আপন মানুষটা হবে আপনের মত। যার সাথে মন খুলে কথা বলা যাবে। চিন্তা করা লাগবেনা, কি না জানি ভাববে। নাকের পানি মোছার সময় বলতে হবে না, এক্সকিউজ মি। আপন মানুষটা স্যুট বুট পরে সামনে এসে দাড়ালেও আনায়াসেই বলা যাবে, '' তোমাকে এমন বোকা বোকা লাগছে কেন? দাড়াও দেখি একটা ছবি তুলে রাখি।'' আপন মানুষের সেই বোকা বোকা ছবি মোবাইলের ওয়ালপেপার হয়ে থাকে।
আপন মানুষের সামনে ভাব নিয়ে প্রাইওরিটি বজায় রাখা লাগে না। কারন প্রাইওরিটি আছে বলেই মানুষটা আপন। অন্যায় করলে ভয় হয়না অনুশোচনা হয়। দোষ স্বীকার করতে লজ্জা লাগে না, ছোট হওয়ার ভয় থাকে না। আপন সম্পর্কগুলো হয় ইগো বিহীন। মান অভিমানের পালাগুলো হয় নেহাতই ঠুনকো। এক দুইবার সরি বললেই ভেঙ্গে যায়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করার সময় মনে মনে অনেক কঠিন কঠিন কথা জমে। মানুষটা সামনে আসলে কথাগুলি এলোমেলো হয়ে যায়। রাগ পানি হয়ে যায়। রাগ ঠিকমত দেখাতে না পারায় তখন নিজের ওপরেই বিরক্ত লাগে।
মানুষটার হয়তো নীল পছন্দ। শাড়ির দোকানে গেলে তখন প্রিয় লাল রঙটা ফ্যাকাসে লাগে। পড়তে না জানলেও জবড়জং করে শাড়ি পেচিয়ে ছবি তোলার ব্যর্থ চেষ্টা শুধু সেই মানুষটার জন্য। খারাপ রেজুলেশনের ঘোলা ছবিগুলো দেখে হয়ত মুগ্ধ গলায় প্রশংসা করবে। নিজেকে তখন আয়নায় আরও একবার দেখতে ইচ্ছে হয়। কোন এক অবসর বিকেলে সেই ছবিগুলো দেখে হাসি পায়।
আপন মানুষটাকে বোঝার জন্য থিসিস করা লাগে না। মুখের দিকে তাকিয়ে খোলা বইয়ের মত পড়া যায়। কারন আপন মানুষটা নিজেকে মেকি ভাবের আড়ালে আড়াল করে রাখে না। যা কিছু ভালো যা কিছু মন্দ সব মিলিয়েই আপন মানুষ।
বর্তমান সম্পর্কগুলিতে আপন মানুষের সঙ্কট প্রকট। সম্পর্ক গুলো স্মার্টনেস খোঁজে। অভিমানী চোখের পানিতে লেপটে যাওয়া কাজলের মর্ম বোঝে না। হয় আমার ইগো, নয় তোমার ইগো নয়তো দুইজনের ইগো। হয় আমার কথা তোমার শুনতে হবে, নয় তোমার কথায় আমি চলব কেন ইত্যাদি। কথা কাটাকাটি প্রথম বাক্য থেকে তৃতীয় বাক্যে গড়ালেই ব্রেকাপ। বিয়ে গুলো তিন বছর এমনকি তিন মাসও টেকে না।
এই যুগে ফীল বোঝার টাইম নাই। এখনকার সম্পর্কে 'স্যাক্রিফাইস' খুবই ব্যাকডেটেড ওয়ার্ড। প্রফেশনাল হতে হবে। ইগো ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতে হবে। হ্যাভ টু কিপ পেস উইথ ডেভেলপমেন্ট। এখন সম্পর্কের খুনসুটিগুলোর নতুন নাম পেইন। কেউ পেইন ক্যারি করতে রাজি না। কারন হাতের কাছেই পেইন কিলার আছে। ''ব্রেকাপ।''