somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই মেয়েটি গল্প নয় সত্যি

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রমজান মাস ইফতারের সময়।সবাই ইফতার শুরু করে দিলো।পাশে একটি ছেলে দারিয়ে আছে আমাদের কাছে আসছে না।বয়সটা ৭-৮ হবে। আমি তাকে ডাকলাম এদিকে আয়।সে আসলো বল্লাল ঐখানে দারিয়ে আছিস কেন আমাদের সাথে ইফতার কর।
আমরা চারপাঁচ জন ছিলাম সেখােন একজন একটু রাগ হয়ে বল্লো তুই এখানে এসেছিস কেন যা এখান থেকে।ছেলেটি ভয়ে চলে গেলো।আমি বল্লাল ছুট বাচ্চা এইরকম ব্যবহার করা উচিৎ হয়নি।
ইফতার শেষে মসজিদে চলে গেলাম।মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলাম ছেলেটি মাঠের একপাশে দারিয়ে আছে।
তাকে ডেকে বল্লাল তোমার বাড়ি কোথায়।সে বল্লো ঐযে বাড়িটা দেখা যায় ঐটা আমাদের বাড়ি।তারপর বাপের নাম জিজ্ঞাসা করলাম।সবেই বল্লো।
আমি বল্লাল বাড়িতে যাও তোমার মা তোমায় খুজবে।
আমি খেয়াল করলাম তার নয়নে টলমলে পানি।জিজ্ঞাসা করলাম।
কিছু খাওনি?। না।
কেন? বাড়িতে কোন খাওন নাই।ইফতার করার লাইগা ও কিছু নাই এর লাইগা বাজারে আইছি।
তাহার এই কথাটা মনের মধ্যে দাগ কাটলো।তাহার পরিবারের অবস্থা দেখতে মন চাইলো।
তারপর আমি বল্লাল আমার সাথে এসো।কিছু চনা বোট পেয়াজো এবং কয়েকটা জিলাফি নিয়ে। তাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাড়ির দিকে চল্লাম।
রাস্তায় কিছু লোক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু কেয়ার না করে তাদের বাড়িতে গেলাম।
যাওয়ার পর দেখলাম তাহার মা বাপ দুজনেই খুব অসুস্থ। গড়ে ১৬-১৭ বছরের একটা মেয়ে আছে।
আয় রোজগার করার মতো কেউ ছিলো না।তাহার পিতা কোন কাজ কর্ম করতে পারেনা। ইজমা রুগি।শাস টানতে টানতে ধম যায় যায় অবস্তা।
তাহার মায়ের হালটা বাবার চেয়েও খারাপ।
মেয়েটা আমায় আগে থেকে চিনতো।কিন্তু আমি তেমনটি খেয়াল করিনি।বসার জন্য আমায় একটা মুরা দিলো।পরিবারটির সাথে কিছুক্ষণ আলাপ করলাম।

কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আমায় ডাক দিয়ে বল্লো ভাই এদিকে আসেন। আমি গেলাম।
আমার ভাই আপনাকে কিছু বলেছে।
কই নাতু কিছু বলেনি।
তাহলে আপনি এখানে আসলেন যে। আমি গঠনা কিছু না বলে চুপ রইলাম।আর ভাবলাম মনে হয় কোন ব্যপার আছে।
মেয়েটি বল্লো আপনি চুপ কেনো।
না এমনি।
মেয়েটি বল্লো দেখেন ভাই আমার পরিবারে আয় করার মতো কেউ নেই।এক বছর আগে স্কুল ছেরে দিয়েছি।আমি ছারা আমার পরিবারকে দেখার মতো কেউ নাই।আমিই বা কি করবো তাই ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছি।
ভিন্ন পথ মানে?
সে বল্লো দেহ ব্যপসা।
আমি নির্বাক হয়ে গেলাম।
মেয়েটি আমায় বল্লো আপনাকে আমি চিনি। আপনার সম্পর্কে আমি ভাল করে যানি।আপনি এখানে কেন।

