somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আখনূখ জাবীউল্লাহ
এই ব্লগে এ প্রকাশিত সকল লেখা শুধুমাত্র সাধারন মানুষের মাঝে আইনের মৌলিক বিষয়ে ধারনা দেওয়া এবং বিভিন্ন অপরাধমুলক বিষয়ে সচেতন করা। এই ব্লগে প্রকাশিত সকল কনন্টেট আইন ও আইনের শাস্তিসমুহ এবং আইনগত ব্যবস্থাগ্রহনে একজন সাধারন মানুষকে সঠিক দিক নির্দেশনা নিয়ে স

জমি নিয়ে আমাদের এত সমস্যা কেন?

২২ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের দেশে এখন বাংলা ভাষায় আইনি সচেতনতা মূলক ভিডিও এবং আর্টিকেল এতো বেশি হারে বেড়েছে যা সত্যিকার অর্থেই ফ্রিতে সরকারের জন্য বেশ উপকারী। কেননা, সরকারের কাজ কিন্তু পার্লামেন্টে বসে শুধু আইন প্রণয়ন করা নয়, পাশাপাশি জনগণকে আইন সম্বন্ধে জানানো এবং সচেতনও করা। কিন্তু, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইন প্রণয়ন তথা পাস করার আগে রিভিউ বা মতামতের জন্য যে খসড়া প্রকাশ করা হয়, সেই খসড়া কোথায় পাওয়া যায় বা কিভাবে মতামত জানানো যায়, সেটাই আমাদের দেশের ৯৯% এরও বেশি মানুষ জানে না। জানেই না যখন তখন কিসের মতামত দিবে, আমাকে বলুন?

সেক্ষেত্রে বিভিন্ন পত্রিকায় আর্টিকেল লেখার মাধ্যমে আর ফেসবুক- ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে অনেকেই ফ্রিতে আইন বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। আইনের বিভিন্ন শাখা প্রশাখার মধ্যে জমি জমা নিয়েই সবচেয়ে বেশি কন্টেন্ট পাওয়া যায় অনলাইনে। আদালতে যেমন সবচেয়ে বেশি মামলা জমি জমা নিয়ে তেমনি অনলাইনেও আইনি সচেতনতার সবচেয়ে বেশি কন্টেন্ট জমি জমা নিয়েই। তারপরও প্রতিনিয়তই জমি জমা নিয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছি আমরা সবাই এবং ভোগান্তি ছাড়ছে না আমাদের পিছু। আজ চলুন, কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো যাতে আমরা দেখার চেষ্টা করবো সমস্যা গুলো কতটা সিস্টেম্যাটিক আর কতটা আমাদের অজ্ঞতার ফলাফল।

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় করোনার মধ্যেই প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি মফস্বলে একটি জায়গা ক্রয় করে সেখানে বাড়ি করে ভাড়া দিয়ে একটা বাড়তি ইনকাম করার চিন্তা ভাবনা থেকেই আমাকে একটি জমি ক্রয় করার কথা জানালো। তিনি ওনার আরেক আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিছু জমি দেখবে বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন। পরবর্তীতে আমাকে নির্দিষ্ট দিনে ঐ জমি গুলো দেখার জন্য সাথে নিয়ে গেলেন। বলা-বাহুল্য, আমি জমি জমা নিয়ে কাজ করি এবং কাগজপত্র বুঝি বলেই আমাকে সাথে নিয়ে যাওয়া। আমার নিজেও জমি জমা দেখতে ভালো লাগে, নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় আসে। আর অন্য যেকোনো পণ্যের দরদাম করার চেয়ে জমি জমার দরদাম করার মধ্যে একটা আলাদা মজা আমি পেয়ে থাকি বলে কেউ কখনো আমাকে জমিজমা ক্রয় করতে নিয়ে গেলে আমি কখনো টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা না করে শুধু ফ্রি থাকলেই চলে যাই। যাই হোক, পরে ঐ জায়গায় গিয়ে আমরা মোটামুটি ৫ টি জায়গা দেখেছি। আপনারা যারা জমি ক্রয় করতে যান, তারাও নিশ্চয়ই একটা স্বীকার করবেন যে, আপনার যদি আগে থেকে একটি জমি ফিক্সড করা না থাকে তাহলে আপনি যত জমি দেখবেন ততই কনফিউজড হবেন। এটা ভালো লাগে তো ঐটার দাম সস্তা মনে হয়, এটা রাস্তার পাশে তো ঐটা মনোরম পরিবেশে ইত্যাদি ইত্যাদি কত ধরনের যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে মাথায় তা একমাত্র টাকা পকেটে নিয়ে জমি ক্রয় করতে গেলেই বুঝবেন। তাই, মিলিটারিতে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, যার হাতে বন্দুক কমান্ড যেন তার কাছে না থাকে। এতে চট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি যাচাই বাছাই ব্যতীত কার্যকরেরও একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার একই ব্যক্তি একই সময়ে উভয় বিষয়ে অভিজ্ঞ হওয়াও সম্ভব কম। তাই, জমি জমার ক্ষেত্রেও আপনাকে টাকা হাতে নিয়ে জমি ক্রয় করতে যাওয়াটা বোকামি। আমাদের দেশের বেশির ভাগ প্রবাসীরাই দেশে এসেই জমি ক্রয় করতে যায় আর জমি সিলেকশনে যেমন ভুল করে তেমনি এই প্রবাসীরাই মৌজা রেট বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী।

