আমরা ফোন বাজলে প্রথমে বলি হ্যালো। প্রশ্ন হল হ্যালো আসলে কি?
কিছু মানুষ বিশ্বাস করতো হ্যালো হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এর প্রেমিকা। এই নিয়ে বেশ কিছুদিন ফেইসবুক পোষ্ট ভাইরাল হচ্ছিলো সেটা এরকমঃ-
"Hello" একটা মেয়ের নাম ৷ পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো (Margaret Hello) তিনি আর কেউ নন- তিনি বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এর গার্লফ্রেন্ড৷ গ্রাহাম বেল হলেন টেলিফোন আবিষ্কারক৷ আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম যে কথাটি বলেন তা হলো
"হ্যালো"
সাথে জুড়ে দেওয়া হত দুজনের যুগল ছবি, সাদাকালো।
এই্ উদ্ভট পোষ্ট ফেইসবুকে ভাইরাল হতে দেখে বিরক্ত হতাম, তবে কোন রিএ্যাকশন দেখাতাম না, জাস্ট মুছে ফেলতাম। কিন্তু অবাক কান্ড এই উদ্ভট পোষ্ট প্রচুর জ্ঞানী-গুনিজনেরাও ভাইরাল করেছেন, আবার বিভিন্ন গ্রুপ, সাহিত্য গ্রুপ ইত্যাদিতে পাঠিয়েছেন করেছেন, এপ্রুভ হয়েছে এবং আমরা এই বিশেষ জ্ঞান লাভ করেছে।
বেল এর বান্ধবীর নাম ম্যাবেল হাবার্ড, ওনাদের বিয়ে হয় ১৮৭৭ সালে। টেলিফোন আবিষ্কার/পরীক্ষা ইত্যাদি শেষে এর পেটেন্ট পায় ১৮৭৬ সালে।
সত্যি কথা বলতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল কখনো হ্যালো শব্দটি ব্যবহারই করেন নি। প্রথম কল করেছিলো বেল তার এ্যাসিস্টেন্টকে যে ছিলো পাশের রুমে, বেল বলেছিলো, "Come-here. I want to see you."
হ্যালো শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ওলা (Hola) থেকে যার আভিধানিক অনুবাদ "stop and pay attention বা থামো এবং মনোযোগ দাও"
আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোনে এ্যাহয় (Ahoy) বলতে পছন্দ করতেন। বাস্তবে এটা জাহাজের নাবিকেরা আর জলদস্যুরা বলতো।
বেল এর এ্যাহয় কে Misheard করেছেন বা উল্টো শুনেছেন আরেক বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। তিনি এ্যাহয়কে শুনেছেন হ্যালো। এডিসন ছিলেন কানে খাটো। আপনারা নিশ্চই জানেন এডিসন কিভাবে কানে খাটো হলেন! একই বছর (১৮৭৭) এডিসন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট এণ্ড প্রিন্টিং টেলিগ্রাফ কোং অফ পিটস্বার্গ (USA) এর প্রেসিডেন্ট ডেভিড-কে চিঠি পাঠিয়েছিলেন যার বাংলা অনুবাদ হতে পারে এরকম,
বন্ধু ডেভিড,
আমার মনে হয়না বেল এর এই শব্দ, হ্যালো, এটা সঠিক নয়। এই শব্দ শুধু ১০ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত শোনা যায়. তুমি কি বল?
প্রকৃতপক্ষে গভীর সমুদ্রের মাঝখানে, বিশেষকরে রাতে আঁধারে, এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজে খালি গলায় ডাকার সময় এ্যাহয় (‘Ahoy! Hoy!’) শব্দটি ব্যবহার করে কুশলাদি জানার জন্য।
টেলিফোনের আবিষ্কর্তা আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল এই এ্যাহয় শব্দটিই ব্যবহার করবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু আমজনতা এটা পছন্দ করলোনা। বেল এর অনুমতিক্রমে বিজ্ঞানী টমার আলভা এডিসন যখন এই টেলিফোন সার্ভিসের গবেষণা, উন্নয়ন, পরির্তন, পরিবর্ধন ইত্যাদি করছিলেন তখন তিনি প্রস্তাব করেন *‘Halloo!’ (হ্যালু) আমজনতা এই হেলুউউ কে প্রথমে হেলো, পরে হ্যালো বানিয়ে ফেলে। (ধোন্ধা এডিসন হ্যালুউউ কই পাইলো? হেতের পুর্বপুরুষ কি নোয়াখাইল্লা আছিলো নি?)
এডিসন এই শব্দ দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য এবং শ্রোতাকে এ্যাটেনশান করার জন্য ব্যবহার করছেন। সেটা আবার বন্ধ করার দাবি করার উঠেছিলো কারন 'হ্যালো' শব্দটি তখন শিকারী কুকুরকে এ্যাকশনে পাঠানোর সময় ব্যবহৃত হত।
এরমধ্যে টেলিফোনের ব্যবহার হচ্ছিলো সর্বত্র এবং হ্যালো'র ব্যবহার হচ্ছিলো সেই সাথে। আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের প্রিয় টেলিফোন গ্রিটিং এ্যাহয় আর রইলোনা, আমজনতা টমাজ আলভা এডিসনের প্রস্তাবিত হ্যালো গ্রহন করলো। এ্যাক্সচেঞ্জ অপারেটর নারীদের বলা হত হ্যালো-গার্ল।
ব্রিটেনে হ্যালো'র বদলে ব্যবহার হত হালো (Hullo) পরে অবশ্য এখানেও সর্বত্র টেলিফোন সম্ভাষণ (বা অভিভাদন) হ্যালো হয়ে যায়।
পৃথিবী যত মডার্ণ হতে থাকে তত ভ্যারিয়েন্ট আসতে থাকে। কেউ কেউ মনে করতে পারে “হাই” (Hi) হ্যালোর প্রতিশব্দ। বিষয়টা তা না, “Hi” এর প্রচলন শুরু হয় ১৮৬২ সালের এক ক্যানসাস রেড ইন্ডিয়ানের সম্ভাষণ থেকে। অন্যদিকে এটাও মনে করা হয় মধ্যযুগিয় ইংরেজি Hy থেকে এটা এসেছে। তাই হলফ করে এটাও বলার উপায় নেই জনপ্রিয় টেলিফোন সম্ভাষণ হ্যালো শব্দটির সাথে 'হাই' এর কানেকশন কোথায়।
তবে হলফ করে এটা বলা যায় হ্যালো কারো বৌ বা গার্লফ্রেন্ডের নাম নয়।
সুতরাং, ফেইসবুক ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী হইতে সাবধান।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৩