কোন সরকার ভাল, কোন দল ভাল, কোন নেতা ভাল, কোন ধর্ম ভাল, এমনকি কোন ব্লগার ভাল এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কেউ একে ভাল বলবেন তো অন্যজন বলবেন ওকে। অনেক ক্ষেত্রে এ ভাল লাগা বা না লাগার কোন যুক্ত সংগত কারণই থাকে না। বেশির ভাগটাই হয় আবেগ বা অন্ধ বিশ্বাস নির্ভর। চুড়ান্ত তর্ক বিতর্কের শেষে সবাই যার যার অবস্থানে অনড়। অথবা শেষ পর্যন্ত যা এখন নাই আগে ছিল তাই ভাল ছিল বলে একটা দীর্ঘনিশ্বাস। যাক এসব ভনিতা না করে দুটো পুরানো গল্প তার সাথে কিছু পাঁচ ফোড়ন যোগ করি।
যদি প্রশ্ন করা হয় কোন সরকার ভাল ছিল অনেক তর্ক বিতর্কের শেষে অনেকেই সব সরকারের আমলেই বলেন আগের সরকারই ভাল ছিল। কেন ?
উত্তর না দিয়ে একটা গল্প বলি -এক ডাকাত সর্দার এর অত্যাচারে গ্রামবাসী অতিষ্ট। কিন্তু এই ডাকাত দলের সর্দার শুধু ডাকাতি করতো কখনও খুন, বাড়িতে অগ্নি সংযোগ বা ধর্ষণ করতো না। একদিন সর্দার খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো । তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হল এবং সে তার প্রিয় সাগরেদকে ডেকে বলল দেখ আমি মরার পর এমন কাজ করবি যেন দশ গ্রামের লোকে আমাকে ভাল বলে। সাগরেদ বললো যথা আজ্ঞা। গ্রামের লোকদের কানে এ কথা যাওয়ায় তারা উৎফুল্ল হয়ে উঠল। কদিন পর সাগরেদ গ্রামে ডাকাতি করতে এসে খুন আগ্নি সংযোগ ধর্ষন সব করা শুরু করলো। তখন গ্রমবাসীরা এক বাক্যে বললো এর আগের ডাকাত সর্দার অনেক ভাল ছিল। মৃত ডাকাত সর্দারের মনোবাঞ্চা পূর্ণ হলো।
এভাবে জনগন নতুন সরকার আসলে উৎফুল্ল হয় আর সেই সরকার আগের সরকারকে ভাল বলার ব্যবস্থা করে যায়।
আমাদের দেশে অনেক নেতা আছেন। যদি প্রশ্ন করা হয় কোন নেতা ভাল? তবে শুরু হবে চির পরিচিত কেচাল। কেউ বলবেন এ ভাল কেউ বলবেন ও ভাল। যাহোক তর্ক বিতর্ক চলার ফাঁকে আসেন একটা গল্প পড়ি.....
কোন এক গ্রামে রাস্তার উপর ছিল একটা কাঁটা গাছ। ঐ পথে যাতায়াতের সময় প্রায়ই গ্রমবাসীরদের পায়ে কাঁটা ফুটতো। সংস্কারের কারণেই হোক বা মায়ায়ই হোক বা মঙ্গল-অমঙ্গল চিন্তা করেই হোক, গ্রমবাসী কাঁটা গাছটা কাটতো না বরং ওটাকে একটু সমীহ করে চলতো। সেই গ্রামের লোকজন সহ দুই দলের রাজনৈতিক নেতা গেছেন গ্রাম ঘুরতে হঠাৎ সেই কাঁটা গাছের কাঁটা ফুটলো এক নেতার পায়ে । নেতা অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন-
কে আছো কাস্তে দিয়ে কেটে একে নির্মুল কর।
গ্রামবাসী একরকম আর্তনাদ করে উঠল।
সাথে সাথে আপর নেতা বললেন-
আহা অমন করে বলবেন না রুক্ষ জাগায় জন্মেছেতো তাই ওর স্বভাব একটু রুক্ষ। এই কে আছো ওর গোঁড়ায় এক কেজি চিনি ঢেলে দাও ওর স্বভাব মিষ্টি হয়ে যাবে।
এই নেতার আচরণ আর বিচক্ষণতায় গ্রামবাসী মুদ্ধ হয়ে গেল। নিরিবিলি জাগায় পেয়ে চিনি ঢালা নেতাকে এক সাগরেদ বলল " কয়দিন আগে তো আপনার পায়েও কাঁটা ফুটেছিল। তখন তো আপনিও গাছটা কাটতে চেয়েছিলেন। গ্রমবাসীর কি রিআ্যকশন হবে ভেবে কাটেননি। এই চান্সে তো আপনি গাছটা শেষ করতে পারতেন আপনার কোন দোষই হতো না।"
নেতা বললেন - তাতে কি আমার প্রতি গ্রামবাসী ইমপ্রেসড হতো? যাকগে তোরা এসব বুঝবি না গাছের গোঁড়ায় চিনি দিতে বলেছি তাই দে। কাঁটা গাছটির গোঁড়ায় চিনি দেয়া হলো। ক'দিন পর চিনির লোভে গাছটার গোড়ায় বিশ পিপড়া বাসা বাঁধলো এবং তিল তিল করে কামড়ে গাছটিকে মেরে ফেলল।
এক সাগরেদ গাছটির অবস্থা দেখে বুঝলো নেতা কি সুক্ষ চাল চেলেছেন- সাপও মরলো সুনামও হলো। তাই সবাই নেতা হতে পারেনা।
আর আমরা জণগন সারা বছর নেতাদের গাল মন্দ দিব, তারপর নির্বাচন আসলে ভোট বিক্রি করবো, গরম চা পুরি খেয়ে গলায় শ্লোগান তুলবো, মালপানি খেয়ে এ ওর মাথা ফটাাবো আর যারা কিছু নিবো না তারাও অন্ধ আবেগ বা অন্য দলের প্রতি আক্রোশে ঘন্টার পর ঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ভোট দিয়ে এসব নেতাদের জিতিয়ে আনবো তারপর বছর ঘুরতে না ঘুরতে আবার গলায় শ্লোাগন তুলবো "অমুক ভাইয়ের চামড়া তুলে নেব আমরা।"
পরিবার, পাড়া, গ্রাম বা ব্লগ সব জাগায়ই আমাদের প্রায় একই অবস্থা। সত্যি সেলুকাস।