আমার ঐ আত্মীয়র মতো অনেকেই আছে কোন আত্মীয়কে বলে যে একটা জায়গা ক্রয় করতে চায়, আছে কিনা কোন জমি। তাতেই কাজ অর্ধেক শেষ। জমি ক্রয় বিক্রয়ের জায়গা ব্যতীত আর কোন জায়গায় এতো বেশি এজেন্ট আছে কিনা আমার সন্দেহ। যেখানে পেশাদার এজেন্টে টইটম্বুর, সেখানে সুযোগ পেলে সবাই হুট করে এজেন্ট হয়ে যায়। জমির মালিককে বলে দেয় যে আপনি শতাংশ প্রতি আমার জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে রাখবেন, তাহলে দেখবেন শতাংশ প্রতি আপনাকে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা যেমন গুনতে হবে, তেমনি ঐ এজেন্ট আপনাকে ঐ জমির কোন ত্রুটি নিয়ে কিছুই বলতে চাইবে না। আপনাকে বরং প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাবে ঐ জমি ক্রয় করতে; যদি আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তী কোন আইনি পদক্ষেপেও ঐ এজেন্টকে আপনি আটকাতে পারবেন না। তাছাড়া, আমি পাঁচ হাজার টাকার কথা বললাম, শহর অঞ্চলে শতাংশ বা কাঠা প্রতি লাখের উপরও এজেন্ট পেয়ে থাকে। বিশেষ করে, জমি যারা বিক্রি করবে তারা তো কোন সমস্যায় পড়ে বা অন্য কোন প্রয়োজনে পড়ে জমি বিক্রি করে, তখন তারা ঐ জমির বাড়তি মূল্য পাওয়ার জন্য এজেন্টকে বলে দেয় যে তোমার জন্য অমুক পরিমাণ থাকবে, তুমি আমাকে এই দামে বিক্রি করে দাও। আবার, যদি জমি বিক্রির তাড়া থাকে মানে দ্রুত বিক্রি করতে হবে, তখন দেখা যায় জমির বিক্রেতা এজেন্টকে বলে দেয় যে আমাকে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ করে দিলেই হবে, এর উপর তুমি যেই রেটেই বিক্রি করতে পারো, সেটা তোমার। তখন এজেন্ট মরিয়ে হয়ে উঠে ঐ জমি আপনাকে আমাকে ক্রয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা ক্রেতারা কিন্তু একটা বিষয় চিন্তা করি, এই জমি যেহেতু এজেন্টের না, তাহলে এই লোক তো আমার পক্ষেই বলছে, আমার ভালোর জন্যই বলছে। কিন্তু, আপনার ভালো আপনি ছাড়া এই দুনিয়ায় কেউই চায় না, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তাই, আপনাকে এজেন্টের কথায় জমি ক্রয় করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি। জমি সিলেকশন আপনি করবেন, জমির কাগজপত্র এবং সরেজমিনে জমি দেখার জন্য দায়িত্ব দিবেন অভিজ্ঞ আরেকজনকে আর দরকষাকষির জন্য আপনি নিজে এবং সাথে কাউকে রাখবেন। আশেপাশের কয়েকটি জমি যাচাই বাছাই করে তারপর মূল্য নির্ধারণ করবেন।

এজেন্ট অনেক সময় বলে থাকে, আরে আমি তো আছি, জমির কাগজ পত্র বা দখল নিয়ে কোন ঝামেলাই হবে না। এটা আমাদের এলাকা, আর বিক্রেতা তো আমাদেরই লোক। কোন সমস্যা হবে না। ভাই বিশ্বাস করেন, যখন সমস্যা হবে তখন সে আপনার ফোন ধরবে না। ফোন ধরলেও বলবে আমি তো এখন বিক্রেতার সাথে কথা বলি না ইত্যাদি নানা ধরনের অজুহাত দেখিয়ে আপনার দুই হাত থেকে মুক্ত হতে চাইবে। আবার, জমির রেট নিয়েও এজেন্ট নয় ছয় করবে। বলবে, আরে পাশের জমি গত মাসে আমার অমুক এই রেটে ক্রয় করছে বা বিক্রি করছে। শুধু আপনার জন্য আমি বিক্রেতা ধরে এই রেটে নিয়ে দিবো। এখন তো আবার আরেকটা ইস্যু পেয়েছে, করোনা। বলবে, আরে আপনি তো এখন ৫ লাখ করে পাচ্ছেন, করোনার আগে আপনি এই জমি ১০ লাখ দিয়েও তো পেতেন না। ভাই, আপনার নিজের বা পরিবারের কারো বিয়ের জন্য এখন যেমন শুধু ঘটকের উপর আস্থা করবেন না, তেমনি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রেও শুধু এজেন্টের উপর নির্ভর করে জমি ক্রয় করবেন না। এজেন্টের মাধ্যমে যেমন সম্ভাব্য বিক্রি হবে এমন জমির খোঁজ খবর নিতে পারেন, কিন্তু পুরোপুরি আস্থা নিয়ে সব কাজ তার উপর ছেড়ে দিবেন না। কোন প্রকার টাকা পয়সা লাগছে না অনলাইনে জমি জমা ক্রয়ের পূর্বে বা পরে আপনার করণীয় সম্বন্ধে জানতে। আপনি নিজে নিজেই জমি জমা সম্বন্ধে একটা বিশদ জ্ঞান রাখতে পারেন অনলাইনের বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখে বা পড়ে। তাই, নিজের টাকা কোথাও বিনিয়োগের আগে যেমন আপনি সর্বোচ্চ যাচাই বাছাই করবেন, জমি ক্রয়ও আপনার একটা এক ধরনের বিনিয়োগ(হোক সেটা নিজে থাকার জন্য, হোক সেটা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহারের জন্য), তাই আপনি নিজে সরাসরি সম্পৃক্ত না থেকে জমিতে বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারাবেন না।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×