ভূত অবিশ্বাস করি না। আবার কোন ঘটনার দায় চট করেই ভূতের ঘাড়ে চাপিয়ে দেই না। কিছু ঘটনাতো থেকেই যায় ব্যাখ্যার আড়ালে।
একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। বিশ্বাস করা না করা যার যার ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
নানু বাড়িতে অনেকদিন পর পর সবাই একসাথে যেতাম। ফাইভ কি সিক্সে পড়ি তখন। সব ভাইবোনরা মিলে উঠোনে খেলছি। অনেক্ষন দৌড়ঝাঁপ করে সবাই মোটামুটি ক্লান্ত। কে যেন বলল, লুকোচুরি খেলা হোক। যেই কথা সেই কাজ। কপাল গুনে আমি চোর। নিমেষের মধ্যে কে কোথায় লুকিয়ে পড়ল। আমি খুঁজতে শুরু করেছি। বাগানের মধ্যে একটা জায়গায় আমাদের পারিবারিক কবরস্থান। কখন সেখানে চলে এসেছি টের পাইনি। কবরস্থানের বেড়া জায়গায় জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। ঝোপ জঙ্গলের কারনে কবর খুঁজে পাওয়া কষ্ট। হঠাৎ ঝুপ করে আমার এক পা একটা গর্তের মধ্যে ঢুকে গেল। তখনও আমার হুঁশ হয়নি আমি কবরস্থানে। ততক্ষনে দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। আমি পা টেনে তুলতে পারছি না। কোথাও আটকে গেছে। বসে ঝোপঝাড় সরিয়ে দেখার চেষ্টা করছি ঘটনা কি?
হাতে শক্ত কি একটা ঠেকল। তুলে চোখের সামনে ধরলাম। চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি। একটা মানুষের হাড়। আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল। শুনতে পাচ্ছি আজান দিচ্ছে। আমি পড়িমরি করে দৌড়। আমার চেনা সবকিছু, কিন্তু কেন যেন আমি বের হতে পারছি না। অনেকক্ষণ ধরে দৌড়েও বাড়ির উঠোন চোখে পড়ে না। পেটের ডান দিকে ব্যাথা শুরু হল। আমি বসে পড়লাম। কুল কুল করে ঘামছি। হঠাৎ মনে হল মাথার পেছন দিকে কে যেন শক্ত কিছু দিয়ে বাড়ি দিল। আমি ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
পরে শুনেছি, সবাই আমাকে খোঁজাখুঁজি করছিল। আমার চিৎকার শুনে কয়েকজন আলো নিয়ে কবরস্থানের দিকে আসে। বাড়ির কুকুরটাও সাথে ছিল। খুব জোরে ডাকাডাকি করছিল ওটা। আমি একটা ভাঙ্গা কবরের কিছু দূরে উপুড় পড়েছিলাম। মাথার পেছন দিকটা ফুলে উঠেছিল।
ভয়াবহ জ্বর এল রাতে। ঘুমের ঘোরে বার বার চিৎকার করেছি আর আঙ্গুল দিয়ে কি যেন দেখিয়েছি। সকালে মসজিদের ইমাম সাহেব এলেন, ডাক্তার এলেন। কয়েক দিন পর একটু সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে ঢাকায় চলে আসি।
ভয় পেয়ে বেহুঁশ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু মাথায় বাড়ি খওয়ার কোন যুক্তি পাইনি। বড় কোন গাছ ছিল না ওখানে। সবই ঝোপঝাড়। এখন মনে হয় ছোট ছিলাম বলে হয়ত ভালোভাবে খেয়াল করিনি। হতে পারে ব্যাথাটা আগে পেয়েছি।
থাকুক এটা অস্পষ্ট। সব কিছুর ব্যাখ্যা দাড় করালে আর ভূতের গল্প পাব কই?