ঢাকার কাছেই, বেশি দুরে নয় । গিয়েছিলুম মুন্সীগন্জের শ্রীনগর থানার আলমপুর গ্রামে । এক হাসপাতালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে । যে হাসপাতালের উদ্যোক্তা এক সাদামনের ব্যক্তিত্ব , মিসেস হেনা আহমেদ । লন্ডন প্রবাসী এই নারী তার নিজগ্রাম মুন্সীগন্জের শ্রীনগর থানার, হাসাঁড়া ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে সমাজসেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । তিনি দেশকে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন তাঁর গ্রামকে। সে-চেতনা থেকেই তার নিজ এলাকা মুন্সিগঞ্জের আলমপুর গ্রামে নির্মাণ করলেন একটি আধুনিকমানের ২০ শয্যার হাসপাতাল। উনার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত ভুসম্পত্তি বিক্রি না করে , গ্রামেরই জনসাধারনের উপকারে আসে এমন কিছু করাই ছিল তার স্বপ্ন । তার একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো সেদিন ।
শুভ্রকেশী, সুহাসিনী, চির নবীন এই মানুষটিকে মন-মননে সব সময় একজন সুুচিন্তার মানুষ হিসেবে দেখেছি । যিনি সব মানুষের মাঝেই খুঁজে পান একজন সুন্দর মানুষকে। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬ , শুভানুধ্যায়ি ও আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে তাঁর সার্বিক অর্থায়নে নির্মিত "হেনা আহমেদ হাসপাতাাল'টির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হলো। স্বজন-প্রিয়জনদের মিলনে দিনটি আনন্দমুখর হয়ে উঠেছিলো। পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমিও উপস্থিত ছিলুম সেদিন । হাসপাতালটি নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধান ও কারিগরী সহায়তায় ছিলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঢাকা আহসানিয়া মিশন। হাসপাতালটি পরিচালিত হবে "ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যানসার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল "এর পরিচালনায় । হাসপাতাাল'টির সম্পুর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়,যাবতীয় আসবাবপত্র ও সকল প্রকার চিকিৎসা সরন্জামের অর্থায়ন করেছেন হেনা আহমেদ ।
আমার অসীম ভালবাসা ও নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অপার শ্রদ্ধা রইলো এই সাদামনের নারীর জন্য l কত বিত্তবান আছে আমাদের দেশে l যারা কেবল নিজের ভোগ বিলাসিতায় খরচ করে l রেখে যান উত্তরাধিকারীদের জন্য l কে মনে রাখে তাদের কথা ? তাদের অর্জিত সম্পদ দেশের ও দশের কোনো কাজে আসেনা l সংকীর্ণ মনের এই সব মানুষদের সম্পদ তারা নিজেরাও ভোগ করতে পারেনা এক সময় l সাধারণ মানুষের জন্য করার সৌভাগ্য সবার হয়না l সকল বিত্তবানরা এই নারীর পদাঙ্ক অনুসরণ করুক , সেই প্রত্যাশা রইলো l
সম্পত্তির পাহাড় বানিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা মানুষের সংখ্যাই বেশি। আবার হেনা আহমেদের মতো মানুষও আছেন যারা নীরবে, গোপনে যার যার সাধ্য অনুযায়ী অন্যের জন্য করছেন। পরোপকারী মানসিকতা শিশুবেলা থেকেই তৈরি করা প্রয়োজন পরিবার থেকেই।
হেনা আহমেদের বাবা ও মা, দুজনেই ছিলেন শিক্ষিত,উদারমনা ও মুক্তচিন্তার অনুসারী । হেনা আহমেদের কাছেই শুনেছি ওনার ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ , উনার বাবা ধর্মীয় গোঁড়ামি একেবারেই পছন্দ করতেন না । সবসময় ই বলতেন , ধর্ম নিয়ে মাতামাতি না করে , সুশিক্ষা গ্রহন করো , সৎ ও ভাল মানুষ হও । গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে হেনা আহমেদের বাবা ও মা দুজনেই যথাসাধ্য অবদান রেখেছিলেন ।
হেনা আহমেদের বাবার প্রতিষ্ঠা করা হাই স্কুল ।
হেনা আহমেদের মায়ের প্রতিষ্ঠা করা প্রাইমারী স্কুল ।
এমন বাবা মায়ের আদর্শে বেড়ে উঠা হেনা আহমেদও এগিয়ে এসেছেন নিজগ্রামের মানুষের সেবায় । এ গ্রাম নিয়ে উনার নিজেরও কিছু স্বপ্ন আছে , তারই একটি হল ন্যুনতম খরচে গ্রামের মানুষদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা । সে স্বপ্নই বাস্তবে রুপ নিয়েছিল গত ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৬। আমিও গিয়েছিলুম সে অনুষ্ঠানে ।
মুন্সীগন্জের পথে ধলেশ্বরী সেতুর টোলপ্লাজায়,কুয়াশা ঢাকা পথ ।
কুয়াশা কাটেনি তখনো ।
রোদ উঠে গেছে ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন হেনা আহমেদ ।
হাসপাতালের অনতিদুরেই সকলবয়সি নিরাশ্রয় ও অসহায় মেয়েদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র তৈরীর কাজ চলছে , এটিও ওনার আরেকটি স্বপ্ন ।
এই মাঠের জমিটি হেনা আহমেদ দান করেছেন গ্রামের খেলার মাঠের জন্য ।
হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ঘনিষ্ঠ তিন বান্ধবীর সাথে হেনা আহমেদ ।
অনুষ্ঠান শেষে বিদায়বেলায় হেনা আহমেদ ।
হেনা আহমেদের একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন হল আজ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:১১