একেবারে পিচ্চিকালে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। দুষ্ট বাচ্চাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, হাতের কাজ নির্বিঘ্নে শেষ করার জন্য মা খেলনার বদলে হাতে তুলে দিয়েছিলেন বই। কিন্তু আমার মায়ের আমও গেছে ছালাও গেছে। কারন দুষ্টুমি তো কমেই নাই, বাড়তি উৎপাত হিসেবে যোগ হয়েছে বই পড়া। বই পড়া কি উৎপাত? বই পড়তে গিয়ে যদি খওয়া ঘুম মাথায় ওঠে, চৌদ্দবার ডেকেও সাড়া না পাওয়া যায় তবে সেটা উৎপাত বটে।
একেবারে ছোট বেলায় রঙিন কার্টুন কমিকস আর পান্তাবুড়ি জাতীয় গল্পগুলো ছিল আমার প্রিয় জগত। বড়দের বই গুলোকে তখন ছাইপাশ মনে হত। জোলা আর সাত ভূত, রাক্ষস খোক্কসের গল্পের মত চমৎকার সব বই ফেলে বড়রা ওসব ছাইপাশ পড়ত বলে তাদেরকে কিছুটা বোকাও মনে হত। সেই আমি কি করে ঐ চমৎকার জগতটা ছেড়ে ছাইপাশের জগতে ঢুকে গেছি টেরই পাইনি। পড়ার বইয়ের ফাকে লুকিয়ে, বাথরুমের পানির ড্রামের ওপর বসে, স্টোর রুমে বসে কতভাবেই না পড়েছি। মা আর কাহাতক সহ্য করবেন। মাঝে মাঝে হাল ছেড়ে দিতেন। কত বই টিচারের হাতে বাজেয়াপ্ত হয়েছে সেই হিসেব এখনও মাঝে মাঝে মেলাবার চেষ্টা করি। প্রতিটা নতুন বই পড়ার মুহূর্ত, কি সেই অনুভূতি, টান টান উত্তেজনা, কি হবে, কেমন হবে শেষ পর্যন্ত। সেই সব অনুভূতির কথা মনে করে আফসোস করতেও ভালো লাগে। কেন বয়সটাকে ইচ্ছে মত থামিয়ে দেবার সিস্টেম নেই? টাইম মেশিন কেন আবিস্কার হচ্ছে না? যদি সুখের মুহূর্তগুলো আচার বানিয়ে বয়ামে ভরে রাখা যেত। মাঝে মাঝে নামিয়ে রোদে দিতাম। মন খারাপের সময় একটু করে চেখে দেখতাম। চোখ বুজে টক মিষ্টি স্বাদে অভিভূত হতাম।