বাংলাদেশের মানুষের মাথা এত গরম কেন ? আমি বুঝিনা। একটু থেকে একটুতেই ফাঁসী চেয়ে বসে থাকে। ২০১৮ সালে এক কাঠমিস্ত্রী ফেসবুকে প্রধাণমন্ত্রী, জাতির জনক, জিয়াউর রহমান এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ অপমান করেছিল। যাদের অপমান করছে তারা মানহানির কেস করলে নাহয় কাঠমিস্ত্রীকে গ্রেফতার করা মানাইত, কিন্তু যাদের অপমান করছে তাদের খবর নাই। পুলিশের এত লাগল কেন ? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কি পুলিশের আত্মীয় নাকি ? তানাহলে পুলিশের এত জ্বলবে কেন ? পুলিশ তাকে কেন গ্রেফতার করল ? একজনের সম্মানহানি হলে আরেকজন তার হয়ে কেস করতে পারবে কেন ? এই অন্যায় আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যার মানহানি হয়েছে, শুধু সেই কেস করবে। তো যখন ঐ মিস্ত্রী ও পুলিশের স্বাক্ষাৎকার you tube এ release হয়েছে। তখন সেই ভিডিওগুলোর নিচে মানুষ কমেন্ট করে ফাঁসীর দাবীর জানাচ্ছে। কাউকে অপমাান করার জন্য মৃত্যুদন্ড বা ফাঁসী চাওয়া প্রমাণ করে দেয় বাংলাদেশের মানুষ কি পরিমাণ উগ্র। তারপর ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এক ছাত্রীকে নকলের অভিযোগে টিসি দিতে চাওয়ায় সেই ছাত্রী আত্মহত্যা করছে। সাথে সাথে রামছাগলের দল you tube video এর কমেন্টে সেই অধ্যক্ষের ফাঁসী চাওয়া শুরু করছে। মাথা খারাপ নাকি পেট খারাপ ? কিছু হলেই ফাঁসী, কিছু হলেই ফাঁসী। কিছুদিন পর দেখা যাবে আম চুরি করলেও ফাঁসীর দাবি জানানো হচ্ছে। যত্তোসব।
বাংলাদেশের মানুষ মাত্রাতিরিক্ত আবেগী। বৃদ্ধ থেকে শিশু সবাই আবেগের চোটে বিবেক হারিয়ে উল্টোপাল্টা সব দাবী জানিয়ে বসে। লঘু পাপে গুরুদন্ড চেয়ে বসে। যেখানে গুরুপাপে লঘুদন্ড দেয়া উচিত।
আইনকে কঠোর করা যাবে না। মৃত্যুদন্ড তুলে দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা থেকে মৃত্যুদন্ড তুলে দেবার জন্য আজ অব্দি কোন দাবী জানানো হয়নি। কারণ, এই বিধানের প্রতি দেশের জনগোষ্ঠীর ঐক্যবদ্ধ জনমত আছে। যে দেশে ছোটখাট অপরাধ, এমনকি অপরাধ না হলেঐ স্রেফ অনুভূতিতে আঘাত লাগার জন্য সাধারণ মানুষ মৃত্যুদন্ডের দাবী জানায় সেই দেশে মৃত্যুদন্ডের আইন তুলে দেয়া অনেক কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।
কয়েক বছর আগে BCS পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া সুশান্ত পালের ফেসবুক status এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান হয়েছে মনে করে কিছু বলদ সুশান্তকে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবীতে আন্দোলন করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এককালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হত। আপনি ঈংল্যান্ডে গিয়ে আসল অক্সফোর্ডকে গালি দিলেও সেখানকার কোন শিক্ষার্থী আন্দোলন করবে না। বাংলাদেশের মানুষ হল হুজুগে। বেশীরভাগ মানুষের মতের সাথে মেলে না, এমন কিছু মুখ থেকে বের করলেই হল। পাগল জনতা ''ক্ষমা চাও'', ''ক্ষমা চাও'' বলে আকাশ ফাটিয়ে ফেলবে। বাংলা সিনেমার নায়ক ওমর সানি ঈদে কোরবানীর পিছনে টাকা খরচ না করে গরীব অসহায় মানুষের মাঝে অর্থ বিতরন করতে বলেছিলেন। সাথে সাথে পাগল জনতা ক্ষমা চাওয়ার দাবীতে আওয়াজ তুলছে। টিভি অভিনেতা মোশারফ করিম এক অনুষ্ঠানে বলেছিল, ''মেয়েরা যেমন খুশি ড্রেস পড়বে। তাদের ড্রেস তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্য কারোর এক্ষেত্রে কিছু করার নাই।" সাথে সাথে পাগল জনতা তাদের প্রিয় অভিনেতাকে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবীতে চিল্লাপাল্লা শুরু করছে। তারপর ব্যারিস্টার মইনুল কোন নারী সাংবাদিককে যেন চরিত্রহীনা বলেছিল। সাথে সাথে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ানোর দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল।
কোন ব্যক্তি ( সুশান্ত পাল বা ওমর সানি বা মোশারফ করিম ) যদি কোন সম্প্রদায়, কোন প্রতিষ্ঠান বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ধর্ম বা আপনার বাবা মায়ের অবমাননা করে তবে উক্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা চাইতে না বলে আগে কারণ জানতে চাইতে হবে যে কেন তার কাছে অমুক সম্প্রদায়কে বা প্রতিষ্ঠানকে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে বা ধর্মকে বা আপনার বাবা মাকে অবমাননার যোগ্য মনে হল ?
কিন্তু আফসোস যে কেউ কারণ জানতে চায় না। ... Nobody wants to know why ?