আমার এক বন্ধু ছিল। মামুন। ছোটবেলায় একসাথে পড়তাম। ওকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, মামুন তুই বড় হয়ে কি হবি রে ? ও বলেছে বাস ড্রাইভার। বাস চালানো কতটা রোমাঞ্চকর সেটাও দেখিয়ে দিয়েছিল। ভু উ উ ...ভু উ ... করে কিভাবে বাস চালাবে, কিভাবে মোচড় নেবে, পি পিপ করে কিভাবে হর্ন বাজবে দেখিয়েছিল। সব দেখেশুনে আমার মনে হয়েছে ড্রাইভারি বিষয়টা খারাপ না।
.
আজকে বিজয় স্মরনীর দীর্ঘ জ্যামে বসে থাকতে থাকতে মামুনের কথা মনে হল। পিপীলিকার গতিতে গাড়ি এগোয়। একটা করে গাড়ি ছাড়ে। আবার আটকে দেয়। ড্রাইভারের মেজাজ খিচড়ে থাকে। এদিক ওদিক করে আগে যাবার চেষ্টা করলে ট্রাফিক আটকায়। লাইসেন্স নিয়ে ঝামেলা, মামলা দেয়, আরও নানান কেচ্ছা কাহিনী। লাইসেন্স নেন না কেন ? জবাব, লাইসেন্স থাকলেও যা না থাকলেও তা। আটকাইলে কিছু খাবেই। অফিসের সময় পার হচ্ছে। ত্যাক্ত বিরক্ত যাত্রীরাও। হেল্পার দু টাকা বেশি নিল, কে কার পায়ে পারা দিল, আর কত পিছে চাপাবি এইসব তুচ্ছ ব্যাপারে ক্যাচাল হয়। সামনে চলে আসে রিকশা, সিএনজি। প্রাইভেট গাড়ি গুলোর উপদ্রব গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত। এই গুলো যদি মামুন তখন জানতো ওকি ড্রাইভার হতে চাইতো ?
.
একসময় হাঁটু কোমর টন টন করে। ভেতরে অস্থিরতা শুরু হয়। মনে হয় সব ভেঙ্গে চুরে গাড়িটা যদি সাঁই সাঁই করে এগিয়ে যেত। পাজেরোর ত্যাড়া ড্রাইভারটাকে যদি কষে দুই এক ঘা লাগানো যেত। কিংবা নির্বিকার ট্রাফিক পুলিশটাকে যদি আচ্ছামত রগড়ে দেয়া যেত। কিন্তু এসব কিছুই হয় না। কেউ এসব করে না। এইসব উত্তপ্ত মস্তিষ্কের শান্তনা। দুই চারটা গালি দিয়ে কিংবা হেল্পারের সঙ্গে ক্যাচাল সেরে অফিসের শান্ত কর্মচারীটি তেঁতে থাকা মেজাজ কিছুটা ঠাণ্ডা করে। শান্ত হয়ে বসে।
.
সব ড্রাইভারের দোষ। হালায় বামে দিয়া গেলে জ্যামে পড়া লাগত না। না সব দোষ ড্রাইভারের না। ট্রাফিকেরও দোষ আছে। শালা দুনিয়ার জাউরা। সিগন্যাল দিয়া ঘুমায়। সিগন্যাল ছারার কথা মনে থাকে না। না সব দোষ আবার ট্রাফিকেরও না। তাকে ভি আই পি রোড খালি রাখতে হয়।
.
আসলে সব দোষগুলো একসাথে মিলে একটা দুষ্টচক্র। এই চক্র থেকে বের হবার কোন উপায় নেই। যেখান দিয়েই বের হবার চেষ্টা করি ঘুরে ফিরে একই।
.
উপায় নেই এটা আবার কেমন কথা। বের হবার উপায় না থাকলে পুরো সিস্টেমটাই বাদ। একটা নতুন সিস্টেম লাগবে। এটাই উপায়।
.
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে ?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১