somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেকালের কথা ( ৪র্থ পর্ব )

১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর সমন্ধে যদি কোন কথা ঠিক করে বলা যায় তবে সেটা হল, ‘‘পৃথিবীকে এখন যেমন দেখছো পৃথিবী চিরকাল তেমন ছিল না।’’ কিছুদিন আগে আমরা পৃথিবীতে ছিলাম না। একথাও নিশ্চিত যে কিছুদিন পর আমরা কেউই পৃৃথিবীতে থাকব না। এই যে ঢাকা শহর, পাঁচশ বছর আগে এ শহর কোথায় ছিল ?? এখন গুলশান বনানীর যেসব জায়গায় সুন্দর সুন্দর বাড়িতে ধনী ব্যক্তিগণ থাকে, কয়েকশ বছর আগে সেখানে কুমিরেরা রোদ পোহাত আর বাঘেরা শিকার খুঁজে বেড়াত। তোমরা শুনলে আশ্চর্য হবে যে, হিমালয় পর্বতমালায় এমনসব জন্তুর চিহ্ন পাওয়া গেছে যারা সমুদ্রে থাকে। যদি এটা সত্যি হয় তবে নিশ্চিত ওখানে একদা সমুদ্র ছিল। আবার উত্তর মেরুতে এমন কিছু নিদর্শণ পাওয়া গেছে যাতে মনে হয় কোন এককালে সেই ঠান্ডার দেশ আমাদের দেশের মতই গরম ছিল। যেখানেই যাও সেখানেই এমন দেখবে। ঠান্ডা দেশ এককালে গরম ছিল, গরম দেশ এককালে ঠান্ডা ছিল। ঐ যে উচু পর্বত, সমুদ্রের তলদেশে হয়ত তার জন্ম হয়েছিল। আর ঐ যে সমুদ্র দেখছ, এককালে সেখানে হয়ত কোন দেশ ছিল। জন্ম থেকে আজ অব্দি পৃথিবীর যে কত পরিবর্তন হয়েছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না।


৩৫৯ মিলিয়ন বছর আগে স্থলভাগের বেশীরভাগ জায়গাই আদ্র ছিল। বায়ুমন্ডল ছিল উষ্ণ। স্যাতস্যাতে গরম মাটি পেয়ে গাছপালা খুবই বেড়েছিল। তখনকার বনগুলোর মত গভীর বন আজকাল আর দেখা যায় না। গাছগুলোর একেকটা ৩০-৪০ ফুট থেকে ১০০ ফুট উচু হত।
কিন্তু আজকালককার গাছের তুলনায় সেসকল গাছ অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর ছিল। এগুুলোর না হত ফুল, না হত আম-লিচুর মত মিষ্টি ফল, ভিতরে কাঠও ছিল না। বাস্তবিক এসব বন নিতান্তই অদ্ভূত ছিল। ফুুল নাই, ফল নাই, পাখির গান নাই, গাছগুলো খালি ছাল আর ছোবড়া; তাতে চড়ে যে একটু আনন্দ করব সেই জো নাই। এসব গাছপালা একটার পর একটা মরে গিয়ে জমতে শুরু করেছিল। মাটি নিচু হয়ে যাওয়ায় একটা বন হয়ত জলে ডুবে গেল। ঐ জল থিতিয়ে পলি পড়ে সেই বন ঢাকা পড়ল। তখনও সেইসব ব্যকটেরিয়ার আবির্ভাব ঘটে নাই, যেগুলো মৃত জীবদেহ পঁচাতে পারে। কাজেই মৃত গাছগুলো না পঁচে জলের নিচে একটা পুরু আস্তর তৈরি করল। সময় পরিক্রমায় সেই জায়গা উচু হওয়াতে পুনরায় মাটি শুকনো হল, সেই মাটির উপর আবার বন হল। ঐ বন আবার ডুবল। এভাবে একেক থাক বন ও একেক থাক মাটি ক্রমে সঞ্চিত হল। লক্ষ বছর ধরে প্রচন্ড চাপ এবং তাপে ঐসকল গাছপালা কয়লায় পরিণত হয়ে গেল।


