ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।
ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। আসলে কিছু কথা আছে যেগুলো ইউনিভার্সাল ট্রুথ বা চিরন্তন সত্য। এমন কথার আবেদন কখনও হারায় না। যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে এসব কথার বাস্তবতা সামান্য পরিমান ক্ষীণ হয়েও যায় না। লাইন দুইটা হচ্ছে-
অতি বড় হয়ো না, ঝড়ে ভেঙ্গে যাবে
অতি ছোট হয়ো না, ছাগলে মুড়ে খাবে।
মানুষ অতি বড় কখন হয়? এর উত্তর হচ্ছে- যখন সে নিজেকে অনেক বেশি জ্ঞানী ভাবে। অনেক বড় মনে করে। অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং বিশেষ একজন হিসেবে কল্পনা করে। জ্ঞানে, সম্মানে, ধনে, গুণে, ঐশ্বর্য্যে, মর্যাদায়, জনপ্রিয়তায়, লোকবল, বংশ পরিচয়, দৈহিক সৌন্দর্য্য - ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে যখন নিজেকে সেরা মনে করে, শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করে এবং অন্যদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা শুরু করে, হেয় জ্ঞান করে অন্যদের অথর্ব এবং অপদার্থ ভাবতে শুরু করে - মূলতঃ তখন থেকেই তার অতি বড় হয়ে ওঠার কিচ্ছাটা শুরু হয়। আর এর প্রকাশ ঘটাতে শুরু করে দাম্ভিকতাপূর্ণ কথাবার্তা এবং অহঙ্কারমূলক কাজকর্মের মাধ্যমে।
অহংকারের অর্থ হচ্ছে নিজেকে অন্যের চেয়ে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে নিজের তুলনায় হেয় ও ঘৃণ্য মনে করা। হাদীসে এর জন্যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তাআলা ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন যে, নম্রতা অবলম্বন কর। কেউ যেন অন্যের উপর গর্ব ও অহংকারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারও উপর যুলুম না করে।” -মুসলিম ২৮৬৫
অন্য হাদীসে এসেছে, তোমাদের পূর্বেকার জাতিদের মধ্যে কোনো এক লোক দুখানি চাদর নিয়ে গর্বভরে চলছিল। এমতাবস্থায় যমীন তাকে নিয়ে ধ্বসে গেল, সে এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত এর মধ্যে ঢুকতে থাকবে। -বুখারী ৫৭৮৯, মুসলিম ২০৮৮
কুরআনুল কারিমের একটি আয়াতের উধ্বৃতি দিয়ে সমাপ্তি টানতে চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ইরশাদ করেন-
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا
পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না। -সূরা আল ইসরা, আয়াত ৩৭
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কত চমকপ্রদ কথামালা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন! কুরআনুল কারিমের ভাষার এমন অবাক করা সৌন্দর্য্য অবলোকন করে, সত্যিকারার্থে আশ্চর্য্য না হয়ে উপায় থাকে না। আলোচ্য আয়াতটিতে শব্দচয়নের দিকে যদি একটু লক্ষ্য করি, হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যায়। আহ! কতটা অসাধারণ মহাজ্ঞানী আল্লাহ জাল্লা শানুহুর ঐশীবানীর অনুপম ভাষাশৈলী! পড়লেই আবেগতাড়িত হতে হয়। অন্তর ছুঁয়ে যায়। হৃদয়ের গহীনে স্পর্শ করে। বুকের ভেতরটা নড়েচড়ে ওঠে। নিজের অজান্তে অকপটেই মন বলে দেয় - এত সুন্দর বাণী মহান স্রষ্টা ব্যতিত আর কার হতে পারে! এমন অদ্ভূত সুন্দর দৃষ্টান্ত আর কার দ্বারা দেয়া আদৗ কি সম্ভব! সুবহানাল্লাহ। সুবহানাল্লাহি বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযিম।