ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ওয়েষ্টার্ণ সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন ভ্লাদিমির পুতিন। সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আমেরিকান সাংবাদিক টাকার কার্লসন। পুরো নাম Tucker Swanson McNear Carlson.
গুগল বা ইউটিউব সার্চ ইঞ্জিনে ইংরেজি t অক্ষর লিখতেই সবার আগে আসবে tucker carlson. কারন এই সেদিন, বৃহষ্পতিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তিনি ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাতকার নিয়েছেন যা প্রচারিত হয়েছে সারা বিশ্বব্যাপী। এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হবার পর হুলুস্থুল পড়ে গেছে আমেরিকা আর ব্রিটেনে সেই সাথে আমেরিকান ঘরানার প্রতিটি রাষ্ট্রে। হঠাৎ করেই ভ্লাদিমির পুতিনকে আর সুপার ভিলেন বলে চালানো যাচ্ছেনা।
কে এই টাকার কার্লসন যাকে স্বয়ং ভ্লাদিমির পুতিন মুখোমুখি ক্যামেরায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন দুই ঘন্টা সাত মিনিট উনিশ সেকেন্ড?
তিনি একজন আমেরিকান সাংবাদিক যিনি আমেরিকান ন্যাশণালিস্ট এবং ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত এবং মনে করা হয়ে থাকে আমেরিকান রাজনীতিতে রিপাবলিকান সমর্থন করেন কারন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিটি শো খুব মনযোগ দেখতেন। আমেরিকার বিখ্যাত এবং প্রভাবশালি ফক্স টেলিভিশনের তুখোড় টক-শো এংকর, সাংবাদিক টাকার কার্লসন সমগ্র আমেরিকা এবং সারা বিশ্বের অতি পরিচিত মুখ এবং জনপ্রিয় কারন তিনি সব সময় নিজেকে খাঁটি আমেরিকান হিসেবে দেখিয়ে এসেছেন এবং সেই সাথে আমেরিকান সরকারের কঠোর সমালোচনা করে এসেছেন এই বলে, আমেরিকান সরকার মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে কিন্তু সারা বিশ্বের (প্রায়) প্রতিটি মানবিক বিপর্যয়ের হোতা খোদ আমেরিকানরাই। টাকার কার্লসন আমেরিকার নাগরিকদের জন্মগত অধিকার “ফ্রীডম অপ স্পীচ” বিষয়ে সোচ্চার, তিনি মনে করেন আমেরিকান সরকার, পলিটিশিয়ানরা এবং সিআইএ তার দেশের নাগরিকদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে বছরের পর বছর। আমেরিকার হাইয়েস্ট রেটেড সাংবাদিক, ফক্স টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় এংকর টাকার কার্লসনকে গত বছর এপ্রিলে স্যাক করা হয় এবং এর কারন যে কেউই সহজে অনুমান করতে পারে। এর পর থেকে টাকার ফক্স নিয়মিত টুইটারে (বর্তমানে ইলোন মাস্ক এর ‘এক্স’) সরব এবং বিশ্বব্যপী জনপ্রিয়।
ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎকার শুরুর আগে তিনি একটা স্পীচ দেন। সেখানে তিনি খোলাখুলি কিছু কথা বলেন যা সকলের জানা উচিত:-
আমরা এখন মস্কোতে, কিছুক্ষনের মধ্যে সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হবে। অবশ্যই এরকম একটি সাক্ষাতকার নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। আমরা এটি সম্পর্কে অনেক মাস ধরে সাবধানতার সাথে চিন্তা করেছি যে কেন আমরা এই কাজটি করছি?
প্রথমতঃ এটাই আমাদের কাজ, আমরা সাংবাদিক, আমাদের কাজ হল জনসাধারণকে তথ্য সরবরাহ করা। ২ বছর ধরে এমন একটি যুদ্ধ চলছে যা সারা দুনিয়ার চেহারা পাল্টে দিয়েছে, অথচ আমেরিকার নাগরিকদের বলা হচ্ছেনা আদতে কি হচ্ছে এখানে। ঠিক এখানে এবং এখান থেকে ৬০০ মাইল দুরে ইউক্রেনে কি ঘটছে সেই বিষয়ে আমাদের (আমেরিকান নাগরিকদের) কোন ধারনাই নেই! আমেরিকান সরকারের উচিত আমাদের সব জানানো। অথচ দেশের মানুষ উপলব্দি করতেই পারছেনা এইখানে কি পরিমান ব্যয় হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয। হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তরুন ইউক্রেনীয়দের পুরো প্রজন্ম এবং ইউরোপের বৃহত্তম দেশটি জনশূন্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো আরো গভীর, এই যুদ্ধ সারা দুনিয়ার চেহারা পাল্টে দিয়েছে এবং সামগ্রীকভাবে গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী গত ৮০ বছর ধরে পশ্চিমারা নিশ্চিন্তে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি উপভোগ করে আসছিলো, তা এখন শেষ হতে চলেছে। সেই সাথে মার্কিন ডলারের আধিপত্য। এগুলো (শ্রেফ) ছোটখাট পরিবর্তন নয়, এটা ইতিহাসের পরিবর্তন। এই ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের (নাতি-নাতনীদের) জীবনযাপনকে সংজ্ঞায়িত করবে।
পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ এসব ভালভাবে বুঝতে পারে; তারা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পায়। মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়ার কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যে ভবিষ্যতের চেহারা কেমন হবে! এতদসত্বেও, ইংরেজীভাষী দেশগুলোর জনসাধারণ বেশীরভাগই অসচেতন, এই সকল বিষয়ে একেবারেই অজ্ঞ। তারা মনে করে কিছুই হয় নি, সব ঠিক আছে।