কয়লা তৈরিতে প্রচুুর কার্বন ব্যবহৃত হওয়ায় বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হবার মত পর্যাপ্ত কার্বন বায়ুমন্ডলে ছিল না। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েেছিল। আর অক্সিজেন বেড়ে যাওয়ায় পোকামাকড় ও ফড়িং বেশ বড় আকারের হত।


তখন কিছু কিছু উভচর প্রাণী সাগরের পরিবর্তে স্থলভাগে ডিম পাড়তে শুরু করল। এভাবেই একসময় সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের উদ্ভব ঘটেছিল। ৩০ কোটি বছর আগে উভচরদের যুগ শুরু হয়েছিল। জীবন সৃষ্টি হয়েছিল জলে কিন্তু একসময় কিছু জলচর প্রাণী সাহস করে ডাঙায় উঠে আসে। এই সাহসী প্রাণীদের মধ্যে টিকটলিক অন্যতম।


শুরুর দিকে সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীরা প্রায় একরকম ছিল। কিন্তু উভচরেরা যা পারেনি তা সরীসৃৃপরা করে দেখাল। সরীসৃপরা পুরোপুরি জলের মায়া কাটিয়ে ডাঙায় উঠে আসতে পারল। কেন পারল ? তাদের ডিমগুলোর কারণে। সরীসৃপদের ডিমগুলোর উপর শক্ত খোলস, উভচরদের ডিমগুলোর মত নরম তুলতুলে নয়। তাই ডিম পাড়ার জন্য সরীসৃপদের জলে ফিরে যেতে হত না। ডাঙার উপরই ডিম পেড়ে এতে তা দেয়া যায়।


ডার্টাশায়ারের পাথরে অনেক প্রাচীণ জন্তুর হাড় পাওয়া যায়। ওসব হাড় খুঁজে বের করে বিক্রি করলে যে টাকা আসে তা দিয়ে অনেকের সংসার চলে। ১৮১১ সালের একদিন এক মেয়ে প্রাচীন জন্তুর হাড় খুঁজতে গিয়ে হটাৎ দেখল, একটা জন্তুর হাড় পাহাড়ের গা থেকে খানিক বের হয়ে আছে। আরেকটু খুঁড়ে দেখল ঐ হাড় এক বিশাল জন্তুর কঙ্কালের অংশ। তখন সে ঐ স্থানের সমস্ত আবর্জনা খুড়ে পুরো কঙ্কালটা বের করল। তারপর মুটে ডেকে পাথরসুুদ্ধ সেই কঙ্কালটাকে খুঁড়ে তোলা হল। এই কঙ্কাল ত্রিশ ফুট লম্বা ছিল। তারপর এ জাতীয় জন্তুর আরো কঙ্কাল পাওয়া গেল। এদের নাম দেয়া হয়েছে ইকথিয়োসোরস। মাছের মত হাড় এবং কুমিরের মত মাথাবিশিষ্ট এই দানব যখন পৃথিবীতে ছিল, তখন এর সমকক্ষ আর কোন জন্তু ছিল না। এরা এদের ২ ইঞ্চি লম্বা দেড়শ দাঁত দিয়ে যাকে একবার ধরত, তার আর রক্ষা ছিল না।


ইকথিয়োসোরস তার সময়ের জন্তুদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক ছিল ঠিকই, কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য জন্তুর কথা বলতে গেলে প্লিসিয়োসোরাসের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। প্লিসিয়োসোরাসগুলো ১১ ফুট লম্বা হওয়ায় ইকথিয়োসোরসের মত অত ভয়ানক ছিল না। প্লিসিয়োসোরাসের কঙ্কাল প্রথম আবিস্কার হয় ১৮২৩ সালে ইংল্যান্ডের লিয়াস গ্রুপ নামক স্থানে। এর মাথা ছোট এবং গলা লম্বা। মুখের উপরের পাটিতে ২৫ টি এবং নিচের পাটিতে ২৪ টি দাত ছিল। এই অদ্ভূত দর্শণ জীব নাকি এখনও স্কটল্যান্ডের নেস নামক হ্রদে দেখা যায়, যা ‘‘লকনেস হ্রদের জলদানব’’ নামে খ্যাত।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:৫৭
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×