যারা অশিক্ষিত ধার্মিক তাদের কথা নয় বা যারা শিক্ষিত নাস্তিক তারাও নয়। আমার এ কথা খোলা মনের শিক্ষিত আস্তিকদের নিয়ে। হয়তো অশিক্ষিত আস্তিক বা শিক্ষিত ধার্মিকদের দেহেও একই রকমের দ্বান্দ্বিক সত্ত্বার বসবাস। কিন্তু সেই দ্বান্দ্বিক সত্ত্বাগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য যে সূক্ষ চেতনার দরকার তা হয়তো আমার নেই।
তাই এ আলোচনা খোলা মনের শিক্ষিত আস্তিকদের নিয়ে এরাই সাধারণতঃ দ্বৈত সত্ত্বায় বসবাস করেন ।
একদিকে বিজ্ঞান ও যুক্তি আরেক দিকে ধর্ম ও বিশ্বাস। দুই চেতনা যদি সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হতো তবে চিন্তা ছিল না। কিন্তু তা নয় এ দুই চেতনা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দ্বান্দ্বিক এবং অনেক স্থানে তারা পরষ্পরকে ছেদ করে। এই অসংখ্য ছেদ বিন্দু সত্ত্বেও এরা উভয় চেতনায় প্রায় সমানভাবে বিরাজমান থাকতে পারে। একই ধরণের ঘটনা যখন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখে তখন তাদের সিদ্ধান্ত এক রকম আবার্র একই বিষয়ে ধর্মীয় চিন্তার সিদ্ধান্ত একেবারে বিপরীতমুখী।
আমাদের মধ্যে আনেকে আছে যারা একই ভাবে উভয় সিদ্ধান্তের অভ্রান্ততায় বিশ্বাসী। যেন একই দেহে দ্বৈত সত্ত্বার বসবাস। যারা এভাবে দ্বৈত সত্ত্বা নিয়ে বসবাস করতে পারেন, তারা অনেক ধরনের সংশয় থেকে মুক্ত। যখন এক সত্ত্বা সামনে এসে সিদ্ধান্ত জানায় তখন আরেক সত্ত্বা থাকে মনের অন্তরালে। আবার পিছনের জন বেরিয়ে আসলেই সামনের জন পালিয়ে যায়। তারা কথনও মুখো মুখি দাড়ায় না।
আমার এক বন্ধু ছিল কোন এক বিশ্ববিদ্যালেয়ে এ্যনথ্রোপোলোজির সহযোগী অধ্যাপক কিন্তু প্রচন্ড ধার্মীক। তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হতো। সন্ধার পরে অনেক সময় ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা চলতো। একদিন কথা প্রসঙ্গে সে বলছে আমাদের আগের জমানার মানুষের হায়াত ছিল বেশি তারা অনেক লম্বা চওড়া ছিল......
আমি তাকে বললাম তুমি তো এ ব্যাপারে ভাল জান। এমন কি কোন প্রমান পাওয়া গেছে যে আগের দিনের মানুষেরা অনেক বেশিদিন বাঁচতো বা অনেক বিরাট আকৃতি্র ছিল। সে কিছুটা দ্বিধান্বিত বললো- বাপ দাদারা তো তাই বলেছে তাছাড়া ধর্মেও তো সে রকম কথাই বলে।
আমি বললাম তুমি পড়ানোর সময় কি পড়াও। সে জানালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যা শিখেছে তাই পড়ায়। তারপর বেশ জোরের সাথে বললো কিন্তু ধর্মে যা বলে তা তো বিশ্বাস করতে হবে।
তাও ভাল তার পড়ানোর সময় এক সত্ত্বা বাইরে আসে আর ধর্মে কর্মে অন্য সত্ত্বা। দ্বৈত সত্ত্বার সমন্বয় ঘটিয়ে সব জাগায় দ্বন্দ্ব বাধায় না।
এক সময় খৃষ্টান পাদ্রীদের দৌরাত্বে সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠতো। রেনেসা, শিল্প বিপ্লব এর পর তারা ব্যাকফুটে গেছে। প্রয়োজনে ধর্মীয় বানীকে যুগোপযোগী করে এন্টারপ্রেট করেছে। নিজেদের জ্ঞান, বিশ্বাসকে গীর্জার চার দেয়ালে আবদ্ধ করেছে। বেশির ভাগ সাধারণ ধর্ম অনুসারীরাও নিজেদের ভিতর অদ্বান্দ্বিক দ্বৈত সত্ত্বা তৈরী করে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার আর কল কাখানায় থাকলে বিজ্ঞান বা লজিক নিয়ে চলে আর গীর্জার ভিতরে গেলে বিশ্বাস বা ধর্মের নিয়ম। সাধারণ খ্রীস্টানরা নিজেদে সত্ত্বাকে এভাবে দু ভাগে ভাগ করার ফলে এখন ব্যাক্তি জীবনে তাদের ধর্ম এবং বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব খুব কম হয়।
আবার যে সকল মুসলিমরা ঐ রকম দ্বৈত সত্ত্বার বসবাস করে তারা ভাল আছে। কিন্তু যারা বিজ্ঞানের প্রতিটি বিষয় ধর্মের সাথে টেনে এনে সংঘর্ষ বাধাচ্ছেন তারা ধর্ম এবং বিজ্ঞান উভয়েরই ক্ষতি করছেন। এখন সময় এসেছে ধর্ম এবং বিজ্ঞানের সীমান নির্ধারনের। ধর্মীয় বানীকে যুগোপযোগী করে এন্টারপ্রেটের। সব ধর্মেরই মোডিফিকেশন হচ্ছে এবং হবে, আটকে রাখা যাবে না। অন্য ধর্মের অনুসারীরা এটাকে যত সহজ ভাবে নিয়েছে আমরা সেভাবে নেইনি। আমাদের মূলই ভক্তি, মূলেই শক্তি। ভয় হয় আমরা এভাবে মুল আকড়ে ধরে থাকতে গিয়ে সমূলে উৎপাটিত হই কিনা
ছবি সূত্রঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:১৪