কারন কেউ তাদের সত্যিটা বলেনি। ইংরেজীভাষী দেশগুলোর মিডিয়া করাপ্ট, দুর্নীতিগ্রস্থ, নীতিবর্জিত। তারা তাদের পাঠক আর দর্শকদের সাথে মিথ্যাচার করে আসছে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা তা করে। উদাহরনস্বরূপ, যেদিন থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হয় আমেরিকান মিডিয়া অসংখ্য লোকের সাথে কথা বলেছে এবং তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে অসংখ্যবার দেখা করেছে, অসংখ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আমরাও যেলেনস্কির (ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট) সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি, আশা করছি উনি সাক্ষাৎকার দেবেন। কিন্তু যেলেনস্কি আমেরিকাতে যতগুলো ইন্টারভিউ দিয়েছেন সেগুলো গতানুগতিক সাক্ষাৎকার ছিলনা। এগুলো ছিলো স্পেশালি ডিজাইনড পেপ-সেশন যেগুলো বিশেষতঃ যেলেনস্কির উস্কানিমূলক দাবী সৃষ্টি যার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে নিজেকে সরাসরি জড়াবে এবং যুদ্ধের জন্য অর্থ যোগাবে। এগুলোকে সাংবাদিকতা বলেনা, এটা আমেরিকান সরকারের প্রপাগাণ্ডা - কুৎসিৎ ধরনের মার্কিন রাষ্ট্রীয় প্রপাগাণ্ডা যা নরহত্যা করে, মারা যায় নিরপরাধ মানুষ।
শুধু তাই নয়, আমাদের (আমেরিকান ও তাদের মিত্র) পলিটিশিয়ান আর সকল মিডিয়া মিলে এই বিদেশী নেতা যেলেনস্কিকে এমন ভাবে প্রমোট করেছে যেন সে একটা নতুন ভোগ্যপণ্য, কনজ্যূমার ব্রাণ্ড। অথচ একটা পশ্চিমা মিডিয়া একটিবারের জন্যেও অন্য পক্ষের সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কি ভাষ্য তা জানতার দরকার মনে করেনি, তার ধারও ধারে নি।) বেশীরভাগ আমেরিকানদের কোন ধারণা নেই যে পুতিন কেন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিলো বা তার লক্ষ্যগুলি কি। আমেরিকানরা পুতিনের ভাষ্য কি, তা কোনও দিন শোনেও নি।
এগুলা ঠিক না। আমেরিকানরা যে যুদ্ধে জড়িয়েছে সে সম্পর্কে জানার সম্পূর্ণ অধিকার তাদের রয়েছে। Freedom of speech is our birthright , বাক স্বাধীনতা, এটা আমাদের জন্মগত অধিকার। আমরা যা বিশ্বাস করি তা বলার অধিকার নিয়ে জন্মেছি, যে অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না, হোয়াইট হাউসে কে বসে আছে তাতে কিচ্ছু আসে যায় না। অথচ যেভাবেই হোক তারা সেটা করার চেষ্টা করছে।
প্রায় তিন বছর আগে, বাইডেন প্রশাসন অবৈধভাবে গোয়ান্দাগিরি করে আমাদের টেক্সট মেসেজগুলো তাদের চাকর মিডিয়াদের দিয়ে দেয়। তারা এসব করেছিলো যাতে পুতিনের ইন্টার্ভিউ আমরা না নিতে পারি। আমি নিশ্চিত একই কাজ তারা এবারও করেছে। কিন্তু যেভাবেই হোক এবার আমরা মস্কো চলে এসেছি।
ভ্লাদিমির পুতিনকে ভালোবেসে আমরা এখানে আসিনি। আমরা এখানে এসেছি কারন আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি, এবং আমরা চাই আমাদের দেশ সব সময় থাকুক সমৃদ্ধ এবং উম্মুক্ত। এখানে আসার সকল খরচ, ব্যয় আমরা বহন করছি। কোন সরকার বা দলের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে এখানে আসিনি। আমাদের সাক্ষাৎকার দেখার জন্য কাউকে পয়সাও খরচ করতে পারবে না। যে কেউ এই সাক্ষাৎকারের সম্পূর্ণ ভিডিও (unedited) বিনামূল্যে দেখতে পারবেন আমাদের ওয়েবসাইটে: tuckercarlson.com.
ইলন মাস্ক কথা দিয়েছে যে সে তার প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এই সাক্ষাৎকার আপলোড করার এটাকে দমন কিংবা ব্লক করবেনা। আমরা সেজন্য তার কাছে কৃতজ্ঞ।
অন্যদিকে, পশ্চিমা সকল মিডিয়া তাদের সবটুকু দিয়ে আমার এই ভিডিও সেন্সর করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কারন এটাই তাদের কাজ। এসব তথ্য তারা নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা তাই তারা ভয় পায়।
কিন্তু আপনাদের এতে ভয় পাবার কোনও কারন নেই। এই সাক্ষাৎকারে পুতিন যা বলেছে, আপনাকে তার সাথে একমত হতে আমরা বলছিনা।
তবে আমরা আপনাকে এই সাক্ষাৎকারটি দেখার জন্য অনুরোধ করছি। আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব জানা উচিত। এতে করে একজন মুক্ত নাগরিক হিসেবে, দাস হিসেবে নয়, আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবেন।
- ধন্যবাদ।
আমি দক্ষ অনুবাদক নই। অনুবাদে যদি ভুল ভ্রান্তি থাকে অনুগ্রহ করে ক্ষমা করবেন এবং আমাকে কমেন্টে শুধ্রে দেবেন। যত দ্রুত সম্ভব এডিট করে দেব।
সাক্ষাৎকারের সম্পু্র্ণ ভিডিও এখানে দেখুন:-টাকার কার্লসনের সাথে ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাতকার
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