somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালাম্মা এবং..।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাকিব বহু কষ্টে দৌড়ঝাপ করে এসে বাসটা ধরতে পেরেছে। দুটো সিট খালি। তাড়াতাড়ি গিয়ে জানালার পাশেরটায় বসে পড়ল। হুড়মুড় করে লোক উঠছে। কিছুক্ষন পর উঠলে আর বসে যাওয়া লাগতো না। হ্যাঙ্গারের মত ঝুলতে ঝুলতে আর ঠেলা ধাক্কা সামলাতেই খবর হয়ে যেত।
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে খালাম্মা টাইপের মোটাসোটা এক মহিলা ধপ করে এসে পাশে বসলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই টের পেল সাকিব, তার সাধের বাগানে ঢুকে গরু খেতে শুরু করেছে ঘাস...। খালাম্মার আবার সামান্য গল্পগুজবের অভ্যাস। সাকিবকে পেয়ে উনি মনে হল ভীষণ খুশি। একটা পান গালে দিয়ে শুরু করলেন-- কি করে গত পরশু তার তিন বছরের নাতনি ফ্রিজ খুলে ডিম বের করে ফেলল সেই কাহিনি।
কথার সাথে সাথে ভক ভক পানের গন্ধ বেরুচ্ছে সেই সাথে ছিটকে আসছে পান সুপারির চর্বিত কণা। বাড়তি পাওনা হিসেবে আছে ঘামের উৎকট গন্ধ। সাকিবের নাড়িভুঁড়ি উলটে আসার জোগাড়। সাকিব বসেছে জানালার পাশে। খালাম্মার স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই কিছুক্ষন পর পর তিনি নড়েচড়ে বসছেন। এবং বাসের বডির সঙ্গে সাকিবকে প্রায় লেপ্টে দিচ্ছেন। এই চিপা থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই।
অগত্যা সাকিব পান সুপারির কনাগুলো ঝেড়েমুছে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বক বক থেকে রেহাই পাবার ব্যর্থ চেষ্টা করলো। কানে ইয়ারফন লাগাতে দেখে খালাম্মা জিজ্ঞেস করলেন “কি শুনতাছ বাবা?” সাকিব শুনেও না শোনার ভান করে বসে রইল। খালাম্মা জোরে আবারও জিজ্ঞেস করলেন এবং তার কথার ধাক্কায় মুখ থেকে এক দলা পান সুপারি বেরিয়ে এলো। তাড়াতাড়ি ইয়ারফোন খুলে সাড়া দিল সাকিব। আরেকটু হলে মনে হচ্ছে পান সুপারির বন্যায় ভেসে যেতে হবে।
“বাবা ইডার মইদ্যে খবর কয় না?”
মেনটস ছাড়াই বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে উঠল সাকিবের মাথায়। খবর শুনতে দিলে যদি জ্বালা খানিকটা উপশম হয়।
“জি খালাম্মা আপনি শুনবেন?”
“হ বাবা দেও ইট্টু শুনি। দেশ বিদেশের খবর রাখন দরকার।“
একটা খবর চ্যানেল সেট করে দিয়ে সাকিব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু আশার গুঁড়ে বালি। কিছুক্ষন পর পর খালাম্মা চেঁচিয়ে উঠছেন। “ মার শালা শয়তানের ছাও। মাইরা হাড্ডিগুড্ডি এক কইরা দে। বদের বদ। দেকছনি কারবারডা করছে কি? এমনে খুন কইরা ফালাইলো”। আশে পাশের যাত্রীরা বিরক্ত চোখে তাকাচ্ছে। খালাম্মার সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, বোঝা গেলো তিনি মনোযোগ দিয়েই খবর শুনছেন। তার কিছু পরে খালাম্মা আবার চিকন তীক্ষ্ণ গলায় গান গেয়ে উঠলেন “ পাগল মন মনরে হুম হুম হু......”। কে জানত এই মহিলার সুর বোধ এতো তীব্র হবে।
এদিকে গাড়ি এগুচ্ছে পিঁপড়ের গতিতে। গুলিস্তান থেকে পিঁপড়ের গতিতে এগুতে এগুতে সে গতি শামুকের গতিতে রূপ নিয়ে মৎস ভবনের সামনে এসে হ্যাং করলো। শুরু হল নিয়মিত উৎপাত । দফায় দফায় হকার উঠছে। রুমাল নেন দশ টাকা, কি করিলে কি হয় জানতে চাইলে বই কিনুন দশ টাকা সাথে পাবেন আরও দুইটা বই ফ্রি, এই পেন্সিলটা নিতে পারেন আপনার ছোট্ট সোনামণির জন্য, এই বইটা নিলে মাত্র ত্রিশ দিনে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন পটাপট। আছে নানান ধরনের খাবার আয়োজন, বাদাম ভাজা খাইতে মজা (পচা হলেও), ঝাল মশলা দিয়ে মাখানো আম, আম খেয়ে ঝাল লাগলে আছে ঠাণ্ডা পানি, জুস, মাঠা, (এইসবের মান নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই আপনাকে দেয়া হবে না) ইত্যাদি। খবর শোনা, গান শোনা এইসব বাদ দিয়ে এবার খালাম্মার নজর গেলো খাবারের দিকে। বাদাম কিনছেন, পপকর্ন কিনলেন, আম কেনার আগেই আমওয়ালা নেমে গেলো, খেলেন নারিকেল ভাজা।
অতএব যা হবার তাই হল। বাস চলতে শুরু করার কিছুক্ষনের মধ্যে হোয়াক হোয়াক করে বমি। সাকিবের গায়ের ওপর দিয়ে গিয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বমি করছেন খালাম্মা। ধৈর্যের বাঁধ চুর চুর করে ভেঙ্গে পড়ল সাকিবের। শাহবাগ থেকে ধানমণ্ডি পনের প্রয়োজনে হেঁটেই যাবে তবু এই মুহূর্তে নামতে হবে বাস থেকে। সাকিবকে উঠে দাঁড়াতে দেখেই আরেকজন ভিড় ঠেলে সিটের দিকে এগিয়ে আসছে। একটু মুচকি হেসে বাস থেকে নেমে পড়ল সে। নেমে কিছুদূর হাটতেই সিগন্যাল ছেড়ে দিল। চোখের সামনে দিয়ে হুস করে চলে গেল বাস।
সাকিব হাঁটতে হাঁটতে মনে করার চেষ্টা করল, আজকে তার রাশিফলটা কি যেন ছিল?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×