা কে ? আমারে কেন খাওয়াইলো ? আমারে কি ওরা চিনে ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম । আমি ট্রেনের দরজা দিয়ে তাদের দিকে তাকালাম তারা আমাকে টাটা দিল । আমি ট্রেনের ভিতরে চলে গেলাম ।আমি ওই মুখ দুটি এখনো খোজি ।
আমি ট্রেনের দরজার পাসে দারিয়ে রইলাম , আমার ষ্টেশন আসলে যেন আমি চিন্তেপারি । ভৈরব বাজার ষ্টেশন থেকে ঢাকা যেতে, ২টা ষ্টেশন পরে আমার ষ্টেশন ( মেথিকান্দা ) যেখানে আমি নাম্ব । প্রথমে দৌলতকান্দি তারপর শ্রীনিধি ষ্টেশন , ২টা ষ্টেশনেই কর্নফুলি ট্রেনের ষ্টপিস আছে । খুব বেশি করে হলে ভৈরব বাজার থেকে মেথিকান্দা ষ্টেশনে পৌছাতে ২০ - ২৫ মিনিট লাগার কথা , বাংলাদেশ তো তাই ঔদিন আমার সুময় লেগেছিল প্রায় ১ঘোণ্টা ৩০মিনিটের উপর ।
আমি মেথিকান্দা ষ্টেশনে দেখে পাগলের মত ট্রেন থেকে নামি , মনে মনে আমি বলতে লাগলাম আমি বাড়ি চলে এসেছি । ষ্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি যেতে প্রায় ১০ - ১৫ টাকা ভারা লাগে রিক্সসা করে । আমি কোন কিছু না ভেবেই হাটা শুরু করলাম বাড়ির উদ্দেশে ।
ষ্টেশনে থেকে আমাদের বাড়ি যেতে প্রথমে রেলগেট, তারপর শ্রীরামপুর বাজার পাড় হয়ে চৌধুরী বাড়ির মোড়, এর পরেই একটা ব্রীজ । ব্রীজ পার হয়ে আমাদের বাড়ি থেকে ১মিনিট সুময়ের দুরত্তে যে বাজার সেই বাজার টা । বাজার এর শূরুতেই রাইপুরা বাসষ্টেন্ড, আমি যখন বাসষ্টেন্ডে পৌছাই, প্রথম আমাকে দেখে আমার বড় ভাই এর বন্ধু ইসহাক ভাই । ইসহাক ভাই আমাকে দেখে দৌড়ে আমার কাছে আসে , এবং আমাকে কোলে তুলে আমাদের বাসার দিকে দৌড় দেয় । আমি কিছু বুঝার আগেই আমাকে সে বাসাই নিয়ে যায় , আমি তাকে কিছুই বলতে পারলাম না । আমার প্রতি তার ভালবাসা দেখে, আমি অবাক হয়ে যায় ।
মানুষ হারিয়ে গেলে বা মারা গেলে তার প্রতি মনে হয় আমাদের ভালবাসা বহু গুণে বেড়ে যায় আমার ধারনা ভুল ও হতে পারে । আমার মনে হল তাই বল্লাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১:৩৩