ছোট বেলায় গরু কেনা হত ঈদের কম হলেও তিন দিন আগে। গরু একটা বাড়িতে ঢুকলেই হত কার গরু কার কি দেখার সময় ছিল না। গরু এনেছে, গরু এনেছে বলতে বলতে আমরা বাচ্চারা পড়ি মরি করে দৌড়। আশেপাশের বাড়ির কলাগাছগুলো ন্যাড়া করে কলাপাতার স্তূপ করতাম গরুর সামনে। গরুকে একটা কলাপাতা খওয়ানোর সুযোগ পেলে গর্ব হত। মায়েরা রাতের বেলা জমিয়ে রাখা ভাতের মাড় নিয়ে গরুর সামনে জর হয়ে আলাপ সালাপ করতেন। তখন দিনের প্রধান কাজ ছিল গরুর সামনে বসে তার রূপ দেখা। মাঝে মা এসে খাবার জন্য ডেকে নিয়ে গেলেও কষ্ট হত। একটা হাম্বা ডাক শোনার আমরা উৎকণ্ঠিত হয়ে আপেক্ষা করতাম। কুরবানির গরু তখন যতটা যত্ন পেত তা দেখলে বোধয় এখনকার নতুন জামাইরা গরু হয়ে জন্মালোনা বলে আফসোস করত। ঈদের আগের দিন রাতে আমরা চাপা কান্নায় বালিশ ভেজাতাম। সকালে আবার নিষ্ঠুরের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাটাকুটি দেখতাম। প্রথম রান্না গোশতের টুকরো হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে খেতাম। কুরবানি দিক না দিক সবার ঘরেই গোশত পাঠানো হত।
কাল কুরবানি। বিকেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করে শুনলাম গরু নাকি কেনা হয়েছে। কত দাম, চেহারা সুরত কেমন, কালো না ফরসা, স্লিম না হেলদি এখনও দেখিনি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য এবার লাস্ট মোমেন্টে উনাকে আনা হয়েছে। সুযোগ হলে একবার দেখা করে আসব, না হলে এই জনমে আর হয়ত দেখা হবে না। কাল দুপুর নাগাদ দেখব বাবা কোথাও থেকে গামলা গামলা গোশত আনবেন। ছোট বোনটাকে ফকির মিসকিনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মা ফ্রিজ গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে পরবেন। দুপুরে বিকেলে গোশতের আইটেম রান্না হবে। আমরা মুভি দেখতে দেখতে কিংবা ফেসবুকিং করতে করতে সেইসব খাব আর স্ট্যাটাস দিব।
দুইটাই ঈদের গল্প। কিন্তু , ঈদে ঈদে আকাশ পাতাল তফাৎ।
লেখাটি আমার ফেসবুকে পূর্ব প্রকাশিত।