আমি তখন লজ্জা কোথায় রাখবো কোন দিশা পাচ্ছিনা।তখন আমি নিচু কন্ঠে বল্লাল। আসলেই আমি এই ব্যপারে কিছুই জানিনা।আপনার ভাই আমায় বল্লো ঘড়ে কোন খানাপিনা নাই সবাই না খেয়ে আছে তাই আমি দেখতে এখানে এসেছি।অন্যকিছু আমি জানিনা।
আর রমজার মাস মনে করলাম যদি আমার দ্বারা কারো কোন উপকার হয় তাহলে নিজের লাভ।
আমি এই মনেতে এখানে এসেছি।
তখন মেয়েটি বল্লো কিছু লোক আমার এখানে প্রায়ই আসা যাওয়া করে।আজ কয়েকদিন যাবত কেউ আসেনা।সেই জন্যে ঘড়ে কোন খাবারের ব্যবস্থা নাই।আমার এই ছুট ভাইটাও না খেয়ে আছে।মা বাপ কোন সময়যে দুনিয়া ছেরে বিদায় নেই তাও জানিনা।আমি নিরোপায়।আমার কিছুই করার নেই।
আপনি এখান থেকে চলে যান কেউ দেখলে আপনাকে ও সন্দেহ করবে।কারো উপকার করতে এশে বদনামে পরেন আমি চাইনা।
আমি বল্লাল উপকারের কথাটি যখন এসেছে উপকার করেই যাবো ইনশাআল্লাহ।
আপনি আজ থেকে কোন খারাপ কাজ করতে পারবেন না। যদি আমার এই কথায় আপনি ওয়াদা বদ্ধ হতে পারেন তাহলে আপনার উপকার আমি করবো।
সে আমার সাথে ওয়াদা করলো আর কোনদিন কোন খারাপ পথে পা দিবে না।

তারপর আমি চলে আসলাম।
পরের দিন দুপুর বেলা তাদের বাড়িতে গেলাম।
ডাক দিলাম বাড়িতে কেউ আছেন।মেয়েটি বাহিরে আসলো।
বল্লাম গতকালের কথা মনে আছে।
হা আছে।
তাহলে নিজের উপর আস্তা হারাবেন না।আমি স্কুলের স্যারের সাথে আলাপ করেছি।আগামীকাল থেকে স্কুলে যাবেন।আর এই নেন কিছু টাকা আপাতত এই দিয়ে কস্টকরে হলেও চলেন ।আপনার নিয়ত ঠিক থাকলে আল্লাহ পাক ব্যবস্থা করবেন।

এক সপ্তাহ পর আবার তাদের বাড়িতে গেলাম।
তাহার বাবা উঠোনে রুদ পোহাচ্ছে।
বল্লাল চাচা কেমন আছেন।
আমাদের আর থাকা এই আছি আর কি।
চাচা এভাবে বলতে নেই আল্লাহ আপনাকে যেভাবেই রাখেনা কেন শুকুর আদায় করলে আল্লাহ পাক আপনার রিজিক বারিয়ে দিবে।

তারপর বল্লাম আমাদের বোনটাকে ডাকেনতো।
ডাকলে সে আসলো।একটু হাসি মুখে।
বল্লাল কিরে কেমন আছিস।
হা ভাই আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
একটা কাজ করতে পারবি।
একটু ভয়ে ভয়ে বল্লো কি কাজ ভাই।
তেমন কিছু না।দুইটা ছেলে মেয়েকে সকাল বিকাল দুই বেলা পড়াশোনা করাতে পারবি।
তখন হাসি মুখে বল্লো হা ভাই পারবো।
তাহলে আগামীকাল হতে শুরু করেদে।আর এইনে কিছু টাকা।পরিবারের জন্যে খরছ করিস।

মেয়েটা ছাত্রী হিসাবে খুবেই ভাল ছিলো।তারপর সে নিজেই আরো কিছু টিওশনি শুরু করলো।
তারসাথে নিজের পড়াশোনা ঠিকমতোই চলছে।

তারপর ২০০৮ সালে মেট্রিক পাশ করেছে। আমি তখন দেশের বাহিরে। শুনেছি বিয়ে হয়েছে একটা সন্তানও আছে।একদিন ফোনে আলাপও করেছি।
আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছে।

অসহায়ের প্রতি সহানুভূতির হাতটা একটু বারালে তাহার সারাটা জীবন সহায় হয়ে যাবে।আসুন আমরা সবাই নিজেদের একটু কস্ট হলেও নিজের জন্যে যা ভালো অন্যের জন্যে তাই দেখি।।।।।।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×