কিছুদিন আগে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের এক খেলোয়াড়ের ফেসবুকে করা নারীদের সম্পর্কিত কিছু কথায় আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। বাংলাদেশের অন্য সব বিষয়েের মতো সেখানেও মূলতঃ রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই প্রায় সবাই পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছে। যার বেশির ভাগই ছিল যুক্তিহীন্ বিপরীত পক্ষের উপর বিদ্বেষ প্রসূত কথাবার্তা।
এ ঘটনার প্রেক্ষাপটেই নারীদের সম্মান করা বা না করার কিছু বিতর্কিত কথা মাথায় আসে । এ লেখাটি সে সব চিন্তা ভাবনার আক্ষরিক উপস্থাপন।
সম্মান বিষয়টি একপাক্ষিক না, বহুপাক্ষিক, তা না হলেও মিনিমাম দ্বিপাক্ষিক। অর্থাৎ এক পক্ষকে সম্মান দিতে জানতে হবে অপর পক্ষকে সেটা নেয়ার মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নারীর সম্মান শ্রমিক অধিকারের মতো কোন বিষয় নয় যে জোর করে সেটা আদায় করা যাবে। নারীর প্রতি সম্মানের (প্রকৃতপক্ষে যে কোন সম্মানের ) বিষয়টি মনসতাত্তিক তাই এ বিষয়টি রাতারাতি পরিবর্তিতও হবে না। এ জন্য সমাজকে সভ্য করে তুলতে হবে। সমাজকে বলতে পুরো সমাজকে, নারী পূরুষ সবাইকে সভ্য করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু নারী শিক্ষা বা নারীর ক্ষমতায়ন দিয়ে এ লক্ষ অর্জন করা যাবে না। নারী শিক্ষার চেয়ে পুরুষের সু-শিক্ষা এ ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।এ ব্যাপারে কয়েকটি নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা বলে লেখা শেষ করতে চাই-
১) যখন কলেজে পড়ি তখন কখনও কল্পনাও করতাম না যে আমি বাসে সিটে বসে আছি আর আমার পাশে একজন নারী দাড়িয়ে যাতায়াত করবে। সম্মান, শ্রদ্ধা বা ভালবাসার কারণে কোন মেয়ে বা মহিলাকে বাসে দাড়িয়ে থাকতে দেখলে নিজের সিটটা সবার আগে ছেড়ে দিতাম। এখন মহিলাদের জন্য বাসে নয়টি সিট বরাদ্দ করা হয়েছে সাথে নিজেরও বয়স হয়েছে। এখন খুব বয়স্ক মহিলা না হলে নিজের সিট ছেড়ে দেইনা।
---অর্থাৎ আইন করে সম্মান আদায় করা যায় না।
২) ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের গ্রামের অনেক স্বামীই তার স্ব্রীর গায়ে হাত তোলেন। আবার হয়তো স্ত্রী পরের দিনই স্বামীর সাথে হাসি মুখে কথা বলেন। কখনও ভাবী সম্পর্কিত কাউকে ঠাট্টা করে বলেছি এই না দেখলাম কালকে দিল আজ আবার হাসিমুখে কথা বলছেন্।
উত্তরে কেউ বলেছেন -তোমার ভাই হইলো স্বামী হের তো অধিকার আছে বউ শাসন করার, আবার কেউ বলেছেন- মারে আবার আদরও তো করে।
সেখানে স্ত্রী তার গায়ে স্বামীর হাত তোলাটা ন্যায়সঙ্গত বলে মেনে নিয়েছে আর স্বামী জানে এটা তার অধিকার। দিন শেষে তারা মোটামুটি সুখি।
এখন স্বামীর আগেই যদি আমরা স্ত্রীকে তার অধিকারের শিক্ষাটা দেই তবে গণ্ডগোল বাধবে আরো বেশি।
স্বামী জানবে স্ত্রীকে শাসন করাটা তার অধিকার আর স্ত্রী কে শেখানো হয়েছে এটা অন্যায় এবং অপমানকর। ফলাফল হবে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং স্ত্রীর যে সুখটুকু ছিল তার অবসান।
---অর্থাৎ শুধু নারী শিক্ষা এবং ক্ষমতায়ন দ্বারা শান্তি বা সম্মন আসবে না এর জন্য প্রয়োজন নারী পুরুষ উভয়ের সুশিক্ষা।
৩) কোয়ার্টারে যখন আমরা ছিলাম তখন এক পরিবারের সাথে আরেক পরিবারের সম্পর্ক ছিল আত্মীয়ের মত। সিনিয়র জুনিয়র মিলে প্রচুর বন্ধু বান্ধব। যাহোক আমাদের কোন এক বন্ধু ছিল দেখতে তেমন ভাল না, পড়া লেখায়ও সুবিধার না তবে স্বভাব চরিত্র ভাল। একদিন আমরা রাস্তায় দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি পাশ দিয়ে বেশ সেজে গুজে যাচ্ছিল ওই বন্ধুরই বিল্ডিং এর তার জুনিয়র এক মেয়ে। বন্ধুটি সরল ভাবেই বলল-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে রুমা। রুমা গিয়ে তার নিজের মাকে দিল নালিশ। রুমার মা এসে সবার সামনে আমাদের সেই বন্ধুকে ধুয়ে ছেড়ে দিল। তার ক'দিন পর আমাদের আরেক বন্ধু যে বেশ ভাল ছাত্র তবে স্বভাব ভাল না রুমাকে দেখে বলল- তোমাকে দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে।
রুমাা কিছুটা প্রশ্রয়ের সুরে বলল- আমাকে দেখলে আপনারর মাাথাা গরম হবে কেন?
বন্ধুটি তার কানের কাছে গিয়ে এর আদি রসাত্বক ব্যাখ্যা দেয়ার পর রুমা হাসতে হাসতে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে চলে গেল।
তারপর ফলাফল হল বন্ধুটির বাড়িতে রুমার ঘনঘন যাতায়াত।
অনেকের মানসিকতা যদি এ রকম হয় তবে সম্মান নামক বিয়য়টি এ সমাজের প্রেক্ষাপটে সহজে আসবে না।
------অর্থাৎ নারী, পুরুষ উভয়ের মানসিকতারও পরিবর্তন দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৭